তিনি আমার সৎমা পর্বঃ৬

0
826

#তিনি_আমার_সৎমা

পর্বঃ৬

আমি বুঝতে পারলাম আমার শক্তি কমে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। নিস্তেজ হয়ে পড়ছি আমি। বার বার চোখের সামনে রুনা আন্টির মুখটা ভেসে উঠছে। মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাবো আমি। লোকটাও তার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময় আমার মনে হলো বাইরে ভীষণ শোরগোল। কার কণ্ঠ বুঝতে পারছি না। হাশেম লোকটাও দেখলাম একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে কিন্তু তার বাঁধন এখনো শক্ত। আমার সামনে আমার পুরো দুনিয়া টলছে। জ্ঞান হারানোর ঠিক আগ মুহুর্তে আমি দেখলাম কেউ একজন দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে পড়েছে তার হাতে একটা শাবল। ঘরে ঢুকেই শাবলটা ফেলে দিয়ে তিনি চিৎকার করে উঠলেন আমার নাম ধরে। আমার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। আমি ঝাপসা চোখে দেখলাম যেনো আমার মা দাঁড়িয়ে আছে। সেই তার আগুন ঝরানো চোখ। আমি এবার পুরোপুরি জ্ঞান হারালাম। আমার আর কিচ্ছু মনে নেই।

কতক্ষণ আমি অজ্ঞান ছিলাম আমি জানিনা। অজ্ঞান অবস্থাতেই আমি একটা কল্পনার মধ্যে ঢুকে পড়ি। আমার নিজের মা আমাকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে চাচ্ছে আর আমি না ঘুমিয়ে শুধু তার দিকে তাকিয়ে আছি।
“কি রে পাগলি? ঘুমাবি না? কি দেখছিস ওভাবে ঘুরে ঘুরে?”
“তোমাকে দেখছি মা।”
“পরে দেখবি মা কে। এখন ঘুমা তো সোনা।”
“না মা আমি ঘুমাবো না। আমি ঘুমালেই তুমি আবার আমাকে এই নরকে একা রেখে চলে যাবে। কতোদিন তোমাকে দু’চোখ ভরে দেখিনা। একটু দেখতে দাও না মা তোমাকে। একটু তৃষ্ণা মেটাই।”
মা খুব সুন্দর করে হাসলো। আমি অবাক নয়নে সেই হাসি দেখলাম। হাসির দমকে মায়ের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। কি অপরূপ সেই দৃশ্য। আমি মা কে আরো শক্ত করে চেপে ধরতে চাই। মায়ের গায়ের গন্ধে শান্তিতে জানটা ভরে ওঠে আমার। এ যেনো স্বর্গীয় এক সুখ।
হঠাৎ চারপাশ কেমন কালো হয়ে আসলো। একটা হালকা ধোঁয়াতে ভরে গেলো পরিবেশটা। আমার খুব ভয় করতে লাগলো। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,”ও মা, মা তুমি কই? আমার খুব ভয় করছে মা। কই গেলে তুমি?”
“এইতো আমি। তোর কাছেই আছি আমি। দেখতে পাচ্ছিস না?”
আমি মা কে কোথাও দেখতে পেলাম না। তেষ্টায় আমার গলা কাঠ হয়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। হাঁপাতে হাঁপাতে শেষবারের মতো আমি চিৎকার করে উঠলাম,”মা গো, মা।”
ঠিক তখনই আমার হুঁশ ফিরে আসে। আমার বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে আমি কোথায় আছি মনে করতে। কি হয়েছিলো আমার?
মাথা যন্ত্রণার জন্য একা ঘরে শুয়ে থাকা। হঠাৎ কারো স্পর্শে ঘুম ভেঙে যাওয়া, দরজা বন্ধ। হাশেম? হ্যা ওই পিশাচটা…..
এটুকু ভাবতেই আমি চিৎকার দিয়ে উঠে বসি। আমার সারা শরীর ঘামে জবজব করছে। তেষ্টায় প্রাণ ওষ্ঠাগত।
আমাকে ওভাবে দেখেই রুনা আন্টি ছুটে আসলেন আমার কাছে। আমাকে জড়িয়ে ধরলেন দুই হাতে। উনি ফোঁপাচ্ছেন।
“এইতো আমার মা, আমি এইযে। কিচ্ছু হয়নি তোমার। আমি চলে এসেছি তো তার আগেই। এইতো আমি এখানে। কোনো ভয় নেই তোমার মা।”
তার গায়ের গন্ধটা এতো পরিচিত লাগছে আমার। মনে হচ্ছে কতো জনম জনম ধরে গন্ধটা আমার শরীরের সাথে লেপ্টে ছিলো। আমি উনাকে আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরলাম। ফোঁপানোর জন্য কথা বলতে পারছি না। কোনোরকমে একটু স্বাভাবিক হয়ে বললাম,”মা, তুমি এসেছো মা? জানো ওই পশুটা আমার ক্ষতি…..”
মুখ চেপে ধরলেন উনি আমার। বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,”তোর কোনো ক্ষতি আমি ওকে করতে দিই নি। আয় আমার সাথে। আমার হাত ধরে আয় আস্তে আস্তে।”
“কোথায়?”
“আগে আয় তারপর দেখবি।”
আমি উনার হাতটা শক্ত করে ধরে হাঁটতে লাগলাম উনার সাথে। আমার শরীর বেশ দূর্বল, মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা।

উনি আমাকে হাত ধরে বসার ঘরে আনলেন। বসার ঘরে যে দৃশ্য আমি দেখলাম তা দেখার জন্য প্রস্তুত আমি ছিলাম না। আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম। রুনা আন্টির হাত শক্ত করে চেপে ধরলাম। আমার সারা শরীর কাঁপছে থরথর করে।
হাশেম অসভ্যটাকে শক্ত রশির সাহায্যে বেঁধে রাখা হয়েছে। সে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে, কিন্তু বাঁধন এতো শক্ত যে নড়াচড়াও করতে পারছে না সে। পাশেই আফজাল সাহেব কাচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে ছিলো। রুনা আন্টিকে দেখে সে বললো,”রুনা, বাড়াবাড়ি করো না। তোমার কোনো আইডিয়া নেই কার সাথে কি করছো তুমি। উনাকে চিনো তুমি? ছেড়ে দাও উনাকে। হ্যা মানছি উনি ভুল করেছেন। তাই বলে এসব কি কথা রুনা? ছেড়ে দাও উনাকে প্লিজ।”
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম রুনা আন্টির দিকে। কি হচ্ছে এসব কিছুই বুঝতে পারছি না। রুনা আন্টি কেনো বেঁধে রেখেছে উনাকে? কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার।
রুনা আন্টি যেনো আফজাল সাহেবের কোনো কথা শুনতেই পায়নি। আমার দিকে তাকিয়ে বললো,” নীরা মা, পা থেকে স্যান্ডেলটা খুলে নে তো।”
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম উনার দিকে, কিছুই বুঝতে পারলাম না উনার কথা। আফজাল সাহেবের মুখ বিস্ময়ে ঝুলে গেছে। আর হাশেমের কথা তো না বলাই ভালো। অসভ্যের মুখ আরো কদাকার লাগছে।
“কি বললাম নীরা? শুনতে পাস নি? স্যান্ডেল খুলে হাতে নে।”
আমি কিছু না বুঝেই যা করতে বললো করলাম। এবার উনি আমাকে বললো,”এবার আয় আমার সাথে।”
আমি উনাকে ফলো করছি, উনি এগিয়ে যাচ্ছে ওই পিশাচটার দিকে।
যখন আমরা প্রায় কাছাকাছি ওই লোকটার তখন রুনা আন্টি আমার দিকে ফিরে বললো,”নে নীরা। এবার এই স্যান্ডেলটা দিয়ে ইচ্ছামতো মার এই জানোয়ারটাকে। আমি আছি তোর সাথে। মার ওকে নীরা, মার।”
বসার ঘরে হঠাৎ পিনপতন নীরবতা। হাশেম হা করে তাকিয়ে আছে রুনা আন্টির দিকে। আফজাল সাহেব ছুটে এসে বললো,”এই রুনা, আর ইউ ক্রেজি? কি বলছো তুমি? তোমার কোনো ধারণা আছে কি বলছো তুমি? নীরা, স্যান্ডেল ফেলে দাও হাত থেকে।”
“ডোন্ট শাউট মিস্টার আফজাল। আমি আমার মেয়েকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা শেখাবো। ওর মায়ের মতো অবস্থা যেনো ওর না হয়। অপরাধী কে জানার দরকার নাই আমার, সে অপরাধ করেছে, শাস্তি তাকে পেতে হবে। নীরা দাঁড়িয়ে দেখছিস কি? এতোদিনের যতো রাগ এই লোকটার উপর মিটিয়ে নে।”
আমার শরীর কাঁপছে থরথর করে। বুঝতে পারছি না কি করবো আমি। যতোই রাগ থাকুক আমার, আমি একটা মশাও মা*রতে পারিনা, এতো নরম মন আমার।
আমার অবস্থা দেখে রুনা আন্টি বললো,”এই লোকটার জন্য তোর মা তোকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। দিনের পর দিন এ তোর মায়ের উপর অত্যাচার করেছে। আজ তোর সাথেও তাই করতে চেয়েছিলো। তুই চাস না ওকে শাস্তি দিতে?”
হঠাৎ আমার মুখের সামনে আমার মায়ের করুণ মুখটা ভেসে উঠলো। কষ্টে হাউমাউ করে কাঁদছে আমার মা। এই লোকটার জন্য। আচমকা আমার শরীরে কোথা থেকে অনেকটা শক্তি এসে ভর করলো। পেছন থেকে আফজাল সাহেব চিল্লাচ্ছে,”না নীরা না।”
আমি কারো কথা শুনতে পাচ্ছিলাম না আর। আমার মুখের সামনে শুধু আমার মায়ের মুখ। আমি চোখ বন্ধ করে এলোপাতাড়ি মা*রতে লাগলাম ওকে আমার স্যান্ডেল দিয়ে। হিতাহিত কোনো জ্ঞান নেই আমার। পাগল হয়ে গিয়েছি আমি আজকে। পিছন থেকে আফজাল লোকটা এসে আমাকে বাঁধা দিতে চাইলে রুনা আন্টি উনাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।
হঠাৎ আমার মাথায় কি হলো আমি জানিনা। স্যান্ডেল ফেলে দিলাম আমি। এক দৌড়ে যেয়ে আমাদের ভারী পিতলের ফুলদানিটা তুলে নিলাম। আমার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে তখন। বাস্তবিক কোনো জ্ঞান নেই আমার। আমি ছুটে যেতে থাকলাম ওই নরকের কীটটার দিকে।
হঠাৎ আমার হাত চেপে ধরলেন রুনা আন্টি।
“আমাকে ছাড়ুন বলছি। শেষ করে ফেলবো ওকে আমি আজকে। ওর জন্য আমার সাজানো গোছানো জীবনটা শেষ হয়ে গেলো। আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। ওকে আমি শেষ করে দিবো।”
আমি চিৎকার করছি আর কাঁপছি। রুনা আন্টি আমার হাত থেকে ফুলদানিটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমাকে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলো।
“শান্ত হও, নীরা। শান্ত হও। ওর বাকি বিচার করবে আইন, আদালত। ওর যেনো সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেই কাজ আমি করবো। তুমি এই কাজ করো না।”
হঠাৎ আমি নিস্তেজ হয়ে যাই। উনাকে জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কেঁদে উঠি আমি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা বলার চেষ্টা করি আমি।
“কিচ্ছু হবে না ওই বিচারে, কিচ্ছু না। আমার মা অনেক চেষ্টা করেছে পারেনি। ওর ক্ষমতা আছে, যেভাবেই হোক ও বের হয়ে চলে আসবেই। ওর বিচার হবে না।”
“বিচার হবে। প্রমাণ আছে আমার কাছে সব। এবার বিচার হবেই। আমি পুলিশকে খবর দিচ্ছি। তুমি শান্ত হও।”
“কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে রুনা?”
“জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ মিস্টার আফজাল। তুমি নিজের চিন্তা করো তুমি কীভাবে বাঁচবে। কারণ তোমার শাস্তি হবে অন্যভাবে। প্রস্তুত থাকো তার জন্য।”
“রুনা।”
“চিৎকার করবে না। আওয়াজ নিচে।আমি রাত্রি নই, আমি রুনা। আমাকে এভাবে ভয় দেখাতে পারবে না তুমি।”

ঘণ্টা খানিকের মধ্যে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় হাশেমকে। আমার শারীরিক অবনতির জন্য থানায় যেয়ে লিখিত অভিযোগ করা সম্ভব না হলেও বাড়ি থেকেই ডায়েরি করা হয়েছে। যাওয়ার আগে আমার চোখ পড়ে ওই হাশেমের দিকে। আমার দেওয়া মারে ওর চেহারার অবস্থা নাজেহাল। এখান থেকে সেখান থেকে র*ক্ত পড়ছে। আমি একটু ভয়ে কেঁপে উঠি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে। ওই চোখে যেনো আমার উপর আগুন চাপা দেওয়া রাগ। ছাড়া পেলেই আমাকে শেষ করে দিবে এমন। রুনা আন্টি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেন। আমার মাথায় হাত দিয়ে বলেন,”কিচ্ছু হবে না তোমার, আমি আছি তো। ভয় পেয়ো না।”
আমি অবাক চোখে তাকাই উনার দিকে। সেই মুখের আদলে আমি মাতৃস্নেহ দেখতে পাই শিরায় শিরায়।

আমি আমার খাটে বসে আছি বালিশে হেলান দিয়ে। আমার পাশে বসে আছেন রুনা আন্টি। এতোক্ষণ দাদী ছিলেন। আমি উনাকে ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। উনার উপর দিয়েও কম ধকল যায়নি।
আমি আস্তে করে বললাম,”আপনি কি ঘরের লাইটটা একটু অফ করে দিবেন? একটা কথা বলার আছে আমার।”
মিষ্টি করে হাসলেন রুনা আন্টি।
“কি এমন কথা নীরা? যা লাইট জ্বালিয়ে বলা যায়না। লজ্জার কথা নাকি?”
আমি মাথা নিচু করে নখ খুঁটতে খুঁটতে বললাম,”হুম।”
“কি ব্যাপার বলো তো? প্রেমেট্রেমে পড়েছো নাকি?”
লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেলো। উনি হাসতে হাসতে যেয়ে লাইট অফ করে আসলেন।
“বলো কি বলবে?”
“আমি কি আপনার হাতটা একটু ধরতে পারি?”
লাইট অফ থাকা সত্ত্বেও আমি বুঝলাম উনি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আস্তে করে হাতটা বাড়িয়ে দিলেন উনি।
আমি হাতটা ধরলাম। নরম ঠান্ডা একটা হাত।
হঠাৎ উনি হাতের উপর উষ্ণ পানির ছোঁয়ায় চমকে উঠলেন।
“কি ব্যাপার নীরা? কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো আবার তুমি? তোমার কোনো ক্ষতি তো হয়নি। ওই বদমাশটা এখন জেলের মধ্যে। আর খুব তাড়াতাড়ি ওর সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। আমি বলছি দেখো তুমি। এভাবে কেঁদে নিজেকে সহ আমাকে দূর্বল করে দিবে না।”
“আমি কি আপনাকে মা বলে ডাকবো একবার?”
প্রায় মিনিট দুইয়ের মতো কেউ কোনো কথা বললাম না। হালকা কেঁপে উঠলেন উনি শুধু।
কাঁপা কাঁপা গলায় উনি বললেন,”হু বলো।”
আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম,”মা মা গো ও মা।”
আঁকড়ে ধরলাম উনাকে। উনিও পরম মমতায় আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আমার শুকনো মরুভূমিতে এতোদিন পর প্রবল বৃষ্টির দেখা দিলো।
সেদিন রাতে মা আমাকে বুকে জড়িয়েই ঘুমালেন। অনেকদিন পর অনেক শান্তির ঘুম হলো আমার। ছোট বাচ্চাদের মতো উনাকে জড়িয়ে ঘুমালাম আমি।

পরদিন সকাল হতে না হতেই আফজাল সাহেবের হাঁকডাকে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। মা কে কোথাও দেখলাম না। মনে হয় আগেই উঠে গিয়েছেন। বসার ঘর থেকে আফজাল সাহেবের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। আমার বুকটা একটু কেঁপে উঠলো। আবার কি হলো? তবে কি হাশেম ছাড়া পেয়ে গেছে? অজানা আশঙ্কায় অস্থির হয়ে গেলাম আমি। ছুটে চলে আসলাম বসার ঘরে।
দরজার বাইরে থেকে শুনলাম মা বলছে,”কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো। মেয়ের ঘুম থেকে ওঠার সময় হয়ে গেছে। ওকে নাস্তা বানিয়ে দিতে হবে।”
“আরে রাখো মেয়ে। মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি। কে মেয়ে? কার মেয়ে? ওর সাথে কিসের সম্পর্ক তোমার?”
“চিৎকার করো না। মা মেয়ের সম্পর্কের মধ্যে আবার আলাদা কি সম্পর্ক থাকবে?”
“যাও তোমার মেয়েকেও ডাকো। এখন যা বলবো সবাইকে শুনতে হবে তা।”
মা কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমি পর্দা ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম। একটা সোফায় দাদীও বসে আছেন শূন্যের দিকে দৃষ্টি মেলে।
“এইযে এসেছেন আমাদের মালকিন। তা ম্যাডাম যদি কৃপা হয় একটু বসবেন? একটা কথা জানানোর ছিলো সবাইকে।”
আফজাল লোকটার টিটকারির কথা শুনে গা জ্বলে গেলো আমার। আমি মায়ের পাশে এসে দাঁড়ালাম।
আফজাল সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,”কোনোরকম ভণিতায় আমি যেতে চাইনা। রুনা, তোমাকে অনেকবার আমি বলছি, তুমি আমার স্ত্রী। এই বাড়িতে আমি তোমাকে এনেছি। আমার কথামতো তোমাকে চলতে হবে। কিন্তু আফসোস। আমি জানিনা তোমার উদ্দেশ্য কি। তুমি আসার পর থেকেই এই বাপ মা মরা মেয়ে ওহ দুঃখিত আমাদের মালকিনের উপর বেশিই দরদ দেখাচ্ছো। আর গতকাল যা করলে তাতো সবাই দেখলো। তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজকে। আম্মা আপনিও শুনবেন আশা করি।”
আমি চোখ সরু করে তাকালাম উনার দিকে। কথা কোনদিকে নিতে চাচ্ছে উনি? মা কে দেখলাম নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। যেনো উনি জানেনই কি সিদ্ধান্ত হবে।
দাদী শান্ত স্বরে বললেন,”কি সিদ্ধান্ত আফজাল?”
“আমি রুনাকে ডিভোর্স দিতে চাই।”

(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here