#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা- অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১০
.
উনি বেশ অনেকটা সময় খুব শক্ত করে আমাকে জরিয়ে ধরে ছিলেন। শক্ত করে জরিয়ে ধরার ফলে আমার কাঁপুনি আস্তে আস্তে কমে গেছে। কিন্তু আমি এখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছি। উনি এবার ওনার হাত আলগা করে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে আমার চুলের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বললেন,
— ” অনি? কান্না বন্ধ করো।”
ওনার কথায় কান্না বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু শরীর মাঝেমাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে। সেটা দেখে উনি আমাকে ছেড়ে দিতে নিয়েও ছাড়লেন না নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে রাখলেন। তারপর বললেন,
— ” কিচ্ছু হয়নি। সি, এভরিথিং ইজ ফাইন। অনি?”
আমি আবার ওনার টিশার্ট খামছে ধরে ওনার বুকে মুখ গুজে রইলাম। কী করছি আমি নিজেও জানিনা কিন্তু এইমুহূর্তে ওনার বুকেই নিজেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করছি। উনিও আর কিচ্ছু বললেন না আমাকে বুকে নিয়েই বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে রইলেন। আমিও একদম চুপ করে ওনার বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলাম। অনেকক্ষণ কাঁদার কারণে মাথা ভার হয়ে আছে চোখেও ভারী হয়ে এলো। আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরলাম ওনার বুকেই।
__________________
সকালে আমি তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছি। আর উনি তখন থেকে তাড়া দিয়ে যাচ্ছেন। আমি ওড়না সেট করছি তখন আদ্রিয়ান বললেন,
— ” অনি ডু ফাস্ট। অলরেডি দেরী হয়ে গেছে।”.
— ” এইতো হয়ে গেছে। আর একটুখানি।”
আদ্রিয়ান একটু রাগী কন্ঠে বলল,
— ” হ্যাঁ তাড়াতাড়ি।”
আমি ওড়নাটা সেট করে ব্যাগটা কাধে নিয়ে বললাম,
— ” হয়ে গেছে।”
উনি বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
— ” অবশেষে। চলো!”
নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে গেলাম। কোচিং সেন্টার থেকে বেড়িয়ে নিচে নেমে গিয়ে দেখলাম উনি দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর পরে উনি কিছু না বলে গাড়ির দরজা খুলে দিলেন। আমি চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে বসে পরলাম। উনিও ড্রাইভিং সিটে বসে আমার সিটবেল্ট বেধে দিলেন। এটা ভাববেন না যে আমি সিটবেল্ট বাধতে জানিনা। আসলে প্রথম দিন উনি নিজেই বেধে দিয়েছিলেন তারপর থেকে আমি আর বাধিনা। উনি নিজে বেধে দেন এটাই ভালোলাগে আমার কাছে। অনেকক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলাম। হঠাৎ করেই উনি বলে উঠলেন,
— ” কাল রাতে এমন কেনো করলে? কী হয়েছিল?”
সাথেসাথে আমার মন খারাপ হয়ে গেলো। নিজেকে সামলে কথা ঘোরানোর জন্যে বললাম,
— ” আচ্ছা আমি এক্সাম দিলাম কীকরে? আপনি কী অ্যাপে লগ ইন করেছিলেন?”
— ” হ্যাঁ। তোমাকে ঘুম পারিয়ে আমি নিজেই সব সেট করে রেখেছিলাম।”
— ” ওহ।”
উনি পাল্টা আর কোনো প্রশ্ন না করে ড্রাইভিং এ মন দিলেন। আমি একটু অবাক হলাম এমনি সময় হলে তো আমাকে প্রশ্ন করতে করতে শহীদ করে দিতেন আজ কী হলো? কী জানি কখন কী হয় ওনার সেটা শুধু আল্লাহ জানেন আর উনি জানেন।
_________________
বিকেলে বসে বসে পড়ছি। সত্যি বলতে বই সামনে নিয়ে বসে থাকলেও ওনার কথা বেশি ভাবছি। এতোদিনে এটুকু বুঝেছি ওনার অন্যকোথাও কিছু নেই। মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলেননা উনি। যতোটুকু বলে নূর আপুর সাথে আরেকটা বিশেষ তথ্য যেটা পেলাম সেটা হলো ওনারা কলেজ থেকেই পরিচিত। মানে কলেজ লাইফে নূর আপু ওনাদের পরিচিত ছিলেন। তাহলে আমার সাথে ওনার কী প্রবলেম ভাই। এসব ভাবতে ভাবতে কোলবালিশটার দিকে চোখ গেলো। আগেই বলেছি এটাকে দেখ আমার সতীন সতীন ফিলিংস আসে তাই কোলবালিশটা হাতে নিয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম ওটার দিকে তারপর বললাম,
— ” এই তোর লজ্জা করেনা? একটুও লজ্জা নেই তোর মধ্যে হ্যাঁ? অন্যের বরের দিকে নজর দিস? তারওপর বর বউয়ের মাঝখানে শুয়ে থাকিস? হাউ শেইমলেস ইয়ার। আচ্ছা তুই একটা কথা বল এটা কী ঠিক? জানি কী বলবি। এটাই তো যে আমার বর নিজে তোকে মাঝখানে আনে? আচ্ছা একটা কথা বল উনি আনলেই তুই যাবি কেনো? হোয়াই? মিনিমান সেল্ফরেস্পেক্ট নেই? নিজে থেকে উঠে চলে যেতে পারিস না? তা যাবি কেনো? আমার ওমন সুইট, কিউট, হ্যান্ডসাম বরটাকে কেই বা ছাড়তে চাইবে? উফফ কী জ্বালা। এই জন্যেই সুন্দর ছেলেদের বিয়ে করতে নেই। জ্বলতে জ্বলতে ভেতরটা পুরে পুরো কয়লা হয়ে যায়।”
হঠাৎ কাশির আওয়াজে চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখি উনি দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এইরে কিছু শুনেটুনে ফেলেনি তো? ইস! আমিও না কথা বলার সময় কিছুই খেয়াল থাকেনা। উনি কিছু না বলে সোজা ওয়াসরুমে চলে গেলেন। আর আমি ভাবছি ওনার মুখ দেখেতো কিছুই বুঝলাম না কিছু শুনেছেন? নাকি শোনেননি? ধ্যাত্তেরি ছোট্ট মাথা এত্তো প্রেশার কীকরে নেয়? উফফ আল্লাহ আমার দিকে একটু দেখো।
__________________
দুইদিন কেটে গেলো। এই দুইদিন ওনাকে একটু অন্যরকম দেখতাম জেনো খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছেন। বেশিরভাগ সময়ই বাইরে বাইরে কাটান। তবে তাই বলে যে আমার লেখাপড়ায় ছাড় দেন তা কিন্তু একদমি না। যখনই আসেন ঠিকই পড়া আদায় করে নেন।আর আমি আমার প্যারাময় লাইফে একদম অতিষ্ঠ। বর বেশি পন্ডিত হলে জীবনটা তেজপাতা হয়ে যায় এটা শুনেছিলাম এখন নিজেই নিজের জীবন দিয়ে দেখেও নিচ্ছি।রাতে আমার ইঞ্জিনিয়ার প্লাস সাইন্টিস্ট বর আবার টিচার বরের রোল প্লে করতে শুরু করলেন। আর আজ খুব গুরুতর একটা সাবজেক্ট নিয়ে বসেছেন। সেটা হল ফিজিক্স। যেটা বরাবরই আমার কাছে ভীষণ ভয়াবহ লাগে। তারওপর উনি এমন এমনভাবে কোয়েশচন করছেন যে পুরো কনফিউসড হয়ে যাচ্ছি। আর না পারার ফলসরূপ একটা করে রামধমক দিয়ে যখন উত্তরটা বলছেন তখন আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি কারণ উত্তরটা আমার জানাই ছিলো। কিন্ত ওনার প্রশ্নগুলোই কেমন আজব আজব। আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
— ” আপনি এমন কেনো বলুনতো? এভাবে পেঁচিয়ে কেউ প্রশ্ন করে?”
উনি বইটা বন্ধ করে আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললেন,
— ” মেডিকেল এক্সামে তোমার জন্যে বেছে বেছে সহজ করে প্রশ্ন দেবে তাইনা?”
আমি মুখ ফুলিয়ে উঠে ওয়াসরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি উনি বিছানা করে ফেলেছেন। আমি ভাবি লোকটা এমন কেনো? এতো যত্ন নেয় আমার। পারলে জলটাও ঢেলে খেতে দেয়না। এত্তো কেয়ারিং একটা হাজবেন্ট তো সবাই চায়। কিন্তু একটা জিনিসেরই অভাব রেখেছেন উনি। ভালোবাসা। এই ভালোবাসাটাই এখনও পাই নি ওনার কাছ থেকে। কী হয় একটু ভালোবাসলে?
— ” কী হলো ঘুমাবেনা? এসো?”
ওনার কথায় হুস এলো আমার। কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে পরলাম। উনিও লাইট অফ করে যথারীতি মাঝখানে আমার সতীনকে রেখে শুয়ে পরলেন। উনি উল্টোদিকে মুখ করে শুয়ে আছেন। আমি উল্টো ঘুরে শুয়ে পরলাম। দুজনেই চুপচাপ আছি। অনেকটা সময় কেটে গেল, উনি ঘুমিয়েছেন কী না জানিনা কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। হঠাৎ উনি বলে উঠলেন,
— ” জেগে আছো?”
আমি একটু চমকে গেলাম। ওনার দিকে ঘুরে ইতস্তত করে বললাম,
— ” জ্ জ্বী জেগে আছি।”
উনিও আমার দিকে ঘুরে বললেন,
— ” আচ্ছা তোমার কী মনে হয়? তোমার সাথে অন্যায় হয়েছে? আমাকে বিয়ে করে ভুল করেছো তুমি?”
আমি কোনোপ্রকার সংকোচ না করে সরলভাবে বললাম,
— ” আপনার মতো হাজবেন্ট পাওয়া তো যেকোনো মেয়ের কাছে ভাগ্যের বিষয়। কিন্তু কী বলুন তো শুধুমাত্র সাড়ে তিন অক্ষরের এই ‘কবুল’ শব্দটা ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে দুজনকে এক ছাদের নিচে থাকার অনুমতি দিয়ে দিলেও দুজনকে সত্যিকারের বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারেনা।”
বলেই আমি আবার উল্টো ঘুরে শুয়ে পরলাম। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছি উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। থাকুক তাকিয়ে যতোখুশি তাকিয়ে থাকুন। তাকিয়ে থাকতে থাকতে অন্ধ হয়ে যাক তাতে আমার কী? আমিতো তাকাবো না ওনার দিকে। একদম না।
_________________
সকালে ওনার ডাকেই আমার ঘুম ভাঙলো। তবে রোজকার মতো আজকের কন্ঠস্বর কর্কশ নয়। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি উনি আজকেও কফির মগ নিয়ে বসে আছে। আমি একটু অবাক হয়ে উঠে বসে ওনার দিকে তাকালাম। উনি মুচকি হেসে আমার দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
— ” গুড মর্নিং ম্যাডাম।”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। আজ ওনার ব্যবহারে অন্যকিছু দেখছি আমি। প্রতিদিন ওনার ডাকে একটা টিচার টিচার ফিলিংস থাকে কিন্তু আজ ওনার ডাকে কেমন যেনো হাজবেন্ট হাজবেন্ট ফিলিংস পাচ্ছি আমি। অবাক হয়েই ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটিয়ে বললাম,
— ” ভেরি গুড মর্নিং।”
বলে কফির মগটা হাতে নিয়ে নিলাম। উনি একটু এগিয়ে এসে আমার এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে গুছিয়ে দিলো। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। উনি আমার কপালের চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে কিছু বলবেন তখনই দরজার কাছে কেউ গলা ঝাড়ল, তাকিয়ে দেখি জাবিন, ইফাজ ভাইয়া, আপি দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তাকাতেই তিনজনেই দাঁত বেড় করে একটা হাসি দিলো। এরপর তিনজনই হেলেদুলে রুমে ঢুকলো। উনি আর আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। ইফাজ ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে ভ্রু বলল,
— ” কী চলে?”
সবাইকে অবাক করে দিয়ে আদ্রিয়ানও একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল,
— ” চলতে আর দিলি কোথায়? সবেতো শুরু করছিলাম এসেই তো সব ঘেটে দিলি।”
আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম। সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে। কারো মুখে কথা নেই। উনি ভ্রু কুচকে সবার দিকে চোখ বুলিয়ে বলল,
— ” হোয়াট? এম আই লুকিং লাইক আ এলিয়েন?”
আমরা চারজনেই একসাথে না বোধক মাথা নাড়লাম। উনি এবার নিজেকে একবার চেইক করে বললেন,
— ” অদ্ভুত কিছু দেখছো আমার মধ্যে? লাইক ডানা, এক্সট্রা হাত পা বা আইস?”
আমরা এবারেও সবাই না বোধক মাথা নাড়লাম। উনি এবার বিরক্ত হয়ে বললেন,
— ” তো? এভাবে সবাই চোখ বড় বড় করে দেখছো কেনো? আই নো আ’ম হ্যান্ডসাম। তাই বলে এভাবে নজর? সো শেইমফুল।”
ইফাজ ভাইয়া অবাক কন্ঠে বললেন,
— ” ত্ তু তুই…”
আদ্রিয়ান হেসে ফেললেন। হাসতে হাসতে বললেন,
— ” ভাইয়া বিয়ে করে বউয়ের ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে তোতলা হয়ে গেছিস?”
আমরা এখনো ওনার দিকে তাকিয়ে আছি অবাক হয়ে। উনি পকেটে ঢুকিয়ে বললেন,
— ” হোয়াট এভার। এই যে ম্যাডাম হা করে তাকিয়ে না থেকে পড়তে বসুন। আর আপনারা এই মুহূর্তে আমার বউকে কোনো ডিসটার্ব করা যাবেনা। যা বলার বলে চলে যাও আড্ডা পরে হবে। আমি বাবার রুম থেকে বই আনতে যাচ্ছি।”
এটুকু সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলন উনি। আমরা চারজনেই হা করে তাকিয়ে আছি ওনার যাওয়ার দিকে। আদ্রিয়ান আবার আগের মতো বিহেভ করছেন। এটা সত্যি ছিলো? দ্যাট মিনস আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের ইজ ব্যাক?
#চলবে…
( আপনারা অনেকেই জানেন আমাকে এডমিশন টেষ্টের প্রিপারেশন হচ্ছে। খুব বেশি চাপে আছি। টাইম ম্যানেজ করাটা কষ্টকর হচ্ছে। তাই কখনও ছোট হচ্ছে আবার গতকাল গ্যাপও পরে গেছে, সময়টাও এলোমেলো হচ্ছে। প্লিজ কেউ কিছু মনে করবেনা একটু কষ্ট করে এডজাস্ট করে নেবেন। )