আমার তুমি আছো
Season 1
Part: 2
গল্প সংগ্রহঃ BSG_বাংলা সিরিজ গল্প
সকালের রোদ চোখে মুখে এসে পড়ায় আমার ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। আমি উঠে বসি কিন্তু আমি ফ্লোরে বসে আছি কেন? মনে পড়ে যায় আমার কাল রাতের ঘটনা। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে আসে। রুমে কোথাও পিয়াস ভাইয়াকে দেখতে পাচ্ছি না। রুমের বাইরে বেরিয়ে এলাম। এক পা এগিয়ে আসলে শুনতে পাই খালাম্মা আর পিয়াস ভাইয়ার গলা।
— মা প্লিজ এবার আমাকে রেহাই দাও তুমি। বিয়ে করতে বলেছো করেছি। আর কোন নাটক আমি করতে পারবো না।
— এটা কি কথা বলছিস তুই বাবা। আলো যে এই বাড়ির বউ। বৌভাতের অনুষ্ঠান তো করা লাগবে। দেখ এতোদিন ধরে আমাদের আত্মীয়রা আলোকে আমার মেয়ে হিসেবে জেনে এসেছে। এখন তো ওর আর একটা পরিচিয় হয়েছে সবাইকে জানাতে হবে তো।
— তুমি যা ইচ্ছা করো। তবে এই বাড়িতে কোন রিসেপশান পার্টি হবে না। আমি কাউকে জানাতে চাই না ও এ বাড়ির বউ।
— আমি বুঝতেছিনা তোর আলোর প্রতি এতো রাগ কিসের?
বুঝতেই পারছি খালাম্মা আর পিয়াস ভাইয়ার সাথে ঝামেলা হচ্ছে। আমি দ্রুত পায়ে নীচে এলাম।
— থাক না খালাম্মা। বৌভাতের অনুষ্ঠান করা লাগবে না। তাছাড়া পিয়াস ভাইয়া যখন চায় না তখন..।
— আলো মা তুইও এমন কথা বলছিস? আরে ও তো পাগল হয়ে গেছে ওর মাথার ঠিক আছে না কি।খালাম্মা আমার মুখটা ধরে বাম দিকের গালে আর ঠোঁটের কোণে হাত দিলেন। আমার ব্যাথা লাগলেও আমি সহ্য করে মুচকি হাসি দিই। খালাম্মার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নি।
— থাক না খালাম্মা পিয়াস ভাইয়াকে একটু সময় দাও।
খালাম্মার চোখের কোণে একটু পাণি চিকচিক করছে। পিয়াস ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
— পিয়াস তুমি এতোটা নীচে নেমে গেছো! বিয়ে করে আনতে না আনতেই তুমি ফুলের মতো মেয়েটার গায়ে হাত তুললে? আমার তো তোমাকে..।
— না খালাম্মা তুমি ভুল করছো তিয়াস ভাইয়া আমার গায়ে হাত তোলে নি। আমি তো এইসব গহনা পড়ে শুয়ে ছিলাম। হাতের এই চুড়িটা দেখছো এর মধ্যে লেগে গালটা কেটে গেছে হয়তো। পিয়াস ভাইয়া কিছু করে নি।
আমার কথা শুনে খালাম্মা বিশ্বাস করলো কি না জানি না। তবে পিয়াস ভাইয়াকে আর কিছু বললো না। পিয়াস ভাইয়া বোধহয় একটু স্বস্তি পেলো। খালাম্মা আর কিছু না বলে চলে গেলো। আমিও রুমে চলে এলাম তবে পিয়াস ভাইয়ার রুমে না আগে যেখানে থাকতাম সেই রুমে। রুমে এসে দেখলাম রুমটা বেশ যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছে। এটা যে খালাম্মার কাজ তা বুঝলাম। আমি বেশি কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে চলে এলাম। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে ওয়ার ড্রপ খুলে দেখলাম থ্রী পিছ এ ভর্তি। আগে যখন এখানে থাকতাম তখন বাবাই মানে পিয়াস ভাইয়ার বাবা আমার জন্য নিয়ে এসে দিতেন।আমি এখন তার মধ্যে থেকে একটা গাঢ় নীল রং এর থ্রী পিছ পরে নিলাম। বাম সাইডের ড্রয়ারটা খুলতেই আমার মেকাপের জিনিসপত্র গুলো পেয়ে গেলাম। চোখে মোটা করে কাজল লাগালাম। গালটা দেখে নিজেরি ভালো লাগছে না তাই ওই জায়গাটা একটু কনসিলার দিয়ে ঢেকে দিলাম। ইসস যদি এই কনসিলার দিয়ে মনের দাগটা ঢাকা যেতো! চুলগুলো এলো করে কানে ঝুমকো পড়লাম। হাত ভর্তি নীল কাঁচের চুড়ি পড়লাম। এই সেই চুড়ি পিয়াস ভাইয়া আমাকে পরিয়ে দিয়ে কপালের মাঝখানে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়েছিলো। এখন ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়।
নীচে নামতেই দেখি ভাবী নাস্তার প্লেট রেডী করছে। আমি ভাবীর গলা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম আগের মতোই। ভাবী আমার হাত ধরে সামনে নিলো আমি হেসে ভাবীর গাল টিপে ধরলাম।
— ভাবী গুড মর্নিং,,
— কি ব্যাপার হুম এতো খুশি দেখছি।
— খুশি তো আমি খুব খুশি। এই দেখো এই চুড়ি গুলো আমাকে পিয়াস ভাইয়া দিয়েছিল।
— ওহ তাই সে তো জানি । কিন্তু কাল কি দিয়েছে বলো বলো!
— কাল কি দিবে আবার!
— কেনো ভালোবাসা দেয়নি?
— উফ ভাবী তুমি না একটা যা তা।
আমি আর ভাবী এইসব কথা বলে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করলে খালাম্মা দেখে খুশি হয়। খালাম্মা আমার হাতে কফির কাপ ধরিয়ে দেয়।
— আচ্ছা হাসি থামা এবার। যা এটা নিয়ে পিয়াসকে দিয়ে আয়।
— ঠিক আছে খালাম্মা।
— আরে সাবধানে যা ছুটিস না পড়ে যাবি তো।একছুটে চলে এলাম পিয়াস ভাইয়ার রুমে। পিয়াস ভাইয়া তখন চুলে চিরুনি বুলাচ্ছিল।
— ভাইয়া এইনাও তোমার কফি।
আমি কফির কাপটা নামিয়ে রেখে পিয়াস ভাইয়ার তোয়ালেটা বেডের ওপর রাখা দেখে সেটাকে নিয়ে মেলার জন্য হাতে তুলে নিয়ে বলি।
— ওহ তোমাকে কতোবার বলছি এই ভিজে তোয়ালে নিয়ে বেডের ওপর রাখবে না। দেখো বেড কফারটা কেমন স্যাঁতস্যাত করছে। তুমি তো আমার কোন কথাই শোন না।
পিয়াস ভাইয়া আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিলো। অগ্নিদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পিয়াস ভাইয়ার চোখে চোখ রেখে একটা ঢোক গিললাম। এই রে আমি কি করলাম এটা। আমি তো ভুলেই গেছিলাম এখন তো আমাকে পিয়াস ভাইয়া পচ্ছন্দ করে না। আমার হাত বেয়ে তরল কিছু গড়িয়ে পড়ছে আমি বুঝতে পারছি। কানে আওয়াজ আসছে আমার কাঁচের চুড়ির মটমট আওয়াজ। আমি শুধু পিয়াস ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।
— তোকে বলেছি না তুই আমার সাথে স্ত্রীর অধিকার ফলাতে আসবি না। আবার ভুল করছিস আলো। তুই কি ভেবেছিস তুই মা কে ওই মিথ্যা কথা বলে আমাকে বাঁচিয়েছিস বলে আমি তোকে মেনে নেবো! তোর কাছে ঋণী হয়ে থাকবো তাহলে ভুল ভাবছিস!
আমার দুটো হাত সামনে নিয়ে এলে আমি হাত দুটো দেখে ভয় পেয়ে যাই দুটো হাতে একটাও চুড়ি নেই। মাথাটা ঝিমঝিম করছে, ছোট থেকে রক্ত দেখলেই আমার মাথা ঘোরে। পিয়াস ভাইয়া গরম কফিটা আমার হাতে ঢেলে দেয়। আমি চিৎকার করে উঠলে আমার মুখটা চেপে ধরে।
— চুপপ ,, চিৎকার করিস না আলো। মনে আছে ছোটবেলায় একবার আমার হাত থেকে কাঁচের গ্লাস পড়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো। আর তাতে তোর পা কাঁচের টুকরোয় কেটে গিয়েছিলো। আমি কিন্তু ইচ্ছা করে করিনি তা সত্ত্বেও মা আমাকে মেরেছিল আর তুই হাসছিলি।
পিয়াস ভাইয়া এগুলো কি বলছে। আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না।
— কি বলছেন আপনি পাগল হয়ে গেছেন না কি?
— হুম আমি পাগল হয়ে গেছি এখন যাবি তো গিয়ে আমার মাকে বলবি, খালাম্মা তোমার ছেলে আমার হাত কেটে দিয়েছে। অবশ্য তোর মতো মেয়েরা তো এইসব ভালোই পারে।
পিয়াস ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। আমি মেঝেতে বসে পড়ি। হাতের যন্ত্রনার থেকেও বুকের যন্ত্রণাটা যেনো বেশি হচ্ছে। পিয়াস ভাইয়া আসলে ঠিক কি করতে চাইছে আমার সাথে??
.
.
.
.
#চলবে …
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন)