#প্রেমমানিশা(৩৬)
ফারহানের সারপ্রাইজ পেয়ে বেশ খুশি হলো সানাহ্। তার আনন্দের বহর সে দেখাতে পারছে না তবে সে অনেক খুশি। ফারহান আর তার কাছে সেম রিং। দুজনেই যদি একই রিং পড়ে তাহলে লোকে নির্দ্বিধায় ধরে নিবে ওরা স্বামী স্ত্রী যেটা আসলেই সত্যি। সানাহ্ এবার ফারহানের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাতটা এগিয়ে দিয়ে বললো ‘ তা নিজে যখন কষ্ট করে এনেছেন তখন পরিয়েও দিন। ‘
ফারহান জবাবে কিছু বললো না। হাতটা বাড়িয়ে সানার কাছ থেকে রিং বক্স নিলো। তারপর হাতটা এগিয়ে দিয়ে সানার বাম হাতের অনামিকায় আংটিটা পরিয়ে দিল। সানাহ্ এবার আকাশের রূপালী থালার মতো দেখতে চাঁদের আলোয় নিজের আংটি পড়া হাতটা মেলে ধরলো। মেহেদী পড়া হাতে আংটিটা যেন অবিশ্বাস্য রকম সুন্দর লাগছে।
সানাহ্ হঠাৎ আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই খানিকটা চিৎকার দিয়ে ফারহানের দিকে ঝুঁকে গিয়ে নিজের অনামিকায় থাকা আংটিটা দেখিয়ে বলল ‘ আংটিতে আপনার নাম খোদাই করিয়েছেন ? ‘
ফারহান হাসলো। আসলেই সানার আংটিতে সে তার নাম খোদাই করিয়েছে। দূর থেকে দেখলে বুঝা যাবে না তবে খুবই সূক্ষ্ম ভাবে খোদাই করা ‘Farhan’ লেখাটা। তবে ফারহান উত্তর না দিয়ে খানিকটা এগিয়ে এক পাশ থেকে সানাহ্কে জড়িয়ে ধরলো। সানার কাধে থুতনি ঠেকিয়ে বললো ‘ সবসময়ের জন্য আপনাকে নিজের সঙ্গে জুড়ে নিয়েছি মিসেস ফারহান। এখন তো লোকে আংটিতে আমার নাম দেখলেও বুঝবে আপনি ফারহান ইমতিয়াজের বউ। ‘
ফারহানের মুখে ‘বউ’ কথাটা শুনে চুপ রইলো সানাহ্। নিশ্চুপ হয়ে ফারহানের উষ্ণ আলিঙ্গন অনুভব করছে সে। তবে কিছুক্ষণ পর ফারহানের হাতে হাত রেখে হাত ছাড়ানোর ভঙ্গিতে বললো ‘ উহু ছাড়ুন… ‘। ফারহান অবাক হলো তবে সঙ্গে সঙ্গেই ছেড়ে দিল সানাহ্কে। ফারহানের কাছ থেকে ছাড়া পেতেই ঘরের দিকে ছুটলো সানাহ্। যাওয়ার আগে অবশ্য বলে গেলো ‘ আপনি চাঁদ দেখুন, আমি আসছি। ‘
ফারহান রেলিংয়ের ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। বসন্তের রাতে চারদিক বসন্তের ফুলেল ঘ্রাণে ভরে উঠেছে। আশপাশ থেকে কাঠাল চাপা ফুলের ঘ্রাণ আসছে। বারান্দার ইনডোর প্লান্ট এ লাগানো কৃষ্ণচূড়া গাছে কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে। লালাভ কৃষ্ণচূড়া বিষাদ মাখা মনকে ভালোবাসায় ভিজিয়ে দেয় আর মনের ভালোবাসাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কৃষ্ণচূড়ার কথা ভেবে ফারহান তুললো কবি সৌম্যকান্তি চক্রবর্তীর লেখা এক কবিতা,
কৃষ্ণচূড়ার রঙ লেগেছে
মনের গভীর কোণে –
তাইতো ভাবি তোমায়
এত পড়ছে কেন মনে ?
কৃষ্ণচূড়া লাল রঙেতে
ভরিয়েছে বসন্ত –
আমার মনের কষ্ট
কেন ভরায় হৃদয় দিগন্ত !
কৃষ্ণচূড়া তোমার রঙে
ছড়ায় কত আলো !
আমার ছোট্ট অণু যে নেই
লাগছে না তাই ভালো !
কৃষ্ণচুড়া তুমি আমায়
করতে পারোনি সুখী-
মনের দুঃখ কষ্টটাকে
কেমনে চেপে রাখি !
কৃষ্ণচূড়া আমার প্রিয়
মেয়েকে এনে দাও !
তোমার খুশির রঙের আলো
আমার মনে ও ছড়াও ! –
ফারহান যখন মনে মনে কৃষ্ণচূড়া নিয়ে কবিতা আওড়াতে ব্যস্ত তখনই ওর পাশে এসে সানাহ্ দাড়ালো। হাতে তার মাঝারি সাইজের একটা কার্টুন বক্স। ফারহান সানাহ্কে দেখে অচিরেই তার হাতের বক্সের দিকে নজর দিল। সানাহ্ এবার তার দিকে বক্সটা এগিয়ে দিয়ে ইশারা করলো খুলতে। ফারহান বক্সটা হাতে নিয়ে ডিভানের দিকে এগিয়ে গেলো। সানাহ্ এবার বারান্দার নীলাভ আলো বন্ধ করে শুভ্র বাতি জ্বালিয়ে দিল।
বক্সের ভিতর থেকে যে এইটিস এর রেডিও পাবে এটা অন্তত আশা করেনি ফারহান। রেডিও পাওয়াটা তার জন্য অবিশ্বাস্য ঠেকলো। সে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রেডিওটার দিকে। দেখে মনে হচ্ছে বেশ পুরনো তবে এত বছর খুব ভালো করেই যত্নে রাখা হয়েছে সেটাও বুঝা যাচ্ছে। রেডিওটা সিলভার কালারের। সাইজে বড় আর মাঝারির মধ্যবর্তী। খুব সহজেই যে কোনো জায়গায় বহন করা যাবে।
‘ বাহ্ বেশ চমৎকার একটা জিনিস দিয়েছেন তো মিসেস ফারহান। বিয়ের রাতে আপনার কাছ থেকে এত সুন্দর উপহার আশা করিনি। সত্যি করে বলুন তো রেডিওটা কার ? ‘ সানার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো ফারহান।
সানাহ্ বারান্দার দেওয়াল ঘেঁষে মেঝেতে বসে আছে। তার দৃষ্টি আকাশের দিকে নিবদ্ধ। তবে সে ফারহানের কথা শুনেছে তাই জবাবে ছোট করে বললো ‘ আমার বাবাইয়ের। ‘
ফারহান সানার উত্তর শুনে যেন আরও খুশি হলো। বারান্দার শুভ্র বাতি নিভিয়ে আবারও নীলাভ আলো জ্বেলে দিলো। রেডিওটা নিয়ে সানার পাশে গিয়ে বসলো। শরীর ঠেকিয়ে দিয়েছে সানার গাঁয়ে। এবার রেডিওটা ছেড়ে দিল। সুন্দর এক পুরনো দিনের গান বাজছে রেডিওতে~
এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?
যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?
তুমিই বলো
এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো….
ফারহান আর সানাহ্ দেওয়ালের গাঁয়ে গা ঠেকিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। রাতের আঁধারে এ যেন এক আলাদা অনুভুতি। একে অপরের গায়ে উষ্ণ নিশ্বাস ঠেকছে। ফারহানের নাকে সানার গায়ের মিষ্টি মন মাতানো গন্ধ ঠেকছে। মনে হচ্ছে এই ঘ্রাণ নিয়ে সে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবে। সানাহ্কে নিজের এতটা কাছাকাছি পেয়ে নিজেকে সামলানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে ফারহানের জন্য। তার উপর অদ্য রজনী তাদের প্রথম রজনী।
তবে সানার সেসব দিকে খেয়াল নেই। সে আদুরে বিড়ালের ন্যায় ফারহানের গায়ের উষ্ণ ওম নিয়ে ফারহানের বুকে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। যে কেউ দেখলে মনে করবে সে ঘুমোচ্ছে কিন্তু না সে ঘুমাচ্ছে না। সে মনযোগ দিয়ে গান শুনছে আর ফারহানের সঙ্গে রাতের নিস্তব্ধতা অনুভব করছে। ফারহান সানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল ‘ তুমি যে তোমার বাবাইয়ের রেডিওটা দিলে… সেটা কি আমাকে বিশ্বাস করে দিলে ? যদি তোমার গিফট আমার ভালো না লাগত তাহলে কি করতে ? ‘
‘ কবুল বলে যখন আপনাকে নিজের অধীনস্থ করেছি তখন অবিশ্বাস করার প্রশ্ন আসে না। আর আপনার ভালো না লাগলে কি আপনাকে চমকে দেওয়া আমি বন্ধ করে দিবো ? ভালো না লাগলে সেটা আপনার ব্যাপার। দেওয়াটা আমার ব্যাপার।
আমার সমস্ত দেহ, মন,অনুভূতি আর আমার ভালবাসাগুলোকে আমি আপনার অধীনস্থ করেছি। আপনাকে আমার সবকিছুর মালিকানা দিয়েছি। মালিকানা দিয়ে কি আবার ফেরত নেওয়া যায় ? ‘ সানাহ্ খানিকটা ঘুমঘুম কন্ঠে বলল।
ফারহান হাসলো। সানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো ‘ দোয়া করি তোমার সবকিছু যেন আমার হয়। তোমার চঞ্চলতাও আমার,তোমার বিষাদও আমার। তোমার সবকিছুই আমিময় হোক। ‘
বিনিময়ে সানাহ্ কিছু বললো না। ফারহানকে আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে তার গলায় উষ্ণ স্পর্শ এঁকে দিলো। ফারহান মুচকি হেসে সানাহ্কে কোলে তুলে রুমের দিকে হাঁটা দিল।
—-
বিছানার চাদরটা আরেকবার টান দিয়ে নিজের মেলে দেওয়া চুলগুলো হাত খোঁপা করে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলো সানাহ্। বাথরুমের কাছ দাড়িয়ে আঙ্গুল দিয়ে তিন পর্যন্ত গুনে এবার বাথরুমের দরজায় মৃদু নক করে বললো ‘ এই যে মিস্টার বাথরুম আপনি কি আজকে বের হবেন না ? ‘
ঐপাশ থেকে উত্তর এলো ‘ মিসেস বাথরুম আমার চোখে যে সাবান। এখন বের হতে পারছিনা। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। ‘
ফারহানের কথায় সানাহ্ কটমট করে বললো ‘ আপনি আমাকে কি বললেন ? মিসেস বাথরুম ? ‘
ফারহান আবার বললো ‘ বাহ্ রে আপনি আমাকে মিস্টার বাথরুম বললে সমস্যা নেই আর আমি মিসেস বাথরুম বললে সমস্যা। আমি মিস্টার বাথরুম হলে আপনি মিসেস বাথরুম হবেন না ? আপনি তো আমার মিসেস তাইনা ? ‘
ফারহানের কথায় দমে গেল সানাহ্। মৃদু গলায় বললো ‘ মা আর আম্মু আপনাকে ডাকছে। এখন না গেলে ব্যাপারটা খারাপ দেখায়। ফুপিও আছেন। খারাপ কিছু ভাবতে পারেন। ‘
সানাহ্ কথা বলতে বলতেই বেরিয়ে এলো ফারহান। পরনে আরাবের দেওয়া শার্ট আর জিন্স। এমনিতেও নিজের জামা কাপড় বলতে সে কিছুই আনেনি। তাদের রাতে থাকার পরিকল্পনা হুট করে তাকে জানানো হয়েছিল।
মাথার চুলগুলো টাওয়েল দিয়ে মুছতে মুছতে ফারহান আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। টাওয়েলটা সিটিং টুলে রেখে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললো ‘ ফুপি কি ভাববে ? একটু আমিও শুনি। সব তুমি আন্দাজ করলে কি করে হবে ? তোমার হাজব্যান্ড হওয়ার খাতিরে আমার জানা উচিত। ‘
সানাহ্ ফারহানের কথা না শোনার ভান করে সিটিং টুল থেকে টাওয়েল তুলে বারান্দায় মেলে দিলো। তারপর আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের খোঁপা করা চুলগুলো খুলে টুলে বসে জট ছাড়াতে শুরু করলো। ফারহান বিছানায় বসে সানার চুলের জট ছাড়ানো দেখছিল। সানাহ্কে চুল নিয়ে রীতিমত যুদ্ধ করতে দেখে এগিয়ে এসে সানার পিছনে হাঁটু মুড়ে বসলো। সানার কাছ থেকে চিরুনি নিয়ে নিজে চুলের জট ছাড়াতে শুরু করলো।
সানাহ্ ফারহানের কাজে অবাক হলো না। সে মিসেস আশার কাছে শুনেছে ফারহান নাকি তার চুলে বেনি করে দিত সে অসুস্থ হলে। ফারহান চুলের জট ছাড়াতে ছাড়াতে বললো ‘ চুল নিয়ে এভাবে যুদ্ধ করলে বুড়ি হওয়ার আগেই চুল সব পড়ে যাবে। আমার নিজের বউকে বুড়ো হওয়ার আগেই টেকো বউ রুপে দেখার ইচ্ছা নেই। ‘
সানাহ্ এবারও বিনিময়ে কিছু বললো না। চুপচাপ আয়না দিয়ে ফারহানের চুল আঁচড়ানো দেখছে সে। ফারহান জট ছাড়িয়ে চুলে বেনি করে হাত বাড়িয়ে চুল বাঁধার ব্যান্ড চাইলো। সানাহ্ সেটা এগিয়ে দিতেই ফারহান বেনিতে ব্যান্ড দিয়ে বেঁধেই উঠে দাঁড়ালো। সানার বেনির গোচ্ছা হাত দিয়ে পিছনে এনে বলল ‘ চুলের গোড়া সব খসখসে হয়ে গেছে। তেল দেওয়া উচিত তোমার। ‘
সানাহ্ এবার ফারহানের দিকে ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরে ফারহানের পিঠে হাত রেখে বললো ‘ আপনি আছেন তো। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরলে ছুটির দিনগুলোতে চুলে তেল দিয়ে দিবেন। ‘ ফারহান সানার কথায় উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। সানাহ্কে জড়িয়ে ধরে এই সময়গুলো অনুভব করছে সে।
—-
নাচের স্কুলে এতদিন পর এসে যে রেজিগনেশন লেটার পাবে সেটা সানার কাছে অপ্রত্যাশিত কোনো ব্যাপার ছিল না। এতদিনের অসুস্থতা আর বিয়ের ব্যস্ততায় সে দু দন্ড আসতে পারেনি স্কুলে। তবে হেড স্যার ওকে রেজিগনেশন লেটার না দিলে ও নিজেই এপ্লাই করতো এর জন্য। একে তো বিয়ে করেছে তার উপর সামনে ফাইনাল এক্সাম। এই সময় সম্ভব না স্কুলে আসা। তবে ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য খারাপ লাগছে সানার। বাচ্চাগুলো তাকে খুব পছন্দ করে।
চাকরিতে এসে রেজিগনেশন লেটার পেয়ে কেউ যে মিষ্টি বিলোয় সেটা জানা ছিলনা মিস্টার মনিরুজ্জামানের। উনি হতবাক হয়ে সানার কাজকর্ম দেখছেন। মেয়েটা কি চাকরি হারানোর দুঃখে পাগল হয়ে গেলো ? নাহলে এরকম পাগলামি করার মানে কি ? উনি যতটুকু জানেন সানাহ্ মেয়েটার বাবা বেশ বড়লোক। তাহলে সামান্য এক চাকরি হারিয়ে মেয়েটা পাগল হলো কেন ?
সবাইকে মিষ্টি বিলিয়ে সানাহ্ যখন মিস্টার মনিরুজ্জামান কে মিষ্টি দিলো তখন উনি গলা ঝেড়ে কাশলেন। বললেন ‘ কি ব্যাপার সানাহ্ ? হঠাৎ মিষ্টি দিচ্ছ ? ‘
সানাহ্ মন ভোলানো হাসি হেসে বললো ‘ আমার বিয়ে হয়েছে স্যার। এই তো কাল বিকেলে। তাই মিষ্টি দিচ্ছি। ‘
সানার বিয়ের খবর শুনে সকলেই সাধুবাদ জানালো। বাচ্চারাও অনেকে মন খারাপ করলো তবে সানাহ্ মাঝে এসে দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাচের স্কুল থেকে বেরিয়ে এলো। চোখের কোনে অশ্রুরা ভিড় করেছে। অনেকদিন সে এই স্কুলে চাকরি করেছে। স্কুলের মানুষদের, কলিগদের আর বাচ্চাদের প্রতি মায়া পড়ে গেছে। তাদের ছাড়তে মনই চাইছে না। কিন্তু সে মায়া বাড়ালো না। ছেড়ে দিল চাকরি। অশ্রুজল চোখে ভার্সিটির পথে এগিয়ে গেলো।
সবেমাত্র ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে বেরিয়েছে সানাহ্। ক্লাস শেষ হওয়ার আগে ফারহান টেক্সট করেছিল বিকেল পাঁচটায় ধানমন্ডি লেকে দেখা করতে। আজ ওদের ধানমন্ডি লেক ঘুরে বেড়ানোর কথা। কাল রাতেই কথা হয়েছে ওদের। আজ নিজেদের শেষবারের মতো সময় দিবে। এরপর কাল থেকে ঢাকা শহরের যান্ত্রিক জীবন আর পরীক্ষার ব্যস্ততায় দুজনেই ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
প্রণয় এক শাড়ি পরিহিতা রমণীর মুখোমুখি বসে আছে। রমণীর পরনে কাচা হলুদ রঙের শাড়ি। রমণীর বেণী করা চুলে সুন্দর করে বেলি ফুলের মালা বাঁধা তবে যে পড়িয়েছে সে যে একেবারেই দক্ষ নয় এসবে সেটা ভালো করেই বুঝা যাচ্ছে। কোনোমতে ক্লিপ দিয়ে পেঁচিয়ে পুচিয়ে দিয়েছে। আর চুলও কোনোমতে কোমর পর্যন্ত নেমেছে।
প্রণয় রমনীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছে। রমণী এবার ফারহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো ‘ হায়, আই অ্যাম লিজা। ‘
তবে লিজা নিজের কথার উত্তরে জবাবটা পেলো অন্য ভাবে। লিজার কথা শুনে প্রণয়ের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসিটুকু আরও চওড়া হলো। সে বলল ‘ আমি জানতাম তোমার চুল কোমর ছাড়িয়েছে। তাহলে হঠাৎ কোমর পর্যন্ত উঠে এলো ? অন্তত বিল্টু আর ময়না তো তাই বলেছে। ‘
প্রণয়ের কথায় লিজার মুখের হাসিটায় চিড় ধরলো। সে খানিকটা ঢোক গিলে বললো ‘ না মানে এখন বসন্ত এসেছে। কয়েকদিন পর গ্রীষ্মও আসবে। গরম আমি সহ্য করতে পারি না তাই চুলগুলো কেটে ছোট করেছি। ‘
প্রণয় যেন লিজার উত্তরের ধার ধারলো না। বরং কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘ কি খাবে ? ক্যাপাচিনো নাকি কোল্ড কফি ? ‘
লিজা এবার সামান্য ঢোক গিলে খানিকটা চিন্তা করলো। যা মন চায় তাই বলে দিলে তো হয়না। বলা যায়না আবার কোন ভুল ধরে বসে। এমনিতেই যা মারকাটারি লুক নিয়ে বসে আছে। তাই খানিক ভেবে চিন্তে লিজা বললো ‘ কোল্ড কফি ‘
এবার প্রণয়ের মুখের হাসি যেন আরও বিস্তৃত হলো। অবাক হওয়ার ভান ধরে বললো ‘ সেকি তোমার তো ক্যাপাচিনো পছন্দ তাইনা ? কোল্ড কফি তো তুমি খেতেই পারো না। সেদিন যখন তোমাকে কোল্ড কফি অফার করলাম তখন তো তাই বলেছিলে। ‘
এবারও ফাঁকা ঢোক গিললো লিজা। তার এবার মনে ভয় ধরেছে। প্রণয় যে হারে তাকে উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করছে তাতে আরেকটা উল্টাপাল্টা উত্তর দিলেই প্রণয়ের সন্দেহ হবে। তবে প্রণয় এবার ওকে অবাক করে দিয়ে বলল ‘ যাই হোক ওসব কথা বাদ দাও। এবার বলো কি খাবে ? রাশেদ মামার ঝাল ফুচকা ? ‘
প্রণয়ের কথায় সস্তির নিশ্বাস ফেললো লিজা। মুচকি হেসে বলল ‘ আরে না ওটা কেন খাবো। ফুচকা তো অনেক ঝাল। ঝাল আমি খেতে পারিনা। ঝালে আমার এলার্জি আছে। তুমি বরং অন্য কোনো আইটেম অর্ডার করো। ফুচকাই কেন খেতে হবে ? ‘
কথাটা সরল মনে বললেও প্রণয় এবার লিজার আশঙ্কা সত্যি করে দিলো। ভ্রু কুচকে বললো ‘ তুমি না বলেছিলে ঝাল খাওয়া তোমাদের বংশগত বৈশিষ্ট্য ? তুমি তো তোমার ফ্রেন্ডদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ঝাল খাওয়ার চ্যালেঞ্জ করো তাইনা ? ‘
এবার লিজা পড়েছে ফ্যাসাদে। মুখটা তার ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে উঠছে। তবে এবারও প্রণয়কে তার প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো না। প্রণয় এক রকম প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বললো ‘ আচ্ছা তাহলে আমরা ফাস্ট ফুড কর্নারে যাই। ওখানে শর্মা থাকতে পারে। শর্মাতে তো আর ঝাল নেই। ‘
প্রণয়ের কথায় সায় দিল লিজা। দুজনে উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে গেলো ফুড কর্ণারের দিকে। প্রণয় লিজাকে এক পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে নিজে গেলো অর্ডার আনতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার অর্ডার নিয়ে ফিরে এলো। লিজা লক্ষ্য করলো প্রণয় ওর জন্য শর্মা আনলেও নিজের জন্য কিছু আনেনি। লিজা বললো ‘ কি ব্যাপার ? তুমি খাবে না ? ‘
‘ নাহ্ খেতে ইচ্ছা করছে না। ‘
প্রণয়ের কথায় আর কথা বাড়ালো না লিজা। এমনিতেই সে ঝামেলায় পড়েছে এখানে আসতে রাজি হওয়ায়। এখন যত তাড়াতাড়ি প্রণয়ের সামনে থেকে কেটে পড়া যায় তত ভালো।
শোনা যায় ফাগুন প্রেমের আগুন। ফাগুন যখন তার উপস্থিতি ধীরে ধীরে প্রকাশ করতে শুরু করে তখনই প্রকৃতিতে প্রেমের মাতম উঠে। কিন্তু এইবার ফাগুন কারোর বুকে জালিয়েছে বিরহের আগুন। অতসী দাড়িয়ে আছে ধানমন্ডি লেককে ঘিরে থাকা প্রকান্ড ব্রিজে। তার আজ এখানে দাড়িয়ে থাকতে খুব ভালো লাগছে। হালকা প্রকৃতির বাতাসে গা ভাসিয়ে দাড়ানো যেন এক আলাদা সুখ। এই ব্রিজ থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায়।
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….
( আর একটা পর্ব আছে কাজেই আপনাদের সর্বাত্মক রেসপন্স আশা করছি। আমাকে হতাশ করবেন না আশা করি। সবার গঠনমূলক মন্তব্য চাচ্ছি। গল্পের ফ্লো কেমন লাগছে আপনাদের কাছে ? মন্তব্য আবশ্যক )