#ভ্যাম্পেয়ার_রাজ্য
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা
#পর্বঃ ০৫
শুভ্র প্রিশাকে কোলে তুলে নিয়েই মেয়েটির কাছে এগিয়ে যায়। পর্যবেক্ষণ করে দেখলো মেয়েটির হাতের আঘাতটা কোনো প্রাণীরই দেওয়া।
শুভ্র প্রিশাকে এক হাতে জড়িয়ে রেখে অন্য হাতে ফোন বের করে শায়ানকে তাড়া দিয়ে আসতে বললো। মিনিটের মধ্যেই শায়ান উপস্থিত হয় সেখানে। শায়ান একবার প্রিশার দিকে তাকায় আর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো
” কি হয়েছে দুজনের ? আর এই মেয়েটা কে?”
শুভ্র মেয়েটার দিকে একপলক তাকিয়ে বললো
” জানি না। এখানে এসে আহত আর অজ্ঞান অবস্থাতেই দেখতে পেয়েছে আমরা। রক্ত দেখে প্রিশা ভয় পেয়ে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে। তুই মেয়েটাকে বাড়িতে নিয়ে চল আর আমি প্রিশাকে নিয়ে যাচ্ছি।” শায়ান ভ্রু কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকায় আবারও। ভালো করে চেহারা দেখা যাচ্ছে না কিন্তু মেয়েটার আহত রাতের রক্ত শায়ানকে টানছে। শায়ান রক্তের নেশায় দুই পা এগোতেই শুভ্র কড়া গলায় বললো
” ভুলেও এরকম কিছু করবি না। চুপচাপ বাড়িতে নিয়ে চল।” শায়ানের মুখ কালো হয়ে যায়। রক্ত থেকে এড়িয়ে যেতে মেয়েটার আঘাত প্রাপ্ত স্থানে হাত বুলিয়ে দেয়। মেয়েটার হাতে থাকা আঘাতের চিহ্ন হারিয়ে গেলো। শায়ান শুভ্রকে বললো
” কিন্তু অপরিচিত একটা মেয়েকে বাড়িতে কিভাবে নিয়ে যাবো ?”
শুভ্র রাগি গলায় বললো
” আহত একটা মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে মহাবিশ্ব অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। আর হয়ে গেলেও কিছু আসে যায় না। আমাদের সাহায্য করা প্রয়োজন সেটাই করবো। বিপদ হলে হবে এবার কথা না বাড়িয়ে মেয়েটাকে নিয়ে যা। আমি আসছি আর মেয়েটার হাতে পাথরটা তোর কাছে রাখ আমানত হিসেবে। মেয়েটার জ্ঞান ফিরলে তার কাছে ফিরিয়ে দিবি।”
শায়ান মাথা নেড়ে সায় জানায়। শায়ান মেয়েটাকে নিয়ে চলে যেতেই শুভ্র প্রিশাকে নিয়ে প্রিশার ব্যালকনি দিয়ে রুমে আসলো।
প্রিশাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে চোখে মুখে কয়েকবার পানির ঝাপটা দিলে প্রিশা আধো আধো চোখ খুললো। শুভ্র তা দেখে কিছুটা অস্থির গলায় বললো
” ঠিকাছো তুমি ? কেমন লাগছে এখন ?”
প্রিশা আধখোলা চোখে অস্থির গলায় বিড়বিড় করতে থাকে
” রক্ত ! রক্ত !” শুভ্র প্রিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শান্ত গলায় বললো
” ভয় পেয়ো না। রক্ত কোথাও নেই এখন। তুমি ঘুমাও।” প্রিশা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আবারও চোখ বন্ধ করে নেয়। শুভ্র মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। প্রিশার গভীর ঘুমের আভাস পেতেই শুভ্র সরে আসে প্রিশার কাছ থেকে। ব্যালকনির দরজাসহ রুমের জানলা গুলো বন্ধ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
লিভিং রুমে সবাই চুপ চাপ বসে রয়েছে। সিদ্ধার্থ হেল্ড, সৈকত, সিদার তাদের বাইরের কাজ শেষ করে চলে এসেছে। সাইরা পড়াশোনা করলেও প্রিশা আসায় আজ বাড়িতেই ছিলো।
শুভ্র এসে সবার দিকে তাকিয়ে শায়ানের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লো
” মেয়েটা কোথায় ?” শায়ান গেস্টরুমের দিকে ইশারা করে বললো
” রুমে রেখে এসেছি। সাইরা বসে আছে পাশে।”
রিমা চিন্তিত হয়ে বললো
” কে মেয়েটা ? কোথায় পেয়েছিস তাকে ?”
শুভ্র সোফায় বসতে বসতে বললো
” জঙ্গল থেকে সাদা আলোর উৎস দেখা যাচ্ছিলো। সেটা দেখেই সেখানে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি মেয়েটা আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। গায়ে কোনো এক প্রাণীর দেয়া আঘাতও ছিলো। তাই নিয়ে এসেছি।”
পাখি কিছুটা বাহবা স্বরেই বললো
” খুবই ভালো করেছো। কিন্তু এতো রাতে জঙ্গলে এই অবস্থায় পেয়েছো তারমানে নিশ্চই কোনো বিপদ রয়েছে মেয়েটার।”
দিদার হেল্ড বললো
” কালকে মেয়েটার সাথে কথা বললে সব কিছু জেনে নিলেই হবে। এবার সবাই চলো ডিনার করতে হবে। প্রিশা কোথায় ?”
শুভ্র আমতা আমতা করে বললো
” প্রিশার রক্তের ফোবিয়া রয়েছে হয়তো তাই রক্ত দেখে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো। এখন ঠিকাছে তবে ঘুমাচ্ছে।” সবাই শুভ্রর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকে। শুভ্র তা দেখে বললো
” আরে প্রিশাই তো মেয়েটাকে দেখেছিলো আগে তাই ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম।”
সিদ্ধার্থ হেল্ড বললো
” ঠিকাছে চলো সবাই।”
কিছুক্ষণ নড়াচড়ার পর একেবারে ঘুম ভেঙে গেলো প্রিশার। প্রিশা ঘুমঘুম চোখে পাশে তাকালে পাখিকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেলো। খিধায় তার পেট চু চু করতে ব্যস্ত। মনে হচ্ছে পেটের ইঁদুররা শিকারে নেমেছে। প্রিশা লাইট অন করে দেখলো রাত আড়াইটার বেশিই সময়টা। প্রিশা একবার পাখির দিকে তাকায় ঘুম থেকে উঠানোর জন্য কিন্তু পাখির এতো গভীর ঘুম দেখে আর ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করলো না।
প্রিশা পা টিপে টিপে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো লাইট অফ করে। শুভ্রর রুমের কাছাকাছি আসতেই ঝড়ের গতিতে শুভ্র এসে উপস্থিত হিয় প্রিশার সামনে। হঠাৎ এভাবে আশায় প্রিশা ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে গেলেও শুভ্র মুখ চেপে ধরে প্রিশার। শুভ্র কিছুটা ঝুকে প্রিশার কিছুটা কাছে আসলো আর ফিসফিস গলায় বললো
” ভয় পেয়ও না আমি শুভ্র।” প্রিশা মুখের উপর থেকে শুভ্রর হাত সরিয়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে বললো
” এভাবে কেউ আসে? জানেন কতো ভয় পেয়েছি আমি ? আর আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন ?” শুভ্র আলতো হেসে নিচু স্বরে বললো
” আমি তো তোমাকে দেখেই আসলাম। তুমি এতো রাতে এখানে কি করছো সেটা বলো।” প্রিশা মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো
” আমি তো পেটের খিধে বরণ করতে যাচ্ছিলাম।”
শুভ্র আলতো হেসে বললো
” পেটে এতো খিধে তোমার ? আচ্ছা চলো দেখি তোমার জন্য কোনো খাবার পাওয়া যায় কিনা।”
প্রিশা বোকার মতো শুভ্রর দিকে তাকায়। চোখ মুখ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বললো
” আপনি কি রাতে ঘুমান না ?” শুভ্র ধীর গতিতে আবারও প্রিশার দিকে ঝুকে যায়। ঘোড় গালা কণ্ঠে বললো
” তুমি তো আমার রাতের ঘুমই হারাম করে দিয়েছো তাহলে ঘুমাবো কি করে আমি ?”
প্রিশা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে নিজের দিকে আঙুল তাক করে বললো
” আমি ? আমি কি করেছি ?” শুভ্র ফিচলে হেসে বললো
” বুঝবে না গো স্বপ্ন রাণী। চলো এবার তোমার খিধে নিবড়ন করতে হবে তো নাকি ? কথা বলে তো আর তোমার পেটের খিধে যাবে না।”
প্রিশা শুভ্রর পিছন পিছন যেতে থাকে। সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে প্রিশা হঠাৎ ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যায়। শুভ্র সামনে থাকায় কোনোরকমে নিচে পড়ে যাওয়া থেকে সামলে নেয় প্রিশাকে। শুভ্র অস্থির গলায় বললো
” কি হয়েছে ? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে ?”
প্রিশা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো
” নাহ এমনি পড়ে যাচ্ছিলাম। থ্যাংকস ভাইয়া।”
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে চারদিকে একবার তাকিয়ে আবারও প্রিশার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো
“চলো !”
কিচেনে এসে শুভ্র ফ্রিজ খুলে দেখতে থাকে কি কি রয়েছে। প্রিশা টেবিলের উপর উঠে বসে রয়েছে। শুভ্র ফ্রিজ খুঁজে ডেজার্ট ছাড়া কিছুই দেখতে পেলো না। শুভ্র ডেজার্ট টা নিয়েই প্রিশার সামনে রেখে বললো
” নাও এটাই খেয়ে নাও আপাতত আর কিছুই নেই। এতো রাতে তো খাবার আনাতে পারবো না।”
প্রিশা বসে বসে ডেজার্ট খেতে থাকে। শুভ্র আবার কিচেনে গিয়ে কয়েকটা ভেজিটেবল বের করে সালাদ বানিয়ে আনলো। প্রিশা একে একে সবই খেলো। খাওয়া শেষ করে প্রিশা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। শুভ্র ভ্রু নাচিয়ে বললো
” কি ঘুমাবে না আর ?” প্রিশা জোড়ে জোড়ে মাথা নাড়ায় ডানে বায়ে। শুভ্র জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” কেনো ?” প্রিশা তার চেয়ার ছেড়ে শুভ্রর পাশের চেয়ারে এসে বসলো। ফিসফিস করে বললো
” আচ্ছা ভাইয়া আপনি কি জানেন আমার মাম্মি, পাপা এখানে আসেনা কেনো কখনো ?”
শুভ্র মুখ টিপে হেসে ফিসফিস করে বললো
” হ্যা জানি কিন্তু তোমাকে বলা বারণ তাই তোমাকে বলবো না।” প্রিশা মুখ কুঁচকে শুভ্রর দিকে তাকায়। আবার বললো
” আচ্ছা আপনার কি বিয়ে হয়নি?” শুভ্র সোজা হয়ে কাধ নাড়িয়ে গম্ভীর গলায় বললো
” কেনো আমাকে দেখে কি মনে হয় তোমার ? আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে ? বাচ্চা আছে ?”
প্রিশা শুভ্রর দিকে চোখ বুলিয়ে বললো
” আপনি তো দেখতে খুবই হ্যান্ডসাম। মনে হয় না বিয়ে হয়েছে কিন্তু গার্লফ্রেন্ড তো নিশ্চই আছে।”
শুভ্র কোণা চোখে প্রিশার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো
” আমার কিচ্ছু নেই বুঝলে মেয়ে ! আমি তো তোমাকে বিয়ে করার জন্য অপেক্ষা করছি।” প্রিশা চোখ বড়বড় করে তাকায়। শুভ্র বাঁকা হেসে বললো
” এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই বুঝলে মেয়ে। তোমাকেই বিয়ে করবো। দরকার হলে যুগ যুগ বছর অপেক্ষা করবো তারপরও তোমাকেই বিয়ে করছি। অন্য কোনো ছেলেদের দিকে নজর দেবে না বুঝেছো ? চলো ঘুমাবে।” প্রিশা ভোতা মুখ করে শুভ্রর পেছন পেছন যেতে থাকে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিচে আসতেই প্রিশা অবাক হয় কিছুটা। সোফায় জড়োসড়ো হয়ে বসে রয়েছে মেয়েটা। যাকে কালকে জঙ্গলে দেখেছিলো। প্রিশা গিয়ে মেয়েটার পাশে বসলো। মেয়েটাও প্রিশার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। প্রিশা এগিয়ে কিছুটা গা ঘেঁষে জিজ্ঞেস করলো
” তোমার নাম কি ?” মেয়েটা জড়োসড়ো ভাবেই উত্তর দিলো
” অরুণিমা অরু।”
চলবে……..