ভালোবাসি তোকে ❤ #লেখিকা: অনিমা কোতয়াল #পর্ব- ৩৫

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৩৫
.
আমি ওদের দেখে ভয়ে গুটিয়ে বসলাম। এরা কতটা ভয়ংকর তার প্রমাণ আগেও পেয়েছি আমি। হঠাৎ করেই যে এভাবে আমার সামনে চলে আসবে সেটা ভাবতেও পারিনি। তারমানে সেদিন পার্টিতে আমি ভুল দেখিনি। চারজনের পোশাকই কালো। আবছা অন্ধকার হলেও এটুকু বোঝা যাচ্ছে। আর প্রত্যেককের মুখেই মাস্ক পরা। সামনে থাকা লোকটার মাস্কের সাথে লম্বা হুডিও পরা। আমি উঠে দৌড়ে পালাতে গেলেই হুডি পরা লোকটা আমার হাত শক্ত করে ধরে ফেলল। পাশ থেকে একজন বলল,

— ” পালাতে চাইছ হ্যাঁ? তোমার কী মনে হয়? সবসময় পালানোটা এতো সহজ? সেদিন তোমরা পালাতে পেরেছিলে বলে সবসময় পারবে? হ্যাঁ?”

আমি আশেপাশে একবার তাকালাম। এখন যদি আমি চিৎকার করি তাহলে কী কেউ শুনবে? অডিটোরিয়ামটা তো একটু দূরে। না একটা শেষ চেষ্টা তো করতেই পারি। তাই আমি জোরে চিৎকার করে বললাম,

— ” হেল্প। কেউ আছেন? প্লিজ হেল্প। আদ্রিয়ান..”

আর কিছু বলার আগেই হুডি পরা লোকটা আমার মুখ চেপে ধরে আবারও ধাক্কা দিয়ে দেয়ালের দিকে ছুড়ে মারলো। কপালে আঘাত পেয়ে মাথা চেপে ধরে বসে পরলাম। ভয়ে শব্দ করে কেঁদে দিলাম। হঠাৎ করে আবারও এখন এদের মুখোমুখি হতে হবে সেটা চিন্তাও করিনি। আমি না চাইতেও নিজেকে এদের সাথে জড়িয়ে ফেলেছিলাম। আর এখন চেয়েও এদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারছিনা। পাশ থেকে আরেকজন বলল,

— ” এতো এখনও আগের মতো বাচ্চাই আছে। ভাবলাম দু-বছরে হয়তো বড় হয়েছে। কিন্তু এখনও তো এ সেই বাচ্চামোই করে যাচ্ছে?”

বাকি দুজন হেসে দিল। সামনের লোকটা আমার সামনে হাটু ভেঙ্গে বসল। আমি ভয় পেয়ে একটু গুটিয়ে বসে আমি গুটিয়ে বসে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,

— ” আপনারা কেন পরে আছেন আমার পেছনে?”

লোকটা আমার গাল চেপে ধরে বলল,

— ” সত্যিই জানোনা কেন পরে আছি? জানোনা কী করেছো তুমি? বাচ্চা একটা মেয়ে হয়ে আমাদের এত দিনের পরিশ্রমে পানি ঢেলে দিয়েছো। আর এখন জানতে চাইছো যে তুমি কী করেছো?”

আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বললাম,

— ” অ্ আমি কিছু করিনি। আমি জানিনা ঐ পাসকোডটা..”

এটুকু বলে নিজেই থেমে গেলাম। জানিনা বলেও তো বলে দিচ্ছিলাম। আমার কথাটা শুনে এবার আমার চুল টেনে ধরল লোকটা। আমি মৃদু চিৎকার করে উঠলাম। লোকটা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” তুমি নিজেই বলে দিলে যে তুমি সব জানো। এবার ঝটপট বলে ফেলো। কী করেছো ওটা নিয়ে?”

আমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে অস্ফুট স্বরে বললাম,

— ” আমি জানিনা।”

এবার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা বলল,

— ” এভাবে হবে না। ঠাটিয়ে দুটো চড় মারলে এমনিই সব বেড়িয়ে।”

বলে আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই আমরা সামনে বসে থাকা লোকটা ধমকের সুরে বলল,

— ” স্টপ। সবসময় মাথা গরম করে সব হয়না। যা বলার আমি বলছি তো?”

আমার এই চারজনের মধ্যে দুজনের গলা খুব বেশিই চেনা চেনা লাগছে। যদিও এদের সবার ভয়েজ একরকম মনে হচ্ছে আমার কাছে। কিন্তু কিছুতো সামনের লোকটা, পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা বা পাশের লোকটার কন্ঠটা পরিচিত মনে হচ্ছে। আমার দিকে ঘুরে ওপর হাতে আমার গাল চেপে ধরে বলল,

— ” দেখো তোমার সাথে আমাদের কিছুই নেই। চুপচাপ যা জানতে চাইছি বলে দাও। আমরা এমনিতেই ছেড়ে দেবো তোমাকে।”

আমি এবার হালকা চেঁচিয়ে বললাম,

— ” আমি বলছিতো আমি জানিনা।”

লোকটা পেছন থেকে বন্দুক বের করে আমার মাথায় জোরে চেপে ধরে বলল,

— ” তুমি এখনও বেঁচে আছো কারণ তোমাকে আমাদের দরকার। কিন্তু সেই কাজটাই যদি না হয় তো তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার সত্যিই কোনো মানেই হয়না। তাইনা?”

আমি কিছু বলছিনা, আসলে বলতে পারছিনা। ভয়ের সাথে মাথায় লাগা চোটের কারণে সবকিছু এমনিতেই ঝাপসা হয়ে আসছে।লোকটা বন্দুকটা আরও জোরে চেপে ধরে বলল,

— ” তো তুমি কী ডিসাইড করলে? বলবে নাকি না।?”

কিন্তু আমি এবার কিছুই বললাম না। মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে হিঁচকি দিয়ে কেঁদে যাচ্ছি। আদ্রিয়ানের কথাই মনে পরছে বারবার। কোথায় আছে ও? খুজছে আমায়?লোকটা আমার ঘাড়ের ওপর হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল,

— ” ভালোভাবে বলেছিলাম কিন্তু তুমি শুনলেনা। এখন যা হবে তার জন্যে তুমিই দায়ী থাকবে।”

হঠাৎ আমার মনে হলো আমার ঘাড়ের একটু অংশ জ্বলে উঠলো। আমি মৃদু স্বরে ‘আহ’ করে উঠলাম। পাশ থেকে একজন বলল,

— ” আমিতো বলছি এভাবে বলবে না নিয়ে চলো আমাদের সাথে থার্ড ডিগ্রী পরলে সব বলে দেবে।”

আমার সামনে বসে থাকা লোকটা কোনো উত্তর দিলো না। আমার কাছে আস্তে আস্তে সবটাই ঝাপসা হয়ে এলো। শুধু অস্ফুট স্বরে মুখ দিয়ে একবার ‘আদ্রিয়ান’ শব্দটাই বেড়িয়ে এসছিল। আমাকে নেতিয়ে পরতে দেখে সামনের লোকটা একটা ফোনের টর্চ আমার মুখে মারলো। যার ফলে আমার মুখটা ওদের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেল। তখনই পেছনের একটা লোক অবাক কন্ঠে বলল,

— ” এটা কীকরে সম্ভব?”

ব্যস এটুকুই এসছিলো আমার কানে। এরপর ওদের কথাগুলো কানে পৌছলেও মস্তিষ্ক অবধি পৌছালো না, সবটাই অন্ধকার হয়ে গেল।

_________________

হালকা কথাবার্তার আওয়াজে আর মাথায় সামান্য ব্যথা অনুভব করে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম। প্রথম কয়েক সেকেন্ড সবটাই ঝাপসা লাগছিল আমার কাছে। এরপর আস্তে আস্তে সবটা পরিষ্কার হলো। আমি আমার বেডরুমেই শুয়ে আছি। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম আপি, ইফাজ ভাইয়া, বাবা, মামনী, বড় আব্বু, বড় আম্মু, জাবিন, বাড়ির সবাই আছে এখানে। আদিব ভাইয়াও আছে। আর ইসু, অরু, ঐশিও আছে আমার সাথে। হঠাৎ আদ্রিয়ানের কথা মনে পড়তেই পাশে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান আমার পাশে বসে আছে। হঠাৎ মেডিকেলে ঘটা ঘটনাটা মনে পরতেই আমি তাড়াহুড়ো করে উঠে বসতে নিলেই আদ্রিয়ান আমাকে ধরে ঠান্ডা গলায় বলল,

— ” আস্তে! আমি হেল্প করছি।”

বলে আমাকে উঠিয়ে একটা বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসালো। কপালে হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম মাথায় ব্যান্ডেজ করা আছে। মামনি বলল,

— ” সব সময় এমন বাচ্চামি কেনো করিস বলবি? এতো করে বলি ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া কর কিন্তু তুই শুনিসই না। দেখ আজ কত বড় বিপদ হতে পারতো?”

আপিও বলল,

— ” সেটাই। কারো কোনো কথা শুনে চলে এই মেয়ে?”

আমি একটু অবাক হয়ে তাকালাম। আজ যা হয়েছে তার সাথে আমার খাওয়া দাওয়া বা যত্ন নেওয়ার কী সম্পর্ক? আমি একটু অবাক দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছি। কিছু বলল তার আগেই অরু বলল,

— ” সত্যিই। তুই গেলি শাড়িটা ক্লিন করতে আর ওয়াসরুমের সামনেই সেন্সলেস হয়ে পরে রইলি?”

ইসু বলল,

— “ভাগ্যিস শুধু কপালটা একটু কেটেছে। যদি বড় কিছু হয়ে যেতো তো?”

আমি এবার বেশ অনেকটা অবাক হলাম। কী সব বলছে ওরা? আমি ওয়াসরুমের সামনে সেন্সলেস হয়েছিলাম? তারমানে ওরা আমাকে ওখানেই ফেলে রেখে গেছে? বাড়ির লোকেরা এ বিষয়ে কিছুই জানেনা। আর ওদের এসব বলে টেনশনে ফেলারও কোনো মানে নেই। তাই আমি আর কিছু বললাম না। আদ্রিয়ান আদিব ভাইয়াকে বলল,

—- ” আচ্ছা তুই অরুমিতা, ইসরাত আর ঐশ্বর্যকে বাড়িতে পৌছে দে।”

আদিব আমার দিকে তাকিয়ে ”টেইক কেয়ার” বলে ওদের নিয়ে চলে গেল। ওরা যাওয়ার পরে আদ্রিয়ান আপিকে বলল,

— ” বউমনি ওর জন্য লিকুইড কোনো খাবার নিয়ে এসো প্লিজ। সলিড কিছু আজ খেতে পারবেনা ও।”

আপি মাথা নেড়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলো। ইফাজ ভাইয়া আমাকে আরও একবার চেক করে। আদ্রিয়ানকে ঔষধগুলো সব বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল। বাকিরাও আস্তে আস্তে চলে গেল রুম থেকে। কারণ বেশ অনেকটাই রাত হয়েছে। সবাই চলে যাওয়ার পর আদ্রিয়ান আমার পাশে বসে আমায় একহাতে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল,

— ” এখন ভাল লাগছে?”

আমি মাথা নেড়ে ওর বুকে মাথা দিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলাম। ওও কিছু বলল না আলতো হাতে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করল। একটু পর আপিও চলে এলো। আপিকে দেখে ও আমাকে ছেড়ে দূরে সরে বসল। আপি সুপের বাটিটা টি-টেবিলে রেখে বলল,

— ” তোমরা রেস্ট করো আমি আসছি।”

বলে আপি দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেল। আমি নিজের পরনে কুর্তি আর প্লাজো দেখে একটু অবাক হয়ে বললাম,

— ” আমায় চেঞ্জ কে করালো?”

আদ্রিয়ান নিজের গায়ের পাঞ্জাবীটা খুলছিলেন। আমার কথাটা শুনে একটু দুষ্টু হেসে পাঞ্জাবী খুলে আমার পাশে বসে আমার দিকে ঝুকে বলল,

— ” যদি বলি আমি?”

আমি একটা শুকনা ঢোক গিলে বললাম,

— ” ত্ তুমি করিয়েছো মানে কী? বাড়িতে আর কেউ ছিলোনা।”

ও একটু অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

— ” আজব! আমার বউকে আমি বাদে অন্যকেউ চেঞ্জ করাবে কেন?”

আমি মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। সত্যিই কী ও করেছে নাকি? যদিও ও করালে আমার তেমন কোনো সমস্যা নেই আমারই তো বর। কিন্তু চোখেমুখে বিস্ময় রাখাটা আবশ্যক। তাই মুখে একটু টেনশন টেনশন ভাব ফুটিয়ে নিলাম। উনি আমার মুখের সামনে তুরি বাজিয়ে বলল,

— ” এইযে ম্যাডাম। যতোটা চিন্তিত হওয়ার অভিনয় করছো ততোটা চিন্তিত তুমি নও। সো ড্রামা বন্ধ করো। আর চেঞ্জ আমি না বউমনি করিয়েছে।”

আমি আড়চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম। উনিও হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরল আমাকে। তারপর বলল,

— ” অনেক দুষ্টুমি হয়েছে এবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরো বারোটা বাজে।”

আমি একটু ইচ্ছে করেই একটু ড্রামা করে বাচ্চাদের মত করে বললাম,

— ” তুমি খাইয়ে দাও।”

উনি চোখ ছোট ছোট করে কিছুক্ষণ আমার দিকের তাকিয়ে থেকে হেসে আমার চুলগুলো হাত নেড়ে দিয়ে বললেন,

— ” মাই সুইট ড্রামা কুইন। এতো ড্রামা করার দরকার নেই। এমনিতেও আমিই খাইয়ে দিতাম।”

আমি একটু হাসলাম কিন্তু কিছু বললাম না। ও আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর আমি তাকিয়ে শুধু দেখছি ওকে। যতক্ষণ খাইয়েছে ততক্ষণ শুধু দেখেই গেছি ওকে। ওর সেদিকে কোনো খেয়াল ছিলনা, ও একমনে খাইয়ে যাচ্ছিল আমায়। আমায় খাওয়ানো শেষ করে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিল। তারপর দুজনেই শুয়ে পরলাম। আজ ওকে বলতে হয়নি আমি নিজেই ওর বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পরলাম। ও বরাবরের মতই আমাকে নিজের সাথে শক্ত করে মিশিয়ে ধরে শুয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর মাথায় বেশ সময় নিয়ে একটা চুমু দিলো। এতক্ষণ হাসি মজার মধ্যে সব ভুলে গেলেও এখন আবার সবটাই মনে পরলো। আর তারসাথে মনে ভয় বাসা বাধল। ওরা যে আবার আসবে সেটাতো জানি আমি। কিন্তু আমার জন্য আদ্রিয়ান বা এই পরিবারের কেউ বিপদে পরবে না তো। ওরা যে কতোটা ভয়ঙ্কর তা আমার চেয়ে ভালো কে জানে? এসব নানা রকমের চিন্তা আর তারওপর ক্লান্ত থাকায় তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পরলাম।

__________________

সকালে বেশ দেরী করেই ঘুম থেকে উঠলাম। কিন্তু উঠে ওনাকে পাশে দেখতে পেলাম না। উঠে সারারুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম কিন্তু ওনাকে দেখতে না পেয়ে আস্তে আস্তে নেমে দাঁড়ালাম। মাথাটা খুব বেশি ব্যথা করছে। আসলে চোটটা কালকে বুঝে উঠতে না পারলেও আজ বুঝতে পারছি বেশ জোরেই ব্যথা লেগেছে। হেটে একটু এগোতে নিলেই মাথা চক্কর মারলো। তাড়াতাড়ি খাট ধরে বসে পরলাম। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি এসে আমার পাশে আমাকে ধরে বলল,

— ” ঠিক আছো? মাথা ব্যথা করছে?”

— ” নাহ জাস্ট একটু ঘুরে উঠেছিল। ঠিক আছি এখন। তুমি কোথায় ছিলে?”

— ” ব্যালকনিতে ছিলাম। ওয়াসরুমে যাবে?”

আমি মাথা নাড়লাম। ও আমায় কোলে করে ওয়াসরুমের দরজা অবধি নিয়ে গেল। তারপর আসার সময় কোলে করেই খাট অবধি নিয়ে এল। একটু পরে আপি খাবারের প্লেট নিয়ে ভেতরে আসতেই আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— ” বউমনি ওকে একটু খাইয়ে দাও আমার একটু বাইরে যেতে হবে।”

আমি একটু ক্লান্ত স্বরে বললাম,

— ” কোথায় যাচ্ছো?”

আদ্রিয়ান একটু হেসে আমার সামনে বস গালের ওপর হাত রেখে বলল,

— ” একটু কাজ আছে ল্যাবে। আজ তাড়াতাড়ি চলে আসবো আমি। তুমি রেস্ট করো।”

আমি মাথা নাড়লাম। ও চলে যাওয়ার পর আপি আমার সামনে বসে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে বলল,

— ” কতবার বলেছি বলতো যে ঠিকভাবে খাওয়াদাওয়া কর। কিন্তু তুই কথাই শুনিস না।”

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে স্হির কন্ঠে বললাম,

— ” ওরা ফিরে এসছে আপি।”

আপি আমাকে সুপ খাওয়াতে গিয়েও থেমে গেল। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

— ” মানে?”

এরপর আপিকে সবটাই খুলে বললাম আমি। সবটা শুনে আপি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,

— ” তোর কোনো ভুল হচ্ছেনা তো? হতে পারে সবটাই তোর মনের ভুল? এসব নিয়ে সবসময় ভাবছিস তাই..”

আমি চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বললাম,

— ” না আপি। আমার কপালটা ওদের ধাক্কাতেই কেটে গেছে। আর.. ওয়েট।”

বলে আমার চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ের দাগটা দেখালাম। সব দেখে আপি একটু ভেবে বলল,

— ” তোর কাছে সত্যিই নেই?”

— ” না আপি। আমার কাছে ছিল এটা ঠিক। কিন্তু এখন আমি সত্যিই জানিনা ওটা কোথায় কার কাছে আছে। আই উইশ জেনো ওটা কোনো ভুল হাতে না পরে।”

— ” তোর মনে হয়না যে সবটা আদ্রিয়ানকে জানানো দরকার?”

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে ভেবে একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বললাম,

— ” বাদ দাও এখন এসব খাইয়ে দাও তো আমাকে।”

আপিও কথা না বাড়িয়ে আমাকে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো। তারপর আপি বেডে হেলান দিয়ে বসলো আর আমি আপির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলাম। আপি আমার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলল,

— ” জানিস আদ্রিয়ান তোকে কতোটা ভালোবাসে? তোকে যখন সেন্সলেস অবস্থায় বাড়ি নিয়ে এসছিল তখন ওর চোখ মুখ দেখে পাগল পাগল লাগছিল। পাগলের মতো বিহেভ করছিল। তোর কোনোদিন কিছু হয়ে গেলে ও সত্যিই পাগল হয়ে যাবে।”

আমি কিছু না বলে শুধু একটু মুচকি হাসলাম। আমি জানি ও আমাকে কতোটা ভালোবাসে। হয়ত ওর এই ভালোবাসার জন্যে আমিও ওকে ভালোবেসে ফেলছি। কিন্তু কাল থেকে বাড়ির সবাই আমাকে বকলেও আদ্রিয়ান একবারও বকে নি। যেখানে ওর সবচেয়ে বেশি বকার কথা ছিলো। এটাকি আমি অসুস্থ বলে? আর আমার মুখ দেখার পর ওরা অবাক কেন হয়েছিল? আমাকে কে তো আগেও দেখেছে। বরং আমিই ওদের কখনও দেখিনি। যেখানে আমার চেহারা ওরা আগেই দেখেছে তাহলে নতুন করে অবাক হওয়ার কী হল? আর আমাকে ছাড়লো কেনো? ঘাড়েই বা কী ফুটিয়েছিল লোকটা? সবকিছু মিলেও মিলছে না। সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে আমায় দেখে ওদের অবাক হওয়াটা। আর ঐ দুজনের কন্ঠস্বর। সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু।

#চলবে…

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here