সখি ভালোবাসা কারে কয় পর্ব-১৩

0
699

#গল্প
# সখি ভালোবাসা কারে কয়?
পর্ব-—-১৩
কানিজ ফাতেমা

“আমি শুভর সাথে থাকতে চাইনা মিথিলা আপু। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই” -কথাগুলো বলতে গিয়ে আমাকে কেঁদে ফেলতে দেখে মিথিলা আপু অস্থির হয়ে বলল-
“তুই কি বুঝতে পারছিস নিধি তুই কি বলছিস?”
“আমি কিছু জানিনা আপু”
“জানিস না মানে সবাইকে টেনশন দিচ্ছিস আর বলছিস কিছু জানিস না,কি চাস তুই?”
মিথিলা আপু বেশ রেগে গিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলে বললাম – “আমাকে শুভর সাথের এই বিয়ে নামক বন্ধন থেকে মুক্ত করে দাও আপু। আমি এই চাপিয়ে দেওয়া বিয়ে মানতে পারছি না।”
“কিন্তু কেনো? “
খুব অস্থিরতা নিয়ে মিথিলা আপু কথাটা জিজ্ঞেস করলেও কোনো উত্তর দিতে না পেরে বিছানায় বসে নিজের চোখ মুছতে মুছতে মনে হলো -স্বপ্নেও ভাবিনি আজই সবার সামনে সব কিছু বলতে হবে আমাকে । ভেবেছিলাম হলে চলে গেলে ধীরে ধীরে সবাইকে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিব কিন্তু ছোট বেলা থেকে মনে মনে বিশ্বাস করা সেই কথাটাই সত্যি হলো। “মানুষ যতই ভাগ্যকে বদলানোর চেষ্টা করুক যেটা তার জন্য নির্ধারিত সেটা হবেই।”

শুভকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে বসেছিলাম আমি। কিন্তু বুঝতে পারিনি শুভর পেছনে সাবরিনা ভাবী এসেছিলেন আমাদেরকে খেতে ডাকার জন্য। কিন্তু শুভকে যখন রাগে রাগে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলছিলাম তখন সাবরিনা ভাবী বাইরে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিলেন।
দরজা আটকে বিছানায় বসার কিছুক্ষণ পর দরজা খোলোর জন্য আবার নক করল কেউ। ভেবেছিলাম শুভ হবে তাই বিরক্তি দেখিয়ে বললাম – “বলেছি না আপনি এ ঘরে আসবেন না।”
“নিধি দরজা খোলো।”- সাবরিনা ভাবীর গলা শুনে চমকে উঠলাম । পরক্ষণেই সাহস সঞ্চার করলাম এই ভেবে দুদিন পর সবাইকে সবকিছু বলতেই হতো তাহলে আজ বলে দিলে ক্ষতি কি? ভেবে গম্ভীর হয়ে দরজা খুলে দিয়ে আবার ঘরের জানালার কাছে এসে দাঁড়ালাম আমি।

সাবরিনা ভাবী ঘরে ঢুকে নিধি বলে ডাকলে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম বড়খালামনিও ভাবীর সাথে খুব বিরক্তির মুখভঙ্গী করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
“নিধি কি চলছে তোমার আর শুভর মধ্যে? শুভকে দেখলাম না খেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।”- সাবরিনা ভাবী কথাগুলো শেষ করতেই বড়খালামনি বলতে শুরু করলো-
“তিনদিন তোমাদের বিয়ে হয়েছে শুভ ঘরের বাইরে বাইরে ঘুরছে। ভেবেছিলাম ও বাড়িতে অনেক মেহমান তাছাড়া হুট করে তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তাই হয়তে লজ্জা পাচ্ছো দুজন। কিন্তু এখন সাবরিনার মুখ থেকে যা শুনছি তুমি শুভকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছো এর অর্থ আমি কি ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না”

আমি খালামনির প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
সাবরিনা ভাবীও আবার জিজ্ঞেস করলো “নিধি আম্মার কথার উত্তর দিচ্ছোনা কেনো?”
ভাবী জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে কিছুটা কঠোর হয়ে বলে ফেললাম- “আমি শুভর সাথে থাকতে চাই না ভাবী।”
“তুমি যা বলছো তোমার বাবা মা কি জানে?”
“আমি কারো সাথে আর কথা বলতে চাই না।বাবা মার সাথেও না। ওরা শুধু ভাইয়াকে ভালোবাসে ভাইয়ার খুশির জন্য সব কিছু করে অথচ আমাকে হুট করে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিল। একবারও জিজ্ঞেস করলো না আমার কি ইচ্ছা?- এক নিঃশ্বাসে জোরে জোরে কথাগুলে বলেই চলেছি॥

সামনে সাবরিনা ভাবী বিরক্তির ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আর বড়খালামনি অস্থির হয়ে উঠছেন আমার কথা শুনে তবুও আমি পাগলের মত বলেই যাচ্ছি- “আমি কাল সকালেই এই বাসা থেকে চলে যাবো তারপর তেমাদের কোনো কিছু বলতে আসবো না।কিন্তু আমি তোমাদেরকে স্পস্ট বলছি খালামনি আমি তোমার ছেলের সাথে থাকতে চাই না।”
বড়খালামনি একটাও কথা না বলে সাবরিনা ভাবীর দিকে তাকিয়ে থমথমে মুখ নিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পরলো। বড়খালামনির অসহায় চেহারা দেখে খারাপ লাগছিল আমার কিন্তু কিছুই করার নেই।
সাবরিনা ভাবী বড়খালামনির পাশে গিয়ে বলল “আম্মা চলেন সুজয়কে আর নাজমা খালাকে অন্তত জানাতে হবে ব্যপারটা।”
“কিন্তু বৌমা?”
আম্মা এখন না জানালে পরে বিপদ আরও বাড়বে।

পাশের রুমেই মিথিলা আপুদের থাকতে দেওয়া হয়েছে। দরজার সামনে থেকে মিথিলা আপু শুভকে রাগে রাগে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে আমার কাছে জানতে এসে বাইরেই দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিল এতক্ষণ। তারপর ভিতরে এসে বড়খালামনিকে মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে থাকতে দেখল।পাশে সাবরিনা ভাবী দাঁড়িয়ে। তারপর আমার দিকে একবার তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো – “কি হয়েছে খালা?”
মিথিলা আপুকে দেখে খালামনি অসহায়ের মত বলল -“দেখ তো মিথিলা নিধি কি বলছে? বিয়ে কি ছেলে খেলা? এসব শুনলে তোমার বড়খালু কি বলবে বলোতো? আর আমার শুভ ওর কি হবে? আমার তো মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে নিধির কথা শুনে।”

মিথিলা আপু এবার আমার কাছে এগিয়ে এসে জোরে করে জিজ্ঞেস করলো “আবার কি বলেছিস নিধি?”
“কিছু বলিনি আপু।”
“কিছু বলিসনি তো খালা এভাবে বলছেন কেনো?”
“আমি জানি না।”
“এই নিধি তোর মাথা ঠিক আছে তো?”
“না নেই।কি করবে?”
“নিধি বলছে সে শুভর সাথে থাকতে চাই না। দুজন দুজনকে পছন্দ করে বলে দুদিন আগে বিয়ে দিলাম দুজনার । এখন এসব বলছে। বলতো মিথিলা ও কি শুধু আমার ছেলের বৌ ও আমার বোনের মেয়ে। আর এখন যদি উল্টা পাল্টা এসব কথা বলে। তাহলে দুই পরিবারের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলতে পারো মিথিলা?”
“নিধিকে বোঝাও বাড়ির আর কেউ জানার আগে। আমার এসব কথা ভালো লাগছে না।কথাগুলে বলে বড়খালামনি বিছিনা থেকে উঠে সাবরিনা ভাবীর সাথে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন।

“এই নিধি তোরা দুজন পছন্দ করে বিয়ে করেছিস এখন এসব কি কথা বলছিস? “
“আমি কাউকে পছন্দ করে বিয়ে করিনি।”
“তাহলে এতোদিন যে দুজন যা কিছু করেছিস সেগুলো কি ছিল।”
“কি করেছি আপু যে তুমি এভাবে বলছো?”
“কি করেছিস মানে শুভ এমনি এমনিই দুদিন পর পর মীনিকগঞ্জ আসতো?”
“সে আমি কি করে বলবো কেনো আসতো? আমাকে পরীক্ষার জন্য হেল্প করেছে এর অর্থ তো এই নয় যে তাকেই বিয়ে করতে হব?”
“ও তাই না”-বলে রাগে রাগে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে মিথিলা আপু বলল- “আর সবার চোখ লুকিয়ে শুভর রেখে যাওয়া চিঠিগুলে নিতিস সেটা কি ছিল?পছন্দ না করলে চিঠি নিয়েছিলি কেনো?”

“হঠাৎ বুকের মধ্য ধপ করে উঠলো।চমকে উঠার মত করে মিথিলা আপুকে অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোন চিঠি আপু?”
“এমন ভাব করছিস যে কিছু জানিস না?”
“না জানি না কোন চিঠি আপু? বলোনা কোন চিঠি?”
“কোন চিঠি আবার তোদের দরজার সামনের সানসাইডে যে চিঠিগুলো রেখে যেতো শুভ।”
“তুমি মিথ্যা বলছো শুভ কখনো আমাকে চিঠি লিখেনি।”
“আমি তোকে মিথ্যা বলবো কেনো? আমি মীরা এমনকি গেলোবার বাড়ি গিয়ে নির্ঝরও দেখে মীরাকে প্রশ্ন করেছিল।শুভ আত্মীয়ের ছেলে বলে কাউকে কিছু বলেনি নির্ঝর। তাছাড়া মীরা বলেছিল তুই এসবের কিছু জানিস না। তারপর শুনলাম সেদিন নাকি তুই আর শুভ একসাথে ছাদে গল্প করছিলি সাথে শুভর দেয়ে চিঠি তোর হাতে পেয়ে নির্ঝর সবাইকে বলে দিয়েছিল বলেই না তোদের বিয়ে দিয়ে দিল সবাই।”

আমি হতবাক হয়ে মিথিলা আপুর কথা শুনছি। খুশি হবো না রাগ করবো আমাকে নিয়ে সবার এই লুকচুরি খেলার জন্য কিছু বুঝতে পারছি না। আমি শুভকে কখনো ভালোবাসার মানুষ ভাবিনি আর যে চিঠির মানুষকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে ছিল আমার মন সেটা শুভ হতে পারে, আমার মাথায় কখনো আসেনি। তাহলে এখন কি করবো আমি?
আমাকে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিথিলা আপু বলল- “দেখ নিধি স্বামী হিসেবে শুভর মত একজন ভালো চরিত্রবান ছেলে এ যুগে পাওয়া অনেক বড় ব্যপার। আর শুভ যে খুব ভালে ছেলে সেটা তুইও জানিস।আমি বুঝতে পারছি তোর লেখাপড়া নিয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে একটা স্বপ্ন আছে। সেটা শুভর সাথে থেকেও তো পুরণ করা সম্ভব। আর এসব বলে ছেলেটাকে কষ্ট দিচ্ছিস কেনো?”
এর মধ্যে বাইরে থেকে শোয়েব ভাইয়া মিথিলা বলে আওয়াজ করলে আপু বলল- “আমি আসছি একটু বাইরে যাবো। আর তোকে সাবধান করছি এমন বাজে কথা আর কারো সামনে বলবি না।”
“কিন্তু সাবরিনা ভাবী হয়তো এতক্ষণ সুজয় ভাইয়া আর বড় খালুকে বলে দিয়েছেন।”
“মানে কি?
ধুত আর ভালো লাগছে না তোর এসব পাগলামি। বসে বসে ভাবতে থাক কি করবি?”

চলবে——
(আগামী পর্ব গল্পটার শেষ পর্ব হবে। আশাকরি আপনাদের সবার ভালো লেগেছে। মন্তব্য করলে খুশি হবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here