পার্থক্য পর্ব-২৭

0
3589

পার্থক্য

২৭ পর্ব।

#রিফাত_হোসেন।

বিকেলে তারিনের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে। তাতে লেখা ছিলো “আমি এসে গেছি”। তারিন আয়শা বেগম এর ঘরে গেল। তারপর বলল – ‘মা আমি একটু বাহিরে যাবো।’
– ‘কোথায় যাবি?’
– ‘তিশা’র সাথে দেখা করতে।’
– ‘ওদের কে আমাদের বাড়িতে আসতে বল।’
– ‘আসলে, আজকে ওদের বাড়ি সাজাতে সময় লাগবে। তাই তিশা বলল একটু হেল্প করতে।’

আয়শা বেগম একটু ভেবে বলল – ‘ঠিক আছে, সাবধানে যাবি।’

তারিন আয়শা বেগম এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলো। তিশা কে ফোন দিয়ে লোকেশন জেনে নিলো। রিফাতদের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। তাই খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেল। অনেকদিন পর তিশা’র সাথে দেখা, কিন্তু এখন বেশি কথা বলার সময় নেই। ওকে তাড়াতাড়ি রেস্টুরেন্টে যেতে হবে। ইরা ওর জন্য অপেক্ষা করে আছে। তারিন বলল – ‘তোকে যেটা আনতে বলেছিলাম সেটা এনেছিস?’
– ‘হুম। সকালে তোর ম্যাসেজ দেখার পরেই তোদের বাড়িতে চলে যাই। তারপর তোর ড্রয়ার থেকে ছবিগুলো নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।’
– ‘ঠিক আছে। এখন আমার একটা কাজ আছে।’
– ‘কিন্তু হঠাৎ এগুলো কেন আনতে বললি বুঝতে পারছি না।’
– ‘সেসব পরে বলবো। এখন আমাকে তাড়াতাড়ি এক জায়গায় যেতে হবে।’
– ‘ঠিক আছে যা।’

তিশার বাড়ি থেকে বের হয়ে একটা রিক্সা তে উঠলো তারিন। তারপর রিক্সা দিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে গেল। ভেতরে গিয়ে দেখে একপাশে বসে আছে ইরা। তারিন সামনে গিয়ে চেয়ারে বসলো।
ইরা বলল – ‘বলুন এখন কী বলবেন?’

তারিন ব্যাগ থেকে ছবিগুলো বের করে ইরা’র হাতে দিল। ইরা ছবিগুলো দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসলো। অবাক হয়ে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। যেন ছবিগুলো দেখে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ইরা চুপ করে বসে রইলো। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। কারণ এই ছবিগুলো হলো তারিন আর আশিকের একসাথের ছবি। যা একেবারে অয়নের মতো দেখতে। ওরা আগে যখন দেখা করতো তখনই সব মুহূর্তের ছবি তুলে রাখতো। তার মধ্যে থেকে কিছু ছবি বের করে ডাইরির ভিতর রেখে দিয়েছিলো তারিন। আশিকের সাথে দেখা করার আগের দিন তারিন ডাইরি থেকে ছবিগুলো বের করে দেখছিলো। তারপর ছবি সহ ডাইরি ড্রয়ারে রেখে দেয়। কাল যখন তারিন জানতে পারে তিশা আসবে। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই তিশা কে ম্যাসেজ করে বলে সেখান থেকে ছবিগুলো নিয়ে আসতে। আর সেই ছবিগুলো এখন ইরা কে দেখাচ্ছে। কিছুক্ষন চুপ থাকার পর তারিন বলল – ‘দেখলেন তো আমি কালকে মিথ্যে কথা বলিনি।’
– ‘কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব।’
– ‘হ্যাঁ, এটাই সম্ভব।’
– ‘কিন্তু আপনি তো বলছেন উনার নাম আশিক।’

তারিন উপরের দিকে তাকিয়ে বলল – ‘সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না। একজন মানুষের দু’টো নাম কীভাবে হয়।’
– ‘বেশ রহস্যময় বিষয়টি।’
– ‘আচ্ছা কালকের ওই ছেলেটা মানে অয়ন। উনার কী জমজ কোন ভাই আছে।’
– ‘না ওর কোন ভাই বা বোন নেই। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান অয়ন।’
– ‘সব কেমন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।’
– ‘আমিও তো কিছুই বুঝতে পারছি না। একি রকম দেখতে দু’টো মানুষ কীভাবে হয়।’

তারিন কিছুক্ষন ভেবে বলল – ‘আপনি আমাকে একটা হেল্প করবেন প্লিজ।’
– ‘কী হেল্প?’
– ‘আপনার ভাই অয়ন। উনার উপর একটু নজর রাখতে পারবেন। মানে কখন কী করে। কার সাথে কথা বলে।’
– ‘হুম পারবো। কিন্তু আপনার সাথে এই ছেলেটার কী সম্পর্ক ছিলো বা কী এমন করেছে যে আপনি ওকে শাস্তি দিতে চাচ্ছেন।’

তারিন ইরা কে শর্ট কাটে সব বলল।
সব শুনে ইরা বলল – ‘এটা যদি সত্যি আমার ভাই হয়ে থাকে। তাহলে আমি কথা দিচ্ছি ওকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সব রকম হেল্প আমি আপনাকে করবো।

তারিন একটু হাসি দিয়ে বলল – ‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’
– ‘ঠিক আছে তাহলে এবার যাই।’
– ‘হুম।

তারিন এবং ইরা দু’জনেই সেখান থেকে বেরিয়ে বাড়ির দিকে যেতে শুরু করলো।

বাড়িতে গিয়ে দেখে রিফাত চলে এসেছে। ঘরে গিয়ে তারিন জিজ্ঞেস করলো – ‘আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলে।’
– ‘তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে গেল তাই চলে এলাম। কিন্তু তুমি কোথায় গিয়েছিলে?’
– ‘আমি তো তিশার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আর মা কে তো আমি বলে গিয়েছিলাম।
– ‘হ্যাঁ, মা আমাকে বলেছে তুমি তিশার সাথে দেখা করতে গিয়েছো তাই আমি আরিফ ভাই কে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি বলল তুমি অনেকক্ষন আগেই সেখান থেকে চলে এসেছো ।’

রিফাতের কথা শুনে তারিন মাথা নিচু করে ফেললো। কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না তারিন। এখন সত্যি টা বললে রিফাত নানান রকম প্রশ্ন করবে। যার একটাই উত্তর আশিক। কিন্তু এই নামটা শুনলেই তো রিফাত রেগে যায়। তারিন কে চুপ থাকতে দেখে রিফাত আবার বলল – ‘ কী হলো চুপ করে আছো কেন?’

তারিন আমতা আমতা করে বলল – ‘আসলে তিশা’র সাথে দেখা করে বাড়িতে আসার সময় তোমার ফ্রেন্ড ইরা’র সাথে দেখা হলো।’

রিফাত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘ইরার বাড়ি তো উল্টো দিকে। আর অনেকটা দূর। আমি যতদূর শুনছি আরিফ ভাইয়ের অফিস এবং বাড়ি দু’টোই আমার অফিস যাওয়ার পথে।’
– ‘আমি কীভাবে জানবো তিনি এদিকে কেন এসেছিলেন। তার সাথে দেখা হলো। তিনি বললেন একটু কোথাও বসে কথা বলতে। তাই আমরা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিছু কথা বলে এলাম।’

রিফাত আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে বাথরুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে দেখে তারিন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। রিফাত ও তারিনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তারিনের হাতে স্পর্শ করে বলল – ‘আমি তোমাকে অবিশ্বাস করছি না। আসলে আরিফ ভাই যখন বলল তুমি তাদের বাসা থেকে অনেকটা আগেই বেড়িয়ে গেছো তখন একটু চিন্তা হচ্ছিলো ।’

তারিন রিফাতের বুকে মাথা রেখে বলল – ‘আমি কী কিছু বলেছি তোমায়।’
– ‘না।
– ‘তাহলে এত কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিলো বলে তুমি জিজ্ঞেস করেছো আমি এতক্ষন কোথায় ছিলাম। এটা সাধারণ ব্যাপার।

নিচে থেকে আয়শা বেগম ডাক দেওয়াতে রিফাত আর কিছু বলতে পারলো না। তারিন বলল – ‘চলো মা ডাকছে খাবার খাওয়ার জন্য।’
– ‘হুম।

দু’জনে নিচে চলে গেল। খাওয়া শেষ করে আবার ঘরে চলে এলো।

৪১.
পরের দিন রিফাত অফিসে যাওয়ার পর তারিন বেরিয়ে পড়লো সেই বাড়িটার উদ্দেশ্যে। রিফাত দের বাড়ি থেকে বেশ অনেকটা দূরে ছিলো আশিকের বাড়ি। চিনতে অসুবিধা হবে বলে আগে থেকেই ইরা’র কাছে জেনে নিয়েছে কীভাবে যেতে হয়। ইরা তখন আশিকের উপর নজর রাখছিলো। গাড়িতে যেতে যেতে তারিন ভাবছে যেভাবেই হোক আজকে আশিকের মুখোমুখি হতেই হবে। তারিনের মনে হচ্ছে এই অয়নের সাথে আশিকের কোন কানেকশন আছে। কিংবা এরা দু’জনেই একি মানুষ।
প্রায় ১ ঘন্টা পর সেই বাড়িটার সামনে গেল তারিন। গেটের কাছে থাকা লোকটা কে জিজ্ঞেস করলো – ‘আচ্ছা এই বাড়িটার মালিক কে?’

লোকটা একবার তারিনের দিকে তাকালো তারপর বলল – ‘আগে বলুন আপনি কে?’
– ‘আমার নাম তারিন।’
– ‘কিন্তু আপনি এই বাড়ির মালিক কে কেন খুঁজছেন?’
– ‘উনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।’
– ‘আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি ভিতর থেকে আসছি।’

তারিন কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই লোকটা বাড়ির ভিতরে চলে গেল। তারিন বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো লোকটার। এর আগে যখন তারিন এই বাড়িতে এসেছিলো তখন এই লোকটা ছিলো না।
কিছুক্ষন পর তারিন সামনে তাকিয়ে দেখে লোকটা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে৷ তারিনের সামনে এসে বলল – ‘সোজা গিয়ে দু’তালায় চলে যান।’

তারিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – ‘আমি আপনাকে মালিকের নাম জিজ্ঞেস করেছি শুধু।’
– ‘উপরে মালিক নিজেই বসে আছে। তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন সব জানতে পারবেন।’

তারিন মনে মনে বলল – ‘নিশ্চয় উপরে আশিক আছে। আজকে আশিকের সাথে কথা বলতেই হবে।’

তারিন আস্তে আস্তে বাড়ির ভিতরে চলে গেল। দু’তালায় গিয়ে দেখে পুরোটাই অন্ধকার হয়ে আছে। তারিন কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। চারদিকে কেমন অন্ধকার হয়ে আছে। হঠাৎ পিছন থেকে তারিনের মাথায় কেউ আঘাত করে। তারিন সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যায়।

৪২.
তখন দারোয়ান অয়ন কে ফোন দেওয়ার জন্য বাড়ির ভিতরে ঢুকেছিলো। কারণ অয়ন আর আশিক একি মানুষ। যেদিন প্রথম তারিনের ছবি দেখেছিলো অয়ন। সেদিন থেকেই তারিনের শরীরের উপর নজর পড়ে । মাঝে মাঝে নানান অজুহাতে তারিনের শরীরে হাত দিত। তারিন কিছুটা বুঝতে পারলেও কিছু বলতো না কারণ অয়ন এর উপর ওর অনেক বিশ্বাস ছিলো৷ অয়ন আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলো যেভাবেই হোক তারিনের শরীর ভোগ করবেই। পরে যাতে কোন সমস্যায় পড়তে না হয় তাই নিজের আসল পরিচয় গোপন রেখে অন্য পরিচয় দিয়েছিলো। অয়ন নাম বাদ দিয়ে আশিক বলেছিলো। এর আগেও অনেক মেয়ের সাথে এইরকম করেছে অয়ন। কিন্তু এবার অয়ন সফল হতে পারেনি৷ তারিন নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে সেদিন অয়নের হাত থেকে পালিয়ে আসে। তারপর থেকে অয়ন আর ওই বাড়িতে যায়নি। ইরা দের বাড়িতে থাকে। সেদিন হঠাৎ করে বই মেলায় তারিন কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে গিয়েছিলো অয়ন। সবার সামনে নিজের খারাপ রূপ ধরা পড়ে যাবে বলে তারিন কে না চেনার অভিনয় করেছে। বাড়িতে এসে অয়ন ঠিক করে তারিন কে রিফাতের থেকে আলাদা করে দেবে। সেদিন তারিন ও রিফাত কে একসাথে দেখে অয়নের মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিলো। কিন্তু তখন কিছু বলেনি। তারিন যে নিজে থেকেই অয়নের কাছে চলে আসবে ভাবতে পারেনি অয়ন। দারোয়ান এর ফোন পেয়ে প্রথমে অনেকটা ঘাবড়ে যায়। পরে দারোয়ান এর দেওয়া বর্নণা অনুযায়ী বুঝতে পারে এই মেয়েটা তারিন। অয়ন তখন দারোয়ান কে বলে তারিন কে বাড়ির ভিতরে ঢুকিয়ে কোন ভাবে অজ্ঞান করে রাখতে। অয়নের কথা মতো দারোয়ান তারিন কে ভিতরে যেতে বলে। আগে থেকেই উপরের সব লাইট অফ করে দেয় দারোয়ান । অন্ধকার জায়গায় সুযোগ পেয়ে তারিনের মাথায় আঘাত করে বাহিরে চলে আসে।
দারোয়ান কে বলা সব কথা ইরা শুনতে পায়। আর নিজের মোবাইলে ভিডিও করে রাখে। অয়ন বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর ইরা রিফাত কে ফোন দিয়ে সব জানায়। রিফাত সাথে সাথে অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়ে। গাড়িতে বসে আরিয়ান কে ফোন দিয়ে সব কিছু বলে। ইরা ও আর দেরি না করে বেড়িয়ে পড়ে বাড়িটার উদ্দেশ্যে। আরিয়ান পুলিশ নিয়ে সেই বাড়িটার কাছে চলে যায়। দারোয়ান কে ধরে দু’টো থাপ্পড় মারতেই সব কিছু বলে দেয়। তারপর সবাই মিলে উপরে চলে যায়। একটা ঘরে গিয়ে দেখে তারিন মাটিতে পড়ে আছে। আর অয়ন জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সেখান থেকে অয়নের পালানোর কোন উপায় ছিলো না কারণ সব দিকে পুলিশ ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলো। অয়ন কে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় সেই সাথে ইরার কাছে থাকা ভিডিও। তারপর তারিন কে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে ওরা। ডাক্তার এসে মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিয়ে যায়।

৪৩.
তারিনের যখন জ্ঞান ফিরে নিজেকে একটা ঘরে আবিষ্কার করে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে আয়শা বেগম, ইকবাল হোসেন, তিশা, আরিফ এবং ইরা, মিম দাঁড়িয়ে আছে । আর ঠিক পাশেই হাত ধরে বসে আছে রিফাত।
তারিন উঠতে যাবে তখন দেখে মাথায় ব্যান্ডেজ করা। আর শরীর ব্যথা হয়ে আছে। শরীর খুব দুর্বল হয়ে আছে।
তখন কার কথা মনে পড়তেই তারিন শিউরে উঠলো। শক্ত করে রিফাতের হাত ধরলো।
আয়শা বেগম বলল – তোমরা এখন সবাই ড্রয়িংরুমে যাও ওরা কথা বলুক।’
সবাই মিলে ঘর থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে চলে গেল।
রিফাত আস্তে আস্তে তারিনের কানের কাছে গিয়ে বলল – ‘চলো ছাদে যাই।’

তারিন কিছু বলল না শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ ইশারা করলো। রিফাত তারিনের হাত ধরে আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নামিয়ে দিল। তারপর দু’জনে ছাদে চলে গেল। তারিন ছাদে গিয়ে দেখে রাত হয়ে গেছে। রিফাত সাথে ছিলো বলে ছাদে আসতে কোন ভয় পায়নি তারিম। বাড়ি থেকে বের হয়েছিলো সকালে। আর এখন রাত। মাঝে অনেকটা সময় চলে গিয়েছে যা তারিন বুঝতেই পারেনি। দু’জনে দোলনায় গিয়ে বসলো। কেউ কোন কথা বলছে না। দু’জনেই চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।

নীরবতা ভেঙে তারিন রিফাতের কাছে জিজ্ঞাসা করলো কীভাবে এখানে এসেছে। রিফাত তারিন কে সব কিছু বলল। সব কিছু শোনার পর তারিন চুপ হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তারিন রিফাতের বুকে মাথা রেখে কান্না করে দিল। রিফাত জিজ্ঞেস করলো – ‘কী হলো কাঁদছো কেন?’
– ‘আজ আমার জন্য তোমাদের এত ঝামেলায় পড়তে হলো।’
– ‘এইসব কথা আর বলবে না।’
– ‘আচ্ছা রিফাত আজ যদি আমি মরে যেতাম।’

তারিনের কথা শুনে রিফাত বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কোন কিছু না বলেই তারিন কে কোলে তুলে নিল। তারিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো -; কি হলো?’

” নির্ঘুম রাতের স্মৃতিগুলো বুকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই স্মৃতির মালিক কে বুকে তুলে নিলাম। যাকে আকড়ে ধরে সারাজীবন বেঁচে থাকা যায়”

তারিন রিফাত কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল – “ভালোবাসি”

রিফাত বলল – “আমিও ভালোবাসি”
– “কাকে?’
– “স্মৃতির মালিককে”

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here