১১+১২
#একগুচ্ছ_ভালোবাসা
লেখনীতে : আনিশা সাবিহা (ছদ্মবেশী)
পর্ব : ১১
সকাল থেকে নিজেকে দুর্বল লাগছে। মাথাটা বারবার চক্কর দিয়ে উঠছে। কিন্তু এর কোনো রকম কারণ খুঁজে পাচ্ছি না আমি। টলতে টলতে নৌশিনের সাথে ব্রেকফাস্ট তৈরি করছি। বাড়িতে রান্না-বান্না সহ নানান রকম কাজের লোক রাখা হলেও অনুরাগ ও অর্ণব তাদের হাতের রান্না পছন্দ করেননা। তাই রান্নাবান্না টুকু আমরাই করি। চায়ের কাপ টা আমার হাতে ধরিয়ে দিল নৌশিন। তারপর বলল,,
–“অনু ভাবি! আজকে অনুরাগ ভাইয়া এখনো উঠেন নি ঘুম থেকে? অন্যদিন তো বেশ তাড়াতাড়ি উঠে পড়েন।”
–“আসলে কাল রাতে অদ্রিজা ঘুমোতে দেয়নি। অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে মেয়েটা। তাই উনিও দেরি করে ঘুমিয়েছেন তাই হয়ত এখনো ঘুমিয়ে আছেন।”
নৌশিন হালকা হেসে নিজের মুখটা মলিন করে ফেলল। আমি কপাল ভাঁজ করলাম। ওর ঘাড়ে হাত দিয়ে বললাম,,,
–“কি হয়েছে? মন খারাপ?”
ও নাবোধক মাথা নাড়াল। আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম,,,
–“অনসময় বেশ হাসিখুশি থাকো তুমি। এখন কি হয়েছে?”
–“আসলে ভাবি ভাবছিলাম যে আমার এমন দিন কবে আসবে বলো তো? যেদিন একটা পুচকু সারাদিন আমায় জ্বালিয়ে মারবে? আমার না এই মিষ্টি যন্ত্রণা সহ্য করতে বড় ইচ্ছে করে।”
কথাটা বেশ আকাঙ্খা নিয়ে বলল নৌশিন। আমি ওর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে মুচকি হাসলাম। আশাভরা গলায় বললাম,,,
–“তোমার বিয়ের তো সবে ১ বছর হয়েছে। তোমারও ঘরেও পুচকু আসবে নৌশিন! কয়েকদিন ধৈর্য তো ধরতেই হবে তাই না?”
আমার কথায় ওর মলিন মুখে হাসি ফুটল। মাথা নাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে রান্নাঘর থেকে ঠেলে বের করে দিয়ে বলল,,,
–“হুমম বুঝেছি। তুমি বরণ এখন ঘরে যাও। চায়ের কাপটা অনুরাগ ভাইয়াকে দিয়ে বলো সকাল ৮:৩০ বাজতে চলল। অফিস তো নির্ঘাত লেট করে ফেলবে অর্ণবের মতো! আর অনুরাগ ভাইয়া যথেষ্ট ডিসিপ্লিন মানে জানো তো? একদম সময়ের কাজ সময়ে করেন। আমার বরের মতো দ্যা গ্রেট অলস না।”
আমি দাঁত কেলিয়ে ফাজলামির কন্ঠে গদগদ করে বললাম,,,
–“আই থিংক অর্ণবের লেট করে ঘুম থেকে ওঠা তোমার কারণেই। সারা রাত প্রেম মহাব্বত করলে তাড়াতাড়ি কি করে উঠবে বলো তো?”
কথাটা বলে ভ্রু নাচালাম আমি। নৌশিনের পুরো মুখে লজ্জা ছেয়ে গেল। আমি হু হা করে হেসে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। এবার সত্যিই অনুরাগ মহাশয়কে ডাকতে হবে নয়ত দেখা যাচ্ছে আমার ওপরই গরম ঝাড়বে লোকটা!
রাগে নিজের চুল ধরে টানাটানি করতে ব্যস্ত সুনয়না। কি ভেবেছিল আর কি হলো? একহাতে কানে ফোনটা ধরে আছে আর ওপাশ থেকে নিজের মায়ের কথা সমানে শুনে যাচ্ছে আর রাগটা যেন আরো বাড়ছে তার। ওপাশ থেকে মায়ের কথা শেষ হতে না হতেই সুনয়না মায়ের উদ্দেশ্যে ঝাড়ি দিয়ে বলে উঠল,,,,
–“কিছুই তো করতে পারো না তুমি। তোমার দ্বারা কিছু হওয়া সম্ভব নয়। কচু করতে পারো। সেই ছোট থেকে! যখন অনামিকা দি আর অনুরাগ দার প্রেমটা শুরু হয়নি। ঠিক তখন থেকে অনুরাগ দাকে ভালো লাগত আমার। তোমাকে বেশ কয়েকবার বলেও ছিলাম কিন্তু তুমি কি বলেছিলে? আমি বড় হলে আমার সাথে তার বিয়ে হবে। কথা তো রাখতে পারলে না। অনামিকা দির সাথে বিয়েটা হয়ে গেল। সেদিন প্রথম বারের মতো অনামিকাদি কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিতে ইচ্ছে করছিল। কোনোমতে নিজেকে শান্তনা দিলাম আমি। ঠিক ৪ বছর পর অদ্রিজা জন্ম নেওয়ার কয়েকদিন পরই অনামিকাদি মারা গেল। বোনকে হারানোর শোকের চেয়ে অনুরাগদা কে পাওয়ার আনন্দে মেতেছিলাম আমি। কিন্তু কি লাভ হলো? তোমায় বলেছিলাম যে অন্তত অদ্রিজাকে দেখাশোনা করায় বাহানায় হলেও যেন আমাকে অনুরাগদা বিয়ে করতে বাধ্য হয়। সেই কাজটাও তুমি ঠিক করতে পারলে না।”
ওপাশ থেকে মায়ের কন্ঠ শুনে আবারো চুপ হয়ে
গেল সুনয়না। কয়েক সেকেন্ড পর বিরক্তির স্বরে বলে উঠলো…..
–“এই তুমি চুপ থাকো তো বিয়ে যখন করতে পারলাম না তখন আমি যতদিন আছি অনুশ্রী কেও সুখে থাকতে দেবো না।”
কথাটা বলে নিজের কান থেকে ফোন সরিয়ে কল কেটে দিল সে। ফোনটা ছুড়ে মারতে গিয়েও মারতে পারল না সে। সে তো আর বড়লোকের মেয়ে নয় যে ফোন ভাঙ্গলে ফোন পাবে। অনুরাগের বউ হলে অন্য কথা ছিল! ফোনটা চেপে ধরে বসে থাকল। ফোনের স্ক্রীন অন করতেই দেখতে পেল ঘড়িতে আটটা বেজে একত্রিশ মিনিট। হয়তো এতক্ষণে অনুরাগ দাও উঠে গেছে। এবার তার রুম থেকে বের হওয়া দরকার। অনুরাগ এর রুমের পাশেই সুনয়নার রুম দেওয়া হয়েছে। ফোনটা বিছানায় রেখে বাইরে বেরিয়ে যেতে লাগল সে।
হাতে চায়ের কাপ নিয়ে অনুরাগের রুমের দিকে যাচ্ছি। আমি গায়ের লোমগুলো যেন ঠান্ডায় শিউরে উঠছে। অথচ পরিবেশটা এত ঠান্ডা নয়। যখন আমি অনুরাগ এর রুমের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি তখনই মনে হলো পায়ের কাছে কিছু একটা লাগলো। সেই জিনিসটার সাথে বেজে পড়ে যেতে নিলাম আমি। হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। চোখ বন্ধ করে ব্যাথা পাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলাম। হাতের কাছে একটা কাপড় এসে ঠেকলো সাতপাঁচ না ভেবে সে কাপড়টা খাঁমছে ধরলাম। মনে হলো কোনো বড় একটা দেহ পেছনে সরে গেল। সে দেহটার ওপর পড়ে গেলাম আমি। কারো বুকেতে মাথা ঠেকলো ঢুলু ঢুলু চোখে মাথা উঠালাম। অনুরাগ কে দেখে চোখটা কপালে উঠে গেল। অনুরাগ নিজের ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম। খানিকটা কৌতুহল নিয়ে ওনার ঘুম চোখ জোড়ার দিকে তাকালাম। উনার চোখে যেন হাজারো দোটানা জ্বলজ্বল করছে। কিসের এত দোটানা? আমার কপালে উনার হাতের স্পর্শ পেতেই ভাবনার রেশ টা কেটে গেল। কপাল ছুঁয়ে আমার গালে হাত লাগালেন উনি। বিস্ফোরিত কণ্ঠে বলে উঠলেন….
–“একি তোমার গায়ে এতো গরম লাগছে কেন?”
আমি ওনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না। নিজে নিজের কপালে গলায় হাত ছোঁয়ালাম। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না। উনি আমাকে উনার উপর থেকে উঠিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন….
–“নিজের গায়ের টেম্পারেচার নিজে কি করে বুঝবে?”
আমি কিছু না বললে উঠতে নিতেই আবারো পা ধরে বসে পড়লাম। উনি সোজা হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকান। আমি অসহায় চোখে ওনার দিকে তাকায়। উনি ইশারা করে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে? আমি ঠোঁট উল্টে উত্তর দিলাম,,,,
–“পায়ে ব্যাথা পেয়েছি দাঁড়াতে পারছি না……!”
আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন অনুরাগ। গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,,,,
–“হাতটা ধরো।”
আমি কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে হাতটা ওনার হাতে রাখালাম। উনি আস্তে আস্তে টেনে তুললেন আমায়। পায়ের লাগতেই উনি আমার বাহু চেপে ধরলেন। ধীরে ধীরে নিয়ে যেতে লাগলেন ঘরের দিকে। বিরবির করে বলে উঠলেন,,,
–“বারবার পড়ে যাওয়া যেন তোমার অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছে!”
–“কিছু বললেন আপনি?” (ভ্রু উঁচিয়ে)
অনেক জোর করে হেসে বললেন…
–“আমি আবার কি বলব? আমি কি কিছু বলতে পারি নাকি?”
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,,,,
–“আমি কিন্তু সব শুনেছি!”
–“শুনে আমাকে ধন্য করে দিয়েছেন এখন দয়া করে ঘরে চলুন।”
আমি আর কিছু না বলে ওনার সাথে হাঁটতে লাগলাম ভেংচি কেটে।
আড়াল থেকে বিরক্তির শ্বাস ছাড়লো সুনয়না। চেষ্টা করেও অনুশ্রী কে ফেলে দিয়ে ব্যাথা পাওয়াতে পারল না সে। কোথা থেকে যেন অনুরাগ হুট করে চলে এল। মুখটা বাংলার পাঁচের এর মত করে চলে গেল নিচে।
রুমে এসে বিছানায় বসিয়ে দিলেন অনুরাগ। তারপর আমার পায়ের কাছে বসে পড়লেন। উনি আমার পায়ে হাত লাগাতেই এক ঝটকায় সরিয়ে নিয়ে ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠলাম। অনেক কড়া গলায় বললেন,,,
–“পা সরিয়ে নিতে বলেছি তোমায়?”
আমি চোখ মুখ জড়িয়ে বলে উঠলাম,,,
–“আপনি কেন পায়ে হাত লাগাচ্ছেন? এই কারণেই তো….”
আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উনি দৃঢ় গলায় বলে উঠলেন,,,,
–“চুপ একদম চুপ। বেশি কথা বলবে না। পা আমার দিকে এগিয়ে দাও।
আমি তাও চুপচাপ করে বসে রইলাম। উনি জোর করে পা নিজের দিকে এগিয়ে নিয়ে আমার ব্যাথা পাওয়া ডানপায়ে মোচড় দিয়ে উঠলেন জোরে। আমি ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠলাম। জোরে জোরে বলতে শুরু করলাম,,,
–“ওমাগো আমার পা ভেঙে গেল গো! আমি আর দাঁড়াতে পারবো না গো! আমার পা ভেঙে দিলেন কেন আপনি??”
উনি উঠে দাঁড়ালেন। আমাকে পাত্তা না দিয়ে কাবার্ড থেকে নিজের অফিসের ড্রেস গুলো বের করতে লাগলেন। আমি পায়ে হাত দিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে বসে আছি। উনি আমার মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন,,,
–“তোমার পা ঠিক হয়ে গেছে।”
উনার কথা কানে আসার সাথে সাথে মুখ থেকে কাঁদো কাঁদো ভাব দূর হয়ে গেল। এক নিমেষে নিজের পা নাড়িয়ে চাড়িয়ে বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলাম….
–“হ্যাঁ তাইতো পা তো আর ব্যথা লাগছে না। আপনি কি করে করলেন এটা? (উনার দিকে তাকিয়ে)
উনি স্মিত হাসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে হাত ঘুরিয়ে বললেন,,
–“ইটস এ ম্যাজিক…!”
আমি ব্যাক্কল হয়ে চেয়ে থাকলাম। এ কেমন ম্যাজিক?
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে এসেছে। হঠাৎ সকাল এগারোটার টার দিকে নেত্রা আপুনি সহ তার ছেলে ও তার স্বামী এসে হাজির হয়েছেন। আপুনিকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলে উঠলো তাকে নাকি অনুরাগ ফোন করে ডেকেছেন ফ্যামিলি সহ। আমিও আর কিছু বলিনি।
এই মুহূর্তে বিছানায় শুয়ে আছি। আমার পাশেই আপুনি। আমার দেখে অস্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার কপালে হাত রেখে বলল….
–“কি অবস্থা করেছো নিজের বলতো? জ্বর কিভাবে বাঁধিয়ে বসলে?”
আমি কিছু না বলে মুখটা কাঁচুমাচু করে শুয়ে রইলাম। কেননা আমি জানি এই জ্বর আসার আসল কারণ কি! বড্ড ঠান্ডাকাতুরে মানুষ আমি।কয়েক দিন লাগাতার ফ্লোরে ঘুমানোর কারণে আজ তার ফলাফল স্বরূপ জ্বর এসেছে। কিন্তু সেটা তো আর আপুনিকে বলতে পারব না। তাই কিছু না বলে শুয়েই রইলাম। অদ্রিজা একবার খেলনা দিয়ে খেলছে একবার আমাকে ডাকছে নিজের ভঙিতে। আমার দিকে টলটল দৃষ্টিতে তাকিয়ে এবার কান্নায় করে দিল সে। আমি তড়িঘড়ি করে শোয়া থেকে উঠতে নিলে আপুনি আমাকে ধরে শুইয়ে দেয়। খানিকটা শক্ত গলায় বললেন,,,
–“তোমার জ্বর অনেক অনুশ্রী! তুমি উঠবে না। আমি কি মরে গেছি নাকি? অদ্রিজাকে আমি সামলাতে পারব।”
–“কিন্তু…. ”
–“কোনো কিন্তু নয়।”
আপুনি অদ্রিজাকে কোলে নিল। কিন্তু তাতে বিশেষ কোনো লাভ হলো না। মেয়েটার কান্নার বেগ বাড়তেই থাকল। আমার দিকে তাকিয়ে আরো কাঁদতে থাকল ও। এবার ওর কান্নাতে স্থির থাকতে পারলাম না আমি। উঠে বসলাম। আপুনি অদ্রিজাকে এটা ওটা দেখাচ্ছে। আমি দুর্বল গলায় বললাম,,,
–“আপুনি ওকে আমার কাছে দাও।”
আপুনি আমার দিকে তাকাল। চিন্তিত গলায় বলল,,,
–“তুমি আবার কেন উঠেছো?”
–“অদ্রিজা আমার কোলে এলে তবেই শান্ত হবে আপুনি। তাই ওকে আমার কোলেই দাও।”
আপুনি কিছু না বলে আমার কোলে দিয়ে দিল অদ্রিজাকে। আমি ওকে পেয়ে সুন্দরমত নরমভাবে জড়িয়ে ধরতেই অদ্রিজা তার ছোট ছোট হাতজোড়া দিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরল। কয়েক মিনিটের মাঝেই কান্না উধাও হতে দেখে আপুনি হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল। হতভম্বিত গলায় বলল,,,
–“ওমা! এই মেয়ে দেখি তোমায় ছাড়া কিছু বোঝে না।”
আমি হাসলাম। আপুনিও হাসল। নরম কন্ঠে বলল,,,
–“অদ্রিজাকে তোমার কোলে দেখে সত্যিই প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে জানো তো! ও আসলেই ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে। তোমার মতো মা পেয়েছে।”
আমি আপুনির কথাটা এড়িয়ে গেলাম। গলা খাঁকারি দিয়ে অদ্রিজার পেটের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
–“আপুনি একটা ছোট্ট হেল্প করে দিতে পারবে প্লিজ?”
–“ওমা! এভাবে বলছো কেন? বলো কি হেল্প লাগবে।”
–“অদ্রিজার জন্য একটু দুধ গরম করবে প্লিজ?”
আপুনি তাড়াহুরো করে বলল,,,
–“হ্যাঁ হ্যাঁ এক্ষুনি নিয়ে আসছি। কিন্তু আমিই ওকে খাইয়ে দিব ওকে আমার কোলে দাও।”
–“আপুনি ও আবার কান্না করতে পারে।”
–“কান্না করবে না। অদ্রিজা তো আজকে নীল ভাইয়ার(আপুনির ছেলে) খেলবে তাই না?”
নীলের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে দিল অদ্রিজা। আপুনি অদ্রিজার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,
–“দেখেছো? নীলের কথা শুনতেই কিভাবে হাসছে? ও কাঁদবে না আমার কাছে দাও।”
আমি নিশ্চিত মনে অদ্রিজাকে আপুনির কোলে দিলাম। আপুনি ওকে নিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
বেলকনি থেকে নানানরকম পাখির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। কানে আবছা আবছা তাদের ডাকাডাকির আওয়াজ ভেসে আসছে। ঘুমটা সবে মাখো মাখো হয়ে এসেছে। ঘুমের মাঝেও বুঝতে পারছি বিকেল গড়িয়েছে। সন্ধ্যা নামবে। একসময় মনে হলো কেউ আমাকে গভীর নজরে দেখছে। চোখ মেলানোর চেষ্টা করলাম আমি। কারো ঠান্ডা স্পর্শ আমার চোখ বন্ধ করিয়ে দিল। এই স্পর্শ চেনার আগ্রহ আরো তীব্রতর হয়ে উঠল। এবার জোর করে চোখ মেললাম। ছোট ছোট চোখ নিয়ে তাকাতেই পাশে বর্ণদাকে দেখতে পেলাম। দুর্বল গলায় বললাম,,,
–“তুমি?”
বর্ণদা ভার গলায় বলল,,,
–“হুমম আমি। শুনলাম তোর জ্বর হয়েছে তাই দেখতে এলাম।”
–“শুনলে তাই দেখতে এলে। সেই সকাল থেকে জ্বর আর কেবল এলে? না এলেও পারতে!” (অভিমানি গলায়)
বর্ণদা নিজের মুখ জড়িয়ে ফেলল। ভয়ার্ত গলায় বলল,,
–“কি যে বলিস না নুড়ি! এটা তোর আর তোর স্বামীর ঘর। যখন তখন আসা যায় নাকি? তোদের পারসোনাল ঘর না?”
আমি হতাশার শ্বাস ফেললাম। দুনিয়া পাল্টে গেলেও এই ছেলেটা পাল্টাবে না। আমাকে খোঁচা দিয়ে কথা বলার জন্যই যেন তার জন্ম!
আমার চুপ থাকা দেখে সে আবারও বলে উঠল,,,
–“ফ্লোরে থেকে থেকে জ্বরটা অবশেষে বাঁধিয়েই ফেললি?”
আমি চমকে উঠলাম। বর্ণদা এই বিষয়টা কিভাবে জানল সেটা ভেবে পেলাম না। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,,,
–“ফ..ফ্লোরে ঘুমাবো কেন? তোমায় কে বলেছে?”
–“আমাকে বললে তবে আমি বুঝব তেমন মানুষ আমি নই নুড়ি। এইযে বিছানায় যেই এক্সট্রা বালিশ, চাদর আর কম্বল আছে সেসব দেখেই বুঝে নিয়েছি আমি।”
আমি নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। কম্বলের ভাঁজে মুখ লুকালাম। আমার কান্ড দেখে বর্ণদা আলতো হাসল। আমার কপালে হাত রাখতেই দরজা খোলার শব্দ হলো। পেছনে অনুরাগ দাঁড়িয়ে ক্লান্ত ভঙিতে ঘরে ঢুকছেন।
চলবে……🍀🍀
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
____________________________________________
#একগুচ্ছ_ভালোবাসা
লেখনীতে : আনিশা সাবিহা (ছদ্মবেশী)
পর্ব : ১২
নিজের দৃঢ় দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকাতেই উনার নজরে বর্ণদা পড়ল। সাথে সাথে খানিকটা ইতস্ত বোধ করলেন উনি। হালকা কেশে বলে উঠলেন…..
–“আরে বর্ণ তুমি? কথা বলছিলে অনুশ্রীর সাথে? সরি তোমাদের কথা হয়তো সম্পূর্ণ হলো না তার আগে আমি রুমে এসে পড়লাম তাইনা?”
বর্ণদা মাথা নাড়িয়ে বলল…
–“না তেমন কিছু না এমনি জাস্ট ওর শরীর ঠিক আছে কিনা সেটাই জিজ্ঞেস করছিলাম।”
অনুরাগ হালকা হাসলেন আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার কপালে হাত রাখলেন গম্ভীর গলায় বললেন,,,
–“তোমার জ্বর তো কমে নি নেত্রাদি তোমায় ঔষুধ খাইয়েছে??”
আমি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালাম। উনি বর্ণদার দিকে তাকিয়ে নিজের গলার টাই খুলে সোফায় রেখে বললেন,,,
–“তোমরা কথা বলো আমি রুমের বাইরে যাচ্ছি।”
–“আরে এটা তো আপনার রুম আপনি কেন রুমের বাইরে যাবেন? গেলে তো আমার যাওয়া উচিত তাই না? আর আপনি সবে সবে অফিস থেকে ফিরলেন অবশ্যই অনেক টায়ার্ড আপনি! সো প্লীজ…”
কথাটা বলে অনুরাগকে যেতে বারণ করল বর্ণদা। আমি অনুরাগ এর মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি উনার এই অদ্ভুত ব্যবহারের মানে কি? উনি কি রাগ করেছেন আমার উপরে? কিন্তু উনি রাখলে তো স্পষ্ট বলার মুখে তার প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। আজ তো রাগের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি না। উনি কি রাগ দমিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন?
অনুরাগ আমার দিকে এক পলক চেয়ে বললেন,,,
–“আমার প্রবলেম নেই আমি অদ্রিজাকে নিয়ে নিচে আছি।”
কথাটা বলে উনি দরজার দিকে তাকিয়ে যেতে লাগলেন। আমি কিছু না ভেবেই ওনার হাত চেপে ধরলাম। উনি পিছন ফিরে উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর উনার হাত ছেড়ে দিয়ে ঢোক গিলে বললাম,,,
–“আপনি যাবেন না।”
অনুরাগ কিছু বলার আগেই বর্ণদা বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,,
–“নুড়ি ঠিকই বলছে আপনার যাওয়ার দরকার নেই। আমার সাথে ওর যা কথা বলার সেটা হয়ে গেছে। বাকিটা আপনি বলে নেবেন। প্লিজ যা করছেন আরও দুবার ভেবেচিন্তে করবেন।
কথাটা বলে বিদ্যুতের গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল বর্ণদা। আমি ভাবুক হয়ে শুয়ে রইলাম। তার কথার আগামাথা কিছুই আমার মাথায় ঢুকলো না। কি করার কথা বলে গেল সে? আর কোন বিষয় নিয়েই বা অনুরাগকে ভাবতে বললো আরো দু’বার? উত্তরগুলো আমার কাছে সত্যিই অজানা…! উত্তর গুলো জানার জন্য অনুরাগ এর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। উনি আমার দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে চাইলে আমি উনার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়লাম,,,
–“বর্ণদা কি বিষয়ে ভাবার কথা বলে গেলেন আপনাকে??”
উনি বিব্রত কণ্ঠে বললেন…..
–“সেটা তোমাকে বলব রাতে এখন নয়। আর সরি!
উনার মুখে সরি শব্দটার শুনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম। অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে বললাম,,,
–“হঠাৎ সরি কেন…?”
–“আ….আব তোমার জ্বর হয়েছে তো আমারই কারণে তাই না? আমার জন্য তুমি প্রতিদিন ফ্লোরে ঘুমিয়েছো!”
–“আপনি কি করে জানলেন যে ফ্লোরে ঘুমানোর কারণে আমার গায়ে জ্বর এসেছে??”
অনুরাগ আমার দিকে অপরাধী দৃষ্টিতে তাকালেন। উনার চোখে অনুশোচনা ফুটে উঠেছে। সেটাই উনি সরি শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চাইছেন। নিজের হাতের ঘড়ি আঙ্গুল দিয়ে নাড়াতে নাড়াতে নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,
–“আসলে আমি তোমার আর বর্ণর সব কথা শুনেছি। এটাও শুনেছি যে ফ্লোরে ঘুমোনোর কারণেই তোমার জ্বর এসেছে।
লোকটার কথা আমার কানে আসতেই আমি তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হেসে উঠলাম। হাসি থামিয়ে কম্বলের মুখ গুঁজে বলে উঠলাম,,,
–“পৃথিবীতে যদি সরি দিয়ে সবকিছু সমাধান হয়ে যেত তাহলে আর ক্ষতিপূরণ নামক কোন শব্দ থাকতো না। যাই হোক আপনি যে সরি বলেছেন এটাই অনেক!! আপনার মত একজন মহান বিজনেসম্যান আমার মত একজন সাধারন মেয়েকে সরি বলছে এটাই তো অনেক তাই না??”
আমার কথা আমার কানে যাওয়ার সাথে সাথে উনি আমার কাছে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন। ফ্লোরে হাটু গেঁড়ে বসে আমার দুটো হাত ধরলেন। উনার এই কাণ্ডে আমি হতভম্ভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে বসার চেষ্টা করলাম। উঠে বসে উনার কথায় মনোযোগ দিলাম আমি,,,
–“তুমি সাধারণ নয় অনুশ্রী। তুমি সাধারণের মাঝে অসাধারণ। তোমাকে দেখে মাঝে মাঝে অবাক হই। আমি আল্লাহ তোমাকে কতটা ধৈর্য দিয়ে পাঠিয়েছে। সেটা তোমাকে এত কাছ থেকে না জানলে হয়তো জানতে পারতাম না। তবে চিন্তা করো না অনুরাগ চৌধুরী ক্ষতিপূরণ করবে। তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবে তোমার একটা হারানো জিনিস।”
কিসের ক্ষতিপূরণের কথা বলছে লোকটা? সত্যিই উনার কথাগুলো বোঝা আমার কাছের দায় হয়ে উঠেছে। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে উনার উদ্দেশ্যে বললাম,,,
–“কিসের ক্ষতিপূরণের কথা বলতে চাইছেন আপনি?? কি দিয়ে করবেন এসব ক্ষতিপূরণ? আর আমার জীবনে আমি যা যা হারিয়েছি তা কখনোই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। মিথ্যে আশা দিচ্ছেন বুঝি?”
–“মিথ্যা আশা এই আজমাইন অনুরাগ চৌধুরী কখনোই দেয়না। আমি কখনোই নিজের কথা দিয়ে কথা রাখি নি এমনটা হয় নি। আর তোমার ক্ষেত্রে এমনটা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি যদি তোমার ভালোবাসা তোমাকে ফিরিয়ে দিই?”
ভালোবাসা নামক এই চারটি বর্ণের শব্দ শুনে বুকের বাঁ পাশটা যেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে শুরু করলো। এ আগুন নিভে যাবার মত আগুন নয়। এই আগুন আশে পাশের সব মানুষকে জ্বালিয়ে ছারখার করে দিতে সক্ষম। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম,,,,
–“ভালোবাসা মানে?”
অনুরাগ আমার হাত জোড়া ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে অন্য পাশ ফিরে নিজের পকেট এ হাত গুঁজলেন। বেজায় ভারাক্রান্ত গলায় বলে উঠলেন,,,,
–“সময় এলে নিজে থেকে সব বুঝতে পারবে অনুশ্রী।। শুধু কয়েকটা দিনের অপেক্ষা।”
–“কি বলতে চাইছেন আপনি একটু প…..”
আমার পুরো কথা কানে তুললেন না উনি আমার দিকে না তাকিয়ে উনি ব্যালকনিতে গিয়ে আকাশের পানে চেয়ে রইলেন। উনার আচরণগুলো আমার অবাক এর মাত্রা আকাশ ছুঁলো। বদমেজাজী ও রাগী লোকটা কয়েকদিন থেকে খুব গম্ভীর ও শান্ত হয়ে পড়েছেন। গাছ যেমন পানির অভাবে নেতিয়ে পড়ে ঠিক তেমনি অনুরাগ কিসের যেন অভাবে নেতিয়ে পড়েছেন। তবে ওনার আচরণ গুলোতে বড়ভাবে হতাশ আমি।
অনেকক্ষণ হলো অদ্রিজা কে দেখছি না সেই দুপুরে চোখের দেখা দেখেছিলাম। তারপর আপুনি ওকে নিয়ে চলে গেল এখনও ওকে কেউ ঘরে নিয়ে এল না। কয়েকদিনের ব্যবধানে এই ছোট্ট মেয়েটা আমার চোখের মনি হয়ে উঠেছে। ওকে ছাড়া যেন এক মুহূর্তও চলতে চায় না। কাউকে পাচ্ছিও না যে তাকে বলব অদ্রিজা কে আমার কাছে এনে দিতে। আর অনুরাগ তো বাড়ি আসার পর থেকে কেমন জানি খামখেয়ালি হয়ে উঠেছেন। সেই তখন থেকে বেলকুনিতে বসে আছেন।
অদ্রিজার কথা ভাবতে ভাবতেই যেন আমার কানে ওর কান্না এসে পৌঁছালো। অটোমেটিকলি কপাল ভাঁজ হয়ে এল আমার। অদ্রিজা কাঁদছে কিন্তু সে তো আশেপাশে নেই। মনোযোগ দিয়ে কান্নার আওয়াজ টা শুনতে বুঝতে পারলাম আওয়াজটা বাইরে থেকে আসছে। আগের থেকেই মেয়েটার কান্নায় স্থির থাকতে পারিনা আমি। এই মুহূর্তেও স্থির থাকতে পারছি। না অস্থির লাগছে!”
বেশি না ভেবে বেড থেকে উঠে দাঁড়ালাম। জ্বরের কারণে সারা শরীর জুড়ে ব্যাথা করছে। দুর্বল ও কাঁপা কাঁপা পা জোড়া নিয়ে ধীরে ধীরে বাইরে গেলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে করিডোরে চোখ রাখতেই দেখলাম সুনয়না অদ্রিজা কে নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গেল। প্রথম থেকে সুবিধের লাগেনা আমার। যখন শুনেছি ওর সাথে অনুরাগ এর বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন সুনয়নার মা, তখন আরও বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে আমার চোখে ধরা দিয়েছিল। আমি তখনই বুঝে গিয়েছিলাম সুনয়নার মনের মাঝে আমার প্রতি এক অন্যরকম ক্ষোভ ও রাগ জমা হয়েছে। সব সময় ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে টানাটানি না করলে চলে না ওর।
কিছুটা রেগেই দেওয়াল ধরে আস্তে আস্তে ওর রুমের দিকে গেলাম। রুমের দরজায় এসে দাঁড়াতেই আমার চোখ কপালে উঠলো। সুনয়না অদ্রিজা কে বিছানার একদম সাইডে রেখে ফোনে কী যেন একটা করছে। অদ্রিজার কান্না বেড়ে চলেছে আর তার সাথে বারে বারে নিজের পা নাড়ানোর কারণে আরো সাইডে চলে যাচ্ছে ও। ওর কান্না শুনে সুনয়না বিরক্তিকর সুরে বলল,,,,
–“তুই চুপ কর তো! তোকে আমি এমনি এমনি আমার রুমে নিয়ে আসিনি বুঝেছিস? তোকে রুমে নিয়ে এসেছি কারণ যাতে আমি অনুরাগদার সামনে প্রমাণ করে দিতে পারি যে,,আমি ওই অনুশ্রীর থেকে তোর বেশি খেয়াল রাখতে পারি। কিন্তু তুই তো দেখছি এখানে আসার পর থেকে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে চলেছিস…!”
কথাগুলো বলার সময় একবারও অদ্রিজার দিকে তাকালো না। ওদিকে অদ্রিজা একেবারে সাইডে চলে গেছে। নিজের কাঁপা কাঁপা পা দুটো যত দ্রুত সম্ভব নাড়িয়ে অদ্রিজার কাছে যেতে থাকলাম। সময়মত বিছানার কাছে গিয়ে অদ্রিজাকে কোলে তুলে নিলাম। আমি ঘটনাস্থলে সুনয়না খানিকটা চমকে উঠলো। আমাকে দেখে আমাকে চোখ রাঙিয়ে ফোনটা বিছানায় রেখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,
–“এই মেয়ে তুমি কেন আমার রুমে আমার পারমিশন ছাড়া ঢুকেছো?? কারো রুমে কারো পারমিশন ছাড়া ঢুকতে নেই এই সেন্স টুকু তোমার মাথায় নেই? আর তোমার কি হয় বলতো অদ্রিজা আমার কাছে থাকলে বড্ড গা জ্বালা করে তাই না তোমার?”
এই মুহূর্তে সুনয়নার কথাগুলো আমার কাছে ফালতু আর যুক্তিহীন বলে মনে হচ্ছে। তবুও নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম। কেননা সে আমাদের বাড়ির মেহমান। অনামিকার বোন! থমথমে গলায় বললাম,,,
–“প্রথমত তোমার ঘরে আসার আমার কোনোপ্রকার ইচ্ছে তোমার ঘরে আসার। আমি বাধ্য হয়ে এসেছি। আমার মেয়েকে নিতে এসেছি। তোমার তো নিজেরই সামান্যতম টুকুও সেন্স আছে বলে মনে হয় না সুনয়না! যদি থাকত অদ্রিজাকে এভাবে বেডের কিনারায় রেখে ফোন চাপতে পারতে না। আর একটু হলে ও পড়ে যেত। তখন কি হত ভেবে দেখেছো?”
আমার কথাগুলো শুনে যেন তেতিয়ে উঠল সুনয়না। রাগে ফোঁস ফোঁস করে বলে উঠল,,,
–“শাট আপ। কে তোমার মেয়ে? ভুলে যেও না অদ্রিজা আমার বোনের মেয়ে। তোমার সাহস তো কম নয়! তুমি কি না আমার বোনের মেয়েকে কিভাবে রাখতো হয় সেটা আমাকে শেখাতে এসেছো?”
–“শেখাতে আসিনি আমি। তুমি একটা বাচ্চার খেয়াল রাখতে পারো না তাই বলছি।”
কথাটা বলে অদ্রিজাকে নিয়ে সুনয়নার ঘর থেকে বেরোতে নিলাম আমি। কিন্তু সে আমার হাত চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। অদ্রিজাকে একপ্রকার আমার কোল থেকে টানতে শুরু করল সে। আমি অদ্রিজাকে ছেড়ে দিলাম নাহলে ওর ছোট্ট শরীরে ব্যাথা লাগবে। সুনয়না ওকে কোলে নিয়ে নিল। আমার দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগের চোটে অন্য হাত দিয়ে ধাক্কা মারল। আমার দুর্বল শরীর ধাক্কাটা সইতে পারল না। কয়েকধাপ পিছিয়ে পড়তে গিয়েও পড়লাম না। একহাত জোড়া হাত আমায় আগলে ধরল পরমভাবে। নিজেকে শরীরের সাথে মিশিয়ে নিল। নাকে এক অজানা সুগন্ধি ভেসে এলো! এই গন্ধ অচেনা হলেও এই স্পর্শ আমার চেনা। মাথা উঠিয়ে দেখতে পেলাম অনুরাগের লাল মুখটা। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,
–“ঠিক আছো তুমি?”
আমি মাথা এপাশ ওপাশ দুলাতেই উনি আমাকে কিছুটা আদেশের সুরে বললেন,,,
–“যাও সুনয়নার কাছে আর অদ্রিজাকে নিয়ে এসো।”
আমি কিছুক্ষণ সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলাম। উনি এবার কড়া গলায় বললেন ,,,,
–“তুমি যেতে পারবে? নাকি আমি কোলে নেব?”
–“আ…আমি পারব।”
অনুরাগ থেকে দূরে সরে সুনয়নার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই সে অদ্রিজাকে নিয়ে অন্যপাশ ফিরল। বেশ সরু গলায় বলল,,,
–“অনুরাগদা আসলে ত..তুমি যা ভাবছো মটেই তা নয়। আমি ওকে বলেছিলাম অদ্রিজা আমার কাছে থাকবে। তবুও ও শু…”
বাকিটা আর ওকে বলতে দিলেন না অনুরাগ। হুংকার দিয়ে বললেন,,,
–“আমি তোমার কাছ থেকে কোনো এক্সকিউজ চাইনি সুনয়না। কারণ আমি সব নিজে দেখেছি আর শুনেছি। অদ্রিজাকে অনুশ্রীর কোলে দাও।”
সুনয়না নিজের মুখটা কাঁচুমাচু করে আমার দিকে ফিরে আমার কোলে অদ্রিজাকে ধরিয়ে দিল। অনুরাগ ইশারায় আমাকে বেরিয়ে যেতে বলল ঘর থেকে। আমি নিজের চুপসানো মুখ নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। যদিও সুনয়না আর অনুরাগের কথোপকথন শোনার বেশ ইচ্ছে ছিল আমার তবে সেটা আর পূরণ হলো না….!
অনুরাগের সামনে মুখটা নিচু করে রেখে দাঁড়িয়ে আছে সুনয়না। নিজেকে নিজেই যেন দুই চারটে থাপ্পড় মারতে পারলে যেন তার শান্তি হত। সব সময় তার কাজের ফলাফল কেন উল্টো হয়? চেয়েছিল তো অনুরাগের কাছে ভালো হতে। উল্টে বেজায় খারাপ হয়ে গেল। সব হয়েছে ওই অনুশ্রীর জন্য!
অনুরাগের ধমক শুনে নিজের ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে হকচকিয়ে গেল সে।
–“তুমি এই বাড়িতে এসেছো অনুশ্রী ঠিকভাবে মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করে কি না সেটা দেখতে। অনুশ্রীকে ধাক্কা মারতে নয়। অনুশ্রীকে ওর কাজ করতে দাও। যেমন এসেছিলে ঠিক তেমন কয়েকদিন পর চলে যাবে তুমি। সো আমি যেন আর না দেখি যে অনুশ্রীকে তুমি ইনসাল্ট করেছো বা ওকে এভাবে ধাক্কা মেরেছো।”
কথাটা বলে অনুরাগ কিছুক্ষণ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল সুনয়নার দিকে। তারপর পাশ ফিরে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেই পেছন থেকে সুনয়না জোর গলায় বলল,,,
–“অনুরাগদা! তুমি আজ অনুশ্রীর জন্য আমায় এভাবে বললে? অনুশ্রীর প্রতি এতোটা পজেসিভ হয়ে গিয়েছো তুমি? কোথাও এমন নয় তো? অনামিকাদির জায়গা তুমি নিজের অজান্তেই অনুশ্রীকে দিয়ে ফেলছো?”
অনুরাগ থমকে দাঁড়াল। সুনয়নার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,
–“না। অনামিকার জন্য আমার মনে সর্বদা একটা জায়গা থাকবে। আর অনুশ্রী আমার স্ত্রী! শুনেছো তুমি? ও আমার স্ত্রী। ওকে আমার সামনে কেউ এভাবে অপমান করবে সেটা এই অনুরাগ বরদাস্ত করবে না।”
–“কিন্তু কেন অনুরাগদা?” (সূক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে)
–“কারণ আমি ওকে…… ”
শেষ শব্দটা মুখের মাঝেই বন্দি হয়ে গেল অনুরাগের। নিজের অজান্তেই একটা মূল্যবান শব্দ বেরিয়ে যেতে চাইছিল। নিজের মুখের ওপর হাত বুলিয়ে সুনয়নার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সে।
আমাকে জোর করে নেত্রা আপুনি শুইয়ে রেখে গেছে। আমি ডিনারের জন্য নিচে যেতে চাইছিলাম কিন্তু তার কথা আমার শরীর দুর্বল। আমার খাবার পাঠানো হবে অনুরাগের হাত দিয়ে। উনার মতো উগ্র মেজাজের লোক নাকি আমার জন্য খাবার আনবে ভাবা যায়!!
অদ্রিজাকেও খাওয়ানোর জন্য নিচে নিয়ে গেছেন অনুরাগ। বর্ণদা খাওয়ার আগে কিছুক্ষণের জন্য আমার সাথে দেখা করে গেছে। কিন্তু তার মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি তার মনের মাঝে জমানো রয়েছে হাজারো অভিযোগ এবং অনেক কথা। সেসব বাড়ি ভর্তি লোকের জন্য বলতে পারছে না। সন্ধ্যের পর মাও গ্রামের বাড়ি থেকে চলে এসেছেন। অনুরাগ নাকি ডেকেছেন। কিন্তু ডাকার কারণ এখনো বলেননি। সবাইকে একসাথে জোড়ো করে কি করতে চাইছেন অদ্ভুত লোকটা সেটাই আমার মাথায় আসতে চাইছে না। এদিকে আমার অবস্থা শুনে মায়ের হুলস্থুল কান্ড বাঁধিয়েছে। ডক্টর কিছুক্ষণ আগেই চেকআপ করে গেছেন আমায়। এবং বলেছেন আমাকে এখন উষ্ণ তাপমাত্রায় থাকতে। তাই অনুরাগ আমায় আরো দুটো মোটা কম্বলের সাথে জড়িয়ে দিয়েছেন। এবার মনে হচ্ছে শ্বাস নিতে না পারায় আমার নির্ঘাত মৃত্যু হবে উফফ……!
আমার অবাকের সীমানা আরো কয়েকধাপ বাড়িয়ে দিয়ে ঘরে খাবারের ট্রে নিয়ে ঢুকলেন অনুরাগ। উনাকে এভাবে দেখে যেন আমার চোখটা রসগোল্লার ন্যায় হয়ে উঠল। উনি আস্তে আস্তে এসে বেডের একপাশে ট্রে রেখে আমায় ডাকলেন। আমি মাথা হালকা উঠিয়ে দেখলাম খাবারের চেহারাগুলো। সাথে সাথে গা গুলিয়ো এলো আমার। ধপ করে শুয়ে পড়লাম। অনুরাগ ধমকের সুরে বলে উঠলেন,,,,
–“অনুশ্রী! উঠো খেতে হবে। ইউ হ্যাভ টু ইট।”
আমি মাথা কম্বলের নিচে ঢুকিয়ে নিলাম। অনুরাগ আমার গা থেকে টেনে টেনে কম্বল সরিয়ে ফেললেন। হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলেন আমায়। আমি শুয়ে পড়তে নিলে আমার ঘাড়ে হাত রেখে অন্যহাত দিয়ে জোর করে মুখে স্যুপ গুঁজে দিলেন। আমি ঠোঁট উল্টিয়ে স্যুপ গিলে বললাম…..
–“সকালে স্যুপ, দুপুরে স্যুপ, বিকেলে স্যুপ, রাতে স্যুপ। জীবনটা স্যুপময় হয়ে গেল আমার!”
কথাটা বলে নাক টানলাম আমি। অনুরাগ নিজের ঠোঁট প্রসারিত করে সুন্দর করে হু হা করে হেসে দিলেন। উনার এই হাসিটা যেন এসে আমার মনে গেঁথে গেল জোর করে। হাসতে হাসতে হঠাৎই উনার মুখটা গম্ভীর হয়ে এলো। আমাকে স্যুপ খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন উনি। কয়েকদিন উনার ব্যবহারগুলো আমাকে যেন উনার প্রতি গভীরভাবে টানছে। আমার মুখে চামুচ ধরে উনি গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,,,,
–“কিছু কথা ছিল তোমার সাথে!”
–“কি কথা?”
অনুরাগ কয়েকটা শ্বাস ফেলে নিলেন। হাত থেকে চামুচটা রেখে আমায় বললেন,,,,
–“তোমাকে আমি বর্ণের মিলিয়ে দিতে চাই।”
উনার কথা বলতে যতটুকু দেরি আমার কানে আসতেই অবাকের সীমানা সপ্তম আসমানে পৌঁছাতে দেরি নেই। উনি এই কথাটা বলতে যতবার শ্বাস ফেলেছেন তা অগুনতি। আমার গায়ে যেন শতশত সুঁচ এসে বিঁধল। কোথাও মনটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না! বর্ণদা আমার ভালোবাসা। তাকে পাওয়ার আনন্দে আনন্দিত হওয়ার কথা। এমন লাগছে কেন আমার? উনি আমার জবাব না পেয়ে নিজেই সংকোচে ভরা গলায় বললেন,,,
–“আমি জানি তুমি কি ভাবছো! ভাবছো যে কি করে সম্ভব এটা। আমি তোমায় বলছি। তুমি যে বর্ণ ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবে না সেটা আমি জানি। তাই ভালোবাসাহীন জীবন তো কাটানোর থেকে ভালোবাসাময় জীবন কাটানোয় ভালো তাই না? আমার জীবন থেকে তো ভালোবাসা হারিয়েই গেছে। তোমার জীবন থেকে ভালোবাসা হারিয়ে তোমাকে অসহায় করে দিতে পারব না আমি অনুশ্রী। তাই আমি ঠিক করেছি আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাব। সেই কারণেই মা আর নেত্রাদিকে ডেকেছি। ভেবেছিলাম শুধু তুমি আমি আর বর্ণই যাব। তবে ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে। তাই সবাইকে ডেকেছি। তুমি আর বর্ণ ঘুরতে গেলে তোমাদের মাঝে থাকা সকল অভিমান আর দুরত্ব মিটিয়ে নেবে। বাড়ি ফিরলেই তোমাদের মিলিয়ে দেব আমি।”
এতোক্ষণ একমনে উনার কথা শুনছিলাম। শুনতে শুনতে নিজের চোখে কখন যে পানি চলে এসেছে খেয়ালই নেই। এ চোখের পানি সুখের নাকি দুঃখের? সব শোনার পর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,,,
–“আর অদ্রিজা! ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না অনুরাগ। ও আমার চোখের মনি। ওকে ছাড়া এক মূহুর্ত অন্ধকার মনে হয়। ওকে ছাড়া কি করে থাকব আমি?”
–“কিছু পেতে গেলে কিছু হারাতে হয়। অদ্রিজা শুধু তোমার মায়া অনুশ্রী! মায়া কাটিয়ে ফেলতে পারবে তুমি। আর অনামিকা চলে যাওয়ার পর আমিই তো ওকে ছয়টা মাস দেখে দেখে রেখেছি। বাকি জীবনটাও না হয় ওকে নিয়েই কেটে যাবে!”
কথাটা বলার সময় অনুরাগের কথার মাঝে কষ্টগুলো অনুভব করলাম আমি। তবে কিছু বলতে পারলাম না। কথা যেন বের হতে চাইছে না। অনুরাগ নিজের চশমা খুলে চোখে হাত দিয়ে বললেন,,,
–“ভেবেছিলাম কালকেই ঘুরতে যাব। কিন্তু তোমার জ্বর তাই যাওয়ার ডেট কয়েকদিন পিছানোয় ভালো। আর বর্ণ সব জানে এসব ব্যাপারে। ও আমায় বলেছিল আরো ভাবতে। কিন্তু এতে ভাবাভাবির কিছু আছে বলে মনে হয় না। যাই হোক কথার মাঝে তোমার খাওয়াও শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি এগুলো নিচে রেখে আসি।”
কথাটা বলে ট্রে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। আমি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললাম। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল দুফোঁটা পানি।
ঘরে একা একা শুয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরেই মনে হলো আমার পাশে কেউ শুয়েছে। আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকালাম। অনুরাগ আমার পেছনে শুয়ে কম্বলের ভেতরে পা ঢুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমি তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম। হুট করে মাথাটা ঘুরে গেল। মাথাটা চেপে ধরতেই উনিও উঠে বসলেন। আমাকে ধরে উত্তেজিত সুরে বললেন,,,
–“উঠেছো কেন? দেখেছো তো মাথা ঘুরছে দেখি শুয়ে পড়।”
আমাকে জোর করে শুইয়ে দিল লোকটা। আমি শুয়ে দুর্বল গলায় বললাম,,,
–“আমি নিচে ঘুমাবো। অনামিকা তো এখানে ঘুমাতো আর এখন আপনিও ঘুমাবেন।”
–“আজ থেকে তুমি বেডেই ঘুমাবে। ”
আমি চোখ খুললাম। কিছু একটা ভেবে মলিন গলায় বললাম,,,
–“কয়েকদিন পর অন্যের হয়ে যাব তাই এতো খেয়াল রাখছেন বুঝি?”
উনি আমার চোখে চোখ রাখলেন। থমকে বসলেন। চোখ সরিয়ো বন্ধ করে বললেন,,,
–“ঠিক তাই। তুমি আমার কাছে অন্য কারো আমানত। তাই তোমার যত্ন তো করতেই হবে।”
আমি ঠিকই ধরেছিলাম। উনি নিজে থেকে নয় দায়িত্ববোধ থেকে উনি যত্ন করছেন। হয়ত আমিই বোকা। ভেবেছিলাম আমার প্রতি হালকা অনুভূতি জেগেছে উনার মনে।
উনি আমার পাশে শুয়ে পড়লেন। আমি কয়েকটা ঢক গিলে অন্যপাশ ফিরলাম। কিন্তু হঠাৎ উনি আমাকে সোজা করে শুইয়ে আমার মাথায় ঠান্ডা কিছু একটা দিলেন।
–“কি দিলেন আমার মাথায়?”
–“আইসব্যাগ। তোমার জ্বরটা কমবে।”
আর কিছু না বলে সোজা হয়ে চোখ বন্ধ করলাম। বুকটা ঢিপঢিপ করছে। এই প্রথম উনার সাথে শুয়েছি। হার্ট টা বেরিয়ে আসার উপক্রম। মাঝে মাঝে বড় বড় শ্বাস ছাড়ছি আমি। কয়েক মিনিট পর উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন আষ্টেপৃষ্টে। আমাকে মিশিয়ে নিলেন নিজের সাথে। এবার প্রচন্ড ঘামছি আমি। উনি কি ঘুমের ঘোরে আমায় জড়িয়ে ধরলেন? হালকা গলা খাঁকারি দিতেই উনি চোখ বন্ধ করেই বললেন,,,
–“ডক্টর বলেছে তোমাকে সবসময় উষ্ণ পরিবেশে রাখতে। আই থিংক অন্য মানুষের জড়িয়ে রাখা পরিবেশটার মতো বেস্ট উষ্ণ স্থান আর দুটো নেই। তোমার কি সমস্যা হচ্ছে?”
আমি কপালের ঘাম মুছলাম। ঠোঁট ভিজিয়ে বললাম,,,
–“জ্বি না।”
–“ঠিক আছে ঘুমাও।”
আমি চোখ বন্ধ করলাম। আবারও খুললাম। চোখ বড়বড় করে বললাম,,,
–“আচ্ছা অদ্রিজা….”
–“ও দোলনায় ঘুমোচ্ছে। নীলের সাথে খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ওকে নিয়ে এসে দোলনায় শুইয়ে দিয়েছি।”
নিশ্চিন্ত হলাম আমি। চোখ বুজলাম ভাবতে থাকলাম। উনি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলেন কেন? উনি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন নাকি? পরক্ষণেই মনে হলো না আমি উনার দায়িত্ব। সত্যিই আমি বোকা! দায়িত্ববোধকে ভালোবাসার সাথে গুলিয়ে ফেলছিলাম। অনেক বোকা আমি। এ বিগ ফুল…..!!
চলবে….🍀🍀
বি.দ্র. গল্পটা শেষ হবে খুব তাড়াতাড়ি আর ৫-৬টা পর্বের মাঝে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।