#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৪
#তানিশা সুলতানা
সাদি আর শেম্পুর বোতলটা এগিয়ে দেয় না৷ রুম থেকে কোনো সাড়াশব্দও শোনা যাচ্ছে না। ভীষণ বিরক্ত লাগে ছোঁয়ার। একটা শিশু বিপদে পড়েছে তাকে হেল্প করা কি একটা বুইড়া খাটাস পোলার কাজ না?
“সাদু শুনতে পাচ্ছেন?
তবুও কোনো সারা নেই।
বাধ্য হয়ে ছোঁয়া শেম্পু ছাড়াই গোছলটা সেরে নেয়।
শাড়ি পড়তে অভস্ত্য নয় ছোঁয়া। আগে কখনো শাড়ি পড়েও নি। বিয়ের দিন কাকিমা পড়িয়ে দিয়েছিলো। কিভাবে পড়িয়েছে সেটাও খেয়াল করে নি ছোঁয়া। কেনোনা তখন ছোঁয়ার ভীষণ মন খারাপ ছিলো। এই লোকটাকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না।
ঘটা করে বিয়ে হয় নি ছোঁয়ার। গ্রামের মেয়ে। একটা বোন আর বাবা মা এই তো ছোঁয়ার পরিবার। গ্রামের বাজারে একটা কাপড়ের দোকান আছে ছোঁয়ার বাবার। সেই দোকান করেই সংসার চলে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা মায়ের কাছে মেয়ে মানে বোঝা। বয়স পনেরোতে পা দিতে না দিতেই বিয়ের তোরজোর শুরু করে দেয়।
ছোঁয়ার বড় বোন অনার্স ফাইনাল ইয়ার পড়ে। এই মেয়ের বিয়ে দিতে পারছে না। যেখান থেকেই দেখতে আসে, দেখে পছন্দ হয় কিন্তু আর কোনো খবর থাকে না। সাদির বাবা মাঝেমধ্যেই গ্রামের যায়। ওইখানেই তার বাড়ি ছিলো আগে৷ এখন অবশ্য কেউ থাকে না সেখানে। তিনি মাঝেমধ্যে গিয়ে বাবার কবরটা দেখে আসে।
সেদিনও গ্রামে গেছিলো। ছোঁয়ার বড়বোন সিমিকে দেখে বেশ ভালো লেগেছিলো ওনার। সেদিনই মিষ্টি ফলে নিয়ে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব রাখে। ছোঁয়ার বাবা মায়ের খুশি আর দেখে কে?
খুশিতে লাফাতে লাফাতে বিয়েতে হ্যাঁ বলে দেয়। সিমিকে না জানিয়েই। সাদির বাবা বলে দেয় শুক্রবারই তিনি ঘরোড়া ভাবে বিয়ে দিয়ে বউ নিয়ে যাবেন।
সেই কথাই শই।
সিমি এই কথা জানার পর কোনো রিয়াক্ট করে না। এমনকি ছেলের ছবিও দেখতে চায় না।
অতঃপর শুক্রবারে বরযাত্রি চলে আসার পরই সিমি বাড়ি থেকে চলে যায়।
বরযাত্রি বলতে দশ জন আসে।
শফিক চৌধুরী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাকে সবটা বলে ছোঁয়ার বাবা। তিনি কিছুখন ভেবে ছোঁয়ার সাথে বিয়ের কথা বলে।
আর ঘটনাটা কাউকে জানাতে না করেন।
কারণ তিনি বাড়ির কাউকেই সিমির ছবি দেখায় নি।
গোছল সেরে কোনোরকমে শাড়ি পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে ছোঁয়া। আর সামনেই শাশুড়ীকে কড়া চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছোঁযা শুকনো ঢোক গিলে। এই মহিলা আবার রেগে গেছে কেনো?
ছোঁয়া কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াশরুমের সামনেই।
সামনে আগানোর সাহস পাচ্ছে না। শুকনো একটা ঢোক গিলে ছোঁয়া।
“ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
কর্কশ গলায় বলে ছোঁয়া।
” না মানে আআমি কি কিছু
ছোঁয়া আমতা আমতা করে বলে
“না মানে আমি কি?
স্বামীর নাম মুখে নিতে নেই জানো না তুমি?
ছোঁয়া ফোঁস করে শ্বাস নেয়।
” শাশুড়ী আপনি না তখন আমি আপনার ছেলের নাম জানি না বলে বকলেন?
তাহলে এখন কেনো বকছেন? আমি তো আমার জামাইয়ের নাম জানি।
মিস্টার সাদদদদদদু
ছোঁয়া শাশুড়ীর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে।
কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ধাপ করে পড়ে যায় ছোঁয়া কাপড়ে বেঁধে।
কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে সাদি বেলকনি থেকে রুমে আসে।
শাশুড়ী বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।
“আল্লাহ গো কোমরটা গেলো গো? এখন আমাকে কে দেখবে? ও মা গো
তোমার মেয়ের কোমর ভেঙে গেছে। আর জীবনেও তোমার মেয়ের বিয়ে হবে না গো।
ছোঁয়া কান্না করতে করতে প্রলাপ বকতে থাকে। শাশুড়ী থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলছে এই মেয়ে?
” সাট আপপপপপ
সাদি একটা ধমক দেয়। কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। এক ধমকেই চুপসে যায়।
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
শাশুড়ী ভ্রু কুচকে সাদির দিকে তাকিয়ে আছে।
“যে যেটায় কমফোর্টেবল নয় তাকে সেটা পড়তে কেনো বলো তুমি মা?
সাদি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে।
” কেনো বলবো না? শাড়ি পড়তে না পারলে বিয়ে কেনো করেছে?
গম্ভীর গলায় বলেন উনি।
“ও তো ইচ্ছে করে আমার গলায় ঝুলে পড়ে নি। তোমরা এনেছো।
বিয়ে দেবে না আমায়। দিব্যি দিয়ে বিয়ে করালে। তো ওর দোষ কোথায়?
তোমরা দিব্যি টিব্যি দিয়ে বিয়ে করিয়েছো। ওকেও নিশ্চয় ওর ফ্যামেলি ট্যাপে ফেলে বিয়ে দিয়েছে।
এই টুকু বাচ্চা মেয়ে বিয়ের কি বুঝে?
চিৎকার করে বলে সাদি। সাবিনা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না।
সাদি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে।
” তোমরা ওকে এই বাড়িতে এনেছো। তো তোমার দায়িত্ব ওকে মানিয়ে নেওয়া।
“তোর ও তো দায়িত্ব ওকে তোলার।
সাবিনা বেগম বুকে হাত গুঁজে বলে।
” আমার কোনো দায়িত্ব নেই। আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি। আমি মেনে নিতে পারছি না। সময় চাই আমার।
“তো আমারও সময় চাই।
“তাহলে ওকে ওর বাড়িতে দিয়ে এসো।
সাদি বিরক্ত হয়ে বলে।
ছোঁয়া কাঁদো কাঁদো ফেস করে দুজনের কথা শুনছে। এই মহিলা তো সাংঘাতিক। ছেলেকেও এভাবেই কথা শোনায়। কথা শোনানোটাই যেনো মহিলাটির একমাত্র কাজ।
” এনিওয়ে আমি খাবো। অফিসে যেতে হবে৷ তোমাদের মেলোড্রামা শেষ হলে খেতে দিয়ে দাও আমায়৷ নাহলে বলে আমি রান্না করে খাচ্ছি।
বিছানায় বসে বলে সাদি।
“তোর পিচ্চি বউকে ঠিকঠাক শাড়ি পড়িয়ে নিচে আয়। আমি খাবার রেডি করছি।
ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায় উনি। ছোঁয়া উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। আবারও শাড়িতে বেঁধে পড়ে যায়।
সাদি বেশ বিরক্ত।
” প্রতিবন্ধী তুমি?
সাদির এরকম প্রশ্নে হকচকিয়ে ওঠে ছোঁয়া। ছোটছোট চোখ করে তাকায় সাদির দিকে।
সাদি রুমে থাকা টিভিতে শাড়ি পড়ার ভিডিও অপেন করে দেয়।
“আই হোপ এবার পারবে।
বলেই চলে যায়। সাদির চুল গুলো ভেজা। গোছল করলো কোথায়?
সাদির ওপর ক্রাশ খায় ছোঁয়। লোকটার রাগি রাগি গলায় কথা গুলো দারুণ লাগে।
ছোঁয়া বুকের বা পাশে হাত দিয়ে মুচকি হাসে।
ভালোবাসার অনুভূতি কেমন হয় জানা নেই ছোঁয়ার। প্রেমে পড়ার বয়স এটা। আর এই বয়সেই বিয়ে হয়ে গেছে ওর। তাই ভালোবাসা ক্রাশ ভালো লাগা এসব বোঝে না।
তবে এটা বুঝতে পারছে এই গোমড়া মুখো লোকটাকে খুব ভলাো লেগেছে। যাকে বলে মারাক্তক ভালো লাগা।
ভিডিও দেখে দেখে শাড়ি পড়ে নেয় ছোঁয়া। কোমরে কিছুটা ব্যাথা পেয়েছে। শাড়ি পড়তে গিয়ে সেটা আঁচ করতে পারে ছোঁয়া।
ছোঁয়া শাশুড়ীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। খুব খিধে পেয়েছে তবুও খেতে বসার সাহস পাচ্ছে না। শাশুড়ী কি বলবে না বলবে।
সাদি করলার জুস খেয়ে নিয়েছে পুরো এক গ্লাস। আর এখন করলা ভাজি দিয়ে রুটি খাচ্ছে।
ছোঁয়া আড়চোখে সাদির খাওয়া দেখছে। লোকটার খাওয়ার স্টাইল টাও দারুণ।
” সাদি ছোঁয়াকে সাথে নিয়ে যা। এখানকার একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে তারপর অফিসে চলে যাস।
সাদির বাবা মুখে খাবার পুরে বলে।
“সাগর তনু
তোরা ওকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবি।
আর আসার সময় দুটো ফিটার কিনে নিয়ে আসিস।
সাদি খেতে খেতে বলে।
” ওমা আপনি ফিটার খাবেন?
ছোঁয়া বোকার মতো সাদিকে প্রশ্ন করে। ছোঁয়ার কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসে। সাদি কটমট চোখে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
“সাথে কসটিপও নিয়ে আসিস।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে বেরিয়ে যায় সাদি।
” এই লোকটা এমন কেনো? একদম অন্যরকম।
ছোঁয়া মনে মনে বলে।
চলবে
বানান ভুল থাকবে। একটু মানিয়ে নেবেন।