#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩৭
#তানিশা সুলতানা
সাদি বেরিয়ে গেছে। অফিস থেকে কল আসছিলো। ছোঁয়ার মনটা খারাপ হয়ে যায়। চোখের কোনে পানি জমে যায়। যার জন্য এতো সাজ নিজেকে সাজিয়ে তোলা সেই নেই। কাকে দেখাবে এই সাজ?
আগে কেনো বললো না বেরবে?
ছিপটিপিন খুলতে খুলতে রুমে চলে যায় ছোঁয়া।গাল বেয়ে টুপটাপ পানি পড়তে থাকে। এই অভিমান সহজে ভাঙবে না।
রুমে এসে ছেবটিপিন ফেলে দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। বালিশে মুখ গুঁজে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে।
সিফাত ছুড়ি হাতে নিয়ে সিমির দিকে তাক করায়।
সিমি বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ায়।
“ভেবো না আমি একা মরবো। আমি মরলে তোমাকে নিয়েই মরবো। পরির জন্য সাদি আর ছোঁয়া আছে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সিফাত। সিমি মুখ বাঁকায়।
” আমাকে মারবেন?
বলতে বলতে এগিয়ে যায় সিফাতের দিকে। সিফাত ঘাবড়ে যায়। কিন্তু সেটা সিমিকে বুঝতে দিতে চাইছে না। ওপরে রাগী ভাবটা ধরে রেখেছে।
সিমি সিফাতের সামনে দাঁড়িয়ে ছুঁড়ির ধাড়ালো অংশ দুই আঙুল দিয়ে ধরে।
সিমির হাত কেটে যাবে বলে সিফাত ছেড়ে দেয়। সিমি বা হাত দিয়ে ভালো করে ছুড়ি ধরে।
তারপর সিফাতের দিকে তাক করায়।
সিফাত বড়বড় চোখ করে তাকায় সিমির দিকে।
“পুটিমাছের সাহস নিয়ে মানুষ খুন করতে আসছেন? আগে সাহস বাড়ান তার পর আসেন আমাকে খুন করতে।
সিফাতের পেটে চাকু আলতো করে ঘুরাইতে ঘুরাতে বলে সিমি। সিফাত বড়বড় চোখ করে ছুড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। একটু এদিক সেদিন হলেই ছুড়িটা ডিরেক্ট ঢুকে যাবে সিফাতের পেটে। সিমির মধ্যে তেমন ভাবান্তর নেই। যেনো এটা কিছুই না।
” এএএটা সরাও।
শুকনো ঢোক গিলে বলে সিফাত।
“ও মা কেনো? আপনি না মরবেন? আর আমাকেও মারবেন?
আগে আপনাকে মারি। তারপর আমিও মরবো।
মুখের ওপর পরে থাকা ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে বলে সিমি। সিফাত জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
” আগে কোথায় চাকু চালাবো?
সিফাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে সিমি। সিফাত ভয়ে রীতিমতো ঘামছে। এই মেয়ে কি পাগল টাগল হয়ে গেছে নাকি?
সিমি সিফাতের বা হাতটা টেনে নেয়।
“হাত দিয়েই শুরু করি। কি বলেন?
সিফাতের মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে সিমি। সিফাত চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
সিমি সেটা দেখে মুখ টিপে হাসে।
তারপর সিফাতের হাতের মাঝখানে দেয় এক টান। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সয্য করে সিফাত। মুখ দিয়ে এতটুকুও শব্দ বের করে না।
মুহুর্তেই রক্ত পড়া শুরু করে দেয়। একটু একটু করে রক্ত বের হচ্ছে। কেনোনা খুব হালকা করেই টান দিয়েছে। শুধু চমড়াটা কেটে গেছে।
তারপর নিজের হাতেও ঠিক সেই জায়গায় ছুড়ি বসিয়ে নেয়।সাথে সাথে সিফাত সিমির হাত ধরে ফেলে। চোখে মুখে আতঙ্ক।
জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সিফাত। সেটা দেখে আলতো হাসে সিমি।
” আমার হাত কাটবে না আমি। এতোটাও পাগল না। শুধু এটা বোঝালাম আমি খুন করতেও দুবার ভাববো না।
আপনাকে মারতে আমার একটুও আত্মা কাঁপবে না। সো এরকম দরজা লক করে আমাকে আটকে রেখে ভয় দেখানোর চেষ্টা দ্বিতীয় বার করবেন না। গেট ইট।
দাঁতে দাঁত চেপে আঙুল গুলে বলে সিমি।
সিফাত কাটা হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
“হাত পা কাঁপছে কেনো তোমার?
মিষ্টি করে হেসে সিমির হাতটা ধরে বলে সিফাত। সিমি ঘাবড়ে যায়। হাতের দিকে তাকায়। অসম্ভব ভাবে হাত পা কাঁপছে। রাগের বসে সিফাতকে আঘাত করলেও এখন ভেতর পুরছে।
” একদম ছুঁবেন না আমায়।
ঝাড়া মেরে সিফাতের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে সিমি। চোখ দুটো টলমল করছে।
সিফাত জাপ্টে জড়িয়ে ধরে সিমিকে। সিমি ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকে। ইচ্ছে মতো সিফাতকে আঘাত করতে থাকে। কিন্তু সিফাত ছাড়ছে না। যেনে পণ করেছে আজকে সিমিকে বণিকের ভেতর আগে রাখবে।
ছুটাছুটি করতে করতে এক সময় শান্ত হয়ে যায় সিমি। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। যেনো পূরানো ঘা তে কেউ লবনের ছিঁট দিয়েছে।
সিফাত চোখ বন্ধ করে সিমিকে অনুভব করছে। ওর চোখের কোনেও পানি জমে গেছে।
“আমাকে হ্মমা করে দাও না সিমি। একটাবার শোনো আমার কথা। আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। খুব অপরাধী না আমি।
একটা বার শোনো আমার কথা গুলো।
সিমির মাথায় চুমু দিয়ে বলে সিফাত।
🥀🥀🥀
কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে ছোঁয়া। সুন্দর করে গুছিয়ে পড়ে শিটা এলোমেলো হয়ে যায়। পরিপাটি করে খোপ করে তাতে ফুলের গাজর দেওয়া চুল গুলো আধখোলা হয়ে গেছে। চোখের পানিতে কাজল লেপ্টে গেছে। ফর্সা নাকটা লাল হয়ে গেছে।
বন্ধ চোখ দুটোর পাঁপড়ি ভিজে জবুথবু হয়ে গেছে। কাঁচের চুরি ভেঙে হতে গেঁথে গেছে।
সবেই ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে প্রবেশ করেছে সাদি। ছোঁয়ার এরকম বিধস্ত অবস্থা দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়। ওর আবার কি হলো?
সাদি অফিসের ব্যাগ টেবিলে রেখে ছোঁয়ার পাশে এসে বসে। মুখের ওপর পরে থাকা ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয়। ছোঁয়া ঘুমের মধ্যেই চোখ কুঁচকে ফেলে।
“হেই ওঠো, কি হয়েছে? অবেলায় শুয়ে আছো কেনো?
ছোঁয়ার কপালে হাত ঠেকিয়ে ডাকে সাদি।
ছোঁয়া চোখ পিটপিট করে তাকায়। সাদিকে দেখেই এক আকাশ সমান অভিমান এসে জমা হয়।
ধিরে ধিরে উঠে বসে। তাকায় না সাদির দিকে।
” কি হয়েছে?
সাদি আবারও জিজ্ঞেস করে। ছোঁয়া উওর দেয় না। আবারও চোখের কোনে পানি জমে যায়। হাতের উল্টো পিঠে পানি টুকু মুছে নেয়৷
“আরে বাবা না বললে বুঝবো কি করে?
সাড়ি পড়েছো ঠিক আছে। আবার এলোমেলো করে দিছো কেনো?
কেউ কিছু বলছে? শরীর খারাপ লাগছে?
ছোঁয়ার দুই গালে হাত দিয়ে বলে সাদি। ছোঁয়া ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। সাদি খুব যত্ন নিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়। ব্যাস কান্না শেষ।
“এভাবে আর আমার সামনে আসবা না। আমি এলোমেলো হয়ে যাই।
ছোঁয়ার নাক নাক ঘসে বলে সাদি। ছোঁয়া মুখ বাঁ কায়।
” আর মুখও বাঁকা করবা না।
ঠোঁটে বুড়ো আঙুল ছুঁয়িয়ে দিয়ে বলে। ছোঁয়া তাকিয়ে থাকে সাদির চোখের দিকে।
“কেনো?
ছোঁয়া কাঠ কাঠ গলায় বলে
” বললাম আমি এলোমেলো হয়ে যাই। আর আমাকে সামলানোর মতো বয়স বা শক্তি কোনোটাই তোমার এখনো হয় নি। পিচ্চি যে
মৃদু হেসে বলে সাদি। ছোঁয়া লজ্জা পেয়ে যায়। মাথা নিচু করে ফেলে। সাদি ছোঁয়ার মাথায় ঘোমটা টেনে দেয়।
“পারফেক্ট
ছোঁয়া মনে মনে হাসলেও বাইরে কঠোর হয়ে থাকে।
” এবার যাও। শাড়ি পাল্টে এসো। পড়তে বসতে হবে।
ছোঁয়া সাদির দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায়। সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
দুই হাতে চুল খামচে ধরে মাথা নিচু করে ফেলে। তখনই ফোন বেজে ওঠে সাদির। পকেট থেকে ফোন বের করে স্কিনে তাকাতেই বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে।
সাবিনা বেগম তখন রুমে আসে। সাদির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মাকে দেখে মায়ের কোমর জড়িয়ে ধরে সাদি। মুখ লুকায় মায়ের কোলে।
সাদি যখন খুব অবসেট থাকে তখনই এমনটা করে।
“কালকে ছোঁয়া আর সিমিকে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে চাইছি।
শান্ত গলায় বলেন তিনি। সাদি ফট করে তাকায় মায়ের দিকে।
” ভাবছি সাগরের সাথে তনুর বিয়েটা সেরে ফেলবো। দিন তারিখও ঠিক করেছে তোর বাবা।
তোদের জানানো হয় নি৷ সময়ই পাস না বাবা মায়ের সাথে একটু কথা বলার।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন তিনি।
সাদি চুপচাপ মায়ের কথা শুনছে।
“জানি বলবি অফিসের ছুটি নেই। তাই তোকে যেতে বলছি না। বউমা দের নিয়ে যাচ্ছি। তোদের যখন সময় হবে যাস। সময় না পেলে নাই বা যাস।
” মা এভাবে বলছো কেনো? যাবোই তো। তিন চার আগেই যাবো। ওকে নিয়ে যেতে হবে কেনো? আমিই না হয় নিয়ে
সাদির কথা শেষ হওয়ার আগেই সাবিনা বেগম বলে ওঠে
“ছোঁয়াকে নিয়ে কিচ্ছু শুনতে চাই না। ও যাবে আমার সাথে ব্যাস।
সাদি শুকনো ঢোক গিলে।
সিমি কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে গেছে। সিফাতের হাত অনেক আগেই আলগা হয়ে গেছে। সিমি সিফাতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। খাটের সাইডে বসে পড়ে। সিফাতও সিমির পাশে বসে।
চলবে