গল্পঃ প্রেমমোহ লেখিকাঃ ফারজানা আফরোজ পর্বঃ ১৩

গল্পঃ প্রেমমোহ
লেখিকাঃ ফারজানা আফরোজ
পর্বঃ ১৩

শুভ্রতার মুখে এমন কথা শোনে হতবাক হয়ে গেলো সাকিব। কি সুন্দর করে বুঝাতে পারে মেয়েটি। এত সুন্দর উদাহরন তাও আবার সরাসরি। সাকিব না চাইতেও কান্না করে দিলো। শুভ্রতা কোনো উপায় না পেয়ে সাকিবের হাত দুটো শক্ত করে ধরলো। সাকিব অবাক চোখে তাকিয়ে আছে শুভ্রতার দিকে।

–” তুমি তো দেখছি খুব ভালোভাবে বুঝাতে পারো। এইজন্যই তো তোমাকে এত ভালোবাসি।”❤

সাকিব শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরলো। সাকিবের স্পর্শে শুভ্রতার মাঝে খারাপ লাগা কিংবা অস্বস্তি বোধ হলো না। ওর মনে হলো, বড় ভাইয়ের ভালোবাসা বুঝি এমন। সাকিবের ছোঁয়া তার মনকে বারবার বলল, দেখেছিস তোর বড় ভাইয়া তোকে কত ভালোবাসে। শুভ্রতা সাকিবের বুকে মাথা রেখে শান্তিতে দু’চোখের পাতা বন্ধ করতেই জোরে জোরে কারো হাত তালির শব্দ শোনে তাকালো দুজন। স্পন্দন দাঁড়িয়ে আছে। চোখে তার আকাশ সমান রাগ। রাগের বশে হয়তো কথা বলতে পারছে না সে তবুও দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল,

–” সরি ভুল সময়ে চলে আসছি। আপনারা দুজন রোমান্স করছেন। আর কিভাবে বুঝবো আপনারা এইখানে এই অবস্থায় থাকবেন। ছাদের দরজাটা বন্ধ তো করতে পারতেন।”

সাকিব চিৎকার করে বলে উঠলো,

–” স্পন্দননন । ছিঃ তুই এমন কিছু বলবি আশা করেনি।”

–” তুমিও যে এমন কিছু করবে আমিও আশা করেনি। তো মিসেস শুভ্রতা! এতদিন শুধু আকাশ বাতাসের কথা বলতেন তো কোথায় গেল আজকে আকাশ? একদিনে ভুলে গিয়েছেন? মুখ দেখে মনে হয় ভাজা মাছটি উল্টিয়ে খেতে জানেন না। এখন দেখছি তলে তলে টেম্পু ঠিকই চালাতে পারেন।”

স্পন্দনের কথা শোনে অজরে কান্না করছে শুভ্রতা। ঘৃণা চক্ষু দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে স্পন্দনের উপর। কিন্তু তার কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না।

–” আপনার এইসব ন্যাকা মার্কা চোখের পানি ফেলা বন্ধ করুন। স্বামীর মৃত্যুর বিশদিন না হতেই নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে গেলেন। আরেহ একটা মাস তো সময় নিতে পারতেন। ”

শুভ্রতা এইবার নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে না পেরে সজোরে থাপ্পড় বসালো স্পন্দনের গালে। স্পন্দন থাপ্পড় খেয়ে চুপ হয়ে যায়। শুভ্রতা যে তাকে থাপ্পড় দিবে আশা করেনি। শুভ্রতা দৌঁড়ে সেখান থেকে চলে গেলো। সাকিব স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,

–” শুভ্রতা অমন মেয়ে নয়। সব সময় চোখের দেখাও ভুল হতে পারে। তাছাড়া সব স্পর্শ এক নয় কিছু স্পর্শে রয়েছে ভালোবাসা, মুগ্ধতা, মায়া, স্নেহ। আমি তোর কাছ এই ধরনের বিহেভ আশা করেনি। ‘

সাকিবও চলে যায়। স্পন্দনের চোখ থেকে পানি ঝড়ছে। কারণ সে জানে শুভ্রতার দোষ এইখানে এক ফোঁটাও নেই। শুভ্রতা যখন ছাদে উঠছিল তখন শুভ্রতার পিছু পিছু স্পন্দনও আসে। শুভ্রতার বলা প্রত্যেকটি কথা সে শুনেছে। অদ্ভুদ ধরনের ভালো লাগছিল শুভ্রতার কথাগুলো কিন্তু হঠাৎ করেই সাকিব শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরবে সে ভাবেনি। স্পন্দন ভাবছিল এইবার হয়তো শুভ্রতা কিছু বলবে কিন্তু শুভ্রতাও সাকিবের বুকে নিজের ইচ্ছায় মাথা রাখছিল যা স্পন্দনের কাছে একটুও ভালো লাগেনি। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে সব রাগ ঝাড়ে শুভ্রতার উপর।

খাবার টেবিলে সবাই আসলো শুধু শুভ্রতা বাদে। মিসেস সাবিনা বেগম দিয়াকে বলে শুভ্রতাকে ডেকে আনলো। শুভ্রতার বাঁ পাশে সাকিব, ডান পাশে দিয়া এবং সামনে বরাবর স্পন্দন বসে আছে। মিসেস সাবিনা বেগম শুভ্রতার দিকে তাকালেন। শুভ্রতার মন যে খুব খারাপ তিনি বুঝতে পারলেন। শুভ্রতার মন রক্ষা করার জন্য বললেন,

–” কি রে কি হয়েছে তোর? মুড অফ কেন?”

শুভ্রতা একবার স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে বলল,

–” আন্টি আমার জন্য কলেজ হোস্টেলের ব্যাবস্থা করতে পারবেন। হ্যাঁ আমি পরে সব টাকা দিয়ে দিবো।”

–” কি বলছো মা? এই বাড়িতে দিয়া, স্পন্দন, সাকিব ওদের যেমন অধিকার আছে তোমারও সেই অধিকার আছে। তুমি ইমতিয়াজ আহমেদের একমাত্র মেয়ে তোমার অধিকার তুমি কেন ছেড়ে দিবে?”

শুভ্রতা ভীষণ অবাক হলো। সে তো বলেনি এইসব কথা তার মানে কি স্পন্দন বলেছে? স্পন্দনের দিকে তাকাতেই দেখলো স্পন্দনও অবাক হয়ে আছে। মিসেস সাবিনা বেগম দু’জনের চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। হেসে আবারো বললেন,

–” যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম সেদিনই একটু সন্দেহ হয়। কারণ একটা মানুষের সাথে তোমার এত মিল কি করে হতে পারে। তুমি তোমার বাবার মত দেখতে হয়েছো কিন্তু গায়ের রঙটা পেয়েছ মায়ের। তখনই তোমার ব্যাপারে সাকিবকে বলি। সেই তোমার ব্যাপারে সব খোঁজ খবর এনে আমাকে বলেছে। ভর্তির দিন আমি নিজেই তোমাকে ভর্তি করাতে পারতাম কিন্তু আমি চাইছিলাম স্পন্দন তোমার সত্যিটা জানুক। তাই সেদিন স্পন্দনকে পাঠিয়ে ছিলাম। এখন বলো তুমি তোমার অধিকারে থাকছো এইখানে তাহলে টাকা কেন দিবে? এই বাড়ির ভাগ দুটো এক ভাব সাকিবের বাবার দ্বিতীয় ভাগ তোমার বাবার। যেহেতু আমার সন্তান তিনজন তাই ওরা তিনজন ভবিষতে পাবে কিন্তু তোমার বাবা যেহেতু নেই তাহলে তোমার ভাগ তোমাকে দিতে আমরা বাধ্য। ইসলামে বলা আছে এতিমদের ঠকানো একদম ঠিক না। মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে কুক্ষিগত করা বা আত্মসাৎ করাই নিষিদ্ধ। আর কেউ যদি এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করে তবে তা আরো জঘন্য অপরাধ বিবেচিত হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা এতিমের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং অচিরেই তারা জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘এতিম পরিণত বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তার সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না। তবে সদুপায়ে (সম্পদের উন্নতি করার লক্ষ্যে) তা ব্যবহার করা যাবে। আর প্রতিশ্রুতি পূরণ করো। কেননা (কিয়ামতের দিন) প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৪)। তাই আমি দুনিয়ার সামান্য সুখের জন্য তোমার হোক থেকে তোমাকে বিতাড়িত করতে পারবো না তাছাড়া আমাদের যা আছে তাই অনেক।”

শুভ্রতা এইবার জোরে জোরে কান্না করতে লাগলো। সাবিনা বেগমকে দেখলেই ওর মা মা মনে হয়। মানুষটি এত ভালো যা বলার বাহিরে। শুভ্রতার কান্না দেখে মিসেস সাবিনা বেগম উঠে দাঁড়ালেন। শুভ্রতার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন,

–” বোকার মত কান্না করিস না তো। একদম মন দিয়ে পড়ালেখা করবি।”

–” আমার সম্পত্তি লাগবে না আন্টি।”

–” না লাগলে এতিম খানায় দিয়ে দিবি। এখন চুপচাপ খেয়ে ভার্সিটি যা পরে দেরি হয়ে যাবে।”

–” হুম।”

সাকিব খুশি মনে শুভ্রতার প্লেটে বড় বড় মাছের টুকরো, মাংসের পিছ দিতে লাগলো। দিয়া গাল ফুলিয়ে রাখলো। সাকিব দিয়াকেও দিলো কিন্তু স্পন্দন সে একা একা খেয়ে যাচ্ছে হয়তো বড় ভাইয়ের এইসব তার সহ্য হচ্ছে না।

গাড়িতে বসে আছে সাকিব এবং শুভ্রতা। স্পন্দন চাচ্ছিল শুভ্রতাকে ভার্সিটি নিয়ে যেতে কিন্তু সাকিবের কারণে পারলো না। সাকিব রোমান্টিক একটা গান ছেড়ে শুভ্রতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–” জানো শুভ্রতা আমি জীবনে ভাবিনি আমি কাউকে ভালোবাসবো। ভালোবাসা শুধু দুটি মনের বন্ধনই নয়। এর ফলে দুটি মনেরই পরিবর্তন ঘটে। আর এই পরিবর্তনের আছে যৌক্তিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। যখন কারো অন্য কাউকে ভালোলাগে তখন মস্তিষ্কে রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ হয়। ফলে ব্যক্তির মনে সৃষ্টি হয় সুখানুভূতির।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, একজন ব্যক্তি অন্য কারও প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক মোট চার মিনিট ৯০ সেকেন্ড সময় নেয়। গবেষকরা এটাও দেখেছেন, মানুষের মস্তিষ্ক প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তির কিছু বিষয় বিবেচনা করে। তার মধ্যে ৫৫ শতাংশ হলো তার অঙ্গভঙ্গি বা বাহ্যিক রূপ, ৩৮ শতাংশ কণ্ঠস্বর ও কথা বলার ভঙ্গি এবং মাত্র ৭ শতাংশ তাদের মূল বক্তব্য শোনে।”

–” ভাইয়া আমি কমার্সের স্টুডেন্ট প্লিজ দয়া করে সাইন্স নিয়ে কিছু বলবেন না। মাথা ১০০০ ডিগ্রি ঘুরতে থাকে আমার।”

শুভ্রতার কথা শোনে সাকিব হো হো করে হেসে উঠলো।

গাড়ি থেকে নামতেই আসু এবং নীলুর সাথে দেখা হয়ে গেল শুভ্রতার। সাকিব হঠাৎ করেই,

চলবে,😊

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার গল্পে কখন কি পরিবর্তন হয় বুঝা মুশকিল তাই আপনারা নিজেরা বুঝে নিয়ে লেখিকাকে খারাপ দোষারোপ করবেন না। কারণ গল্প এখনও শেষ হয়নি। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here