#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ২৮
#তানিশা সুলতানা
“উনি ওই মেঘার সাথে নিকনিক করে। তাই আমি ডিভোর্সের জন্য গিয়েছিলাম। আমি এসব নিকনিক সয্য করতে পারবো না।
গাল ফুলিয়ে নাক টেনে গোল হয়ে বসে বলে ছোঁয়া। সিমি মুচকি হাসে। এক হাতে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়াকে।
” স্যার খুব ভালো মানুষ। একটু রাগী, রগ চটা। কিন্তু মনের দিকে থেকে খুব ভালো। তোর বেপারে খুব পসেসিভ। না হলে ভাব অফিস বাদ দিয়ে তোর জন্য খাবার নিয়ে যেতো?
ছোঁয়া সিমির হাত সরিয়ে দেয়।
“লাগবে না ওনার পসেসিভ হওয়ার। আমি এখানে থাকতে পারছি না। চলে যাবো। পেয়েছেটা কি উনি?
কেনো আমাকে থাপ্পড় দিলো?
চিৎকার করে বলে ছোঁয়া। সিমি দুই হাতে কান চেপে চোখ মুখ কুঁচকে বসে আছে। ছোঁয়ার বলা শেষ হলে কান থেকে হাত সরিয়ে জোরে শ্বাস নেয়
” ঠিক করেছে। থাপ্পড়টাই তোর প্রাপ্য।
খাবার কেনো ফেলে দিয়েছিলি? আবার উকিলকের কাছেও চলে গেছিস ডিভোর্স পেপারে জন্য।
এতোটা ফাস্ট তুই?
খাবার খাবি না ঠিক আছে পরে ফেলে দিতি। ওনার সামনেই কেনো ফেললি?
ছোঁয়া রাগে গজগজ করতে করতে পাশে থাকা বালিশ ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
সিমি ছোঁয়ার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।
“বোনু মাথা ঠান্ডা কর। আমার কথা শোন।
মুচকি হেসে বলে সিমি।
” তোমার কথা শুনবো না আমি। তোমাকেও বিরক্ত লাগে আমার।
হাত ছাড়ানোর জন্য মোচরামুচরি করতে করতে বলে ছোঁয়া।
“তুই দুনিয়াটাকে যতটা সহজ মনে করিস দুনিয়াটা ততটা সাহস নয় রে।
সাদি স্যার তোর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তুই করছিস না। ফালতু কিছু লজিক খুঁজে ঝামেলা বাঁধাচ্ছিস। কোনো মানে হয় এগুলোর?
ভালোবেসে দেখ না আমি হরব করে বলতে পারি পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ তুই হবি।
ছোঁয়া চুপচাপ সিমির কথা গুলো শুনছে।
” আগে আমরা যখন স্যারের কাছে কোচিং করতাম। তখন পড়া না পাড়লে স্যার কিছুই বলতো না। কিন্তু স্যারের সাথে বেয়াদবি করলে তাকে খুব মারতো। কথা না শুনলেও খুব পেটাতো।
স্যার তোকে যা বলতে সবটাই তোর ভালোর জন্য। তোর খারাপ হবে এমন কিছু স্যার করবে না। একটু শুনে দেখ না ওনার কথা।
“আমি ওনার কথা শুনে উঠাবসা করতে পারবো না।
কর্কশ গলায় বলে ছোঁয়া।
” আজিব তো
তোকে কে বলেছে ওনার কথা শুনে উঠাবসা করতে? জাস্ট পড়ালেখার বেপারে।
আর সব থেকে বড় কথা ডিভোর্সের চিন্তা মাথা থেকো ঝেড়ে ফেল। থাকনা তুই তোর মতো। এখানে তো খারাপ নেই তুই।
“হয়েছে ছাড়ো এবার। পড়তে বসবো।
কপাল কুচকে বলে ছোঁয়া।
” ঘুরতে যাবি না আমাদের সাথে?
“নাহহহ
ছোঁয়া সিমির হাত ছাড়িয়ে চলে যায়। সিমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। দুটোই এক রকম। কেউ একটু দম নেবে না। সমানে সমানে যুদ্ধ করবে। এদের এক হওয়া কি আদৌও সম্ভব।
ছোঁয়া নিজের রুমের চলে আসে। নিজের রুম বলতে সাদি আর ওর রুমে। সাদি পায়ের ওপর ল্যাপটপ রেখে তাতে গেমস খেলছে। ছোঁয়া সাদির দিকে এক পলক তাকিয়ে পড়ার টেবিলে বসে পড়ে।
বাংলা বইটা খুলে গভীর মনোযোগ দিয়ে বই পড়তে শুরু করে।
সাদি আড়চোখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
” মেঘা আমার কলিগ। আমরা এক সাথে একটা কেস হেল্ডেল করছি।
সাদি দুবার কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলে।
ছোঁয়া ঠাস করে বই বন্ধ করে সাদির দিকে ঘুরে বসে। সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো বিধায় দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়।
সাদি চোখ নামিয়ে ল্যাপটপে দৃষ্টি রাখে।
“ইমন আমার স্কুলের পাশের কলেজে পড়ে। দেখতে বেশ। আমার দারুণ লাগে।
আপনাকে মেঘার সাথে দেখলে আমিও ইমনের প্রপোজ এক্সেপ্ট করে নেবো।
টিশার্টের কর্লার উঁচু করে টেনে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে ছোঁয়া।
” তো?
সাদি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।
ছোঁয়ার রাগ হয়।
“তো বুড়ো বয়সে বউ হারাবেন। শালা বুইড়া খাটাশ।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে বাংলা বই টা সাদির মুখে ছুঁড়ে মেরে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় ছোঁয়া।
সাদি ছোঁয়ার চলে যাওয়ার দিকে দুই মিনিট তাকিয়ে থাকে।
” আস্ত একটা ইডিয়েট।
বিরবির করে বলে সাদি।
পুরো বিকেল বই পড়েই কেটে যায় ছোঁয়ার। সিমি পরিকে নিয়ে আইসক্রিম খেতো গেছে। সিফাতের কথা পরি ভুলে যাওয়াতে সিমি আর সিফাতের নাম উচ্চারণ করে নি। সিফাতের মনটা কালো হয়ে যায়। সিমি আর পরির পেছন পেছন যায় দুর থেকে ওদের ওপর নজর রাখার জন্য।
সাদি বিকেলে বেরিয়েছে। ছোঁয়াকে ছোট্ট করে বলে গেছে ‘একটা বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি’
ছোঁয়া পাক্কা পাঁচ মিনিট তব্দা লেগে ছিলো। সাদি ওকে বলে বেরুলো? কিন্তু কেনো? ভাব জমতে চাইছে নিশ্চয়? কিন্তু ছোঁয়াতো এতসহজে ওই সাদা বিলাইয়ের সাথে ভাব জমাবে না।
ছোঁয়াকে থাপ্পড় মেরে ছিলো না? এবার ছোঁয়া সাদু বেবির দাঁত ভাঙবে। তারপরই ওই সাদা বিলাইয়ের কথা শুনবে।
একা একা সময় যাচ্ছে না ছোঁয়ার। তাই সিদ্ধান্ত নিলো রান্না করবে। চিকেন বিরিয়ানি রান্না করবে। আগে কখনো রান্না করা হয় নি৷ তাতে কি হয়েছে ইউটিউব বেবি আছে তো?
ছোঁয়া ইউটিউব দেখে সব উপকরণ বের করে নেয়। তারপর ওড়না কোমরে বেঁধে রান্না শুরু করে দেয়। অর্ধেক রান্না হওয়ার আগেই কলিং বেল বেজে ওঠে। ছোঁয়া খুন্তি হাতে নিয়েই যায় দরজা খুলতে।
সাদি এসেছে। ছোঁয়া দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়।
“বিশ্ব যুদ্ধ করেছো না কি? এরকম ঘেমে গেছো?
সাদি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকি
ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়। উওর দেয় না। সাদিক উওরের অপেক্ষা না করে রুমে চলে যায়।
পাঁচ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে আসে সাদি। ছোঁয়া তখন চাল সিদ্ধ করছিলো।
” রুমে গিয়ে রেস্ট নাও আমি বাকিটা করছি।
ছোঁয়ার হাত থেকে খুনতি নিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়া কিছু বলতে গিয়েও বলে না। এরপর কি করতে হবে এটা জানা নেই ছোঁয়ার।
“ছোঁয়া কখনো কারো থেকে সাহায্য নেয় না।
ভাব দেখিয়ে বলে ছোঁয়া।
” ড্রামা না করে সরো। আস্ত একটা ইডিয়েট।
কপাল কুচকে বিরক্তির একটা চাহনি দিয়ে বলে সাদি।
“সাদা বিলাই
ভেংচি কেটে চলে যায় ছোঁয়া। সাদি নিজের কাজে মন দেয়।
সিমি ছোঁয়ার জন্য এক বক্স আইসক্রিম নিয়ে এসেছে। ছোঁয়া আইসক্রিম ফ্রিজে রেখে এসেছে। খাবার খেয়ো আইসক্রিম নিয়ে বসবে।
সিফাত সিমিদের পেছন পেছনই বাড়িতে ঢুকেছে।
রাত দশটায় সবাই মিলে ডিনারে বসেছে। ছোঁয়া সবার জন্য খাবার সার্ভ করে নিজেও বসেছে। সিমি পরিকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে। সিফাত মাথা নিচু করে চুপচাপ খাচ্ছে। সাদি ফোন দেখছে আর খাচ্ছে।
এরই মধ্যে ছোঁয়ার ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে দজ্জাল শাশুড়ী নামটা জ্বল জ্বল করছে।
ছোঁয়া এক গাল হেসে ফোন রিসিভ করে। পাক্কা দুই দিন পর কল করলো শাশুড়ী। ভাবা যায়?
” শাশুড়ী ভালো আছেন? শরীর ঠিক আছে? খেয়েছেন? শশুড়কে খেতে দিয়েছেন?
জানেন শাশুড়ী কি হয়েছে?
আপনি বলেছিলেন না আপনার আদরের ছেলের সামনে হটহট গ্রীষ্মকাল সেজে থাকতে। তাই তো সাজতে গেছিলাম। কিন্তু আপনার ছেলে ঠাটিয়ে চর বসিয়ে দিলো।
শুনুন এই জীবনে আপনার আর নাতিনাতনির মুখ দেখা হবে না।
কেনো বলুন তো?
আপনার ছেলে আস্ত একটা গাঁধ। রোমাঞ্চের র ও বোঝে না।
ফিটার খাওয়াইয়েন আপনার পুএ কে। আমি এখন রাখছি।
খট করে কল কেটে দেয় ছোঁয়া। সবার দৃষ্টি ছোঁয়ার দিকে। মুখে খাবার পুরে ছোঁয়ার নজর যায় সাদির দিকে। দাঁত কটমট করে তাকিয়ে আছে ছোঁয়া দিকে। খাবার চিবতে ভুলে যায় ছোঁয়া। চোখ দুটো আপনাআপনি বড় হয়ে যায়।
হাই হাই কার সামনে কি বলে ফেললো?
এবার কি হবে? এই হনুমান তো ছোঁয়াকে আস্ত চিবিয়ে খাবে।
চলবে