ভালোবাসি তোকে ❤ #লেখিকা: অনিমা কোতয়াল #পর্ব- ৪৫ .

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪৫
.
আমি ফাইল টা একহাতে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে ভাবলাম যে সামনের দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়াটা পসিবল না। কারণ সামনে ওরা সবাই সামনেই আছে, আমি পেছনের দিক দিয়ে তাবুর কাপড়টা হালকা সরিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম পেছনের দিকে শুধুমাত্র তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। যদি পালাতে হয় তাহলে এখনই পালাতে হবে। কিন্তু এই তিনজনকে টপকেই বা পালাবো কীকরে? কিন্তু পালাতে তো হবেই অন্তত এই ফাইলটা ওদের কাছ থেকে সরানোর জন্যে হলেও। চারপাশে তাকিয়ে কিছুক্ষণ খোজাখুজির পর নিচে দেখলাম মাটির চাকা আছে কিছু। আর বাকি সব মাটিই গুড়ো, বালুমাটির মতো। কিছুক্ষণ চুপচাপ ভাবার পর আমি একহাতে একটা চাকা মাটি, আরেকহাতে ঝড়ঝড়ে মাটিগুলো হাতে নিলাম। জানিনা কতোটা কী কাজে দেবে কিন্তু এটা ছাড়া আপাতত আর কোনো উপায়ও নেই। এখানে থাকলে এমনিতেই মরতে হবে একটা শেষ চেষ্টা করে দেখতে অসুবিধা কোথায়? আমি তাবুর পেছনের সেই অংশ হাত দিয়ে আস্তে আস্তে টেনে ছাড়িয়ে আমার বেড় হওয়ার উপযোগী করলাম। এরপর হাতে সেই চাকা মাটিটা একটু জোরেই এক কোণে ঝোপের ওপর ছুড়ে মারলাম। তিনজনই চমকে উঠলো। একজন বলল,

— “যাতো গিয়ে দেখ ওখানে কী হয়েছে?”

একজন ওদিকে গেলো। আমি ভাবছি দূর, মাত্র একজন গেলো? কিন্তু কী আর করার এভাবেই সামলাতে হবে। আমি ফাইলটা বগলের নিচে রেখে একহাতের মুঠোতে রাখা মাটিগুলো দুইহাতের মুঠোয় নিয়ে এগিয়ে আস্তে করে বেড়িয়ে গেলাম ওদের দুজনের চোখ আমার দিকে পরার সাথেসাথেই আমি সেই মাটি দুহাতেই ওদের দুজনের মুখ দিকে ছুড়ে মারলাম, ফাইলটা মাটিতে পরে গেলো। ওরা দুজনের চোখ মুখ কুচকে মুখে হাত দিয়ে বাকিদের চিৎকার করে ডাকলো আমি সুযোগ পেয়ে ফাইলটা তুলে দৌড় দিলাম। কোনোদিকে যাচ্ছি নিজেও জানিনা আপাতত এদের হায থেকে বাঁচতে হবে। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয় গাছের একটা শেকড়ের সাথে আটকে পরে গেলাম। ওরা পেছনে থাকায় আমার কাছে আসতে সময় লাগলো না। আমি এতোটাই ভয় পেয়ে গেছি যে উঠার শক্তিও পাচ্ছিনা। ওরা আমার কাছে চলে এলো, সাথে ঐ মুখোশ পড়া তিনজনও। আমি শক্ত হয়ে বসে আছি। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে এইমুহূর্তে আমার। মৃত্যুকে এভাবে নিজের চোখের সামনে দেখলে যে কারো মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়, আমার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে, কিন্তু তবুও ফাইলটা বুকে জড়িয়ে ধরে রেখে দিয়েছি। ওদের মধ্যে একজন বলল,

— ” বলেছিলাম না তখন মেরে দিলেই ভালো হতো? দেখলেতো কী হতো এখন যদি পালিয়ে যেতো?”

আরেকজন বলল,

— ” হ্যাঁ সেটাই দেখছি। বাচ্চা হলেও মাথায় যে এতো বুদ্ধি সেটা বুঝিনি। এরকম বুদ্ধিজীবীদের বেশিদিন বেঁচে থাকাটা ঠিক না।”

বলে আমার দিকে বন্ধুক তাক করতেই কী হলো আমার জানিনা হয়তো বাঁচার একটা শেষ ইচ্ছা মাথায় চারা দিয়ে উঠল হাতের মুঠোয় এবার আর ধুলোমাটি পেলাম না কাদামাটি পেলাম খামছে সেটা হাতের মুঠোয় নিয়ে ছুড়ে মারলাম যে বন্ধুক তাক করেছে তার দিকে। এরপর ফাইলটা সহই উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম কিন্তু বেশ কিছুটা যাওয়ার পরেই প্রচন্ড জোরে একটা গুলির আওয়াজ পেলাম, আর সাথে সাথেই আমার পিঠে ভীষন ব্যাথা আর জ্বালা অনুভব করলাম। কয়েক সেকেন্ডেই বুঝে গেলাম ঠিক কী হয়েছে আমার সাথে। হাটু ভেঙ্গে বসে পরলাম, সবটাই ঘোলা হয়ে আসছে, ঝাপসা লাগছে সবকিছু আস্তে আস্তে মাটিতেই লুটিয়ে পরলাম। নিশ্বাস সব আটকে আসতে চাইছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।

সাথে সাথেই চমকে উঠলাম আমি। হাতে চোট থাকায় ব্যাথা পেয়ে বেশ শব্দ করতে চেয়েও পারলানা গলায় ব্যাথা লাগছে। পাশ থেকে আদ্রিয়ান উঠে বসে বলল,

— ” কী হয়েছে অনি। কষ্ট হচ্ছে কোথাও? ব্যাথা করছে।”

আমি বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম, কথা বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না কারণ গলা এখনও ঠিক হয়নি।আপির কোলে কখন ঘুমিয়ে পরেছি নিজেই বুঝতে পারিনি। আর ঘুমের মধ্যেও এসব। ঘামে পুরো শরীর ভিজে গেছে আমার। গলা শুকিয়ে গেছে। আমি আদ্রিয়ানকে আঙ্গুলের ইশারায় পানি দিতে বললাম। আদ্রিয়ান দ্রুত জগ থেকে পানি নিয়ে আমার কাছে নিয়ে আমার ঘাড়ের পেছনে হাত রেখে মুখ বরাবর ধরল। আমি পানিটা ডগডগ করে গিলে খেয়ে ফেললাম। আদ্রিয়ান হাত বাড়িয়ে টাওয়েলটা নিয়ে আমার শরীরের ঘামগুলো ভালোভাবে মুছে দিয়ে আমায় খাটে হেলান দিয়ে শুইয়ে দিয়ে আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল,

— ” কী হয়েছিল?”

অামি শুকনো একটা ঢোক গিলে নিজেকে সামলে নিয়ে মাথা নেড়ে বললাম কিছুনা। আদ্রিয়ান এবার আমার পাশে শুয়ে আলতো হাতে আমায় নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,

— ” খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?”

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। ও আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল,

— ” মাথা ব্যাথা করছে কফি খাবে?”

আমি এবারেও মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। আদ্রিয়ান আমাকে আবার বালিশে হেলান দিয়ে শুইয়ে দিয়ে বলল,

— ” তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি।”

বলে কফি আনতে চলে গেলো। আমি ওর যাওয়ায় দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম এখন সন্ধ্যা। আজ আবার অনেকদিন সেই দিনটা এতো স্পষ্টভাবে আমার স্বপ্নে এলো। সেদিন গুলি লেগে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর জ্ঞান ফিরে নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করেছিলাম নিজেকে। তখন ফাইলটা আমার হাতে ছিলোনা। আমাকে নাকি পুলিশ ফোর্সেরই এক টিম হসপিটালে দিয়ে গেছে। আমি নাকি গুলি লাগা অবস্থায় ঐখানে পরে ছিলাম। টি?টিচাররা, বাবা-মা সবাই খুব বকেছিল আমায় ওখানে একা যাওয়ার জন্যে। কিন্তু আমিতো ধরেই নিয়েছিলাম যে ফাইলটা ওই টেরোরিস্টদের হাতেই আছে খুব কান্না পাচ্ছিল অাফসোসও হচ্ছিলো যেটার জন্যে এতোটা কষ্ট করলাম সেটাই হলো? কিন্তু সেদিন মেডিকেলে যখন আমাকে ঐ ফাঁকা রুমে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল যে ফাইলটা কোথায়? সেদিনই শিউর হয়ে গেছিলাম যে ফাইলটা ওদের কাছে নেই। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে ফাইলটা আছে কাদের বা কার কাছে। পুলিশের হাতে পরলে অবশ্যই টিভি বা নিউসপেপারে দেখাতো। তাহলে আছেটা কার কাছে? আর যার কাছেই আছে তার উদ্দেশ্যটা কী? হঠাৎ আমার মুখের সামনে তুরি বাজাতেই আমি চমকে উঠলাম। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,

— ” এইটুকু একটা মাথা নিয়ে কী এতো ভাবতে থাকো বলবে? ও সরি এখনতো আমাদের মিস বকবকানির সব বকবক ট্যামোরারি লক হয়ে গেছে। তাইনা?”

আমি এবার একটু রেগে তাকালাম ওর দিকে। ও হেসে দিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা সরি। এবার কফিটা খেয়ে নাও ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

আমি ওর দিকে একটা বিরক্তিমাখা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভেংচি কেটে কফির মগটি হাতে নিয়ে মুখ ফুলিয়ে কফি খেয়ে যাচ্ছি। ওও আমার পাশে বসে চুপচাপ কফি খাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর আমার দিকে আড়চোখে দেখছে আর ততবারই আমি সুক্ষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছি। হঠাৎ ও বলল,

— ” তুমি জানো প্রথমে খারাপ লাগলেও এখন এই মুমেন্টটা বেশ এনজয় করছি। মানে আগে সারাদিন তুমি বলতে আমি শুধু শুনতাম। কিন্তু এখন আমি বলছি আর তোমাকে সব শুনতে হচ্ছে। রিপ্লে করার অপশনই নেই। এমন সুযোগ কজন হাজবেন্ডের কপালে জোটে বলোতো? যে যা বলবে চুপ করে শুনবে কোনো রিপ্লে করবে না।

আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম ওর দিকে। ও কফিতে একটা চুমক দিয়ে বলল,

— ” কারণ বউ নামক বস্তুটিকে চুপ করানো খুবই কঠিন কাজ। তাইনা?”

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে একরাশ বিরক্তি নিয়ে কফি খাচ্ছি। ব্যাটা বজ্জাত, এখন আমি কথা বলতে পারছিনা বলে তুমি আমাকে এরকমভাবে লেগপুল করছো তো? আপনা টাইম ভী আয়েগা। সেদিন বুঝবে। হুহ। আমি কফি শেষ করে বই নিয়ে পড়তে বসে গেলাম। আর ওও কোনো কথা না বাড়িয়ে ল্যাপটপ নিয়ে কাজে বসে গেল।

___________________

আজ সারাদিনই আদ্রিয়ানকে ভীষণভাবে জ্বালিয়েছি। কালকে আমার লেগপুল করেছিল না তাই আজও বদলা নিলাম। আসলে জ্বালানোর পদ্ধতিটাও ছিলো কিছুটা এরকম, আমি ওকে ইশারা করে কিছু একটা বলছি আর ওও সেটা বুঝে নিয়ে করছেও কিন্তু ঠিক তারপরেই আমি বলি যে আমি এটা করতে বলিনি ও ভুল বুঝেছে। সকালে পড়ার জন্যে বই চেয়েছিলাম ওর কাছে ইশারায় যেই বইটার কথা বলেছি ও কিন্তু আমাকে সেই বইটাই বেড় করে দিয়েছে কিন্তু দেওয়ার পর আমি বলেছি যে আমি এক্চুয়ালি অন্য বইটা চাইছিলাম। ও আমাকে কিছু না বললেও ওর চোখে মুখে একপর্যায়ে বিরক্তি দেখেছি আমি আর মনে মনে একদফা হেসেও নিয়েছি এসব দেখে। এখনও ওর ল্যাব থেকে আসার জন্যেই অপেক্ষা করছি আমি। ও এলে ওকে আরেকদফা বিরক্ত করা যাবে। এসব ভিবতে ভাবতেই মহান মহোদ্বয়ের আগমন ঘটল। ও আসার পর আমি চুপচাপ বইয়ের দিকে দৃষ্টি দিলাম। আদ্রিয়ান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের টাই শার্ট খুলছে আর আমি আড়চোখে ওকে দেখছি। ও একেবারে ফ্রেশ হয়ে এসে আমার পাশে বসে বলল,

— ” পড়া কম্প্লিট হয়নি? খাবে এখন?”

আমি ইশারা করে ওকে বোঝালাম যে অনেক লেট হবে বেশ খানিকটা বাকি আছে, পড়া শেষ হলেই খাবো। ও বলল,

— ” ওহ আমি তাহলে মনিকে বলে দেই ঘুমিয়ে পরতে আমিই গিয়ে নিয়ে আসবো পরে।”

বলে ফোন বেড় করে কল করে মনিকে বলে দিল ঘুমিয়ে পরতে। ঠিক তার দশ মিনিট পরেই আমি ওকে ইশারায় বললাম, আমার পড়া শেষ এখন খাবো। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,

— ” একটু আগে না বললে দেরী হবে পরে খাবে? ”

আমি অবাক হওয়ার ভান করে আবারও ইশারাও বোঝালাম আমি এমন কিছুই বলিনি। ও আর কথা না বাড়িয়ে বিরক্তি নিয়ে চলে গেল খাবার আনতে। আমার তো জোরে জোরে হাসতে ইচ্ছে করছে। খাওয়ার সময়ও বেশ অনেক্ষণ পর্যন্ত জ্বালিয়েছি ওকে। শুয়ে পরার পর শুতে যাবে তখনই আমি ওকে ইশারায় কিছু বললাম। কী বলেছি আমিও জানিনা জাস্ট ওকে কনফিউসড করে জ্বালানোর জন্যে বললাম। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও বুঝলোনা আমি কী বলতে চাইছি। বুঝবেটা কীকরে? আমি নিজেই তো বুঝতে পারছিনা আমি কী বলছি। ও এবার চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আমার দিকে। এরপর বেডে ওঠে আমার দুপাশ দিয়ে বেডের ওপর দুহাত রেখে খুব কাছে চলে এলো। আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। ও ভ্রু নাচিয়ে বলল,

— ” হোয়াট? এখন এভাবে দেখছো কেনো হুমম? তুমিই তো ইশারায় বললে অনেকদিন হলো তোমাকে আদর করিনা আজ একটু আদর করতে। তো বউয়ের রিকোয়েস্ট তো ফেলতে পারিনা তাইনা?”

আমি অাহম্মক হয়ে গেলাম। আমিতো নিজেই জানিনা আমি কী বলেছি। এ এত বেশি বুঝে গেল কীকরে। হাত পায়ে ব্যাথা আছে তাই নড়তেও পারছিনা। আমি মাথা নেড়ে বোঝালাম যে আমি এমন কিছু বোঝাইনি। ও আমার নাকে নাক ঘষে দিয়ে বলল,

— ” এখন আর এসব বললে হবেনা জানপাখি। সারাদিন অনেক জালিয়েছো আমাকে এবার আমার পালা।”

আমি আসলেই ডাফার। বারবার ভুলে যাই এটা আদ্রিয়ান? একে জ্বালাতে গেলে উল্টৌ শেষে নিজেকেই জ্বলতে হয়। ও যে বরাবরই সবার এক কাঠি ওপরে থাকে এটাতো কমন সেন্স।সেটাও নেই আমার? ড্যাম!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here