মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸 #পর্ব- ৭

0
2122

#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸
#পর্ব- ৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
বর্ণ হুট করে এসে, শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অর্ষাকে সকলের সামনে। অপর হাত দিয়ে বিপরীত দলের ছেলেটির লা/ঠিটিকে ধরে রাখলো। যা দিয়ে সে অর্ষাকে আ/ঘাত করতে এসেছিলো। বর্ণ শক্ত করে অর্ষা নিজের বক্ষস্হলের মধ্যিখানে সীমাবদ্ধ রাখলো,যেন কোন বাহ্যিক আ/ঘাত কিংবা আ/চ অর্ষার গাঁয়ে না লাগে।অর্ষা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বর্ণের পানে। পাশে থাকা হ্যাংলা পাতলা গড়নের ছেলেটি বারংবার বর্ণের থেকে নিজের লা/ঠি সরানোর প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু সে ব্যর্থ! অর্ষা বর্ণের বুক থেকে সরে আসতে চাইলে, বর্ণ অর্ষাকে নিজের থেকে সরে যেতে দেয় না। শক্ত করে চেপে ধরে নিজের বক্ষে। পাশের ছেলেটিকে নিজের বা পা দিয়ে লা/ত্থি মেরে দূরে ছিটকে ফেলে। নিজেদের দলের লোকদের মা/রায় বিপরীত দলের ছেলেরা চটে যায় পূর্বের তুলনায়। তারা সকলে বর্ণের দিকে এইবার আক্র/মণ করতে যায়। অর্ষাকে নিজের থেকে সরিয়ে বর্ণ তাদের কাছে গিয়ে মা/রামা/রি করতে থাকে। মূলত বিপরীত দলের ছেলেদের থামানোর জন্যেই, নিজেই ঝাঁপিয়ে পরে বর্ণ। বর্ণ স্পষ্ট বুঝতে পারছিলো অর্ষা তাদের সামলাতে গিয়ে হিমষিম খাচ্ছে। অর্ষা হকি স্টি/ক হাতে নিয়ে এগিয়ে আসতে চাইলে, বর্ণ দ্রুত অর্ষাকে থামিয়ে দিয়ে তেজি গলায় বলে, ‘ একদম আসবেন না আপনি। দাঁড়িয়ে থাকুন আপনি। পরিস্হিত আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গিয়েছে। এখন আপনার জন্যে বেশ রিস্কি! সো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন। আমি হ্যান্ডেল করছি এদিক টা। ‘

বর্ণের কথার পাছে বিপরীত কোন শব্দ উচ্চরণ করলো না অর্ষা। অন্য কেউ হলে কখনোই তার কথা গাহ্য করতো না,কিন্তু বর্ণ কেন যেন খুব আলাদা তার কাছে। তাকে অগাহ্য করার ক্ষমতা অর্ষার নেই। অর্ষা দেখতে পেলো বর্ণের সামনে অনেকেই আ/হত হয়ে পরছে, তারা বর্ণের সাথে কিছুতেই পেরে উঠছে না। বর্ণের মা/র/পিট দেখে এক পলক মুগ্ধ হয়ে তাঁকায় অর্ষা। বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘ এত্তো সুন্দর ফাইটিং? আচ্ছা উনি কি রেগুলার ফাইট করে? ‘

_______________

বর্ণের মাথায় ব্যান্ডিজ করে বর্ণের সামনাসামনা বসে অর্ষা। মুখে তার একরাশ রাগ। রিপোর্টটরা মুহুর্তেই চলে এসেছে। তারা সকলে একপ্রকার ভীর জমিয়ে ফেলেছে। অর্ষা একপলক বর্ণের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায়, অতঃপর সামনের দিকে দাঁড়ায়। সেখানে তাদের দলের ছেলেপেলারা ছিলো, তারা রিপোর্টটারদের সামলাচ্ছিলো। অর্ষাকে দেখেই তারা সরে দাঁড়ালো। অর্ষা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে, খানিক্টা দাপটতার সহিত সুধালো, ‘ আপনারা তো দেখলেনই! সামনে নির্বাচন, অথচ বিপক্ষের দল কি করলো? রাতে সকলের আড়ালে, আমাদের দলের ছেলেদের উপর আক্রমণ করলো, এমনকি! আমাদের সাধারণ জনগণের উপরও তারা আক্রমণ করেছে, তারা আপাতত হসপিটালে ভর্তি। কিছুতেই তাদের থামালো যাচ্ছো না। আমার মনে হয় তাদের পরিকল্পনা ছিলো যেমন করেই হোক, আমাদের দমিয়ে রাখা, বাট আনফরচোনেটলি, তা তারা পারে নি। ‘

রিপোর্টটরা বড় বড় করে অক্ষরে অর্ষার প্রতিটি বয়ান লিখে রাখলো, সবকিছু লাইভে আজ দেখানো হচ্ছে। দূর থেকে বর্ণ বসে বসে সব পর্যবেক্ষন করছে। নিজেকে মিডিয়ার থেকে ইচ্ছে করেই দূরে সরিয়ে রেখেছে সে। মিডিয়া তাকে দেখলেই উল্টা আজেবাজে নিউজ রটিয়ে ফেলবে, যা তার কম্পানির ইমেজের বেশ খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। অর্ষা রিপোর্টটারদের প্রশ্নের উত্তর বেশ দক্ষতার সাথে দিয়ে, সাইডে সরে এসে বর্ণের কাছে আসলো। মা/রা/মা/রির এক পর্যায়ে একজন এসে পিছন থেকে বর্ণের মাথায় আ/ঘাত দেয়, তখন অর্ষা নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারে না। সে দৌড়ে এসে বর্ণকে ধরে, সে ছেলেটাকে নিজের হ/কি স্টি/ক দিয়ে মারতে মারতে জ/খম করে ফেলে। যদিও বর্ণ নিজেকে সামলিয়ে নিয়েছিলো। অর্ষা তীব্র শ্বাস ফেলে বলে, ‘ কি দরকার ছিলো মা/রা/মা/রি করার?
মাথা ফা/টিয়ে বসলেন তো এখন। ‘

বর্ণ কিছুটা ভাবের সাথেই, নিজের শার্টের হাত গুটিয়ে বলতে থাকে, ‘ ওইসব আমার কাছে কোন ব্যাপার না, আমার কিছুই হতো না, শুধু ওই রা/স্কেল টা পিছন থেকে এসে, আ/ঘাত করায়, এমন টা হলো। ‘

‘ আপনি এখন বাড়ি ফিরে যান, অনেক রাত হয়েছে।’

‘ আপনি কখন যাবেন? ‘

‘ কিছু কাজ আছে, তা শেষ করে বাড়ি ফিরবো। ‘

অর্ষার স্পষ্ট উত্তর। বর্ণ সায় জানিয়ে উঠে দাঁড়াতেই, অর্ষার কেমন বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো। বর্ণের মাথায় বেশ চ/ট পেয়েছে। কেমন একটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে। যদি গাড়ি চালানোর সময় হুট করে অজ্ঞান হয়ে পরে? মানুষটার জন্যে চিন্তার হচ্ছে তার। অর্ষার একবার মনে প্রশ্ন জাগলো, ‘ আচ্ছা আপনার কি মাথায় ব্যা/থা করছে? ‘

অর্ষার জিজ্ঞাসা করেও করা হলো না। সে নিষ্চুপ হয়ে থাকলো। বর্ণ কি ভেবে যেন অর্ষার কাছে এগিয়ে এসে বললো, ‘ মিস ঝাঁঝওয়ালী আমাকে নিয়ে চিন্তা না করে, নিজের কাজে মনোযোগ দিন। আমি সাবধানে পৌঁছে যাবো। ‘

অর্ষা ভরকে গেলো বর্ণের উত্তরে। মানুষটা সত্যি অদ্ভুদ! কি করে তার মনের ভাব বুঝে যায়? মানুষটা কি মনোবিজ্ঞানী?

নিজের অজান্তেই,অর্ষা বর্ণকে প্রশ্ন করলো, ‘ আপনি কি মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছেন? ‘

অর্ষার প্রশ্নে বর্ণ আলতো করে হেসে বললো,

‘ মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়েনি, তবে মিস ঝাঁঝওয়ালী আপনার মনের মনোবিজ্ঞানী হতে চাই। হতে দিবেন আমায়? ‘

বর্ণের বিপরীত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে পিছনে ঘুড়ে যায়। বর্ণ পুনরায় হাঁসে।

____________________

নিজের ছেলেকে জ/খম অবস্হায় দেখে বর্ণের মা, দ্রুত দৌড়ে এসে, তার ছেলের মাথায় হাত রেখে বলে,

‘ কি হয়েছে বর্ণ তোর? ফোন কেন অফ ছিলো তোর? কি হয়েছে বাবা আমার? তোর মাথায় চ/ট পেলি কীভাবে? ‘

বর্ণের মা একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন। বর্ণ তার মায়ের কথার প্রেক্ষিতে, তার মাকে বসিয়ে বললো, ‘ মা! মা এত্তো চিন্তার কিছুই নেই। ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট আর কিছুই না। ‘

বর্ণের মা বর্ণের মাথায় হাত বুলিয়ে চিন্তার সুরে বলে,

‘ জানিনা বাপু। তুই আমাদের একমাত্র ছেলে। তোকে নিয়ে আমার চিন্তার শেষ নেই। এদিকে প্রতিদিন তোকে পাত্রির ছবি দেখাতে দেখাতে আমি ক্লান্ত। একটা মেয়েও তোর পছন্দ হয় না। তুই কি আদোও বিয়ে করবি? ‘

বর্ণ সোফায় হেলান দিয়ে বললো, ‘ না মা, ভাবছি আজীবন সন্নাষ্যি থেকেই যাবো। ব্যাপারটা বেশ ইউনিক হবে। বলিউডের ভাইজান সাল্লু ভাই আর আমি দুজনেই সিংগাল থাকার ব্রত পালন করবো। ব্যাপারটা হেব্বি জোস!’

ছেলের কথায় বর্ণের মা বর্ণকে আলতো মে/রে বললো, ‘ তোর মজা শেষ হবে না তাইনা? সব বিষয়েই মজা করতে হবে? ‘

মায়ের কথার বিপরীতে বর্ণ হু হা করে হেসে উঠে। অতঃপর পেটে হাত রেখে অসহায় সহিত বলে,

‘ মা অনেক ক্ষুধা লেগেছে, খাবারের ব্যবস্হা করো। ‘

বর্ণের মা খাবারের টেবিলে যেতে যেতে বলে,

‘ আরফানেরও বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে, আমি কিন্তু তোরও বিয়ে ঠিক করে ফেলবো। এইবার তোর কোন বাহানা আমি শুনবো না। ‘

____________________

আজ মিরা এবং আরফানের রং খেলার উৎসব। অর্ষা আজ সকাল সকাল তৈরি হয়ে রয়েছে। অপেক্ষা আরফানের। আজ আরফানের সাথে বেশ কিছু হিসাব রয়েছে তার। অপরদিকে অরু আজ অন্যদিনের তুলনায় বেশ সাজগুজ করে, অর্ষার কাছে এসে দাঁড়িয়ে নিজের লেহেংগা দেখিয়ে বললো,

‘ অর্ষা আপু আমাকে আজ কেমন লাগছে? ‘

‘ ভালোই লাগছে। ‘

ছোট্ট করে বললো অর্ষা। অরু পুনরায় কি ভেবে যেন প্রশ্ন করলো ‘ আজ আমায় দেখে বর্ণ ভাইয়া ক্রাশ খাবে তো অর্ষা আপু? ‘

অরু একপ্রকার ইচ্ছে করেই অর্ষাকে প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করলো। অরুর প্রশ্ন বেশ বিরক্ত করলো অর্ষা। সে বিরক্তির সহিত তেজি গলায় জবাব দিলো,

‘ একদমই ক্রাশ খাবে না। এমন ভুতের মতো সাঁজলে, শুধু বর্ণ কেন কেউই ক্রাশ খাবে না। বরং সবাই ভুত ভেবে ভয় পেয়ে পালাবে। ‘

চলবে কি?
[ সবার ইদ কেমন কাটছে? সকলের ঘটনমূলক মন্তব্য আশা করছি।] 🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here