#প্রেমমানিশা(০৩)
‘ আপাই তুই বিশ্বাস কর আমি না ভাবতেই পারছিনা তোর আর ক্রাশের বিয়ে হবে… রিয়েলি ইটস আনবিলিভেবল… ‘ আনন্দে উল্লাসে আটখানা হয়ে মুখে আটকে আসা কথাগুলো কোনোমতে উগ্রে দিয়ে শান্ত হলো অতসী। আসলেই আজ তার আনন্দের সীমা নেই। সে কোনদিন ভাবতেই পারেনি তার ক্রাশের সঙ্গে তার আপাইয়ের বিয়ে হবে । এই খবরটা যেন তার জন্য অমাবশ্যার রাতে হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো ব্যাপার ।
‘ না ভাবতে পারার কিছুই নেই…… এটাই সত্যি যে কবি সাহেবের সঙ্গে আমার বিয়ে হচ্ছে… আর তুই খুশি মানে ? তোর খারাপ লাগছে না তোর ক্রাশের সঙ্গে আমার বিয়ে হচ্ছে শুনে ? ‘ সানাহ্ বিস্ময় দৃষ্টিতে বললো।
‘ কবি সাহেব…. এই কবি সাহেব কে ? আর আমার খারাপ লাগবে কেন ? আমি ক্রাশ বয়ের উপর ক্রাশ খেয়েছি বলে ? শোন পৃথিবীতে দুই রকমের ক্রাশ খাওয়া আছে। অপশন ওয়ান হলো জাস্ট মানুষটার রীতিনীতি, চলাফেরা, কথাবার্তার ধরনের উপর ক্রাশ খাওয়া। আর অপশন টু হলো আস্ত মানুষটার উপরই ক্রাশ খাওয়া। তার দুঃখে দুঃখিত হওয়া আর সুখে সুখী হওয়া। এই ধরনের ক্রাশ আসলে ক্রাশ না সেটা হলো বাঁশ। আর এই বাঁশের সাহিত্যিক নাম হলো প্রেম বা ভালোবাসা। আমি ক্রাশ বয়ের শুধু পার্সোনালিটি আর তার লিখন শৈলীর উপর ক্রাশ খেয়েছি সো আমারটা হলো অপশন ওয়ান। ভাই আমি যেচে বাঁশ নিতে রাজি নই ওটা তোর জন্য রেখে দিয়েছি। ‘
অতসীর কথা শুনে সানাহ্ কিছুই বললো না, চুপ করে রইলো। অতসী তার প্রথম প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে সানার গায়ে ঝাঁকি দিয়ে ভ্রু কুচকে মিচকে হাসি দিয়ে বললো ‘ এই আপাই বল না এই কবি সাহেব কে ? দুলা..ভাই… নাকি হুহ ? ‘
অতসীর কথায় সানাহ্ ভ্রুক্ষেপ না করেই বললো ‘ জানিসই যখন তাহলে আর বারবার প্রশ্ন করে কানের পোকা বার করছিস কেন ? নিজের কাজে মন দে না… যা গিয়ে পড়তে বস। পড়ার নামে ঠনঠন…সারাদিন শুধু টো টো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর এর ওর ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে। গিয়ে পড়তে বস আর আমাকেও পড়তে দে… সারাদিন এসবের চক্করে কোনো পড়াই হলো না… ‘
‘ হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি যাচ্ছি…… তুই তো আছিসই সবসময় আমাকে নিজের ঘর থেকে বের করার তালে। আমারও কোনো ঠেকা পড়েনি তোর ঘরে এসে বসে থাকতে……আমি চললুম আমার ঘরে। খবরদার আমাকে জালাবি না… ‘ শেষের কথাগুলো অতসী এক লাফে সানার বিছানা থেকে নেমে সানার দিকে আঙুল দেখিয়ে চলে গেলো আর সানাহ্ অতসীর কথায় পাত্তা না দিয়ে পড়ায় মন দিল। অনেক পড়া বাকি….সারাদিন কোনো পড়াই হয়নি ।
—-
কৃষ্ণপক্ষের শেষ তিথি, চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকারের চাদরে আচ্ছাদিত। আকাশ ঘন ঘন গর্জন করে উঠছে যেন কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হবে। প্রকৃতির নিস্তব্ধতা আর বাতাসের সো সো আওয়াজ পরিবেশকে আরও গুরুগম্ভীর করে তুলেছে তবে টিপ টিপ বৃষ্টির স্পর্শের অপেক্ষায় সানাহ্ বারান্দার বাইরে হাত বাড়িয়ে দিয়ে দাড়িয়ে আছে। তার শরীর ঠেকেছে বারান্দার রেলিংয়ে। পড়া ছেড়ে উঠেছে মিনিট দশেক হয়েছে।
পরিবেশ দেখে মনে হয়েছিল প্রচন্ড বৃষ্টি হবে কিন্তু সেই আশঙ্কা পুরোপুরি মিথ্যে। কিছুক্ষনের মধ্যেই কালো মেঘ পুরোপুরি কেটে গিয়ে দিগন্ত সেজে উঠলো রাতের চিরাচরিত কালো অন্ধকার গায়ে মেখে। সানাহ্ ঘর থেকে হাতে একটা কাচের জার নিয়ে বারান্দায় এসে ঢুকলো। কাচের জারটা বারান্দার ছোটো টি টেবিলের উপর রেখে বারান্দায় থাকা বেতের চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে টি টেবিলের উপর দুই পা ক্রস করে বসলো।
সানাহ্ এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে টি টেবিলের উপর থাকা কাচের জারখানার দিকে। কাচের জারের ভিতরে খেলা করছে অজস্র রাতের জোনাকি। বাহিরে বেড়িয়ে আসার জন্য তাদের সেকি চেষ্টা। কখনও জারের এই মাথা থেকে ওই মাথায় দৌড় তো কখনও ওই মাথা থেকে এই মাথায় দৌড়। এতবার চেষ্টা করার পরও তারা যেন হার মানতে নারাজ, প্রতি নিয়ত চেষ্টা করেই চলেছে বের হওয়ার প্রতীক্ষায়।
সানাহ্ জোনাকিদের ছোটাছুটি দেখে আপন মনেই মিটমিটিয়ে হেসে উঠলো। জোনাকি পোকাদের এই ছোটাছুটি সানার দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। কাচের জারে অজস্র জোনাকী বন্দী করে রাতের আঁধারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের দিকে তাকিয়ে পার করে দেওয়া সানার অনেক পুরনো অভ্যাস। সানাহ্ জানেনা এটা করতে তার কেন এত ভালো লাগে তবুও সে এটাই করে।
হঠাৎ কারোর নিঃশ্বাসের শব্দে সানার চিত্র দর্শনে ব্যাঘাত ঘটলো। সানাহ্ বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে মানুষটার দিকে তাকাল। মিসেস কায়নাত বেশ নিঃশব্দেই মেয়ের পাশে বসেছিলেন তবুও মেয়ে কিভাবে যেন টের পেয়ে গেলো। সানাহ্ তার মাকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে টি টেবিলের উপর থেকে পা নামিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে পিঠ টানটান করে বসলো। ওর মা এভাবে বড়দের সামনে পা উঠিয়ে গা ছেড়ে দিয়ে বসা পছন্দ করেন না।
কিছু মুহূর্ত কেটে গেলো নিস্তব্ধতায়। কেউ কিছু বলছে না, আশেপাশে শুধু শোনা যাচ্ছে ঝি ঝি পোকার ডাক। মা মেয়ে দুজনেই ব্যস্ত প্রকৃতি বিলাসে। মিসেস কায়নাত মেয়ের আঙ্গুল জড়িয়ে বসে আছেন। হঠাৎ নীরবতা ভেঙে সানাহ্ বললো ‘ মা কিছু বলবে ? ‘
মেয়ের কথায় চমকে উঠলেন মিসেস কায়নাত। উনি ধারণা করেননি মেয়ে ধরে ফেলবে যে মেয়েকে কিছু বলার উদ্দেশ্যেই উনি এই ঘরে পা দিয়েছেন। মেয়ের কথায় চমকে গেলেও সেই চমক চেহারায় প্রকাশ করলেন না। নির্লিপ্তভাবে বললেন ‘ তুই ফারহানকে বিয়ে কেন করতে চাইছিস না ? ‘
‘ তোমাকে কে বললো আমি মিস্টার ফারহানকে বিয়ে করতে চাইছি না ? ‘
মিসেস কায়নাতের কথার পৃষ্ঠে উত্তর না দিয়ে সানাই উনার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো। মিসেস কায়নাত খানিকটা বিব্রত বোধ করলেন। থমথমে গলায় বললেন ‘ তোর আচার আচরণ, মুখভঙ্গি এসব তো পরিষ্কার বলে দিচ্ছে তোর এই বিয়েতে আপত্তি আছে…. ‘
‘ বুঝতেই যখন পারছো তখন আবার জিজ্ঞেস করছো কেন ? ‘
মেয়ের হেয়ালি কথাবার্তায় মিসেস কায়নাত খুবই বিরক্ত হচ্ছেন তবুও নিজেকে কোনমতে আটকে রেখেছেন কিছু বলার থেকে। উনি নিজেকে সামলে শান্ত গলায় বললেন ‘ তোর এই বিয়েতে আপত্তির কারণ ? ‘
‘ আমার কোনো আপত্তি নেই… তোমরা যখন মিস্টার ফারহানকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে ঠিক করেছ তখন ভেবেচিন্তেই ঠিক করেছ আর তোমাদের সিদ্ধান্তে আমার ভরসাও আছে । মিস্টার ফারহানের মত মানুষকে বিয়ে করতে আপত্তি করা নেহাতই বোকামি। আপত্তি আমার নয়.. মিস্টার ফারহানের… ‘ সানাহ্ বললো।
সানার কথায় যার পরনাই অবাক হলেন মিসেস কায়নাত। বিস্ময় চোখে তাকিয়ে বললেন ‘ মানে ? ‘
‘ আজ যখন খাওয়া দাওয়ার পর মিস্টার ফারহান আমার ঘরে এসেছিলেন হাত ধুতে তখনই উনি বলেছেন উনি এই বিয়ে করতে চাননা, আন্টি উনাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে তাই যেন আমি এই বিয়ে ভেঙে দেই। ‘
‘ আর তুই ? তুই কি বললি… ‘ মিসেস কায়নাতের প্রশ্নে বিস্ময়ের রেশ। উনি মেয়ের উত্তর জানতে প্রচন্ড কৌতূহল নিয়ে এই প্রশ্নখানা করেছেন।
‘ যেটা সত্যি সেটাই বলেছি.. ‘
‘ যেটা সত্যি সেটাই মানে ? তুই কি ওকে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিস ? তুই এমনটা কেন করলি সানাহ্ ? ‘
‘ মা এক কথা বারবার বলো নাতো… আমি কি একবারও বলেছি আমার এই বিয়েতে আপত্তি আছে ? তাহলে আমি উনাকে এই বিয়ে ভেঙে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কেন দিবো ? ‘ কণ্ঠে একরাশ বিরক্তি নিয়ে কথাগুলো বেশ জোরেই বললো সানাহ্। আসলেই সে বিরক্ত নিজের অনুভুতি সম্পর্কে সকলকে বোঝাতে বোঝাতে। কেমন হতো যদি সবাই সবার অনুভুতি বুঝতে পারতো ? তাহলে আর কাউকে কষ্ট করে বুঝাতে হতো না ।
সানার কথা শুনে মিসেস কায়নাতের চোখ দুটো আনন্দে জ্বলজ্বল করে উঠলো। উনি উচ্ছসিত গলায় বললেন ‘ তারমানে তুই এই বিয়ে ভেঙে দিস নী আর ওকে বিয়ে ভাঙার প্রতিশ্রুতিও দিস নী ? তারমানে তোর এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই ? ‘
সানাহ্ তার মায়ের কথায় ভ্রুক্ষেপ করলনা, চুপচাপ খানিকটা ঝুঁকে গিয়ে রাতের আঁধারে কাচের জারে বন্দী থাকা জোনাকীগুলো দেখতে লাগল। এই ঝিকমিক করা জোনাকি দেখাই যেন তার একমাত্র কাজ। মিসেস কায়নাত আর মেয়ের উত্তরের অপেক্ষা করলেন না, সোজা চেয়ার ছেড়ে উঠে হাঁটা দিলেন বান্ধবীকে কথাগুলা ফোন করে বলবেন এই উদ্দেশ্যে।
—-
নিকোটিনের তীব্র গন্ধে পুরো ছাদময় ভরে গেছে। আধো আলো, আধো অন্ধকারে ছাদের ধারে রেলিংএর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ফারহান একের পর এক টান দিয়ে চলেছে সিগারেটে। এ যেন এক সুখময় মুহূর্ত। যেই মুহুর্তে রাজ্যের সব চিন্তা এসে মাথায় ভিড় করে সেই মুহূর্তে সিগারেটের এক টানই বের করে আনে সব দুশ্চিন্তা থেকে। ফারহানকে এক ধরনের চেইন স্মোকারই বলা চলে। নিয়মিত সিগারেট খাওয়া তার নিত্য দিনের অভ্যাসের মধ্যে পড়ে।
ফারহান সেই বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত গোটা পাঁচেক সিগারেট খেয়ে ফেলেছে। কিছুতেই মাথা থেকে বিয়ের ব্যাপারটা বের হচ্ছে না। ফারহানের যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। যতক্ষণ না বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে একটা বিহিত করতে পারছে ততক্ষণ অব্দি ওর শান্তি নেই। তাইতো ব্যাপারটা কিছুক্ষণের জন্য ভোলার উপায় হিসেবে এক প্যাকেট সিগারেট হাতে তুলে নিয়েছে।
ফারহানের সিগারেট খাওয়ার অভ্যেস হয়েছে যখন ওর বাবা মারা গেছে তখন থেকে। ওর বাবা বেচেঁ থাকলে কোনদিন ওদের বাড়িতে সিগারেট খাওয়া বরদাস্ত করতেন না। উনি আবার সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। ফারহানের সিগারেট খাওয়ার ব্যাপারটা ওর মা আর ভাই দুজনেই জানে কিন্তু কেউ কিছু বলেনা। ফারহানের ছোট ভাই রুদ্র তো সিগারেট দেখলেই নাক সিটকে উঠে আর সেটা দেখে ফারহান বিশ্রী রকমভাবে হেসে উঠে।
পৃথিবীতে সব বড় ভাই বোনদের কাজই তো হলো ছোট ভাই বোনকে জালানো আর তাদের জ্বলতে দেখে বিশ্রী রকমভাবে হেসে ওঠা। ফারহানও সেইক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।
—-
সকালে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া দাওয়ার পর্ব সেরে ফারহান যথারীতি ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে পড়ে। আজ ঠিক করে রেখেছে সারাদিনে কি কি করবে । আজ যে করেই হোক অতসীর থেকে সানার নাম্বার নিতেই হবে। সানাহ্কে যে করে হোক বুঝাতে হবে যে তার আর ফারহানের মধ্যে বিয়ে সম্ভব নয়। এই বিয়ে হলে দুজনের কেউই সুখী হবে না।
ফারহান ভার্সিটির গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই আশেপাশে যারা ছিল তারা সকলেই একবার আড়চোখে ফারহানকে দেখে আবার নিজ নিজ কাজে মন দিল। ফারহান সেইদিকে চোখ না দিয়ে এগিয়ে গেলো ক্লাসের দিকে।
যেতে যেতে হঠাৎ ফারহানের চোখ পড়ল মাঠের এক কোণায় বসে থাকা অতসী আর তার বন্ধুদের দিকে। তারা নির্দ্বিধায় বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ফারহান প্রথমে ভেবেছিল সানার নাম্বার নিতে হলে এখনই নিয়ে নিবে কিন্তু পরে ভাবলো অতসীর বন্ধুদের সামনে দিয়ে নিলে একেকজন একেক কিছু ভাববে তারপর এই নাম্বার চালাচালির ব্যাপারটা পুরো ভার্সিটি ছড়িয়ে যাবে। তার থেকে ক্লাসের এক ফাঁকে অতসীকে ডেকে নিলেই হবে।
–—
‘ স্ট্যান্ড আপ… ‘
হঠাৎ এক গুরুগম্ভীর স্বরে অতসীর ধ্যান ভাঙলো। তার আশেপাশে থাকা বন্ধুরা তাকে ঠেলে দাড় করালো। সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে হকচকিয়ে গেলো অতসী। মানুষটাকে দেখে রীতিমত চমকে উঠেছে অতসী। মানুষটার উপস্থিতি নিয়ে মাথায় কোনো প্রশ্ন আসার আগেই মানুষটা বলে উঠলো ‘ টিচার ক্লাসে আসলে যে উঠে দাড়িয়ে তাকে সম্মান জানাতে হয় এই সেন্সটুকু কি আপনার নেই ? ‘
মানুষটার কথায় অতসী যেন পিলে চমকে উঠলো। বুঝে উঠতে পারলো না মানুষটা কি বলছে। মৃদু গলায় নতমুখে বলল ‘ আমি বুঝে উঠতে পারছি না আপনি কি বলছেন ? ‘
এবার যেন সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা অসস্তির মুখে পড়লো। অতসীর দিকে কটমট চাহনি দিয়ে রাগী গলায় বললো ‘ আপনি কি জানেন না আজ থেকে আপনাদের সাবজেক্ট প্রফেসর চেঞ্জ হয়েছে ? ‘
অতসী মানুষটার কথা শুনে উপর নিচে মাথা দুলিয়ে বলল ‘ না স্যার…আমি কাল এই ক্লাস হওয়ার আগেই ইমার্জেন্সী ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম… তাই… ‘
‘ বেরিয়ে যাও…’
হঠাৎ মানুষটার বলা কথার মানে বুঝে উঠতে পারলো না অতসী। অতসী বললো ‘ স্যার আপনি কি আমাকে বললেন ? ‘
‘ হ্যাঁ হ্যাঁ তোমাকেই বলেছি…… আমার ক্লাসে এসব এক্সকিউজ চলবে না। যদি ক্লাসে মন দিতে না পার তাহলে আসবে না । নাও গেট আউট… ক্লাসের বাহিরে বেরিয়ে যাও। ‘
‘ কিন্তু স্যার……’
‘ আই সেইড জাস্ট গেট আউট…… ‘
মানুষটার কথা শুনে অতসীর বেজায় রাগ হলো। মনে মনে দাতে দাত চেপে বললো ‘ বাচ্চু আমাকে ক্লাস থেকে বের করা ? এর প্রতিশোধ তো আমি নিবই। ইউনিক প্রতিশোধ নিবো..… টক ঝাল মিষ্টি প্রতিশোধ। ‘
কথাগুলো ভেবেই অতসী প্রচ্ছন্ন বাঁকা হেসে হনহন পায়ে রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলো। অতসী ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতেই মানুষটা কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো অতসীর যাওয়ার পানে।তারপর দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললো ‘ তোমরা নিশ্চয়ই আমার পরিচয় জান না ? তাই আমার পরিচয় আমি নিজেই দিচ্ছি। আমি হলাম তোমাদের নিউ প্রফেসর, প্রণয় ইফতেজার। ‘
প্রণয় তার পরিচয় দিতেই ক্লাসে এক ছোটখাটো হইচই পড়ে গেলো। প্রণয় সকলের উদ্দেশ্যে আবারও বললো ‘ সো স্টুডেন্টস আজ থেকে যেহেতু আমি তোমাদের ক্লাস নিবো সেহেতু তোমাদের আগের প্রফেসর যা পড়িয়েছিলেন তাতে কোনো কনফিউশন থাকলে বলো…. আমি ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। কনফিউশন ক্লিয়ার হওয়ার পর কাল থেকে আমরা নিউ চ্যাপ্টার ধরবো। আন্ডারস্ট্যান্ড ? … ‘
সকলে মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই প্রণয় আবারও বললো ‘ অ্যান্ড ওয়ান থিং…… আমার ক্লাস করতে হলে মনযোগী হতে হবে নাহলে আমার ক্লাস করার দরকার নেই। আমার ক্লাসে ঢোকার আগে নিজেদের অন্য কোথাও রেখে আসা মন নিজেদের সঙ্গে করেই আনবেন যেন ক্লাসেই মন থাকে। আন্ডারস্ট্যান্ড ? ‘
—-
‘ কই মতি মিয়া এক কাপ এসপ্রেসো দাও দেখি……কতদিন পর এলাম ক্যান্টিনে। আজকাল তো সময়ই হয় না… ‘
অতসীর ডাকাডাকিতে মতি মিয়া ক্যান্টিনের কিচেন ছেড়ে হাসিমুখে বেরিয়ে এলেন। দাত কেলিয়ে উনার পান খেয়ে লাল হয়ে যাওয়া দাতগুলো দেখিয়ে হেসে বললেন ‘ আজকাল তো ছোট দিদিমণির পাত্তাই পাওয়া যায়না… আমার হাতের কফিও খেতে আসে না। ব্যাপারখান তো সুবিধার না। ব্যাপারখান কি দিদিমণি ? বিয়া শাদির কথাবার্তা চলে নাকি ? বড় দিদিমণিও এখন আর আসে না…… ‘
‘ তুমি দেখি ভালোই কল্পনা করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছ মতি মিয়া। বিয়ে শাদীর কথা তো চলছেই……কিন্তু আমার নয়। আপাইয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। এবার হয়তো আপাই বিয়ে করেই ফেলবে। লক্ষণ সব পজিটিভ..… ‘ অতসী বললো।
‘ আরে আরে কি কও কি……এ দেখি বড় খুশির খবর। তা বিয়া শাদির কোনো তারিখ ঠিক হইসে ? আর বিয়া কার লগে হইবো বড় দিদিমনির? দিদিমণি এমনই এমনই কাউরে বিয়া করবো না…ছেরা কেডা ? ‘ মতি মিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অতসীর দিকে তাকিয়ে বললো।
‘ আলবাত খুশির খবর। আমি যতটুকু জানি সামনের মাসে আপাইয়ের আকদ। হয়তো বিয়ের পরপরই আপাকে শশুর বাড়িতে উঠিয়ে দেওয়া হবে না। তার অনার্স শেষ হলে শশুর বাড়ি উঠবে। মানুষটা কে সেটা তো বলা যাবে না মতি মিয়া… তাকে আপনারা সবাই চিনেন তবে আমি বলবো না । এটা ঠিক আপাই যাকে তাকে বিয়ে করবে না তাই মানুষটা অনেক স্পেশাল। তা এসপ্রেসো টা নিয়ে এসো তো… ‘
অতসীর কথায় মতি মিয়া চলে গেলো কফি আনতে। মতি মিয়া যেতেই সেখানে সকলকে অবাক করে হাজির হলো ফারহান। ফারহানকে ক্যান্টিনে দেখে সেখানে উপস্থিত সকলেই অবাক হলো। একে অপরের দিকে ইশারায় কথাবার্তা চালাচালি করলো।
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্…
ছবিয়াল: পিন্টারেস্ট
( যথা সম্ভব রেসপন্স করার চেষ্টা করবেন তাহলে এতে লেখিকার মনোবল বাড়বে। হ্যাপি রিডিং 🖤🖤 )