ভালোবাসি তোকে ❤ #লেখিকা: অনিমা কোতয়াল #পর্ব- ৪৭

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪৭
.
কিছু কিছু ছোট ঘটনাও মনে বেশ গভীর দাগ কেটে ফেলে। আর আঘাত করার জন্যে সবচেয়ে ভয়ংকর আর ধারালো অস্ত্র হলো জিহ্বা। আর নিজের কাছের মানুষের একটু কড়া কথা সহজে ভোলা যায় না। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে, সেই ঘা না দেখা যায় আর না কাউকে দেখানো যায়। শুধুমাত্র অনুভব করা যায়। আদ্রিয়ানের বলা ওই সামান্য কড়া কথা আমায় ভেতরটা শেষ করে দিচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। সন্ধ্যাবেলা ওসব কথা বলে আদ্রিয়ান বেড়িয়েছে এখন অনেকটা রাত হয়ে গেছে এখনও আসেনি। আমিও নিচে নামিনি। মাঝখানে আপি এসছিল আমায় খেতে ডাকতে কিন্তু আমি ‘খিদে নেই’ বলে আপিকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। যত সময় পার হচ্ছে ওর প্রতি আমার অভিমানে পাহাড় ততোই উঁচু হচ্ছে। সামান্য একটা ল্যাপটপের জন্যে এরকমভাবে কীকরে বলল আমায়? আমার সাথে এরকম ব্যবহার করার পরেও এতো দেরী করে বাড়িতে আসছে কীকরে ও? ওর একবারও মনে হচ্ছে না যে আমি কষ্ট পাচ্ছি? ওর ওরকম আচরণের পর এইমূহুর্তে আমার মনের অবস্থাটা কী? একবার এসে সরি বলার প্রয়োজন ও মনে করছেনা উল্টে বাইরে বসে আছে। লাইট বন্ধ করে, বিছানার একপাশে চাদর জড়িয়ে ডান পাশ ফিরে শুয়ে আছি। একটু পর পর অবাধ্য চোখের জল কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরছে। যতই চেষ্টা করছি যে কাঁদবোনা, কান্না ততই বেশি করে আসছে। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে বুঝতে পারলাম আদ্রিয়ান এসছে। আমি তাড়াতাড়ি চোখ মুছে ঠিকঠাকভাবে শুয়ে রইলাম। দরজা লাগানোর আওয়াজও এলো। উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে থাকায় ওকে দেখতে পাচ্ছিনা কিন্ত টুকটাক আওয়াজ পাচ্ছি, ও রুমের লাইট অন করল। আমিও একেবারে চুপচাপ শুয়ে আছি ওর প্রতি জমা অভিমানটা আরও বেশি করে মনে চারা দিয়ে উঠছে। এখন আরও বেশি করে কান্না পাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে কান্না আটকে গুটিয়ে শুয়ে আছি। বেডে ওর ওঠছে সেটা বুঝতে পেরে আমি আরও শক্ত হয়ে আছি। হঠাৎ ওর আলতো ঠান্ডা স্পর্শে কেঁপে উঠলাম আমি। ও আলতো করে আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার কাধে নিজের মুখ গুজে দিল। আমি চোখ বন্ধ করে রইলাম, কিন্তু ওর ওপর অভিমান থাকায় টু শব্দও করলাম না আর একটু নড়লামও না। আদ্রিয়ান আমার ঘাড়ে মুখ গুজে রেখেই বলল,

— ” সরি। বিশ্বাস করো আমি এরকম কিছু করতে চাইনি। তখন এমনিতেই মুড অফ ছিলো আর.. যাই হোক প্লিজ মাফ করে দাও, আর কখনও এমন হবেনা।”

আমি কিছুই বললাম না। যত যাই হোক শুধু ল্যাপটপে হাত দিয়েছি বলে এমন আচরণ কেনো করবে? এতো রুডভাবে কীকরে কথা বলতে পারে ও আমার সাথে? আমি কিছু না বললেও এতক্ষণ চেপে রাখা কান্নাটা এবার বেড়িয়ে এলো। ফুপিয়ে কান্না করে দিলাম আমি। ও আমার কাধ ধরে আমায় নিজের দিকে ঘুরিয়ে আমার চোখ মুছতে মুছতে বলল,

— ” প্লিজ কেঁদোনা। সরি বলছিতো।”

আমি এবার ওকে ছাড়িয়ে উঠে বসে অভিমানী কন্ঠে বললাম,

— ” হোয়াই আর ইউ সরি? আপনার কোনো দোষ নেই। আই এম সরি। আপনি যা করেছেন একদম ঠিকই করেছেন। আমিই নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলেছিলাম। আমিই নিজের জায়গা ভুলে আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে গিয়েছিলাম।”

আদ্রিয়ান করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আমার দুই বাহুর ওপর হাত দিয়ে বলল,

— ” প্লিজ এভাবে বলোনা। আমার সবকিছুই তো তোমার।”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

— ” আচ্ছা? তাহলে বলুন। কী ছিলো ঐ মেসেজে? কে করেছিল মেসেজ?”

আদ্রিয়ান এবার ঠান্ডা গলায় বলল,

— ” অনি ওটা আমার কাজের ব্যাপার। ওটা জেনে তুমি কী করবে?”

— ” আপনিই তো বললেন না যে আপনার সবকিছুই আমার? আমি জানতে চাই এই ব্যাপারে।”

— ” আমি এখন এই বিষয়ে তোমাকে কিছু বলতে পারবোনা।”

আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ভাঙা গলায় বললাম,

— ” হ্যাঁ সেই। আমার যা বোঝার আমি বুঝে গেছি।”

— ” আমি..”

— ”দেখুন আমার এমনিতেই এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। এখন এসব শুনতে ভালো লাগছে না।আমি ঘুমাচ্ছি।”

বলে আমি আবার নিজের জায়গায় শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষণ পর্যন্ত আদ্রিয়ানের কোনো আওয়াজ পেলাম না। হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান বলল,

— ” আমি আমাদের দুজনেরই খাবার এনেছি। তুমি না খেয়ে ঘুমালে আমাকেও না খেয়ে শুতে হবে। আর তুমি জানো আমার না খেয়ে থাকলে অসুবিধা হয়। প্লিজ উঠে খেয়ে নাও।”

আমি শান্ত সুরেই বললাম,

— “আমার খিদে নেই। আপনি খেয়ে নিন। প্লিজ আমাকে ডিসটার্ব করবেননা।”

আদ্রিয়ানও কিছু না বলে চুপচাপ আমার পাশে শুয়ে পরল। আমি তখন কিছু না বললেও কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম যে ও সত্যিই না খেয়ে শুয়ে পরছে। অসুস্থ হয়ে পরবে তো। আমি তাড়াতাড়ি উঠে বসে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

— ” এখন না খেয়ে পরে কেউ অসুস্থ হয়ে পরলে সবাই আমায় বকবে। আর কারো বকা আমি শুনতে পারবনা।”

ও ঝট করে উঠে বসে বাচ্চাদের মত করে বলল,

— ” তাহলে খাইয়ে দাও।”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

— ” বাচ্চা নাকি আপনি? নিজে খেয়ে নিন।”

আদ্রিয়ান এবারের বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বলল,

— ” ঠিকাছে আমি শুয়ে পরছি।”

বলে আবার শুয়ে পরল। আমি আহম্মক হয়ে গেলাম। এ কেমন বাচ্চামো? দূর! বিরক্তি নিয়ে বললাম,

— ” আচ্ছা উঠুন খাইয়ে দিচ্ছি।”

ও আবার উঠে বসে ওর সেই ভুবন ভোলানো হাসি দিলো। আমি কিছু না বলে ট্রের দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটাই প্লেট রাখা। ও তারমানে, একপ্লেটেই দুজনেই খাবার এনছে। মানে সবকিছুই প্লান করেই করেছে। তবে যাই করুক আমিও এত সহজে গলবোনা। আমি মুখ গোমড়া করেই ওকে খাইয়ে দিলাম কিন্তু কিছু বললাম না। ও আমাকে দিয়ে যা করাতে চায় তা করিয়েই ছাড়বে। বল দিয়ে হোক বা ছল দিয়ে। তাই ওর সাথে কথাই বলবনা সেটাই বেটার। এসব ভাবতে ভাবতেই হুট করে ও আমা কামড় দিলো। আমি তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে ভ্রু কুচকে হাত ঝেড়ে নিয়ে বললাম,

— ” সমস্যা কী কামড়াচ্ছো কেন?”

ও মুচকি হেসে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল,

— ” এটুকু সহ্য করতে পারছোনা। এদিকে দাদীকে তো কথা দিয়ে এলাম যে ক্রিকেট টিম বানিয়ে তবে দম দেব। আর সেই প্রসেসিং এর জন্য তো এরকম অনেক কা..”

আমি সাথে সাথেই ওর মুখে খাবারের লোকমাটা ঢুকিয়ে দিলাম। ও মুখে খাবারটা নিয়ে কয়েক সেকেন্ড থম মেরে বসে রইল তারপর আবারও হেসে খাবার চিবুতে শুরু করল। নির্লজ্জ লোক একটা। মুখে কিছুই আটকায় না। এর লজ্জা নেই ঠিক আমারতো আছে। এভাবে বলে কেউ? ওকে কোনরকমে খাইয়ে দিয়ে সাথে সাথে নিজেও খেয়ে আমার সেই এক্স সতীনকে মানে কোলবালিশটাকে মাঝে রেখে উল্টোদিকে ঘুরে শুয়ে পরলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর ও আবার আমাকে পেছন জড়িয়ে ধরল। বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করেও ছাড়াতে না পেরে থেমে গেলাম। ও আমার কাধের পাশে ডিপলি একটা কিস করে বলল,

— ” আমার থেকে ছাড়া পাওয়া এতো সহজ নয় জানপাখি। বলেছিলাম না হৃদয়ের পিঞ্জিরায় বন্দি করে রেখে দেবো? বন্দি তুমি ওলরেডি হয়েই গেছে। এখান থেকে মুক্তি পাওয়া তোমার সাধ্যে নেই।”

এভাবে বললে রেগে থাকা যায়? কিন্তু না এতো সহজে ক্ষমা করবোনা আমি ওকে? কী মনে করে আমায়? যা খুশি করবে তারপর মিষ্টি করে দুটো কথা বললেই আমি গলে যাবো? নো নেভার।

__________________

পরেরদিন গোটা দিনটাই আমি ওর সাথে কথা বলিনি। ও যতক্ষণ বাড়িতে ছিলো কথা বলার চেষ্টা করেছে আমার সাথে কিন্তু আমিই বলিনি। ক্লাস শেষ হওয়ার পর যখন বেড়োতে যাবো তখন আমাদের ক্লাসের একজন ছেলে নাম ‘সন্দিপ’ পেলভিস এর একটা বিষয় নিয়ে আমার সাথে ডিসকাস করতে এলো। তো আমি বই হাতে নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে বলতেই গেইট পর্যন্ত কখন চলে এসছি খেয়াল করিনি। কিছু অদ্ভুত টপিক দেখে মাঝেমাঝে হাসছিও।সামনে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান গাড়ির সাথে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখ মুখে শক্তভাবটাও দেখতে পাচ্ছি। আমি থতমত খেয়ে সন্দিপকে বিদায় দিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসলাম। ওও উঠে আমার সিটবেল্ট বেধে দিল। তারপর কোনো কথা না বলেই সোজা গাড়ি স্টার্ট করল। আমায় সোজা আমাদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে ও সোজা স্টার্ট করে চলে গেল। হয়তো ওর সেই ল্যাবে গেছে। যাকগে আমার কী তাতে? হুহ।

রাতে আমি জাবিনের রুমে এসে শুয়ে আছি কারণ ওর সাথে কথা বলবোনা আর ওর ঐ রুমে থাকলে আমাকে কালকের মতই জ্বালাবে। জাবিন মুখ গোমড়া করে ভয়ে ভয়ে শুয়ে আছে যে আদ্রিয়ান কী করে। আমিও ভয়ে আছি কিন্তু ওকে বুঝতে দিচ্ছি না। জাবিন চিন্তিত মুখ করে বলল,

— ” ভাবি বলছিলাম কী তুমি রুমেই চলে যাও প্লিজ। ভাইয়া রেগে গেলে তোমার সাথে আমারও বারোটা বাজাবে।”

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,

— ” আরে তোমার ভাইকে এতো ভয় পাওয়ার কী আছে বাঘ নাকি ভাল্লুক ও?”

— ” তার চেয়ে কম কিছু নয়।”

— ” হুহ। তোমার কাছে হতে পারে। ওমন বাঘ ভাল্লুক আমার দেখা আছে আমি ভয়…”

কথাটা শেষ করার আগেই দরজায় কেউ নক করল। জাবিন হতাশ কন্ঠে বলল,

— ” এসে গেছে যম।”

আমি তুতলিয়ে বললাম,

— ” আমি ওয়াসরুমে গিয়ে দরজা লক করে ফেলি হ্যাঁ?”

জাবিন মেকি হেসে বলল,

— ” হ্যাঁ হ্যাঁ এতক্ষণ তো খুব বলছিলে এখন সব হাওয়া ফুস। আমার ওয়াসরুমের দরজা ভাঙার প্লান করছো নাকি?”

আমি মুখ ফুলিয়ে শুয়ে রইলাম। দরজায় সমানে নক পরছে তাই তাই জাবিন উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল। আমি চোখ বন্ধ করে আছি যাতে ভাবে আমি ঘুমিয়ে পরেছি। কিন্তু ও আর কী এসব দেখে? সোজা এসে আমায় কোলে তুলে নিলো। আমি চমকে চোখ খুলে তাকালাম জাবিনও হা করে তাকিয়ে আছে। ও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমায় কোলে নিয়ে সোজা হেটে রুমে নিয়ে এসে বেডে শুইয়ে দিয়ে গিয়ে দরজা লক করে এলো। আমি উঠে বসেছিলাম কিন্তু ও আবার আমায় ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে আমার দুই হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে বলল,

— ” ডোন্ট ইউ থিংক একটু বেশি হচ্ছে এবার। একটা ভুল.. ওকে ফাইন অন্যায় করে একশবার সরি বলেছি। ইসন্ট ইট এনাফ?”

আমি কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে রাখলাম। ও একটা শ্বাস নিয়ে আবার বলল,

— ” আর হ্যাঁ ঐ ছেলেটার সাথে এতো ঘেষে ঘেষে হেসে হেসে ডিসকাস করার কী ছিলো হ্যাঁ? ডিসটেন্স মেইনটেন করা যেতোনা।”

আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

— ” এটা আমার পার্সোনাল ব্যাপার। আপনি বলেছিলেন না যে সবার একটা পার্সোনাল স্পেস থাকে? আমারও আছে।”

— ” দুটো ব্যাপার এক নয় অনি।”

— ” সেটাও আপনি ঠিক করবেন?”

ও এবার ধমক দিয়ে বলল,

— ” একটা থাপ্পড় মারব যদি আর একবার মুখ দিয়ে আপনি বেড় হয়।”

ওর ধমকে একটু কেঁপে উঠলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,

— ” আচ্ছা বলবোনা আর সব ভুলেও যাবো।আগে বলুন ওই মেসেজে কী ছিল?”

ও কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমায় ছেড়ে উঠে বসে বলল,

— ” তুমি বারবার ঐ একটা বিষয়ই কেন ঘাটছো বলোতো?”

আমি উঠে বসে বললাম,

— ” আমি জানতে চাই।”

ও এবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা বলব। কিন্তু একটাই শর্তে পাল্টা আর কোনো প্রশ্ন করবেনা আর স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

আমিও ওর চোখের দিকে তাকিয়েই বললাম,

— ” প্রমিস।”

— ” তোমার সুরক্ষা। তোমার সুরক্ষা ছিলো ঐ ফাইলে।”

আমি অবাক হয়ে বললাম,

— ” মানে?”

— ” পাল্টা প্রশ্ন নয়।”

— ” কিন্তু.. ”

— ” ইউ প্রমিসড।”

আমি ছোট্ট শ্বাস নিয়ে তাকালাম ওর দিকে। প্রমিস যখন করেছি রাখতেতো হবেই। যাই হোক মনের দ্বিধার কিছুটা তো কাটলো। আদ্রিয়ান আমার মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল,

— ” ট্রাস্ট মি। সব বলব। কিন্তু সবকিছুরই একটা সঠিক সময় থাকে। তুমিতো সাহিত্য প্রেমি। এটাতো জানো যে সব গল্পেরই কী হলো? কেনো হলো? কীকরে হলো? এর উত্তরগুলো থাকে শেষের পাতাগুলোতে। শেষের পাতা এখনও আসেনি অনি। ধৈর্য ধরো। সবটা জানতে পারবে। শেষের পাতা শুরুতে পরলে যেমন গল্পের মজা থাকেনা তেমনই সবটা জেনে গেলে সেটা তোমার জন্যেও ভালো হবেনা।”

বলে আমাকে বুকে নিয়ে শুয়ে পরলো। আমিও কিছু বললাম না শুধু মুচকি হেসে ওকে টাইট করে জড়িয়ে ধরলাম। কারণ এই মানুষটাকে একটু বেশিই ভরসা করি আমি। আর ওর প্রতিটা শব্দই আমার কাছে চিরন্তন সত্য।

দেখতে দেখতে এক মাস কেটে গেল। পরীক্ষার সব ঝামেলা ভালোভাবেই শেষ হয়ে গেল। কিন্তু এরমাঝে রৃপ নামক প্যারা দুবার হাজির হয়েছিল আমার সামনে। কিন্তু আমি ইগনোর করে গেছি কারণ আদ্রিয়ান পছন্দ করে না। যদিও এখন ভাবী বলে ডাকে কিন্তু ওর মনে ভালো খারাপ যাই হোক, যেহেতু আদ্রিয়ান পছন্দ করেনা তাই আমিও পাত্তা দেই না। যাই হোক তো প্লান অনুযায়ী এখন হানিমুনে যাবার পালা। আগে থেকেই ঠিক করা ছিল সুইজারল্যান্ড যাবো আর উঠবো জেনেভাতে।সে অনুযায়ী সব ফিক্সড করে রেখেছে। এতদূর যাওয়ার ইচ্ছা ছিলোনা আমার কিন্তু আদ্রিয়ান আর ইফাজ ভাইয়াও ওখানে যেতেই ইন্টারেস্টেড। তাই আমরাও আর বারণ করিনি। কালকেই আমদের ফ্লাইট আছে। রাতে আমি ব্যাগ প্যাকিং করছি আর আদ্রিয়ান বেডে বসে ফোন দেখছে। আদ্রিয়ান একটু গলা ঝেড়ে বলল,

— ” আমরা হানিমুনে না গেলেও পারতাম বলো? ভাইয়া আর বউমনি গিয়ে প্রেম করবে, রোমান্টিক মুমেন্ট স্পেন্ড করবে। আর আমরা শুধু দার্শনিকদের মতো ভ্রমণ করে যাবো তাইনা? সবি আমার কপাল!”

বলে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফোনে মগ্ন হয়ে গেল। আমি ভালোই বুঝতে পারছি যে ও কী বোঝাতে চাইছে তাই আর কিছু না বলে মুচকি হাসতে হাসতে প্যাকিং মনোযোগ দিলাম। দার্শনিক হবো নাকি প্রেমিক যুগোল সেটাতো গিয়েই বুঝতে পারবে মাই ডিয়ারেস্ট হাজবেন্ড।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ। কিন্তু প্লিজ আল্লাহ এবারের প্লানটা যাতে ফ্লপ না হয়,শুধু এটুকুই দেখ, প্লিজ।

__________________

জেনেভা গিয়ে বিকেলে। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। বাবা “Hotel Kipling- Manotel Geneva” বুক করেছে আমাদের জন্য। সেখানে গিয়ে উঠতে উঠতে প্রায় সন্ধ্যাই হয়ে গেলো। আমাদের আর আপিদের রুমটা পাশাপাশিই। হোটেলে গিয়ে চাবি কালেক্ট বলার পর ইফাজ ভাইয়া বলল,

— ” এখন হালকা স্নাকস জাতীয় কিছু খেয়ে একেবারে ওপরে যাই। রেস্ট করে একেবারে ডিনার রুমে ওর্ডার করে নেবো?”

আদ্রিয়ান বলল,

— ” সেটাই বেটার হবে এমনিতেই টায়ার্ড সবাই আর বেড়োনোর সময় বা পরিস্হিতি কিছুই নেই।”

তো সবাই মিলে হালকা পাতলা কিছু খেয়ে একেবারে রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে আমি চেঞ্জ না করেই শুয়ে পরলাম। এতোটাই টায়ার্ড লাগছে। আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” অনি ফ্রেশ হয়ে তারপর শোও।”

আমি চোখ বন্ধ করে ভাঙা কন্ঠেই বললাম,

— ” পরে।”

— ” এসেছো এখন ফ্রেশ হবে পরে?”

— ” হুমম।”

ও হুট করেই আমায় কোলে তুলে নিলো। আমি অবাক হয়ে তাকালাম ও আমায় সোজা ওয়াসরুমে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল,

— ” একেবারে ফ্রেশ হয়ে তারপর এসো।”

আমি মুখ ফুলিয়ে তাকালাম ওর দিকে। ও সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেল ওয়াসরুম থেকে। ওও এরপর ফ্রেশ হয়ে এলো। এরপর দুজনেই একটা ছোট্ট ঘুম দিলাম। আদ্রিয়ানের ডাকে দশটার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখি খাবার চলে এসছে। ফোন করে আপি আর ইফাজ ভাইয়ার খবর নেওয়ার পর খেয়ে নিলাম দুজনে একসাথে।

একটু আগে ঘুমায়েছি তাই এখন তেমন ঘুম আসবেনা। তাই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জেনেভার নজরকারা মনোমুগ্ধকর রাতের দৃশ্য। হোটেল রুমের ব্যালকনি থেকে খুব চমৎকার লাগছে দেখতে। পেছন থেকে আদ্রিয়ান আমায় জরিয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রেখে বলল,

— ” ভালো লাগছে?”

— ” ভীষণ।”

— ” কালকে শহরটা ঘুরে দেখলে আরও ভালো লাগবে।”

— ” হুম।”

ও আমাকে ছেড়ে টুলে রেখে দেওয়া গরম কফির মগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। আমি বললাম,

— ” এটা কখন আনালে?”

ও মুচকি হেসে বলল,

— ” এখনি। ঘুমতো এখন আসবেনা তাই কফি খেতে খেতে গল্প করি। এর চেয়ে বেশি কিছু তো আমার কপালে নেই।”

আমি কিছু না বলে ঠোঁট চেপে হাসলাম শুধু। কারণ ও কী মিন করছে সেটাতো বুঝতেই পারছি। আপাতত ব্যাপারটা চেপে গিয়ে কফির মগে চুমুক দিয়ে রাতের এই সৌন্দর্য দেখছি আর কালকের প্লানিং করছি।

#চলবে…

( কেমন আছেন সবাই? আমি খুবই প্যারায় আছি। একদিন পর পর দেয়া নিয়ে অনেকেরই অভিযোগ আছে আমি জানি। বাট আগেই বলেছি যে আমার একদিন পরপর কোচিং এ পরীক্ষা থাকে। আগের রাতটা প্রিপারেশের জন্য রাখি আমি। আর ঠিকভাবে গুছিয়ে লিখতে একটু সময় আর ভাবতে হয়। নাহলে আপনারাও পরে শান্তি পাবেননা আর না আমি দিয়ে শান্তি পাবো। কটা দিন চলুকনা এভাবে একটা দিনেরই তো গ্যাপ। একটু এডজাস্ট করুন প্লিজ।

আরেকটা কথা রহস্যের সমাধান কেন হচ্ছেনা? শুনলে হয়তো হাসবেন বা অবাক হবেন। সমাধান অলরেডি দেয়া হয়ে গেছে, আই রিপিড সমাধান দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু সেটা এখনও বূঝতে পারছেননা। প্রতি পর্বেই কিছু না কিছু সিন এবং ডায়লগের মাধ্যমে সবটাই বলে দেওয়া হয়েছে তবে ইনডিরেক্টলি হিন্টস আকারে। 😑 তাই গল্পের কোন সিঙ্গেল সিন বা পার্টকে অপ্রয়োজনীয় বা গুরুত্বহীন ভাববেন না একটা সিঙ্গেল মুমেন্টকেও না কিন্তু। কারণ কয়েকটা পার্ট পরেই রহস্যভেদ পর্ব আসছে। আর পার্টটায় কোন পর্ব বা সিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠৈ আসবে বলা কঠিন। তখন কিন্তু ঐ পার্ট পড়তে হয়তো আবার রিভাইস দেওয়া লাগতে পারে। পরে আমায় যাতে আমায় না বকেন তাই আগেই বললাম একটা ছোট্ট ডায়লগও ইগনোর করবেন না। এনিওয়ে হ্যাপি রিডিং 😄 ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here