অন্যরকম তুমি #পর্বঃ১৬

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১৬
#তানিশা সুলতানা

অফিসে মনোযোগ দিয়ে ফাইল দেখছে সাদি। নতুন চাকরি পেয়েছে। প্রথমেই এতে বড় পোষ্টে চাকরি পেয়ে যাবে ভাবে নি।
কাজের পেশারটা একটু বেশিই নিচ্ছে সাদি। যাতে বস বলতে না পারে “এই ছেলেকে দায়িত্ব দিয়ে ভুল করেছি”

বরাবরই সাদি খুব গম্ভীর প্রকৃতির। অতিরিক্ত কথা বলার চেয়ে প্রয়োজন ব্যাতীত কথা না বলাই শ্রেয়। কথা বললে শুধু শুধুই কথা অপচয় হয়। এতে কোনো লাভ হয় না।
এখানে জব পাওয়ার পর বস ছাড়া অন্য কারো সাথে কথা বলা হয় নি।
সাদির কেবিনটা একদম বিল্ডিংয়ের শেষ প্রান্তে।খুব নিরিবিলি রুম। ভালোই লাগে সাদির।

“মে আই কাম ইন স্যার?

দরজায় কড়া নেরে বলে। সাদি ফাইল থেকে চোখ তুলে দরজার দিকে তাকায়। কারণ সাদির কেবিনে কারো আশার কথা না।

দরজায় নেহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় সাদি। নেহা এক গাল হেসে ভেতরে চলে আসে। সাদির সামনের চেয়ারটা টেনে বসে।

” তুই এখানে??
সাদি আবারও ফাইলে মুখ গুঁজে বলে।

“তোর বউ দেখতে যাবো। বসের থেকে ছুটি নিয়ে নিয়েছি।

সাদির হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে বন্ধ করে রেখে বলে নেহা।

” ফাজলামো করিস না। মাথা গরম আছে?

দুই হাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বলে সাদি

“বউয়ের মুখটা দেখলেই মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে। ট্রাস্ট মি

” ননসেন্স

“নিয়ে যাবি না।

” তুই তো চিনিস আমার ফ্লাইট চলে যা।

সাদি আবারও ফাইলটা নিয়ে তাতে মুখ গুঁজে বলে।

“একা গেলে তো তোর বউ আমায় চিনতেই পারবে না।
মুখ গোমড়া করে বলে নেহা।

” এই জানিস আমি বসের থেকে তোর জন্য ছুটি চেয়েছি।

খুশিতে গদগদ হয়ে বলে নেহা।

“আমি কি বলেছিলাম তোকে?

সধি গম্ভীর গলায়।

” তা বলিস নি। তুই তো নিরামিষ বলবি কি করে?
সাত দিনের ছুটি চেয়েছি। এই ফাঁকে হানিমুনটা সেরে ফেলবি বুঝলি?

সাদি কিছু বলে না। শুধু একবার নেহার দিকে তাকায়।

🥀🥀🥀
কলিং বেল বাজতেই ছোঁয়া দরজা খুলে দেয়। ছোঁয়ার কোলে পরি। সিমি পরির গালে হাত রাখে। সিফাত সিমির পেছনে দাঁড়ানো।

“আপি ভেতরে এসো।

ছোঁয়া দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। সিমি গিয়ে সোফায় বসে। পরি গিয়ে সিমির গা ঘেসে বসে। সিফাত এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকে। দেখতে চাই পরিকে সিমি আদর করে কি না?

” আপি তুমি ঠিক আছো?

ছোঁয়া সিমির কপালে হাত দিয়ে বলে।

“একদম ঠিক আছি।

‘বিয়ে করবে না তুমি। একদম সাফ সাফ বলে দিতে। তো এখন কি এমন হলো যে বিয়ে করতে চাইছো?

” একটা বেবির খুব শখ হয়েছে বুঝলি? পরিকে দেখে ইচ্ছেটা মনের মধ্যে জেগে উঠলো। তাই ডিসিশন চেঞ্জ করে ফেললাম।

পরিকে কোলে তুলে নিয়ে বলে ছোঁয়া।

“ওহহহ
তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। এক সাথে ব্রেকফাস্ট করবো।

সিমি পরিকে কোলে করে চলে যায়। ছোঁয়াও চলে যায়। সিফাত মলিন হাসে।

সাদি করলা ভাজি আর রুটি বানিয়ে রেখে গিয়েছিলো। তাই দিয়েই ব্রেকফাস্টটা সেরে ফেলে ওরা।
তারপর সিমি পরিকে নিয়ে রুমে চলে যায়। ছোঁয়াও সাদির রুমে চলে আছে।

রুমটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে ছোঁয়া। সকাল সকাল গোছল সেরে কমলা রংয়ের শাড়ি পড়েছে। শাশুড়ী মেসেজ দিয়ে এটা পড়তে বলেছে।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে থাকে ছোঁয়া।হঠাৎ চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারের ভেতরে একটা ওড়নার কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে।

ছোঁয়া ড্রয়ার খুলে ওড়নাটা হাতে নেয়। সাদা ওড়না। ওড়না থেকে মিষ্টি একটা গন্ধ ভেসে আসছে। নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নেয় ছোঁয়া। বেলি ফুলের ঘ্রাণ আসছে।

ওড়নাটা মেলে ধরে ছোঁয়া। ভেতর থেকে পড়ে কয়েকটা বেলি ফুলের মালা। সব গুলোই শুকিয়ে গেছে। শুধু একটা তরতাজা। হয়ত আজকেই অনা হয়েছে।

ছোঁয়া ফ্লোরে পরে থাকা বেলি ফুলের মালা গুলো তুলে নেয়। হাতে পেচিয়ে নেয়।

ওড়নাটা আগের জায়গায় রাখতে যায়।

” মালা গুলো হাত থেকে খুলে ফেলো।

সাদি চোয়াল শক্ত করে বলে। ছোঁয়া চমকে দরজার দিকে তাকায়। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে সাদি।

“আপনি এসেছেন?

ছোঁয়া এক গাল হেসে বলে।

” বললাম না ফুল গুলো খুলে ফেলো।

সাদি চিৎকার করে বলে। ছোঁয়া কেঁপে ওঠে। দু পা পিছিয়ে যায়। চোখের কোনে পানি জমে গেছে।

সাদি হুরমুর করে এগিয়ে আসে ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়াও সাদির সাথে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে যায়। পেছতে পেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় ছোঁয়ার। সাদি দুই হাত দেয়ালে রেখে ছোঁয়ার দিকে ঝুঁকে। ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে মাথা নিচু করে ফেলে। হাত পা কাঁপছে।

রাগে সাদি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।

“এই মেয়ে মালা গুলো খুলো।

ফিসফিস করে বলে সাদি। সাদির নিশ্বাস ছোঁয়ার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে। হাতটা এগিয়ে দেবে খুলে দেওয়ার জন্য সেটাও পারছে না।

” সাহস হয় কি করে আমার জিনিসে হাত দেওয়ার।

ছোঁয়ার দুই বাহু শক্ত করে ধরে বলে সাদি।
ঠোঁট কাঁপছে ছোঁয়ার। দুই চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি ঝড়ছে।

“সরি সরি সরি ভুল টাইমে এন্ট্রি নিলাম।

নেহা চোখ মুখ ঢেকে বলে। সাদি ছিটকে দুরে সরে যায়। ছোঁয়া দেওয়ালের দিকে ঘুড়ে দাঁড়ায়। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।

তুই এখানে?

সাদি হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে বলে।

” তোর বউ দেখতে আসলাম। কিন্তু এসে যা দেখলাম। এই তুই না নিরামিষ। নিজেকে পিওর নিরামিষ বলে দাবি করিস। তাহলে এটা কি?
না কি বউ দেখে মাথা ঘুরে যায়?

চোখ টিপ দিয়ে বলে নেহা

“তুই যেমনটা ভাবছিস তেমন টা না।

সাদি হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে।

” ইসস কবে যে শুনবো
তুই যেমনটা ভাবছিস তেমনটাই।

ছোঁয়া আচল দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়। নেহা ছোঁয়ার কাছে আসে।

“দেখি মেয়ে এদিকে ঘুরো। দেখি তোমায়।
ছোঁয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে নেহা। ছোঁয়া মাথা নিচু করে আছে। লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।

” মাশাল্লাহ
তাই তো বলি আমাদের পিওর নিরামিষ কি করে আমিষ হলো।

ছোঁয়ার থুতনি ধরে মাথা উঁচু করে বলে নেহা।
ছোঁয়া এক দৌড়ে বেলকনিতে চলে যায়। ওই খানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না। ওই মেয়েটার লাগামহীন কথাবার্তা ছোঁয়ার হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ছোঁয়া যেতেই নেহা খিলখিল করে হেসে ফেলে। সাদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here