#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ২৭
#তানিশা সুলতানা
কানে হাত দিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া। ছোঁয়ার সামনেই সাদি টানটান হয়ে শুয়ে আছে। চোখ দুটো বন্ধ তার।
“সাদু বেবি আর কখনোই এমনটা করবো না।
কিন্তু ঠিক কেমনটা করবো না? কিসের জন্য শাস্তি পাচ্ছি?
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে ছোঁয়া। সাদি চোখ খুলে। এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
” তোমার পরিচয় কি?
সাদি হাই তুলে ছোঁয়াকে প্রশ্ন করে।
“আমার নাম ছোঁয়া রহমান। ক্লাস নাইনে পড়ি। বাবার নাম শফিক রহমান। গ্রামের নাম মান
” রিলেশন শীপের কথা বলছি।
বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে সাদি।
“পিওর সিঙ্গেল
রিনরিনিয়ে বলে ছোঁয়া। সাদি ঘাড় বাঁকিয়ে এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সাদি তাকাতেই ছোঁয়া মাথা নিচু করে ফেলে।
” আমার বাড়িতে কেনো থাকছো তুমি? মেড তুমি আমার? না কি কাজিন?
কপালে তিন আঙুল দিয়ে স্মেইল করতে করতে বলে সাদি।
“কাজিন।
ছোট করে জবাব দেয় ছোঁয়া।
” ইডিয়েট
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি।
“এবার হাঁটুতে ভর দিয়ে বসো। আই মিন নিলডাইন হয়ে।
ফোন হাতে নিয়ে বলে সাদি।
” কিন্তু কেনো?
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে ছোঁয়া।
“এতখন শাস্তি পেয়েছো সৈকতের চেম্বারের যাওয়ার জন্য। এখন শাস্তি পাবে ভুলভাল পরিচয় দেওয়ার জন্য।
সাদি উঠে বসে পূর্ণ দৃষ্টিতে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে।
” আমি ভুল কি করলাম? ঠিকি তো করেছি। ডিভোর্স হয়ে গেলে ভালোই হবে। তাইতো আমি
ছোঁয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই সাদি ছোঁয়ার হাত ধরে টান দিয়ে পাশে বসিয়ে দেয়।
ছোঁয়া ভয় পেয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
সাদি ছোঁয়ার গাল চেপে ধরে খুব শক্ত করে। রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
“চাইছিলাম না গায়ে হাত তুলতে। তুমি বাধ্য করলে। বাচ্চা বাচ্চার মতো থাকবে। সাহস কি করে হয় আমার নেওয়া খাবার ফেলে দেওয়ার? কিসের এতো ইগো তোমার?
ত্যেড়ামি করো আমার সাথে? চাপকে গাল লাল করে দেবো তোমার।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি। সাদির নিশ্বাস ছোঁয়ার মুখে পড়ছে। ব্যাথায় গাল দুটো টনটন করছে। মনে হচ্ছে চামড়া ভেদ করে আঙুল গুলো ভেতরে ঢুকে যাবে। চোখ দিয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে ছোঁয়ার।
সাদি চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে। ছোঁয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। দুই ইঞ্চি পিছিয়ে যায় ছোঁয়া। ছাড়া পেতেই গালে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
” ডিভোর্স সম্পর্কে জানো তুমি? কতটুকু চেনো এই শহর? ভালো ব্যবহার করছি ভালো লাগছে না না?
দুই হাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বলে সাদি।
ছোঁয়া কেঁদেই যাচ্ছে।
“অফিসের ইমপটেন্ট মিটিং ফেলে তোমার জন্য খাবার নিয়ে গেছিলাম। মেঘা বারবার না করছিলো যেতে। তবুও আমি গেছিলাম।কিন্তু তুমি কি করলে সেই মেঘার সামনেই খাবার ফেলে দিলে? কতোটা অপমানিত হয়েছি আমি ধারণা আছে তোমার?
চিৎকার করে বলে সাদি।
ছোঁয়া হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে তাচ্ছিল্য হাসে।
” ওহহহহ মেঘা আপুর সামনে আপনি অপমানিত হয়েছেন বলে এতো রাগ?
আমিও অযথা চিন্তা করছিলাম আপনি হয়ত আমি খাই নি বলে রেগে আছেন।
নাক টেনে বলে ছোঁয়া। সাদি ভ্রু কুচকে ছোঁয়ার দিকে তাকায়। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে।
“ফেলে দেওয়া খাবারটাই খেতে হবে তোমায়।
বলেই গটগট করে চলে যায় সাদি। সেই খাবারের বক্সটা এনে ছোঁয়ার হাতে ধরিয়ে দেয়। ছোঁয়া কোনো কথা না বলে বক্স খুলে খেতে থাকে। মুখে খাবার আটকে যাচ্ছে তবুও থামছে না। বেশি বেশি খাবার পুরে চিবতে থাকে। চোখ থেকে তো পানি পড়ছেই।
সাদি পানি হাতে নিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ছোঁয়াকে এভাবে খেতে দেখে রাগটা আরও বেরে যায়। ঠাস করে ছোঁয়ার হাত থেকে খাবারের প্লেট ফেলে দেয়। চমকায় না ছোঁয়া। মাথা নিচু করে ফুঁপাতে থাকে। সাদি পানির বোতল হাতে দেয় ছোঁয়া পানির বোতল ফেলে দেয়।
সাদির ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে দুটো চর মেরে দিতে। এইটুকু মেয়ে তার তেজ কতো।
” এই মেয়ে আমাকে মেজাজ দেখাতে আসবে না একদম।
দাঁতে দাঁত চেপে আঙুল তুলে বলে সাদি।
“আপনিও আমাকে মেজাজ দেখাতে আসবেন না।
ছোঁয়াও দাঁতে দাঁত চেপে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে আঙুল তুলে।
সাদি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে মেরে দেয় এক থাপ্পড়।
থাপ্পড় খেয়ে ছোঁয়া দুই মিনিট চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। দুনিয়া ঘুরছে।
থাপ্পড় দেওয়ার পরে সাদি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে।
” আপনি খুব খারাপ। খুব বাজে আপনি।
বেরিয়ে যায় ছোঁয়া রুম থেকে।সিমিট রুমেও যায় না। একদম মেইন দরজা খুলে বাগানে চলে আসে।
বাড়ির সামনে বিশাল বাগান সেখানে বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো।
ছোঁয়া ফুঁপাতে ফুঁপাতে বাগানের শেষ মাথায় গিয়ে ঘাসের ওপর বসে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
কেনো মারবে উনি? কি পেয়েছে টাকি?
পরি সিমির দিকে চিনির বোত লটা এগিয়ে দেয়। সিমি ভ্রু কুচকে তাকায়।
“মা প্লিজ বকো না। আমি ঘুমতে যাবো না।
মাথা নিচু করে মলিন গলায় বলে পরি। সিমি মুচকি হাসে।
” আমি রেগে নেই সোনা। সোনা আই এম সরি।
দুই কানে হাত দিয়ে বলে সিমি।
“ঘুরতে নিয়ে যাবে?
পরি খুশিতে গদগদ হয়ে লাফিয়ে উঠে বলে।
” বাবা কে রেডি হতে বলো।
সিমি পরির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
পরি সিমির গালে চুমু দিয়ে লাফাতে লাফাতে চলে যায়। সিমি মলিন মুখে তাকিয়ে থাকে।
“মন তো চাইছে আবারও ফিরে তাকায় তোমার দিকে।ভুলে যাই সব আর নতুন করে শুরু করি। কিন্তু তোমার দিকে তাকালেই মনের ভেতরে উঁকি দেয় সেই ঘৃন্য অতীত। যেখানে তুমি আমাকে এক আকাশ সমান অবহেলা দিয়েছিলো। সেই অবহেলা আর অপমানের পাহাড় ঠেলে আমার নতুন করে এক হওয়াটা কখনোই সম্ভব না।
আমার বিবেক আত্মসম্মান কখনোই তা মানবে না।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সিমি।
সাদি কোলে তুলে নেয় ছোঁয়াকে। হতদম্ভ হয়ে যায় ছোঁয়া। এক মনে ঘাসের ওপর বসে কেঁদে যাচ্ছিলো। হঠাৎ করেই সাদি কোলে তুলে নেয়। এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না ছোঁয়া।
সাদি ছোঁয়ার দিকে আড়চোখে এক বার তাকিয়ে হাঁটতে থাকে।
ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে সাদির বুকের সাথে লেপ্টে থাকে।কথা বলার শক্তি বা ইচ্ছে কোনোটাই নেই আপাতত।
সাদি সোজা সিমির রুমে নিয়ে যায় ছোঁয়াকে। সিমি আজকে নীল শাড়ি পড়েছে। এখন সাজবে বলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসেছিলো। হঠাৎ ছোঁয়াকে কোলে করে সাদিকে রুমে ঢুকতে দেখে চোখ বড়বড় করে উঠে দাঁড়ায় সিমি।
কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে বিষ্ময় কাটাতে।
” না মানে স্যার কি হয়ে বোনের?
সিমি নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে।
সাদি ছোঁয়াকে খাটে শুয়িয়ে দেয়। এখন ছোঁয়া চোখ খুলে তাকায়। আঠাআঠা হয়ে গেছে চোখ। তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে।
“ইডিয়েট তো।
আমি সুপ বানিয়ে আনছি খাইয়ে দিও। তারপর ফ্রেশ হতে বইলো
দেন আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাবো।
সিমি মাথা নারায়।
” আর ওকে বলে দিও আমার সাথে কটামি যেনো না করে।বাচ্চা বাচ্চার মতো থাকতে বইলো।
বলেই সাদি চলে যায়। সিমি গিয়ে ছোঁয়ার পাশে বসে।
ছোঁয়ার গালে আজকেও থাপ্পড়ের দাগ। সিমির মেজাজ গরম হয়ে যায়।
“বোনু তোদের পবলেম টা কি? এভাবে মারামারি কতদিন চলবে?
সিমি ছোঁয়া গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।
ছোঁয়া সিমির পেছন ঘুরে শয়। একদম কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
সাদি কিচেনে গিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আঘাত করা ঠিক হয় নি। কিন্তু কি করবে? সকাল থেকে না বলে চলে যাওয়া, ছেলে গুলোর সাথে অহেতুক ঝগড়া করা, খাবার ফেলে দেওয়া, সৈকতের চেম্বারে যাওয়া।
সব মিলিয়ে থাপ্পড়টা ওর পাপ্য। এতে যদি শিক্ষা হয়।
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সুপ বানাতে থাকে।
চলবে