#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১৩ (বোনাস পর্ব)
#তানিশা সুলতানা
তনুর রুমে ঘুমতে এসেছে ছোঁয়া। তনু এতে একটুও অবাক হয় নি। কারণ এই টুকু একটা মেয়ের সাথে সাদি কখনোই মানিয়ে নিতে পারবে না। চেষ্টাও করবে না মানিয়ে নেওয়ার।
ছোঁয়া এখনো সিমির কথা ভেবে যাচ্ছে। দুম করে কেনো বিয়ের জন্য রাজী হলো? আর এতোদিনই বা কেনো রাজি হলো না?
কি এমন ঘটে গেলো?
খুব করে ইচ্ছে করছে বাড়ি চলে যেতে। কিন্তু পারছে না। ভীষণ কান্না পাচ্ছে ছোঁয়ার।
“আমাকে নিয়ে যাবে তোমাদের সাথে?
বিছানায় গোল হয়ে বসে গালে হাত দিয়ে বলে ছোঁয়া। তনু অসহায় চোখে তাকায় ছোঁয়ার মুখের দিকে।
” সরি সোনা। নিতে পারবো না।
এখানেই থাকতে হবে তোমায়।
ছোঁয়ার মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়।
“তুমি কি চাও না তোমাদের সম্পর্কটা ভালো হোক?
তনু প্রশ্ন করে ছোঁয়াকে। ছোঁয়া সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে।
” আমি ভালো থাকতে চাই। টেনশন ফ্রী থাকতে চাই।সব সময় হাসিখুশি থাকতে চাই। মানিয়ে নেওয়া মেনে নেওয়া এসব চাইনা।
নিজের মতো বাঁচতে চাই।
আপন মনে বলে ছোঁয়া।
তনু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এরা কি করে এক হবে? কেউ কাউকে চাই না।
“ছোঁয়া সম্পর্কের মূল্যটা বোঝো। মানিয়ে নিতে হবে তোমায়। বাধ্য করতে হবে ভাইয়াকে ভালোবাসতে।
” আমিই কেনো করবো? তোমার ভাইয়াও তো মানিয়ে নিতে পারে। আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করতে পারে।
ছোঁয়া কপাল কুচকে বলে। তনু কপালে চাপকে।
“ঘুমাও তুমি।
তনুও ছোঁয়ার পাশে শুয়ে পড়ে। আর তখনই মায়ের কল আসে তনুর ফোনে। লাফিয়ে ওঠে তনু
” এই ছোঁয়া আমার রুম থেকে বের হও। জলদি বের হও।
ছোঁয়াকে টেনে তুলে বলে। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকায় তনুর দিকে।
“তোমার শাশুড়ী কল দিছে। এখনি চলে যাও। নাহলে আমাকে সহ করলার জুস খাওয়াবে।
শাশুড়ীর কথা শুনে ছোঁয়াও ভয় পেয়ে যায়।
” আসছি
কাঁদো কাঁদো ফেস করে চলে যায়।
সাদি ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। মাঝেমধ্যে কিছু একটা বিরবির করছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে।
ছোঁয়া দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কিছুখন সাদিকে পর্যবেক্ষণ করে।
হাইট নেইমারের মতোই। ওয়েট নেইমারের মতোই। গায়ের রং নেইমারের থেকে বেশি উজ্জ্বল। দাঁতগুলো প্রায় নেইমারের দাঁতের মতোই। বাম পাশে কানের ঠিক দুই ইঞ্চি নেইমারের স্টাইল করে একটা দাগ টানা আছে। কিন্তু সাদির কেটে যাওয়ার দাগ আছে।
হাতের পেশি দুটো নেইমারের মতোই ফোলা ফোলা।
বেশ মনে ধরে যায় ছোঁয়ার। একে মনের কিছুটা অংশ দেওয়াই যায়।
শাশুড়ী মেসেজ আসে। ছোঁয়া দরজার কাছে দাঁড়িয়েই মেসেজ অপেন করে।
“এই মেয়ে লাগেজ খুলে ডান পাশের চান নম্বর শাড়িটা পড়বে। আর আমার ছেলের গা ঘেসে ঘুমবে।
মেসেজ দেখে ছোঁয়া হেসে ফেলে। এটা শাশুড়ী না অন্য কিছু?
রাত বারোটার সময় চেঞ্জ করার কোনো মানেই হয় না।
গুটিশুটি মেরে সাদির পাশে শুয়ে পড়ে ছোঁয়া। সাদি একবার আড়চোখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সাদি তাকাতেই ছোঁয়া দাঁত কেলায়।
“আপনাকে পাক্কা দশ মিনিট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে একটা জিনিস নোটিশ করলাম।
হাতের ওপর মাথা রেখে আধশোয়া হয়ে বলে ছোঁয়া।
সাদি কিছুই বলে না। একমনে কাজ করতে থাকে। ছোঁয়া কিছু বলেছে যেনো সে শোনেই নি।
” নোটিশ করলাম আপনি ৮০% আমার নেইমারের মতোই দেখতে।
তো মনের কিছুটা অংশ আপনাকে দেওয়াই যায়।
সাদি ভ্রু কুচকে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
“নেইমার কে?
কপালে তিনটে ভাজ ফেলে বলে সাদি।
” ও মা চিনেন না?
ছোঁয়া এক লাফে উঠে বসে। সাদি এক ইঞ্চি পিছিয়ে যায়।
“ওই যে
” থাক বলতে হবে না। চিনি আমি। কিন্তু আমি একদম ওনার মতো না। আমি আমার মতো।
“হ্যাঁ আপনার কথাবার্তা আপনার স্টাইলে। আইমিন করলা টাইপের। আর ওনার মুখ থেকে মধু ঝড়ে।
” তো তুমি খেয়ে নিও।
“পাবো কই?
মন খারাপ করে বলে ছোঁয়া।
” এই শুনুন না চলুন আমরা হানিমুনে ব্রাজিলে যাই। দারুণ হবে ব্যাপারটা।
খুশিতে গদগদ হয়ে বলে ছোঁয়া।
“বাঁদরামি করো না। আমাকে কাজ করতে দাও। নাহলে গালে যে কয়টা চর পড়বে সেটা আমি নিজেও জানি না।
কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়া দাঁত কটমট করে।
এই লোকটার সাথে বেড শেয়ার করা জাস্ট ইম্পসিবল। পারলাম না শাশুড়ীর ছেলেকে মানিয়ে নিতে। মানিয়ে দেওয়া তো দুর সুযোগ পেলে একে আমি খুন করবো।
করলা একটা।
ছোঁয়া দাঁত কটমট করতপ করতে বেলকনিতে চলে যায়।
রাগ যেনো কমছেই না। ছোঁয়াকে অপমান করা?
” শালা হনুমান জীবনে বউ পাবি না অভিশাপ দিলাম। কোনো মেয়ে তোর দিকে ফিরেও তাকাবেও না। আমাকে অপমান করা।
রাগ যেনো কমছেই না।
“এই স্টুপিট ওখানে কি করছো?
সাদি ডাকে ছোঁয়াকে। ছোঁয়া পাত্তা দেয় না।
” তোমার ফোন বাজছে। আমার ডিস্টার্ব হচ্ছে।
সাদি চোখ মুখ কুঁচকে বলে। ছোঁয়া তবুও পাত্তা দেয় না।
সাদি ছোঁয়ার ফোনটা বন্ধ করে দেয়।
🥀
নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে সিফাত। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সিমির বিয়ে হয়ে যাবে? অন্য কারে হয়ে যাবে?
আর বাচ্চা পরিটা সারাজীবন মা হীন থাকবে।
এটা কি করে মেনে নেবে সিফাত। আর সিমিকে অন্যকারো পাশেই বা কি করে সয্য করবে?
কোনো কি উপায় নেই সবটা ঠিক করার?
আচ্ছা ছোঁয়াকে বলে দেবো সব? ছোঁয়া কেমন রিয়েক্ট করবে? সবটা জানার পর তো ছোঁয়াও ঘৃণা করবে সিফাতকে। তখন যদি পরিকে ছোঁয়া ভালো না বাসে? দুরে ঠেলে দেয়।না না ছোঁয়া কে বলা যাবে না।
সিমির সাথে দেখা করতে হবে।
যা হওয়ার হবে।
সিফাত ঘুমন্ত পরির মুখের দিকে তাকায়। নিমিষেই সমস্ত টেনশন চলে যায়।
পরির কপালে চুমু খায়।
“মা ফিরবে সোনা। তোমার কথা ভেবে হলেও ফিরতে। আমি ফিরিয়ে আনবো। আর যদি না পারি তাহলে তোমাকে মায়ের কাছে দিয়ে আসবো। আর এতিমের মতো থাকতে হবে না তোমায়।
দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে সিফাতের চোখ থেকে।
চলবে