অন্যরকম তুমি #পর্বঃ৩৮ #তানিশা সুলতানা

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩৮
#তানিশা সুলতানা

বিয়ের এতদিন হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত এক রুমে এক বিছানায় ঘুমায় নি সাদি আর ছোঁয়া। মানুষ মাএই ভুল হয়। আর সেখানে ছোঁয়া সাদির জন্য হালাল। আর সাদি চায় না কোনো ভুল হোক৷ তাই নিয়ম করে এড়িয়ে গেছে৷ কিন্তু আজকে কেনো জানি ছোঁয়ার সাথে বেড শেয়ার করতে ইচ্ছে হচ্ছে৷ ইচ্ছে করছে ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। বুকের ওপর ছোঁয়ার মাথাটা রাখতে।

পায়চারি করতে থাকে সাদি। নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হয়। বিরক্ত লাগছে নিজের ভাবনাকে। মানুষটাকে এতোটা প্রায়োরিটি দেওয়া উচিত নয়। তাহলে সেই মানুষটাই কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ফোন বেজে ওঠে সাদির। স্কিনে ইভা নামটা জ্বল জ্বল করছে। বিরক্ত হয় সাদি। যত নষ্টের গোড়া সব এই মেয়েটাই।

খাটে বসে বালিশ কোলে নিয়ে ইভার কল রিসিভ করে সাদি।

“বল

” কেমন চলছে দিনকাল?

“তোকে সামনে পেলে থাপ্পড়াইতাম।

দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি।

” ওমা কেনো? তোর বউ কি আবারও গেছে সৈকতের কাছে ডিভোর্সের জন্য?

“নাহহহ

” যাবেও না। বলছিলাম না একটু সময় দে। ভালোবেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দে। তোকে ছাড়া কিছুই বুঝবে না।

হেসে বলে ইভা।

“সেটা বুঝলাম। এখন পবলেম হয়ে গেছে অন্য জায়গায়।

” কোন জায়গায়?

“উল্টে আমি ওই মেয়েকে মিস করতে শুরু করেছি।

ইভা খিলখিল করে হেসে ওঠে।

” প্রেমে পড়ে গেছিস তুই।

হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে খেতে বলে ইভা। সাদি খট করে ফোন কেটে দেয়। এর এই অলগা পেঁচাল শোনার সময় নেই।

ফোন রেখে আবারও উঠে দাঁড়ায় সাদি। কিছুতেই শান্ত থাকতে পারছে না।

সিমি চিৎকার করে সাদি স্যার বলে ডাকে৷ সাদি রুমে পায়চারি করছিলো। সিমির চিৎকারে এগিয়ে যায়।
সিফাতের রুম থেকেই আওয়াজ আসছে। কিন্তু ভেতর থেকে দরজা বন্ধ।
সাদি কোমরে হাত দিয়ে দরজার দিকে কিছুখন তাকিয়ে থাকে

“সিমি তুমি ভেতরে?

সাদি বলে। সিমি দরজার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে ছিলো

“হ্যাঁ স্যার। আপনার ভাই দরজায় তালা লাগিয়ে চাবি ফেলে দিছে।

দাঁতে দাঁত চেপে বলে সিমি৷ রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। সাদি ফোঁস করে শ্বাস নেয়।

” আচ্ছা চেঁচিয়ো না। আমি দেখছি কি করা যায়।

সিমি কটমট চোখে তাকায় সিফাতের দিকে৷ সে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে৷ হাত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। রক্ত গুলে জমাট বেঁধে গেছে।

“শুনলে না সিমি?

আবেগ মিশ্রিত কন্ঠে বলে সিফাত। সিমি চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেয়।

“কি শুনবো?

চোয়াল শক্ত করে বলে বলে সিমি৷ সিফাত করুন চোখে তাকায় সিমির দিকে।

” আমি যা বলতে চাই তাই।

হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় সিমি। এগিয়ে যায় দুপা সিফাতের দিকে।

“কি শুনাইবেন? এটাই যে আমাদের বিয়ের ঠিক দুই মাস পরে আপনার জীবনে রিমি নামের কেউ চলে আসে। আর তাতেই আপনি মজে যান। এটাই মজে যান যে তাকে বিয়ে পর্যন্ত করতে চান। কিন্তু তখন মনে পড়ে যায় আমি তো অলরেডি একটা বিয়ে করে ফেলেছি৷ কিন্তু তাতে কি কেউ তো আর জানে না৷ তখনই ডিভোর্সের বেপারটা মাথায় ঢুকে যায় আপনার। রিমিকে বেড পার্টনার হওয়ারও অফার দিয়েছেন আপনি। কিন্তু সে ডিরেক্টলি না করে দিছে।

এই গল্পটাই শুনাতে চাইছেন আমায়?

একদমে কথা গুলো বলে থামে সিমি৷ রাগে শরীর কাঁপছে। কন্ঠ নালীও কাঁপছে। ইচ্ছে করছে সব ভেঙে গুড়িয়ে দিতে।
কেনো পুরো হ্মত জাগিয়ে দিচ্ছে এই অমানুষটা?

সিফাত চোখ বন্ধ করে ফেলে৷ চোখের কুর্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা পানি পড়ে।

সিমি হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ফেলে।

” বিশ্বাস করুন এতে আমার কোনো রাগ নেই৷ শুধু এটুকু হলে আমি আপনাকে হ্মমা করে দিতাম। রিমিকে বিয়ে করে নিলেও আমি আপনার সংসারে ফিরে আসতাম।
কিন্তু আপনি কি করলেন?

আমি বিনা বাক্যে ডিভোর্স দিতে রাজী হয়ে গেলাম। আর আপনিও ডিভোর্স পেপার হাতে ধরিয়ে দিলেন। সব কিছুই ভালোই হলো। কিন্তু যখনই জানতে পারলেন আমি প্রেগন্যান্ট। রিমির সাথে বিয়েটা ভেঙে দিলেন। উঠেপড়ে লাগলেন আমার বাচ্চাটার পেছনে। কেনো?

আমি জানি না আপনি কেনো আমার সামনে না এসে হিমুর থেকে খবর নিতেন।
কিন্তু ডেলিভারির দিন নার্সকে টাকা খাইয়ে আমার বাচ্চাটাকে চুরি করে নিলেন৷ আর নার্সকে ধরিয়ে দিলেন একটা মরা বাচ্চা?
এতোটা নিষ্ঠুর আপনি কি করে হলেন? এতটা ভেঙে কেনো গুড়িয়ে দিলেন আমায়?

কাঁদতে কাঁদতে হাঁটু মুরে বাসে পড়ে সিমি৷ সিফাতের বলার মতো কোনো কথা নেই৷ মুখে কুলুপ এটে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।

তখনই দরজা খুলে দেয় সাদি৷ পরি দৌড়ে এসে বাবার বুকে মাথা রেখে শয়। কান্না থেমে যায় সিমির। পরি তো মায়ের কাছেও আসতে পারতো।
সিফাত পরম যত্নে আগলে নেয় পরিকে।
সাদি শুকনো কাশি দেয়।

“সিমি আর ইউ ওকে?

সিমি চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ায়।

“স্যার আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন?
আর আপনার ভাইকে বলে দিবেন আমার আশেপাশে আসলে ওনাকে খুন করে দিতে আমি দুবার ভাববো না।

লাল হয়ে যাওয়া চোখে সিফাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে সিমি৷ সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

” সিমি আমি বলছিলাম

সিমি হাত উঁচু করে থামিয়ে দেয় সাদিকে।

“আমি ওনাকে ভীষণ ঘৃণা করি। ভীষণ। কিন্তু উনি বাবা হিসেবে একজন সৎ আদর্শ বাবা। ছেলে হিসেবেও খুব ভালো। ভাই হিসেবে ওনার তুলনা অতুলনীয়।
তাই আমি চাই না আমার মতো ওনার বাবা মা ভাই এমনকি আমার ছোট্ট পরিটা বাবাকে ঘৃণা করুক।

আমার অতীতের গল্প শুনলে আপনি সয্য করতে পারবেন না। নিজের ভাইকেই খুন করতে ইচ্ছে হবে আপনার।

বলেই হনহনিয়ে চলে যায় সিমি৷ সিফাত অপরাধী মতো তাকিয়ে থাকে সাদির মুখের দিকে।

” বাবা তোমার হাতে কি হয়েছে?

সিফাতের কাটা হাতটা ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলে পরি। সাদি আর সিফাত চমকে ওঠে। সাদি দৌড়ে সিফাতের কাছে যায়।
সিফাত উঠে বসে পড়ে।

“কিভাবে কাটলো? ইসসস অনেকটা কেটে গেছে।

সাদি সিফাতের কাটা হাতটা ধরে বলে। পরি সিফাতের বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।

” মা বাব একদম ঠিক আছে। কাঁদে না।

পরির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে সিফাত। কিন্তু পরি থামে না। বরং শব্দ করে কেঁদে ওঠে।

পরির কান্নার আওয়াজে ছোঁয়া সাবিনা বেগম চলে আসে। ছোঁয়া পরিকে কোলে তুলে নেয়। সাবিনা বেগম সিফাতের জখম হওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে ভ্রু কুচকে। সাদি স্যাভলন তুলো এনে সিফাতের হাতের হ্মত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেস করে দিতে থাকে।

“কাটলো কি করে?

সাবিনা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে। সিফাত মাথা নিচু করে ফেলে। উওর দেয় না। ফোঁস করে শ্বাস নেয় তিনি।

” বাবাকে নিয়ে দুই ভাই এই রুমেই শুয়ে পড়ো। আমরা এক সাথে ঘুমাবো

বলেই ছোঁয়ার হাত ধরে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়া এক পলক তাকায় সাদির দিকে। সাদি চোখের ইশারায় ছোঁয়াকে দেখা করতে বলে। কিন্তু ছোঁয়া সেটা বুঝতে পারে না।

রাতের খাবার খাওয়ার সময় ছোঁয়াকে দেখতে পায় না সাদি। মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করার সাহসও পায় না। চুপচাপ খেয়ে উঠে যায়।

সিফাত খেতেই যায় নি। বাবা আরামসে খাচ্ছে। সাবিনা বেগম নিজে হাতে খাবার বেরে দিচ্ছেন ওনাকে।

সাদি রুমে এসে দেখে সিফাত মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আর পরি সিফাতের বুকের ওপর শুয়ে আছে।

“তোমার মাম্মা কোথায় আম্মু?

সাদি পরির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
পরি সিফাতের পেটের ওপর গোল হয়ে বসে।

” মা আর মাম্মা দুজন মিলে মুভি দেখছে। আর বলেছে তোমাদের হাতে খেতে।

গাল ফুলিয়ে বলে পরি। সাদি ফুস করে ওঠে। বাচ্চা মেয়েটাকে না খাইয়ে দিয়ে মুভি দেখা হচ্ছে? হাতের কাছে পেলে ঠাস করে একটা চর মেরে দিতো।
ইডিয়েট একটা
বিরবির করে বলে সাদি।

“আমাদের দুই ভাইয়ের মনে আগুন জ্বালিয়ে দিব্যি মুভি দেখছে ওরা।

সিফাত তাচ্ছিল্য হেসে বলে ওঠে। সিফাতের অসহায় ফেস দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে সাদির।
কিন্তু খিলখিল করে হাসাটা সাদির ক্যারেক্টারে নেই। হাসতে জানেই না। ইদানীং কারণ ছাড়াই হাসি পায়।

” মা মাম্মাম কে গিয়ে বলো পাপ্পা এখনি ডেকেছে।

পরিকে বলে সাদি।

“যদি ধমক দেয়?

” দিবে না যাও। দিলে আমি বকে দেবো।

পরি এক গাল হেসে দৌড় দেয় ছোঁয়ার রুমের দিকে।

“তোর বউ আসবে না রে ভাই। শুয়ে পড়ে আমার পাশে।

একটু সরে সাদিকে জায়গা দিয়ে বলে সিফাত।

” আসবে। আসতে তে হবেই।

সাদি অনমনে বলে ওঠে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here