#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸
#পর্ব- ৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
বিয়ের আগের দিন আরফানের কানাডার প্রেমিকা অনাবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছে আরফানকে। আরফান পরেছে মহাবিপদে। কাল তার বিয়ে অথচ রোজিয়ানা তাকে একপ্রকার জ্বালিয়ে মারছে। আরফান রোজিয়ানাকে ফোন করে, শান্ত সুরে বলে, ‘ দেখো রোজিয়ানা, আমি বলেছি কানাডা এসেই তোমার সাথে মিট করবো। ওকে বেবী? ‘
রোজিয়ানা একপ্রকার গর্জেই উত্তর দেয়, ‘ কিসের ওকে হ্যা? কিসের ওকে? তুমি আমাকে না জানিয়েই বিডিতে চলে গেলে, আমার কল ব্যাক করছো না। কি হয়েছে তোমার? আচ্ছা তুমি কোনভাবে আমাকে চিট করার ট্রাই করছো না তো আরফান? ‘
আরফানের ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘামের সৃষ্টি হতে লাগলো। হাত বাড়িয়ে তা দ্রুত মুছে সে মিনমিনিয়ে বলতে লাগলো, ‘ কি বলছো রোজিয়ানা? এমন কিছুই না। আমাকে তুমি সন্দেহ করছো? মানে আমার প্রতি তোমার কোন ট্রাস্টই নেই। ‘
‘ না নেই। ‘
রোজিয়ানার সোজা উত্তর। এক দুই কথায় আরফানের এবং রোজিয়ানার বেশ বড়সর ঝগড়া বেঁধে গেলো। অপরদিকে পাত্রপক্ষ সকলেই প্রায় মিরার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে, কিন্তু রোজিয়ানার ঝামেলার জন্যে, আরফানের দেরী হয়ে যাচ্ছে।
__________________________
‘অরুকে তো বেশ সুন্দরই লাগছে মিস ঝাঁঝওয়ালী।’
পিছন থেকে বর্ণ কথাটি বলে সামনে এলো। অরু বর্ণের দিকে একপলক তাকিয়ে খুশিতে প্রায় আত্বহারা হয়ে গেলো। তার ক্রাশ তাকে সুন্দর বলেছে, সে যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে গেলো। অরুর খুশি দেখে সে? সে বর্ণের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখিয়ে বললো, ‘ বর্ণ ভাইয়া তুমি আমাকে সুন্দর বলছো মানে, আজ আমাকে সবথেকে বেস্টই লাগছে। থ্যাংকস আ লট! ‘
অরু পিছনে ঘুড়ে অর্ষাকে দেখে মুখ ভেংচি কেটে বললো, ‘ যাদের সৌন্দর্য বা মেয়েদের ফ্যাশন নিয়ে সেন্স নেই, তারা কি বুঝবে কাকে কেমন লাগছে। ‘
অর্ষা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বর্ণ মিটিমিটি হাঁসছে তা দেখে। অর্ষা পায়ের উপর পা রেখে বর্ণের দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে, অরুকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে, ‘ যারা অন্যের কথায় কোনকিছু বিবেচনা না করে, লাফায়। তাদের মতো মূর্খ কেউ হতে পারে না। তুই তার বড় উদাহরণ।’
অরু কথাটি শুনে আখিজোড়া বড় বড় করে অর্ষার দিকে তাকায়। অর্ষা তাকে বর্ণের সামনে অপমান করে দিলো। বর্ণ কি ভাবলো? অরু বর্ণের দিকে তাকাতেই, দেখতে পায় বর্ণ তার পাঞ্জাবির পকেটে হাত রেখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে অর্ষার দিকে। অর্ষা রোদে দাঁড়িয়ে একপ্রকার ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে। চুলগুলো খোপা করে। দু তিনটে অবাধ্য চুল এসে, অর্ষার ললাটে জুড়ে লেপ্টে রয়েছে। বর্ণের বড্ড ইচ্ছে হলো হাত বাড়িয়ে, অবাধ্য চুলগুলোকে সরিয়ে দিতে, কিন্তু সে তা করলো না। থাকুক না অবাধ্য চুলগুলো। সুন্দরই তো লাগছে।
অরু নিজেকে দেখিয়ে বললো, ‘ আচ্ছা এইভাবে ছেলেদের মতো না থেকে, আমাদের তো সেঁজেগুজে তো থাকতে পারো। ওহ আমিও না কাকে বলছি তুমি তো মনে হয় সাঁজতেই পারো না। ‘
অরু কথাটি বলে হু হা করে হেসে উঠে। অরুর পিছনে অরুর কাজিনেরা ছিলো, তারাও পিছন থেকে হেসে ফেললো অরুর কথায়। অর্ষা হাতে হাত রেখে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোনরুপ বিরুপ প্রতিক্রিয়া করলো না।
বর্ণ অর্ষাকে জ্বালাতে একটু মুচকি হেসে ধীর গলায় বললো,
‘ কি হলো মিস ঝাঁঝওয়ালী কোন উত্তর দিলেন না যে। ‘
অর্ষা বর্ণের প্রশ্নের উত্তরে সকলের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো, ‘ মূর্খদের সাথে অযথা তর্কে জড়ানো সবথেকে বড় মূর্খতা। ‘
অর্ষা কথাটি বলেই, পা চালিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। অরুসহ তার সকল কাজিনদের মুখে বিষন্নতার রেশ পরে গেলো। অপমানে নিচু হয়ে গেলো তাদের মাথা। বর্ণ পিছনে অরুর কাছে এসে, ঠোটে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বললো, ‘ একটু বেশিই পাম মেরে দিয়েছি আজকে, একটু কম ম্যাকাপ করিও কেমন? বড় ভাই হয়ে এডভাউজ দিচ্ছি। নাহলে সবাই সত্যি ভয় পেয়ে পালাবে। ‘
[ লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
বর্ণ কথাটি বলেই, অর্ষার পিছনে গেলো। অরু অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। যার জন্যে এত্তো সাঁজলো সে, সেই তাকে অপমান করে দিলো! অরুর সকল কাজিনেরা মিটিমিটি করে হাসছে। অরু তাদের দেখে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাঁকাতেই, তারা চুপ হয়ে গেলো।
অর্ষা বাড়ির ভিতরে ঢুকে, মিরার মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা করলো, ‘ মামি আরো কিছু লাগবে? মানে বাজার থেকে আর কিছু নিয়ে আসতে হবে? ‘
মিরার মা শরবতের গ্লাসটা অর্ষার হাতে ধরিয়ে দিয়ে, তাড়া দিয়ে বললেন, ‘ সকাল থেকে অনেক কাজ করেছিস, এইবার গ্লাসটা খেয়ে শেষ করতো বাপু। আমার আবার মেলা কাজ রয়েছে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে। পাত্রপক্ষরা চলে এসেছে, আরফান বাদে। আরফান চলে আসলেই শুরু হয়ে যাবে। ‘
মিরার মা কথাটি বলেই, সামনে তাকাতে দেখেন বর্ণ তার দিকেই এগিয়ে আসছে। বর্ণকে দেখেই মিরার মা প্রশ্ন করলেন, ‘ ওহ বাবা তোমরা তো সবাই চলে এসেছে, আরফান কোথায়? ও কখন আসবে? মিরা তো প্রায় রেডি। ‘
বর্ণ কিছু বলার পূর্বেই, বর্ণকে দেখে অর্ষা অত্যান্ত বিরক্তির সহিত বললো, ‘ মামি! আমি বরং মরুর কাছে যাই। তুমি থাকো। ‘
কথাটি বলেই অর্ষা মুখ বেকিয়ে মিরার কক্ষের দিকে পা বাড়ালো। মিরা আজ একটি গোলাপী লেহেংগা পরেছে। বেশ সুন্দর লাগছে তাকে। মিরাকে দেখেই, অর্ষা মুচকি হেসে বললো, ‘ বাহ আমার মরু সুন্দরীকে আজ বেশ লাগছে। কারো নজর যেন না লাগে। ‘
অর্ষার কথার বিপরীতে, মিরা কিছুটা মুখ কালো করেই উত্তর দেয়, ‘ তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু তুই রেডি হবে নাকি এই শার্ট পরেই আজ রং খেলতে যাবি। ‘
‘ হ্যা তো? আমি আবার কি রেডি হবো? ‘
মিরা হতাশ পানে তাকিয়ে রইলো অর্ষার দিকে। অরু এবং কাজিনেরা প্রবেশ করে, মিরার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ আপাই এইবার স্টেজে চল, একটু পরই অনুষ্টান শুরু হয়ে যাবে। ‘
সকলে মিলে মিরাকে নিয়ে বাগানের দিকে চলে গেলো। অর্ষা ও বেড়োতে নিলে, বর্ণ হাত বাড়িয়ে দরজায় হাত রেখে, অর্ষাকে একপ্রকার বাঁধা দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বর্ণকে দেখে চলে যেতে চাইলে, অপর হাত দিয়ে পুরোপুরি বন্দী করে ফেললো বর্ণ। অতঃপর বললো, ‘ বর্ণ আহমেদকে ইগ্নোর করছেন আপনি মিস ঝাঁঝওয়ালী। ওয়াও গ্রেট! ‘
অর্ষার হুট করে বর্ণের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে বললো, ‘ আমার পিছনে ঘুড়ঘুড় করছেন কেন আপনি? অরু তো বেশ সুন্দর! অনেক সুন্দর! তো সেই অরুর কাছেই যান। আমার পিছনে পিছনে কি হ্যা? ‘
‘ কোথায় যেন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। আর ইউ জেলাস মিস ঝাঁঝওয়ালী? ‘
বর্ণের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে বর্ণকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো অর্ষা।
বর্ণ কি ভেবে যেন অর্ষার হাত ধরে আয়নার সামনে অর্ষাকে দাঁড় করিয়ে, ধীর কন্ঠে বললো,
‘ আপনি চুল খুলে একটি শাড়ি পরে, আয়নায় নিজেকে একপলক দাঁড়িয়ে থাকবেন, একদম সাঁজবিহীন৷ দেখবেন আপনার কঠোরতার মুখোশে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত স্নিগ্ধ মুখশ্রীখানা ধরা দিবে। খুব সুন্দর লাগবে আপনাকে। খুব সুন্দর। ‘
বর্ণের কথা শুনে স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে পরে অর্ষা। বর্ণও কিছুক্ষনের জন্যে নিষ্চুপ হয়ে থাকে। বর্ণের হাত অর্ষার কাঁধে। অর্ষা আয়নার দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, অর্ষা কেমন মায়া নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অদ্ভুদ মায়া যাকে বলে!
_____________________
আরফান ও কিছুক্ষনের মাঝে চলে আসলো। অনুষ্টান শুরুর পথে। অনুষ্টান শুরু হওয়ার পূর্বে আরফানের কাধে হাত রেখে বর্ণ বলে, ‘ তুই তো
শা/লা বিয়ে করে ফেলছিস। নিজের সিংগাল বন্ধুদের দিকেও একটু নজর দে এইবার। ‘
প্রতিউত্তরে আরফান সামান্য হেসে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়ে বলে, ‘ নেক্সটে তুইও বিয়ে করে ফেল। ভালোই তো। আর আমি বলি কি! তুই অর্ষার থেকে যত দূরে থাকতে পারিস থাক বুঝলি। মেয়েটা আসলে ভালো না। বখাটে টাইপ আর কি! ‘
কিছুটা ভয় নিয়েই বললো আরফান। বর্ণ হুট করে অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘ তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? অতীতের কোন রহস্য বেড়িয়ে আসবে বলে? ‘
বর্ণের কথা শুনে আরফান ভয়ে ঢুগ গিললো। তা দেখে বর্ণ অদ্ভুদ ভাবে তাকালো আরফানের দিকে। আরফান দেখতে পেলো বর্ণের নেত্রজোড়া স্বাভাবিকের তুলনায় আজকে কেমন টকটকে লালবর্ণ ধারণ করে রয়েছে। আরফান কিছু বলার পূর্বেই, বর্ণ হুট করে দাঁড়িয়ে পরলো। কেননা সামনে….
চলবে কি?
[ সকলের গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য কামনা করছি🙂আপনাদের ঘটনমূলক মন্তব্যই আমার প্রেরণা🖤]