ভালোবাসি তোকে ❤ #লেখিকা: অনিমা কোতয়াল #পর্ব- ৮

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৮
.
ইশরাক ভাইয়ার লাশ দাফন করার পর আদ্রিয়ান ভাইয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। কাউকে কিছু না বলে কোথাও একটা চলে গেছিলেন। সবাই মিলে অনেক খুজেছিল কিন্তু পায়নি। এমনিতেই ইফাজ ভাইয়ার মৃত্যুতে সবাই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরেছেন তারওপর আদ্রিয়ান ভাইয়ারও খোজ নেই। একটা দমবন্ধ করার মতো পরিবেশ তৈরী হয়েছে। ওনার মানসিক অবস্হা এমনিতেই ঠিক নেই,সবাই জানে সেটা, এই অবস্থায় উল্টোপাল্টা কিছু হয়ে যেতেই পারে যেকোনো মুহূর্তে। তাই সবাই আরও টেনশনে ছিলো। মানিক আঙ্কেলদের সাথে রক্তের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও ওনাদের সাথে একটা গভীর সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছে আমাদের, তারওপর এখন নতুন আত্মীয়তা হয়েছে। তাই আমরাও কেউ শান্তি পাচ্ছিলাম না। আদ্রিয়ান ভাইয়া ফিরেছিলেন তার পরের দিন। ওনাকে দেখে চমকে গিয়েছিলাম পুরো। চোখ, নাক লাল হয়ে গেছে, সিল্কি চুলগুলো একরাতেই উস্কোখুস্কো হয়ে গেছে। ইফাজ ভাইয়া, মানিক আঙ্কেল সবাই মিলে ওনাকে অনেকরকম প্রশ্ন করেছ কিন্তু উনি কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও কেউ খোলাতে পারেননি। আমরাও আর ঘন্টাখানেক থেকে চলে এলাম বাড়িতে।

সেদিনের পর আদ্রিয়ান ভাইয়ার সাথে আমার আর দেখা হয়নি। ওনাদের বাড়িতে দুইবার গেলেও ওনাকে দেখতে পাইনি। দুই একদিন আমার মুড অফ থাকলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম। কারণ সামনেই আমার এইচ এস সি এক্সাম ছিল। বলেনা কারও জন্যে কারো জীবন থেমে থাকেনা আমারটাও থাকেনি। ‍তাই সব ভোলার চেষ্টা করে পড়ায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলাম। ধীরে আমি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে যে আদ্রিয়ান ভাইয়া কেমন আছে এখন? উনিকি নিজেকে সামলাতে পেরেছেন? নাকি এখনো ওরকমি আছেন? তবে সবার কাছে শুনতাম উনি নাকি সবার সাথে মেশা বন্ধ করে দিয়েছেন। সারাদিন বাইরে থাকেন আর বাকি সময়টা নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখেন। আমি বেশ অবাক হলাম যে ছেলেটা সবাইকে আনন্দে মাতিয়ে রাখতেন সে কারও সাথে ঠিকভাবে কথা বলছেননা? আস্তে আস্তে আমার এইচ এস সি এক্সাম দেওয়াও শেষ হয়ে গেল। এক্সাম শেষ হওয়ার দুদিন পর আপি আর ইফাজ ভাইয়া এলো বেড়াতে। সেদিন মোটামুটি খুব খুশি ছিলাম আমি। বিকেলে আপিদের সাথে শপিং করে ফিরে এসে দেখি মানিক আঙ্কেলরা আমাদের বাড়িতে এসছেন। সবার চোখেমুখে একরাশ গাম্ভীর্যতা। একটু অবাক হলেও ভাবলাম এমনিই এসছে। তাই আমি ভেতরে চলে গেলাম। হঠাৎ করেই আম্মু আর আপি এলো। আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ওনাদের দিকে। আম্মু একটা নীল রং এর লং গ্রাউন বের করে দিয়ে বলল,

— ” হিয়া ওকে তাড়াতাড়ি এটা পরিয়ে বাইরে নিয়ে আয়।”

বলে আম্মু এক মুহূর্ত দেরী না করে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। আমার সাথে এক্সাক্টলি কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আপিও কোনো কথা না বাড়িয়ে বলল,

— ” যা তাড়াতাড়ি এটা পরে আয়।”

আমি অবাক কন্ঠেই বললাম,

— ” কিন্তু কেনো? কী হয়েছেটা কী? এখন এটা কেনো পরতে যাবো?”

আপি আমার দিকে করুণ চোখে একবার তাকালো। তারপর ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” সোনা বোন আমার। প্লিজ চুপচাপ রেডি হয়ে নে। তোকে পরে সব ক্লিয়ার করে বলব এখন ড্রেসটা পরে আয়।”

আমি কিছুই বুঝলাম না। মনে একগাদা প্রশ্ন নিয়ে ড্রেসটা পরে এলাম। আপি কোনোরকমে আমার চুলটা বেধে দিয়ে মাথায় ওড়না দিয়ে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলো। ওখানে যাওয়ার পর আপি আমাকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসালো। সবকিছুই আমার মাথার বেশ অনেকটা ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আব্বু মানিক আঙ্কেলকে বললেন,

— ” আদ্রিয়ান কোথায়?”

মানিক আঙ্কেল একটু ইতস্তত করছেন। ইফাজ ভাইয়া ফোনটা বের করে বললেন,

— ” আমি দেখছি।”

বলে ফোনে কানে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলে উনি এসে বললেন যে আদ্রিয়ান ভাইয়া আসছেন। মানিক আঙ্কেল বললেন,

— ” বিয়েটা তাহলে সামনের সপ্তাহেই হয়ে যাক?”

আব্বু একটু ভেবে তারপর বললেন,

— ” হ্যাঁ সেই। আর এই অবস্হায় যতো তাড়াতাড়ি করা যায় ততোই ভালো।”

আমি শুধু বোকার মতো তাকিয়ে আছি ওনাদের দিকে কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমাকে এভাবে রেডি করে আনলো, তারমানে কী আমার বিয়ের কথা বলছেন? কিন্তু আব্বুতো বলেছিল আমার বিয়ে এতো তাড়াতাড়ি দেবেন না তাহলে? আর দিলেও কার সাথে দেবেন? এসব নানারকম চিন্তা মাথায় আসছে কিন্তু কিছুই জানতে পারছিনা। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান ভাইয়া এলেন ওনাকে দেখে বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো আমার। মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। সেই প্রাণচ্ছল আদ্রিয়ান ভাইয়া যেনো হারিয়ে গেছেন কোথাও। আমি অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। কেউ ওনাকে কিছু বলবে তার আগেই উনি অতি গম্ভীর এবং শক্ত গলায় বললেন,

— ” কী করতে হবে তাড়াতাড়ি বলো। আমি জাস্ট দশ মিনিট থাকবো।”

সবাই একেঅপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। মানিক আঙ্কেল কিছু বলবেন আব্বু চোখের ইশারায় ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে। দশ মিনিটের বেশি সময় নেবোনা আমরা। ”

বলে আম্মুর দিকে ইশারা করতেই আম্মু ভেতরে থেকে ছোট্ট বক্স নিয়ে এলো। আমি এখনো অবাক হয়ে দেখছি সবটা। সত্যিই আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। আঙ্কেল আদ্রিয়ান ভাইয়াকে ইশারা করতেই উনি আমার পাশে এসে বসলেন। আন্টিও একটা বক্স বের করে আদ্রিয়ান ভাইয়া এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

— ” এটা অনিকে পরিয়ে দাও।”

আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। মানে কী? ওনারা কী আদ্রিয়ান ভাইয়া আমার বিয়ের কথা ভাবছেন নাকি? এটা কীকরে হয়। আমি এসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান ভাইয়া আমার হাত ধরে হাতটা ওনার সামনে নিয়ে গেলেন। তারপর রিংটা একবারেই পরিয়ে দিয়ে সাথে সাথেই হাত ছেড়ে দিলেন। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। আব্বু আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

— ” মামনী? আদ্রিয়ানকে রিংটা পরিয়ে দাও।”

আমি পুরো শকড হয়ে আছি। কী থেকে কী হয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। আব্বু আরেকবার বলতেই আমি শকের মধ্যে থেকেই ওনার দিকে তাকালাম। উনি ওনার হাত বাড়িয়ে দিলেন, তবে চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি। আমিও আস্তে করে ওনার আঙ্গুলে রিংটা পরিয়ে দিলাম। উনি এবার সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” হয়ে গেছে? আসতে পারি এবার আমি?”

মানিক আঙ্কেল খুব বিরক্ত হয়ে তাকালেন ওনার দিকে। কিন্তু আব্বু এবারেও ওনাকে শান্ত থাকতে বলে বলল,

— ” হ্যাঁ যেতে পারো কিন্তু কিছু খেয়ে গেলে ভালো হতো না?”

উনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

— ” সরি আঙ্কেল এখন কিছু খাওয়া সম্ভব নয় আমার পক্ষে। আসছি।”

বলে উনি হনহনে পায়ে বেড়িয়ে চলে গেলেন। আমার সাথে ঠিক কী হলো নিজেই বুঝতে পারছিনা। মানিক আঙ্কেলরাও কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলেন। ওনারা চলে যেতেই আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” সামনের শুক্রবার তোমার বিয়ে আদ্রিয়ানের সাথে। মেন্টালি প্রিপার্ড থাকো।”

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আব্বুর দিকে। যেই আব্বু একটা জুতো কেনার জন্যেও আমায় সাথে নিয়ে যেতো যাতে আমার নিজের পছন্দেরটা কিনতে পারি। আমার ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বারবার আমার মতামত জানতে চাইতো সে আজ এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার মতামত তো দূরে থাক জানানোর প্রয়োজনটাও মনে করলো না। আমার এখন আর কিছু বলারও নেই কারণ বাগদান তো হয়েই গেলো। এখন আপত্তি করা মানে আব্বুকে অসম্মান করা যেটা আমি করতে পারিনা। আমি চুপচাপ উঠে নিজের রুমে গিয়ে বেডে উপর হয়ে শুয়ে নিরবে কাঁদছি। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হবে কোনোদিন ভাবিইনি। আর তাছাড়া ওনাকে তো দেখলাম। একটা বাচ্চাও বুঝে যাবে যে উনি আমাকে বিয়ে করতে চান না। তাহলে কেনো এমন করলো সবাই আমার সাথে?

পাঁচদিন কেটে গেছে। এই পাঁচদিন আপি ছাড়া বাড়ির কারোর সাথে কথা বলিনি। ওনারাও খুব বেশি বিরক্ত করেন নি আমায়। শুধু একবার আব্বু এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গিয়েছিল। কিচ্ছু ভালোলাগছে না আমার। সবকিছুই বিরক্ত লাগছে। এটা বিয়ে? না ছেলে বিয়েতে রাজি আর না কোনো আনন্দমুখর পরিবেশ আছে। সবটাই থমথমে। অথচ এই বিয়ে নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিলো আমার। উনি রাজি থাকলেও না হয় মানা যেতো। তাহলে হয়তো আমার এতো কষ্ট হতো না। হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠল। একটা আননোন নাম্বার। কিছুক্ষণ ভেবে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,

— ” ফ্রি আছো?”

চমকে উঠলাম আমি কারণ এটা অদ্রিয়ান ভাইয়া? উনি আমাকে ফোন কেনো করলেন? এসব ভাবতে ভাবতেই উনি বললেন,

— ” চুপ করে কেনো আছো?”

আমি একটু হকচকিয়ে বললাম,

— ” ক্ কেনো?”

উনি গম্ভীর কন্ঠেই বললেন,

— ” ফ্রি থাকলে তোমাদের বাড়ির কাছে লেক পার্কটাতে চলে এসো। কথা আছে।”

আমার কী হলো জানিনা আমার মুখ দিয়ে এমনিই বেড়িয়ে গেলো,

— ” আচ্ছা আসছি।”

উনি ফোন রেখে দিতেই আমি ভাবলাম কী বলবে? যাবো? হ্যাঁ বলে দিয়েছি যেতে তো হবেই। তাই একটা ওড়না নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম। ওখানে গিয়ে দেখি উনি একটা বেঞ্চে বসে আছেন গম্ভীরভাবে। আমি মনের মধ্যে অনেক সংকোচ নিয়ে ওনার কাছে গিয়ে হালকা করে কাশি দিলাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” বসো।”

আমি কয়েকসেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে ইতস্তত করে ওপার পাশে বসলাম। উনি বেশ অনেকটা সময় চুপ করে রইলেন। ওনাকে দেখে এমন মনে হলো উনি কিছু বলতে চাইছেন না কিন্তু সেটাই বলার চেষ্টা করছেন। অনেকক্ষণ পর উনি নিরবতা ভেঙ্গে বললেন,

— ” তুমি এটা নিশ্চয়ই বুঝে গেছো। বিয়েটা করতে চাইনা আমি?”

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললাম। এসব বলতে ডেকেছেন আমায় উনি?সেটাতো আব্বুকেই বলতে পারতেন। উনি আবারও বললেন,

— ” দেখো আমি বিয়েটাতে রাজি হতে বাধ্য হয়েছি শুধুমাত্র বাবা মায়ের জন্যে। কিন্তু সত্যিই এটাই এই বিয়েটা হলে না তুমি সুখি হবে আর না আমি কারণ আমি কখনো তোমাকে বউ হিসেবে মানবোনা। এতে তোমার জীবণটা নষ্ট হবে সাথে আমারটাও। আমার পক্ষ থেকে বিয়েটা ভাঙ্গা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বলছি বিয়েটা তোমার পক্ষ থেকে ভেঙ্গে দাও । ”

আমার এবার ভীষণ রাগ হলো। বউ বলে মানতে পারবেনা মানেটা কী? তা সেটা নিজের বাবা মা কে না বলে আমায় কেনো বলছে? আর আমি কেনো ভাঙতে যাবো? আমার দিক দিয়ে তো প্রবলেম নেই। আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে উনি বললেন,

— ” আশা করি তুমি বুঝতে পারছো। আর তাছাড়া তুমি এখন খুব ছোট। তোমার ক্যারিয়ার, জীবণ সবকিছুই পরে আছে। তাই বলছি যা কিছু করে হোক বিয়েটা ভেঙ্গে দাও। ইউ আর নট রাইট পার্রসন ফর মি।”

এমনিতেই রেগে ছিলাম কিন্তু লাস্টের লাইনটা মাথায় জেদ চাপিয়ে দিলো। মানে কী এসবের? আমি কী এদের হাতের পুতুল নাকি? বাবা বলছে বিয়ে করো হবু বর বলছে বিয়ে ভাঙ্গো। মাঝখান থেকে আমি স্যান্ডউইচ কেনো হবরে ভাই? উনি বললেন;

— ” বুঝতে পেরোছো কী বলেছি?”

— ” হুম।”

বলে উঠে চলে এলাম ওখান থেকে। ওনাকে হুম বলেছি ঠিকই কিন্তু মাথায় অন্যকিছু চলছে। মাথায় এখন জেদ চেপে আছে তো কী করছি নিজেও বুঝতে পারছিনা।

সন্ধ্যায় মানিক আঙ্কেলরা এলেন আমাদের বাড়িতে সাথে আদ্রিয়ান ভাইয়াও। সবাই নানারকম কথা বলছেন। এরমধ্যেই আমি বলে উঠলাম,

— ” আমি কিছু বলতে চাই তোমাদের।”

সবাই তাকালো আমার দিকে। আমি বিকেলে আদ্রিয়ান ভাইয়া আমাকে যা যা বলেছে সবটাই বলে দিলাম। ইনফ্যাক্ট আরো বাড়িয়ে বললাম তারসাথে ন্যাকাকান্না তো আছেই। আঙ্কেল হতাশ দৃষ্টিতে আদ্রিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালেন। ওনার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে যাতে এখনি খেয়ে ফেলবে। আমি মনে মনে ভীত হলেও বাইরে দিয়ে এমন ভাব করলাম যেনো এতে আমার কিছুই যায় আসেনা। উনি রেগে উঠে চলে গেলেন। উনি যেতেই সবাই মিটমিটিয়ে হাসতে শুরু করলেন। আমি একটু লজ্জা পেলাম। কারণ ওনারা সবাই শুরুতেই বুঝেছেন যে আমি ড্রামা করছিলাম। জেদে বসে এসব করলেও রুমে গিয়ে অনেকক্ষণ ভাবলাম বিয়ে যখন উনি করতে চাননা আমারও উচিত ছিলো বিয়েটা আটকানোর চেষ্টা করা। অনেক্ষণ ভেবে আব্বুর রুমে গিয়ে সব দ্বিধা কাটিয়ে বলেছিলাম আব্বু আমি বিয়ে করতে চাইনা। আব্বু শুধু আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, ‘বিশ্বাস করো আমাকে? তাহলে আপত্তি করোনা। এখন বুঝতে না পারলেও একদিন বুঝবে যে এই সিদ্ধান্তটা কতোটা ঠিক ছিলো। এরপর আমার আর কিছুই বলার ছিলো না। অবশেষে ইচ্ছে না থাকা সত্তেও বিয়ে করতেই হয়েছে আমাদের।

আদ্রিয়ান ভাইয়ার ডাকে কল্পনা থেকে বেড়িয়ে এলাম। উনি হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। বিরক্তিমিশ্রিত কন্ঠে বললেন,

— ” আমি তোমাকে পড়তে দিয়ে গেছিলাম আর তুমি বসে বসে ভাবনায় হারিয়ে যাচ্ছো?”

— ” কে বলেছে ভাবছিলাম হ্যাঁ? পড়ছিলাম তো?”

উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” আচ্ছা? তাহলে হয়ে গেছে নিশ্চয়ই? দেও দেখি কতোটুকু হয়েছে?”

আমি একটু ইতস্তত করে বললাম,

— ” না মানে ওই ছয় পেইজই হয়েছে আরকি।”

উনি বেডে বসে বললেন,

— ” তাহলে আর কী? সারারাত বসে বসে কম্প্লিট করে। তারআগে ঘুম নেই। এন্ড ইয়েস, কোনো এক্সকিউস নয়।”

আমি এবার একটু অসহায় ফেস করে বললাম,

— ” এমন করছেন কেনো? বিলিভ মি আমি সত্যিই মন দিয়েই পড়েছি। প্রথম দিনেই এই সুইট, লিটল, ভোলিভালি বাচ্চাটাকে এতোটা টর্চার করবেন না প্লিজ প্লিজ প্লিজ। প্রমিস করছি কাল থেকে যা বলবেন তাই করবো একটুও নড়চড় হবেনা।”

— ” একটুও না?”

আমি মেকি হেসে একটু তুতলিয়ে বললাম,

— ” ও্ ওই একটুখানি হবে বেশি না।”

উনি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে তারপর একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বললেন,

— ” ড্রামাবাজ একটা। চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো সকালে উঠে অন্তত দুঘন্টা পরে তারপর কোচিং এ যাবে।”

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। এতো সকালে কে উঠবে? আচ্ছা? উনিকি এভাবে আমার ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন? বিয়ে করেছি বলে? ব্যাটা খবিশ টর্চারের আর কোনো ওয়ে পেলিনা? পড়া দিয়েই করতে হবে? উনি আমার মাথায় একটা গাটা মেরে বললেন,

— ” কী হলো শুয়ে পরতে বললাম তো।”

আমি মুখ ফুলিয়ে শুয়ে পরলাম। উনি খাবারটা খেয়ে লাইট অফ করে ওপর পাশে শুয়ে পরলেন। বলা বাহুল্য যে মাঝখানের সেই ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বর্ডার আজও বিদ্যমান। ব্যাটা কোলবালিশের বাচ্চা। নিজে একটা বিয়ে করে হাজবেন্ট নিয়ে সুখে থাকনা আমার আর আমার বরের মাঝখানে কাবাবের হাড্ডি হয়ে কেনো আছিস। এখন এই কোলবালিশটাকে দেখলেই কেমন সতীন সতীন ফিলিংস আসে। ইচ্ছে করে ছিড়ে কুটিকুটি করে দেই। আর আমার বর মহাশয়? হুহ, ব্যাটা বজ্জাতের হাড্ডি, ঢং করে কোলবালিশ দেয়া হচ্ছে। যত্তোসব ন্যাকামো। কোথায় হাজবেন্ট রা বউয়ের কাছে আসার বাহানা খোজে। আর এ ভুল করেও জেনো আমার কাছে না আসতে হয় সেটাই ভাবে। জেনো আমাকে ছুলেই ওনার ভার্জিনিটি শেষ হয়ে যাবে, অদ্ভুত। আমার তো এখন খবিশটাকে নিয়ে যথেষ্ট ডাউট হচ্ছে, কোনো ডিফেক্ট নেই তো? দূর কী আবলতাবল ভাবছি। হঠাৎ উনি বলে উঠলেন,

— ” মনে মনে আমার গুষ্ঠির পিন্ডি না চটকে ঘুমোও।”

আমি একটু চমকে উঠলাম। সামনাসামনি কিছু বলার সাহস তো পাইনা মনে মনে বকে যে গায়ের জ্বালা মেটাবো খবিশটার জন্যে সেটাও করতে পারিনা। রিডিউকিলাস!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here