#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ২৬
#তানিশা সুলতানা
“তুই এখানে?
সৈকত দাঁড়িয়ে আশ্চর্য হয়ে ভ্রু কুচকে বলে।
” নিশ্চয় তোকে দেখতে আসি নি।
সাদি বিরক্ত হয়ে বলে। সৈকত থমথমে খেয়ে যায়।
“তোর পায়ের কাছে যে ঘাপটি মেরে বসে আছে তাকে কান ধরে বের করে দে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি।
” আমার পায়ের কাছে
সৈকত পায়ের দিকে তাকায়। ছোঁয়া কাচুমাচু হয়ে বসে আছে।
“বলুন এখানে কেউ নেই।
ছোঁয়া ফিসফিস করে বলে।
সৈকত একটা ঢোক গিলে।
” এ এএখানে কেউ নেই। কেউ আমার পায়ে বড় নখ দিয়ে চিমটি দিচ্ছে না।
একটু হাসার চেষ্টা করে বলে সৈকত। ছোঁয়া কপাল চাপকে। এই লোকটাকে উকিল কে বানিয়েছে? আস্ত গাধা একটা।
সাদি গোল গোল চোখ করে তাকায়।
“এই আপনাকে উকিল কে বানিয়েছে? আস্ত গাধা একটা আপনি।
ছোঁয়া টেবিলের তলায় থেকে বের হয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলে। সৈকত ভেবাচেকা খেয়ে যায়। এ কাদের পাল্লায় পড়লো?
” আমি কি করলাম?
“জোর দিয়ে বলতে পারলেন না আমি এখানে নেই? এখন যে আমার গালে ঠাস ঠাস দুটো পড়বে। সেটার দায় কে নেবে?
” জাস্ট সাট আপ। এখানে কেনো এসেছো তুমি?
সাদি ধমক দিয়ে বলে। ছোঁয়া কেঁপে ওঠে। শুকনো ঢোক গিলে দু পা পিছিয়ে যায়। সৈকত এতখনে বুঝতে পারে এই নিষ্পাপ মেয়েটার জল্লাদ বরটা সাদি। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সৈকত।
“এখানে সিনক্রিয়েট করা যাবে না। ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করতে হবে।
কড়া গলায় বলে সৈকত। সাদি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে থাকে।
” পিচ্চি তুমি টেনশন করো না। আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমার ডিভোর্স পেপার রেডি করে দেবো।
মিষ্টি হেসে বলে সৈকত। ছোঁয়াও প্রতিত্তোরে হালকা হাসে।
“আদি ডিসকাস করা শেষ?
মেঘা কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বলে। মেঘাকে দেখে ছোঁয়ার মেজাজ আবার খারাপ হয়ে যায়। এই মেয়েটাকে জাস্ট সয্য হয় না।
” এ কি আদি এই মেয়েটা এখানে কেনো?
মেঘা অবাক হয়ে বলে। আদি উওর দেয় না।
“হেলো মেডাম!
আপনি নিশ্চয় ওনাকে চিনেন। আর ওনার হাসবেন্ডকেও চিনেন। তো ওনাকে এই মেয়েটা বলাটা কি ঠিক হচ্ছে? ও হয়ত বাচ্চা এতশত বোঝে না। কিন্তু আপনি তো বোঝেন। তো ওনাকে ছোঁয়া বা ভাবি বলে ডাকতে পারেন। এটাকে ভদ্রতা বলে।
তাই না মেম?
মুচকি হেসে বলে সৈকত। ছোঁয়ার মন ছুঁয়ে যায় সৈকতের কথাগুলো। এই কথাটা তো সাদিক বলতে পারতো। কিন্তু উনি বললো না।
মেঘা অপমানিত হয়। মাথা নিচু করে ফেলে। সাদি দাঁতে দাঁত চেপে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
” আসছি উকিল বাবু। আবার কাল আসবো।
ছোঁয়া এক গাল হেসে বলে।
“আচ্ছা এসো।
আর সাদি আবার তোমার গায়ে হাত তুললে আমাকে বলবে কেমন?
ছোঁয়া মাথা নারায়। সৈকত ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ছোঁয়া সাদিকে ভেংচি কেটে বেরিয়ে যায়।
” আপনাদের কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
সৈকত চেয়ারে বসতে বসতে বলে।
“মেঘা সবটা বলো ওকে। আমি আসছি।
হাতে থাকা ফাইলের ব্যাগ মেঘার হাতে দিয়ে বেরিয়ে যায় সাদি। মেঘা সাদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ছোঁয়া আগেই আন্দাজ করেছিলো সাদি পেছন পেছন আসবে। তাই দৌড়ে গিয়ে একটা রিক্সায় উঠে বসে।
” মামা তাড়াতাড়ি চলুন।
সাদি বেরিয়ে আশেপাশে ছোঁয়াকে দেখতে না পেয়ে মেজাজটা মারাক্তক বিগড়ে যায়। দুদিন স্কুলে এসেই মাথায় চরে বসেছে। ডানা গজিয়ে গেছে। এর ডানা ছেটে দিতে হবে।
হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দেওয়ালে আঘাত করে সাদি। ইট সিমেন্টের গায়ে দেওয়া আঘাতটা নিজের হাতেই এসে পড়ে।
পেট পুরে খাবার খায় সিফাত। সিমি এখানে আসার পর থেকে ভালো করে খাওয়া হয় না। গলা দিয়ে খাবার নামে না।কিন্তু আজকে সিমি নিজে হাতে পরিবেশন করার খুব আশেয় করে খায়।
সিমি নিজেও উপলব্ধি করতে পারে সিফাতের পেটপুরে খাওয়ার বিষয়টা। বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে।
পরির খাওয়া আগেই হয়ে গেছে। সে এখন রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে। সিফাত সামনে থাকায় সিমি ভালো করে খেতে পারে না।
“মা আমরা ঘুরতে যাবো না?
পরি গাল ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করে।
” কেনো যাবো না? অবশ্যই যাবো। মাম্মা আসুক তারপর যাবো কেমন?
মুচকি হেসে পরির এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে বলে সিমি।
“বাবা যাবে না?
সিফাত পানি খাচ্ছিলো পরির কথা শুনে বিষম খায়। সিমির হাসি মুখটা কালো হয়ে যায়।
” তোমার বাবা তোমায় ভালোই বশ করে নিয়েছে। যাবো না কোথাও। তুমি তোমার বাবার সাথে যাও।
পাতে পানি ঢেলে উঠে দাঁড়ায় সিমি। পরির চোখে পানি চলে আসে। সিফাতের বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে।
“প্লেট গুলো ধুয়ে রাখতে বইলো তোমার বাবা কে।
বলেই হনহনিয়ে চলে যায় সিমি।
পরি শব্দ করে কান্না করে দেয়। সিফাত পরিকে কোলে তুলে নেয়।
” কাঁদে না সোনা।
“মা বকলো কেনো?
হেঁচকি তুলে বলে পরি।
” তোমার মায়ের মুখে তো চিনি নেই তাই বকলো। তুমি গিয়ে চিনি দিয়ে এসো।
মুচকি হেসে বলে সিফাত। পরিও হেসে ফেলে।
পরি সিফাতের কোল থেকে নেমে এক দৌড়ে সিমির রুমে চলে যায় হাতে চিনির বোতল নিয়ে।
সিফাত মুচকি হাসে।
পরি ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। রুম থেকে ধুপধাপ আওয়াজ আসছে। নিশ্চয় সাদি এসে গেছে। এখন কিছুতেই বের হওয়া যাবে না।বের হলেই থাপ্পড় খেতে হবে।
কিন্তু কতখনই বা ওয়াশরুমে থাকবে। ইসসস সাথে করে ফোনটা নিয়ে আসলে ভালোই হতো।বোকামি করে ফেললো।
আরও দশ মিনিট থেকে আবারও দরজায় কান পাতে। এখন আর ধুপধাপ আওয়াজ আসছে না। তারমানে সাদা বিলাই করলা খেতে গেছে। এই ফাঁকেই বের হতে হবে। নাহলে রক্ষে নেই।
আস্তে করে দরজা খুলে মাথাটা একটু বের করে পুরো রুমে চোখ বুলাই ছোঁয়া। নাহহহ সাদা বিলাই কোথাও নেই। আল্লাহ বাঁচাইছে।
বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে
“আমি ডানা কাটা পরি, আমি ডানা কাটা পরি
গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ছোঁয়া। মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। আহা ডিভোর্স হয়ে গেলে আবার ছোঁয়া মুক্ত হয়ে যাবে। মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে উড়তে পারবে। কেউ ধমকাবে না। কেউ আদেশ করবে না।
লাইফটাকে নিজের মতো গুছিয়ে নিতে পারবে।
” স্টাটাস আমার সিঙ্গেল দেখে প্রেমের ছড়াছড়ি। হাই রে কি যে করি, হাই রে কি যে করি
“এখনো ডানাটা সাথে আছে। এখন কেটে দেবে।
তারপর দেখবো কোথায় প্রেমের ছড়াছড়ি হচ্ছে।
হঠাৎ করে সাদির গলার স্বর শুনে চমকে ওঠে ছোঁয়া। হাতে থাকা চিরুনি পড়ে যায়। চোখ দুটো বড়বড় করে পেছনে তাকায়।
আয়নার ঠিক পেছনে সাদি বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।তারপর মানে ছোঁয়ার পুরো গানটাই শুনেছে। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে ছোঁয়া। মাথা নিচু করে ফেলে।
” খুব সাহস বেরে গেছে তোমার? নিজেকে বিশ্ব সুন্দরী প্রুফ করতে চাইছো? ডিভোর্স চাই তোমার?
খুব শান্ত গলায় প্রশ্ন করে সাদি। সাদির এতো ঠান্ডা গলার কথা শুনে ভয় হতে থাকে ছোঁয়া। এ যেনো ঝড়ের পূর্বাভাস।
শুকনো ঢোক গিলে।
“আমাকে বকুন মারুন ঠিক আছে। কিন্তু প্লিজ গালে মাইরেন না। হয়েছে কি? আমার একটা দাঁত নরবরে হয়ে গেছে। আরেকটা চর পড়লে ঠিক ভেঙে যাবে। তখন আর আমাকে কেউ বিয়ে করবে না। আমার বাচ্চারা আমাকে মা না বলে দাদিমা বলবে।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে রিনরিনিয়ে বলে ছোঁয়া।
সাদি বিরক্ত হয়। হনহনিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে ছোঁয়া দিকে।
” ও আল্লাহ গো বাঁচান আমায়।
এক চিৎকার দিয়ে খাটের তলায় ঢুকে যায় ছোঁয়া। সাদি বোকা বনে যায়। দুই সেকেন্ড সময় লাগে বুঝতে হলো টা কি?
যখনই বুঝতে পারে তখনই ফোঁস করে শ্বাস টানে।
“আস্ত গাঁধা একটা।
বিরবির করে বলে সাদি।
” সাদা বিলাই থুক্কু সাদু বেবি এবারের মতো মাইরেন না।
ছোঁয়া খাটের তলায় থেকে বলে।
“মারবো না। একবার হাতের কাছে পাই উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখবো তোমায়। ইডিয়েট একটা। জানটা জ্বালিয়ে খেলো আমার।
চলবে
বানান ভুল থাকতে পারে। অটো কিবোর্ড। একটা লিখে স্পেস দিলে অন্য একটা চলে আসে😭😭😭😭