#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫৪
.
মেসেজের আওয়াজে আদ্রিয়ানও আমার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে থেকেই মেসেজটা অপেন করলাম। মেসেজটা ওপেন করতেই দেখলাম রূপ লিখেছে, ‘আমরাও চিটাগাং পৌছে গেছি। তুমি ভয় পেয়োনা, আপাতত শান্ত থাকো আর আদ্রিয়ানের সাথে নরমাল বিহেভ করো। ও যাতে বুঝতে না পারে আমরা কোন প্লান করছি। তাহলে কিন্তু ও ভয়ংকর হয়ে উঠবে।” কী করতে হবে সেটা আমি তোমায় পরে বলে দেব। আমি রিপ্লেতে শুধু “ওকে” লিখে সেন্ট করে দিয়ে ফোনটা রেখে দিয়ে বেডে বসে পরলাম। আদ্রিয়ান এসে আমার পাশে বসে বলল,
— ” এত কী ভাবছো?”
আমি একবার ওর দিকে তাকালাম কিন্তু কিছু বললাম না, উঠে দাঁড়িয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলাম। বিগত তিনদিন ধরে যা যা হয়েছে সব মনে পরতেই নিঃশব্দে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল। ইশরাক ভাইয়া, নূর আপু, নীড় তিনজনের কথাই খুব বেশি করে মনে পরছে। আমার একটা ভুলের জন্যে কতবড় ক্ষতি হয়ে গেছে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। আর আদ্রিয়ানই বা এরকমটা কীকরে করতে পারল? একবারও আমার কথা ভাবলোনা? একবারও না? আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
— ” তুমি আবার কাঁদছো? অনি আমি বারণ করেছি তোমাকে।”
আমি হাত ভাজ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললাম,
— ” তোমার সব কথাই আমি শুনবো সেটা তোমার কেন মনে হচ্ছে?”
আদ্রিয়ান রেলিং ধরে সামনে তাকিয়ে স্হির কন্ঠে বলল,
— ” এতদিন তো তাই করতে।”
— ” পরিস্থিতি বদলায় আদ্রিয়ান।”
আদ্রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
— ” সবটাই তোমার জন্যে ছিল।”
— ” পরিণামটা ভয়ংকর ছিল।”
— ” আমি ভাবতে পারিনি এরকমটা হবে।”
— ” হয়েছে তো?”
— ” কষ্ট আমিও পেয়েছি, জানপাখি।”
— ” তাতে আপনার দায়টা কমে যাচ্ছে?”
— ” না, তা যাচ্ছেনা।”
আমি ছোট্ট শ্বাস ফেলে রুমে চলে এলাম। কিছু না বলেই শুয়ে পরল। ওও রুমে এসে লাইট অফ করে আমার পাশে এসে আমায় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। আমি কিছু বললাম না। আস্তে আস্তে অভাবেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলাম।
__________________
সকালবেলা শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখি আদ্রিয়ান আর অভ্র দুজন টেবিলে বসে কিছু নিয়ে আলাপ করছে আর একজন মহিলা খাবার সার্ভ করছেন ওনাদের। আমি গিয়ে আদ্রিয়ানের পাশের চেয়ারটা টেনে বসতেই অভ্র ওর সেই সুন্দর হাসিটা দিয়ে বলল,
— ” গুড মর্নিং ম্যাম।”
আমিও একটা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললাম,
— ” মর্নিং।”
এরপর কেউ কিছু না বলেই খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম। খেতে খেতেই আদ্রিয়ান বলল,
— ” তা অভ্র বিয়েটা কবে করছ?”
অভ্র লাজুক একটা হাসি দিয়ে বলল,
— ” কী বলছেন স্যার সবে পঁচিশ বছর হল। আর দু-একটা বছর যাক?”
আদ্রিয়ান ওর সেই স্টাইলে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,
— ” মেয়ে ঠিক করা হয়ে গেছে নাকি?”
অভ্র হালকা হেসে বলল,
— ” ভালোলাগে একটা মেয়েকে এই টুকটাক ম্যাসেঞ্জার হোয়াটস অ্যাপে কথা হয়। ঢাকায় হঠাৎ করেই আলাপ হয় ওর সাথে। মেয়েটা ছোট এখনও। আরেকটু বড় হোক দেন ভাবব।”
আদ্রিয়ান স্পুন নাড়তে নাড়তে বলল,
— ” মেয়েটাকে দেখাবেনা?”
— ” দেখাবো স্যার, যেদিন দেখাবো একেবারে সামনাসামনি দেখাবো।”
— ” হুম ওয়েট করব।”
আমি এতক্ষণ চুপচাপ এদের কথা শুনছিলাম, হঠাৎ করেই আমার ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজ টোন বেজে উঠল। আদ্রিয়ান আর অভ্র তাকাল আমার দিকে। আমি ওদের দিকে একপলক তাকিয়ে মেসেজটা সিন করে দেখি এবারেও রূপের ম্যাসেজ। ও লিখেছে, ” তোমার সাথে কথা বলা জরুরী। যেকরেই হোক আদ্রিয়ানকে বলে বেড় হওয়ার ব্যবস্হা করো।” আমি শুধু সিন করে রেখে দিলাম কিন্তু কোন রিপ্লে দিলাম না। তারপর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে গলা ঝেড়ে বললাম,
— ” চিটাগং এসেছিই যখন তখন একটু বাইরে ঘুরতে গেলে হয়না? আজ কী কাজ আছে তোমার?”
আদ্রিয়ান একবার অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” না ঠিক তা নেই! কিন্তু হঠাৎ করে ঘুরতে যাবে?”
— ” ন্ নাহ আসলে এমনিই ইচ্ছে হল।”
আদ্রিয়ান আর কোন প্রশ্ন না করে বলল,
— ” আচ্ছা ঠিকাছে। অভ্র। তুমিও যাচ্ছো আমাদের সাথে!”
অভ্র সঙ্গে সঙ্গে বলল,
— ” ওকে স্যার।”
আমরা আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। কিন্তু আমার মনে একটা চাপা টেনশন ঠিকই কাজ করছে।
__________________
আদ্রিয়ান আমি আর অভ্র তিনজন মিলে একটা পার্কে এসছি। পার্কটা বেশ বড় আর সুন্দর। হেটে হেটে সবটা দেখছি। কিন্তু রূপ মেসেজে বলেছে আমায় একা হতে কিন্তু সেটা কীকরে হব সেটাই ভাবছিলাম। হঠাৎই চোখ পরল দূরের একটা বড় একটা ফুল গাছের পেছনে। রূপ দাঁড়িয়ে আছে। ইশারায় বলছে ওর কাছে যেতে। ব্যপারটা এখন আরও জটিল হয়ে গেল। দূর! হঠাৎ আদ্রিয়ানের ফোন বেজে উঠল। ও আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” একটা ইম্পর্টেন্ট কল আছে আমি একটু কথা বলে আসছি তোমরা থাকো।”
বলে আদ্রিয়ান চলে গেল। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ছোট্ট করে একটি শ্বাস নিলাম। অভ্র বলল,
— ” ম্যাম চলুন বেঞ্চে গিয়ে বসা যাক?”
আমি মাথা নাড়লাম। দুজনে গিয়ে ওখানে বসে অভ্রকে বললাম,
— ” আমি আপনার অনেক ছোট ম্যাম বলে না ডেকে নাম ধরে ডাকলেও তো পারেন।”
অভ্র সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল,
— ” সেটা পারবোনা ম্যাম।”
— ” কেন?”
— ” সম্মান করি তাই। স্যারকে যেমন ভালোবাসি সম্মান করি তেমন আপনাকেও করি। তাই সেই সম্মানের জায়গাটা ছাড়তে পারবনা।”
আমি আর কিছু বললাম না এই কথার উত্তরে কিছু বলা যায়? অভ্র হঠাৎ বলল,
— ” ম্যাম আইসক্রিম খাবেন? নিয়ে আসবো?”
— ” হ্যাঁ আনতে পারেন।”
— ” একটু বসুন আমি আসছি।”
অভ্র উঠে চলে গেল আইসক্রিম আনতে। আমি মনকে শক্ত করে সাহস জুগিয়ে উঠে চলে গেলাম সেই গাছটার কাছে। গিয়ে দেখি রূপ দাঁড়িয়ে আছে। আমি যেতেই ও শক্ত কন্ঠে বলল,
— ” তোমাকে আমি সেই ফাইলটা মেইল করতে বলেছিলাম ?”
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম,
— ” সেই সুযোগটাই আমি পাইনি। ওর ল্যাপটপে ই-মেইল আইডি লগ আউট করা। আমি পাসওয়ার্ড জানিনা আমি।”
রূপ একটু বিরক্ত হল। বিরক্ত হয়েই বলল,
— ” ড্যাম ইট! আচ্ছা শোনো। ওর MTG ফাইলটাতে একটা ফাইল পাবে যেখানে Mission (place&time) লেখা থাকবে। ওই ফাইলে তুমি নেক্সট জায়গার প্লানটা পেয়ে যাবে। যেই জায়গাটার নাম লেখা থাকে আই থিংক সেখানেই ওরা ওদের পরের এটাক করবে। তুমি শুধু ঐ জায়গাটার নাম আর টাইম আমার মেসেজ করে দিও আর হ্যাঁ ওর সেই কোড করা ফাইলে সবার ওপরে যেই ম্যাপটা করা আছে সেটার একটা ফটো তোমার ফোন দিয়ে তুলে আমাকে পাঠিয়ে দেবে। বুঝতে পেরেছো কী বলছি?”
আমি কিছু বলছি না। রুপ একটু এগিয়ে এসে বলল,
— ” দেখ আমি জানি তোমার জন্যে এটা করা খুব কঠিন। কিন্তু তোমাকে তোমার দেশের মানুষের কথাও ভাবতে হবে না? আদ্রিয়ানের প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমার দেশের প্রতি দায়িত্বের চেয়ে বেশি হয়না। আর তুমি কিন্তু অনুমানের ভিত্তিতে কিছু করছোনা! আদ্রিয়ান নিজে স্বীকার করেছে। বুঝতে পারছ? তাই এটা ভেবোনা তুমি কোন ভুল করে ফেলছো? যা করছো সবার ভালোর জন্যে করছ। বুঝেছো?”
আমি মাথা নাড়লাম। আদ্রিয়ান চলে আসবে তাই রূপ যা বলেছে যা ঠিকভাবে করতে বলে চলে গেল। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের মুখের ঘামটা মুছে ফেললাম। ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড ভয় করছে আমার। কিন্তু ভয় পেলে তো হবেনা। আদ্রিয়ান তো বলেই দিয়েছে জলে নামলে পা ভিজবেই। জলে তো আগেই নেমে গেছি এখন পা কতটা ভিজবে সেটা নিয়ে ভাববো না। দেড় বছর আগে যখন লাইফ রিস্ক নিতে পেরেছি এবারও পারব। পারতেতো হবেই।
#চলবে…
( সরি, কোচিং এ টিউটোরিয়াল এক্সাম নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তাই বড় পার্ট দিতে পারলাম না। তবে কাল চেষ্টা করব।)