পার্থক্য পর্ব-২২

0
931

পার্থক্য

২২ পর্ব।

#রিফাত_হোসেন।

রিফাতের বাবা আস্তে আস্তে রিফাতের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর বলল – ‘সারপ্রাইজ টা কেমন দিলাম।’
– ‘আমি তো এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না তুমি এখানে?’

রিফাতের কথা শুনে ইকবাল হোসেন(রিফাতের বাবা) হাসতে শুরু করলো। রিফাত আবার জিজ্ঞেস করলো – ‘কিন্তু তুমি এখানে কীভাবে আসলে। আর দেশে ফিরলে কখন?
– ‘তোর মা কালকে রাতে আমাকে ফোন করে সব বলেছে। আর একমাত্র ছেলের বিয়ে তে বাবা থাকবে না সেটা কী করে হয়। তাই আর দেরি না করে ভোরের ফ্লাইটে চলে এলাম দেশে।’
– ‘আমি ভাবতেই পারিনি একদিনে এত সারপ্রাইজ পাবো।’
– ‘আরেকটা সারপ্রাইজ বাকি আছে।’
– ‘কী?’
– ‘আর একটু পর তোর বিয়ে।’

বাবার কথা শুনে রিফাত হা হয়ে গেল। – ‘তুমি এইসব কী বলছো বাবা?’

পাশ থেকে আয়শা বেগম বলল – ‘ হ্যাঁ তোর বাবা একদম ঠিক কথা বলেছে। সকালেই সব ঠিক করা ছিলো। শুধু তোকে তখন জানাইনি।’
– ‘তারিন কী জানে?’
– ‘সবাই সব জানে। তোকে বলতে মানা করেছিলাম তাই কেউ বলেনি।’

সবার কথা শুনে রিফাতের চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে পড়লো। সবাই যে এত সহজে সব মেনে নিবে তা ভাবতে পারেনি রিফাত। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। হুমায়ুন আহমেদ এর শূন্য বইটা তে লেখা ছিলো “আমার চোখ দিয়ে শুধু শুধু জল পড়ছে কেন? চোখ তো জ্বালা ও করছে না। তাহলে কেন নিজের অজান্তেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। কী রহস্য লুকিয়ে আছে এই চোখের জলে”

আজ রিফাত ও বুঝতে পারছে না কী রহস্য লুকিয়ে আছে এই চোখের জলে।
পৃথিবীর বিখ্যাত ডিটেকটিভ এখানে উপস্থিত থাকলে নিঃসন্দেহে বলে
দিতো এই চোখের জল আনন্দের। এইরকম বাবা-মা’র সন্তান হতে পারার আনন্দ। যারা সন্তান কে বিশ্বাস করে, সন্তান কে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারে।

রিফাত নিজেকে একটু সামলে নিয়ে চেয়ারম্যান সাহেবর দিকে সম্মানের দৃষ্টিতে তাকালো। তিনি মৃদু হাসি দিয়ে বললেন – ‘এখন তাড়াতাড়ি যাও রেডি হয়ে নাও।’

রিফাত আর কোন কথা না বলে উপরে চলে গেল। আরিয়ান উপরে গিয়ে রিফাত কে পাঞ্জাবি দিল। কিছুক্ষনের মধ্যে রিফাত রেডি হয়ে গেল। হয়তো বিয়ের কথা ভাবতে ভাবতে তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে সব কিছু। তারপর সবাই মিলে তারিনদের বাড়িতে গেল। বাহিরে তেমন না সাজালে ও ভিতরে একটু সাজানো হয়েছে। এক মাত্র মেয়ে বলে কথা। কিছুক্ষণ পর কাজী সাহেব এসে বিয়ের পড়াল।

৩৬.
বাসর ঘরের দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে রিফাত। আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকে দেখে বিছানার উপর তারিন ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। রিফাত দরজার কাছ থেকে কয়েকবার কাশি দিল। কিন্তু তারিন কোন সারা দিল না। রিফাত রাগ করে সামনে গিয়ে বিছানায় বসে পড়লো।

ঘোমটার আড়ালে তারিন মুখ চেপে রেখে হাসছে। রিফাতের অবস্থা দেখে তারিনের খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তু নতুন বৌ বলে মন খুলে হাসতে পারছে না। মুহূর্তের মধ্যেই আবার বলে উঠলো ‘ওনি তো আমার চেনা মানুষ। তাহলে লজ্জার কী আছে। তাই আর দেরি না করে ঘোমটা খুলে ফেললো। রিফাত তারিনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। তারপর বলল – ‘এটা কী হলো?’
– ‘কী হলো?’
– ‘ভেবেছিলাম ঘোমটা টা আমি নিজের হাত দিয়ে খুলবো।’
– ‘আমার ঘোমটা আপনি কেন খুলবেন?’
– ‘আরে আজ আমাদের বাসর রাত, একটু রোমান্টিক না হলে কীভাবে হবে।?’

তারিন একটু রাগ দেখিয়ে বলল – ‘লুচ্চামি বন্ধ করে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরুন।’
– ‘কিহ্, আপনি স্বামী কে লুচ্চা বলছেন। ‘
– ‘হ্যা বলছি তো কী হয়েছে?’
– ‘আজ না আমাদের বাসর রাত।’
– ‘এইসব উল্টো পাল্টা চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে শুয়ে পরুন।’
– ‘এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।’
– ‘কী ঠিক হচ্ছে না।’
– ‘আরে দূর, বাসর রাতে বৌ কে আদর না করে ঘুমিয়ে পড়লে তো এই বাসর রাত টা কে অপমান করা হবে।’
– ‘এবার কিন্তু বোল্ট আউট করে দেবো।’
– ‘সে আপনি যাই করুন। আমি সোফায় যাবো না।’
– ‘ঠিক আছে এখানেই শোবেন। কিন্তু ভুল করে আমার টাচ করতে পারবেন না।’

রিফাত মনে মনে ভাবছে ‘সেটা তো একটু পরেই টের পাবে।’
– ‘কী হলো চুপ করে আছেন কেন?’
– ‘ঠিক আছে। আপনি ওদিক ঘুরে শোবেন আর আমি এইদিকে ঘুরে শোব।’
– ‘হু গুড।’

দু’জনে দু’দিকে ঘুরে শুয়ে পড়লো। তারিন উল্টো দিকে ঘুরে মিটমিট করে হাসছে। আর ভাবছে ‘রিফাত কত সহজেই আমার কথা মেনে নিলো। এইরকম স্বামী পেয়ে সত্যিই আমি খুশি।

ওদিকে রিফাত ভাবছে কীভাবে তারিন কে কাছে আনা যায়।
রিফাত তারিনের দিকে ঘুরে বলল – ‘টেবিলের উপর থেকে ফোনটা দেও তো।’

তারিন ও রিফাতের দিকে ঘুরলো। তারপর রিফাতের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
রিফাত জিজ্ঞেস করলো – ‘কী হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’
– ‘এখন আপনি ফোন দিয়ে কী করবেন?’

তারিনকে আরো রাগানোর জন্য রিফাত বলল – ‘বৌ থাকতে ও বাসর করতে পারছি না। তাই অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।’

তারিন কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো – ‘অন্য কী ব্যবস্থা করবেন?’
– ‘আরেকটা বিয়ে করবো।’

কথাটা বলার সাথে সাথে তারিন লাফ দিয়ে উঠে রিফাতের পাঞ্জাবির কলার ধরে বলল – ‘আপনার সাহস তো কম না। একটা বৌ থাকতে আবার বিয়ে করার কথা বলছেন।’
– ‘তো কী করবো? বৌ আমাকে একবার ও জড়িয়ে ধরলো না।’

রিফাতের কথা শুনে তারিন কিছুটা লজ্জা পেলেও তা প্রকাশ করলো না। রিফাতের ডান হাতে নিজের মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে বলল – ‘এবার ঠিক আছে।’
– ‘না’
– ‘জড়িয়ে ধরলাম তো।’
– ‘এক পাশে ধরছো আরেক পাশ যে খালি পড়ে আছে।’

তারিন একটু ভেবে রিফাতের উপরে উঠে গেল। তারপর দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রিফাতের বুকে মাথা রাখলো।
রিফাত তারিন কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল – ‘এখন ঠিক আছে।

তারিন একটু কান্নার স্বরে বলল – ‘আমাকে ছেড়ে আরেকটা বিয়ে করার কথা আর কখনো বলবেন না তো।’
– ‘হু, আগে একটা পাপ্পি দেও।’
– ‘আগে বলেন এইসব আর বললেন না।’
– ‘ঠিক আছে আর বলবো না এবার পাপ্পি দেও।’
– ‘চোখ বন্ধ করেন।’
– ‘হুহ্ আমি তো পাগল। চোখ বন্ধ করি আর তুমি বোল্ট আউট কর।’

রিফাতের কথা শুনে তারিন হো হো করে হেসে উঠলো। রিফাত মুগ্ধ হয়ে তারিনের সেই হাসি দেখছে। কী অপরূপ সুন্দরী তারিন। তার সাথে সুন্দর এই হাসি। তারিন এখনো রিফাতের উপর শুয়ে আছে। রিফাত তারিনের মাথাটা উপরে তুলে কপালে আলতো করে একটা চুমু দিল। লজ্জায় তারিন রিফাতের বুকে মুখ লুকালো।

কিছুক্ষন পর রিফাত বলল – ‘তারিন চলো ছাদে যাই।’
– ‘এই শীতের মাঝে ছাদে গিয়ে কী করবো।’
– ‘আরে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকো, তাহলে আর শীত করবে না।’
– ‘কিন্তু যদি কেউ দেখে ফেলে।’
– ‘দেখলে দেখুক, এই নির্ঘুম রাতের স্মৃতিগুলো আমি ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখতে চাই।’
– ‘তারপর সেই স্মৃতি দিয়ে কী করবেন।’
– ‘আমাদের থেকে যারা আপডেট হবে, ওদের দেখাবো। ওরাও বুঝতে পারবে যে ওদের বাবা-মা কতটা রোমান্টিক ছিলো।’

তারিন একটু রাগ দেখিয়ে বলল – ‘আপনার মুখে বাজে কথা ছাড়া আর কোন কথা নেই।’
– ‘আছে তো।’
– ‘কী?’

– ‘ “ভালোবাসি তোমাকে”
– ‘আমিও’
– ‘কী?’
– ‘ভালোবাসি।’
– ‘কাকে?’
– ‘হি হি যারা আপডেট হবে তাদের।’
– ‘তাহলে শুরু করি।’

তারিন আমতা আমতা করে বলল – ‘কী?’
– ‘আপডেট’
– ‘ একটা মারবো যে আপডেট দেওয়ার চিন্তা মাথা থেকে বের হয়ে যাবে।’
– ‘তাই নাকি।’
– ‘হুম।

রিফাত তারিনের হাত দু’টো মুঠোবন্দি করে নিজে উপরে উঠে তারিন কে নিচে চেপে ধরলো। তারিনের হাত দু’টো শক্ত করে ধরে নিজের বাহুডোরে অবদ্ধ করে ফেললো। তারিন রিফাতের নিচে থেকে উঠতে পারছে। এত শক্ত করে ধরে রেখেছে যে তারিনের উঠার কোন ক্ষমতা নেই। রিফাত আস্তে আস্তে করে তারিনের মুখের দিকে এগুতে লাগলো। তারিনের ঘাড়ে রিফাত মুখ গুজে দিলো। তারিনের নিঃশ্বাস রিফাত কে আরো উত্তেজিত করে তুলেছে। তারিন কে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষন পর বলল – ‘চলুন ছাদে যাই।’

রিফাত ঘাড় থেকে মাথাটা তুলে তারিনের কপালে একটা চুমু দিয়ে কোলে তুলে নিলো। তারপর ঘরের দরজা খুলে আস্তে আস্তে ছাদে চলে গেল। ছাদে দোলনার মধ্যে তারিন কে বসিয়ে দিয়ে নিজে তারিনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। তারিন রিফাতের মাথার হাত দিয়ে বলল – ‘আচ্ছা আপনি কী কখনও ভেবেছিলেন এইরকম একটা দিন আমাদের আসবে।’

রিফাত একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল – ‘নিজের উপর বিশ্বাস না থাকলেও ভালোবাসার উপর বিশ্বাস ছিলো। আমি বিশ্বাস করতাম আল্লাহ কখনও কোন ভালোবাসা শেষ হয়ে যেতে দিবে না। আমি তোমাকে না পেলে বুঝতাম আমাদের ভালোবাসায় কোন ত্রুটি ছিলো। তাই আল্লাহ আমাদের এই দিন উপহার দেয়নি। ”
কখনো কোন কিছু না পেলে নিজের কোন ক্ষতি বা আল্লাহ কে দোষারোপ করবে না। কারণ আল্লাহ কারোর খারাপ করবে না।

“Trust Allah, When things don’t work out the way you wanted. Allah has something better planned for you.”
(তুমি যা চাইছো তা এখন পাওনি । তাই বলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। হয়তো সামনে এর থেকে ভালো কিছু তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। )

এটা ঠিক কালকে ও আমি অনেকটা ভেঙে পরেছিলাম। কিন্তু আল্লাহর উপর আমার সম্পুর্ন বিশ্বাস ছিলো।
আমি জানতাম আমাদের ভালোবাসা সত্যি হলে আল্লাহ আমাদের হতাশ করবেন না।

রিফাত তারিনের কোলে মাথা রেখে একের পর এক কথা বলে যাচ্ছে। আর তারিন রিফাতের মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
কথা থামিয়ে রিফাত বলল – ‘কী হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’
– ‘আপনি এত সুন্দর করে কথা বলেন কীভাবে?’

তারিনের কথা শুনে রিফাত হো হো করে হেসে উঠলো। আরো কিছুক্ষন দু’জনে ছাদে বসে কথা বলার পর তারিন বলল – ‘চলুন অনেক রাত হইছে এবার ঘরে যাই।’
– ‘যেতে পারি যদি আমাকে আপনি করে না বলে তুমি করে বলো।’

তারিন একটু ভেবে বলল – ‘চেষ্টা করবো।’
– ‘ শুধু চেষ্টা না তুমি করে বলতে হবে।’
– ‘মনে না থাকলে তো আর আমার দোষ না। তবুও আমি সব সময় তুমি করে বলার চেষ্টা করবো।’
– ‘ঠিক আছে চলো।’

দু’জনে ছাদ থেকে নেমে ঘরে চলে গেল। তারপর ইইইইয়ে… আরকি… আরকি… সে যাই হোক। বাসর রাতে যা হয় আরকি….

“উল্টো পাল্টা ভাবলে আমার দোষ নাই। বাসর রাতে অনেকে বিড়াল মারে, আবার অনেকে ঘুমায়। তবে রিফাত কী করবে বাসর রাতে, সেটা রিফাতই ভালো জানে”

চলবে……….?

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

শব্দ সংখ্যা- ১৪০০+

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here