মেঘপরীর গল্প পর্ব-৭

0
1505

#মেঘপরীর গল্প
লেখক — মাহমুদ
পর্ব ৭


ও আস্তে আস্তে হেটে আমার সামনে এসে দাড়ালো। আমার মুখের সামনে মুখটা এনে বললো
-একটা গান শুনবি?(মেঘ)
ওর মুখ দিয়ে খুব বাজে একটা গন্ধ বের হচ্ছে। ও মনে হয় ড্রিংকস করেছে। কিন্তু আগেতো ও এইসবের গন্ধ শুকলেও বমি করে দিতো আর আজ ও নিজে এটা খাচ্ছে। একটা মানুষ কি করে এতটা বদলে যেতে পারে। ছিঃ আজ সত্যি ঘৃনা হচ্ছে ওর উপর। ও এতোটা নিচে নেমে গেছে। এই ছেলেটা একসময় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো আমার ভাবলেই,,,,, ভাবতে ভাবতে ও আবার বললো
-কিরে শুনবি না আমার গান? প্লিজ একটা গায়বো। তোকে গান শোনাতে খুব ইচ্ছা করছে রে। কতদিন তোকে গান শোনাইনি বলতো?(কেমন মাতাল মাতাল ভাবে বললো)
এখন যদি বলি শুনবো না তাহলে হিতে বিপরীত হবে। ও এখন ওর নিজের মধ্য নেই। ওকে কিছু বললে ও হয়তো আরও খেপে যাবে। কিন্তু আমার ওকে এখন একদম সহ্য হচ্ছে না। ও খুব আলতো করে আমার হাতটা ধরে টেবিলের কাছে নিয়ে গেলো আর একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। ওকে এখন একদম মাতালদের মতো দেখতে লাগছে। ওর কন্ঠ কেমন এড়িয়ে যাচ্ছে। এই গলায় গান গায়বে কি করে। আর একটা মাতাল কি গান গায়তে পারে সেটা আমার জানা আছে। এমনিতেও তখন কেমন বেসুরা গিটার বাজাচ্ছিলো আর এখনতো ও পুরো মাতাল হয়ে আছে। কি গান শুনাবে আল্লাহই জানে। আমার কানের বাড়োটা আজ বাজাবে বোঝাই যাচ্ছে। ও গিটারটা হাতে নিতে প্রথমে খুব জোড়ে একটা শব্দ করলো। তারপর কেমন অদ্ভুদ কিরিং কিরিং করছে। আমার মেজাজ এবার খুব খারাপ হচ্ছে। হঠাৎ করে গিটারে খুব সুন্দর একটা সুর বাজতে থাকলো তারপর ও একটা গান গায়তে শুরু করলো।

*এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে
সকাল বিকেল বেলা কত পুরনো নতুন পরিচিত
গান গায়তাম খুলে গলা।
কত এলোমেলো পথ হেটেছি দুজন হাত ছিলোনা
তো হাতে ছিলো যে যার জীবনে
দুটো মন ছিলো জড়াজড়ি এক সাথে।
কত ঝগড়া বিবাদ সুখের স্মৃতিতে
ভরে আছে শৈশব তোকে স্মৃতিতে স্মৃতিতে
এখনো তো ভালোবাসছি অসম্ভব।
কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার বন্ধু হারিয়ে যায়, ??
কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার বন্ধু হারিয়ে যায়??
কেন হারাচ্ছে সব বাড়াচ্ছে ভীড় হারানোর তালিকায়??

আজ কে যে কোথায় আছি কোন খবর নেইতো কারো অথচ তোর ওই দুঃখ গুলোতে অংশ ছিলো আমারো। এই চলতি জীবন ঘটনা বহুল দু এক ইঞ্চি থাকে
তুইতো পাবিনা আমায় আর আমিও খুজিনা তোকে। কত সুখ পাওয়া হয়ে গেলো তোকে ভুলে গেছি কতবার, কত সুখ পাওয়া হয়ে গেলো তোকে ভুলে গেছি কতবার।
তবু শৈশব থেকে তোর গান যেন ভেসে আসে বার বার। আজ চলতে শিখে গেছি তোকে নেই কিছু প্রয়োজন
তবু ভীষনও প্রয়োজনে তোকেই খুজেছে আমার মন তুই হয়তো ভালই আছিস আর আমিও মন্দ নেই তবু অসময়ে এসে স্মৃতি গুলো বুকে আকিবুকি কাটবেই। তুই কত দুরে চলে গেলি তোকে হারিয়ে পেলেছি আমি, তুই কত দুরে চলে গেলি তোকে হারিয়ে ফেলেছি আমি। এই দুঃখটা হয়ে থাক এই দুঃখটা বড় দামী।
কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার বন্ধু হারিয়ে যায় কেন হারাচ্ছে সব বাড়াচ্ছে ভীড় হারানোর তালিকায়।

সেই কোন কথা নেই মুখে শুধু চুপচাপ বসে থাকা ছিলো যার যার ব্যাথা তার তার বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। আমি ভাবীনি তখন ভুলেও এমন দুজন দু দিকে যাবে বুজিনি আমার হৃদস্পন্দন আমার অচেনা হবে।
এই বিভক্ত পৃথিবীতে বড় শক্ত বাধন ছিলো,
এই বিভক্ত পৃথিবীতে বড় শক্ত বাধন ছিলো।
হলো অহংকারের জয় সেই বন্ধন ছিড়ে গেলো।
সেই অহংকারের খেলায় দুজনে জিতে গেছি একসাথে প্রতি ইটের জবাব পাথরে দিয়েছি বিজয়ের মালা হাতে। সেউ বিজয় উল্লাস প্রতিধ্বনিত মূর্ত আর্তনাদে আজ বুকের ভেতর মিষ্টি একটা শৈশব শুধু কাদে।
আজ অবেলার অবসারে কেন লাগছে ভীষন একা,
আজ অবেলার অবসারে কেন লাগছে ভীষন একা। কত হাজার বছর তোর হাত টাকে হয়নিতো ছুয়ে দেখা। কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার বন্ধু হারিয়ে যায়
কেন হারাচ্ছে সব বাড়াচ্ছে ভীড় হারানোর তালিকায়।

আমি কত কত বার আকি তোর ছবি ও মোর কল্পনাতে আজও জ্বলে যায় আজও পুড়ে যায় তোর দুচোখের অবসাদে।
ডাক নীল নীল নীল আকাশের বুকে অন্ত হাহাকার, ডাক নীল নীল নীল আকাশের বুকে অন্তত হাহাকার। আজ বুকের ভেতর ভাঙছে ভাঙছে ভেঙে সব চুরমার। কোনো শত্রুরও যেন প্রাণের বন্ধু এমন দুরে না যায়, কোনো শত্তুরও যেন প্রাণের বন্ধু এমন দুরে না যায়। শোন বন্ধু কখনো কোনো বন্ধুকে বলোনা যেন বিদায়। কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার বন্ধু হারিয়ে যায় কেন হারাচ্ছে সব বাড়াচ্ছে ভীড় হারানোর তালিকায়*।

ওর গানটা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। কতটা কষ্ট নিয়ে গানটা গেয়েছে কেবল ওই জানে আর যে শুনেছে সেই জানে। ও ওর মনের মধ্য কতো কষ্ট চেপে রেখেছে সেটা ওর গান শুনে বুঝতে পারছি। ও একদম চুপচাপ পাথরের মত বসে আছে। কোনো নড়াচড়া করছে না এক মনে মাথা নিচু করে বসে আছে। আমি উঠে ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম আর ওকে একবার মেঘ বলে ডাকলাম। কিন্তু ও কোনো সাড়া দিচ্ছে না দেখে আমি ওর কাধে হাত রাখলাম। আমি ওর কাধে হাত রাখতেই ও উঠে দাড়িয়ে আমায় জড়িয়ে ধরলো খুব শক্ত করে আর কাদতে লাগলো। বেশ জোড়ে জোড়েই কাদতে লাগলো। আমি ওকে কি বলে স্বান্তনা দিবো বুঝতে পারছি না। এদিকে ও কেদেই যাচ্ছে। আজ পর্যন্ত কোনো দিন আমি ওকে এতটা ভেঙে পড়তে দেখিনি। ওর চোখে একফোটা পানি দেখিনি কখনো। ওর চোখের পানি দেখে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ছোট বেলা থেকে ওকেই আমি আমার সব থেকে কাছের মানুষ ভেবে এসেছি, আমার সব থেকে প্রিয় বন্ধু। যতই ঝগড়া করতাম না কেন ওকে ছাড়া আমার দিনই চলতো না। যেই মেঘকে কখনো একটুও মন খারাপ করতে দেখিনি, খারাপ ভালো সব সময় হাসতে দেখেছি আজ সে এইভাবে কাদছে এটা আমি কি করে সহ্য করবো। আমার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে। আমি মেঘকে বললাম
-মেঘ কি হয়েছে তোমার? তুমি এভাবে কাদছো কেন?
-(কেদেই যাচ্ছে)
-আমায় বলবে না? আমিতো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড, আমাকে একবার বলবে না তোমার কি হয়েছে?
-তোরা মেয়েরা খুব খারাপ। খুব লোভী। তোরা কারোর ভালাবাসা পাওয়ার যোগ্য না। তোরা কারোর ভালো বন্ধু হতেই পারিস না। তুই, রাত্রি তোরা সব মেয়ে একই রকম। তোদের মতো মেয়েদের আমি শুধু ঘৃনা করি। বুঝলি ঘৃনা করি আমি তোদের, ঘৃনা করি?(কথা গুলো আমায় খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। আমি হাপাচ্ছিলাম।) তারপর হঠাৎ জোড়ে ধাক্কা দিয়ে আমায় ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বললো
-চলে যা এখান থেকে। চলে যা। আমার সামনে আর কখনো আসবি না। আমি তোর মুখ দেখতে চায়। দুর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে।(মেঘ খুব জোড়ে চিল্লিয়ে কথা গুলো বললো)
আমি কাদছি কিন্তু কোনো শব্দ না করে। এখন এখানে থাকা যাবে না। তাহলে ও কি করে বসবে আমি জানি না। কিন্তু পায়ে খুব ব্যাথা, এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার কারণে পা টা হয়তো মচকে গেছে। আমি কিছুতেই উঠতে পারছি না। আর এদিকে ব্যাথায় আর ওর কথা শুনে কেদেই যাচ্ছি। আমি উঠছি না দেখে ও রাগ দেখিয়ে আমার সামনে দিয়ে নিচে চলে গেলো। একবার ফিরেও তাকালো না। আমি উঠতে পারছিনা দেখেও এভাবে চলে গেলো। আমি অনেক কষ্ট করে উঠে খুব আস্তে আস্তে হেটে আমার রুমে আসলাম। আমি আসার সাথে সাথে মাও আসলো।
-কি রে কি হয়েছে তোর পায়ে?(মা)
মা কে সত্যিটা বলা যাবে না। তাই মিথ্যে বললাম।
-সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেছি।
-একটু সাবধানে নামতে পারিস না। সব সময় শুধু লাফালাফি করে বেড়াবে। নিশাত? নিশাত?
-হ্যা মা বলো?(নিশাত)
-তোর আপু পায়ে ব্যাথা পেয়েছে মলম টা একটু নিয়ে আয়তো পায়ে লাগিয়ে দি। তাহলে ব্যাথাটা একটু কমবে। আর সকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। এখন অনেক রাত হয়েছে এখনতো যেতে পারবো না। যা মলমটা নিয়ে আয়।
-ঠিক আছে।(নিশাত)
তারপর নিশাত মলম নিয়ে আসলে মা খুব সুন্দর করে পা মলম দিয়ে মেসাজ করে দিলো। আমি জানি আজ আমার রাতে ঘুম হবে না। সারারাত মেঘের কথাগুলই মাথায় ঘুরপাক খাবে। এমনিতে পায়ে খুব ব্যাথা তার মধ্য এতো টেনশন করতে পারবো না। মেঘের ব্যাপারটা নিয়ে সকালে ভাববো। তাই নিশাতকে একটা ঘুমের ঔষধ নিয়ে আসতে বললাম পায়ের ব্যাথায় ঘুম আসছে না বলে। ও ঔষধ টা আনলে ওটা খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।

চলবে,,,,,,,

লেখকের অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here