#অন্যরকম তুমি
#শেষ পর্ব
#তানিশা সুলতানা
পরে শুনেছিলাম বিয়েও হয়ে গেছে। মনে মনে খুশি হয়েছিলাম। আর প্রাণ ভরে দোয়া করছি যেনো মেয়েটা সুখী হয়। কিন্তু তার কয়েকদিন পরে মিথির ছোট বোন কল দিয়ে বললো ও না কি মারা গেছে। আমি যেনো গিয়ে দেখে আসি৷ ভীষণ খারাপ লেগেছিলো আমার। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। মনে মনে আগেই ভেবেছিলাম শশুড় বাড়িতে ও মানিয়ে নিতে পারবে না।
তারপর ওদের বাড়িতে চলে যাই শেষ বার দেখতে। জানতে পারি চলন্ত গাড়ি থেকে পরে গেছিলো। হয়ত বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই শেষ হয়ে গেছিলো। তবে সেটা শুধুমাত্র আমার জন্য আমি এটা মানতে পারি না। হয়ত অন্য আরো কোনো কারণ ছিলো। কিন্তু সেটা আমার অজানা।
মিথির রক্ত মাখা মুখটা দেখে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো ইসস যদি মেয়েটাকে বুঝতাম। যদি মেয়েটাকে ভালোবাসতে পারতাম। তাহলে মেয়েটা বেঁচে যেতো।
থামে সাদি। ছোঁয়ার চোখ দুটোও ভিজে উঠেছে।
“ভীষণ ভালো মেয়ে ছিলো মিথি। ওর পরিবার যদি একটা বার জিজ্ঞেস করতো তুমি কি চাও? তাহলে হয়ত মেয়েটা এখনো বেঁচে থাকতো।
বেলি ফুলের মালা মিথি নিজের গাছের ফুল দিয়ে গাঁথতো। ওর বোন বলেছে আমার জন্যই না কি গাছটা লাগিয়েছিলো। গাছটা এখনো আছে। সেই গাছে এখনো ফুল ফোটে। শুধু গাছটার যত্ন নেওয়া মানুষটাই নেই।
মিথির বোন নিয়ম করে মালা গেঁথে পাঠিয়ে দেয় আমার কাছে। আমিও নিয়ে নেই। মেয়েটা তো নেই। ওর স্মৃতিটুকু থাক না।
সাদি দীর্ঘ ফেলে।
” চলো মিথির জন্য দোয়া করবে।
সাদি ছোঁয়ার হাত ধরে মিথির কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। বাড়িতে কবর না দিতে বলেই মরে ছিলো মিথি। তাই এই শহরের একটা কবরস্থানে ওকে রাখা হয়েছিলো।
সাদি মিথির কবরের পাশে একটা বেলি ফুলের গাছ লাগিয়েছে। সেখানেও ফুল ফুটেছে। চারপাশটা ফুলের গন্ধে ম ম করছে।
ছোঁয়া দোয়া করে মিথির জন্য। মনটা খারাপ হয়ে গেছে মিথির জন্য। মেয়েটা নিশ্চয় সাদিকে আল্লাহর কাছেও চেয়েছিলো। নিশ্চয় কি চেয়েছিলোই। ও এতো চেয়েও পেলো না। আর ছোঁয়া ফ্রীতেই পেয়ে গেছে।
এখনো তো ছোঁয়া উচিত বুকের মাঝখানে জাপ্টে ধরে রাখা। একটুও অবহেলা করা যাবে না।
ভালোবাসা সবাই পায় না। যে পায় তার উচিত যত্ন নেওয়া। ছোঁয়া পেয়ে গেছে। বড্ড কপাল করে এসেছিলো ছোঁয়া।
বুক ভরে শ্বাস টানে ছোঁয়া। সাদি বেলি ফুল গাছের নিচ থেকে ঘাস সাফ করছে। দুই একটা দুর্বা গাছ জ্বালিয়েছে।
ছোঁয়া গিয়ে সাদির পাশে বসে।
“ছোঁয়া
সাদির ডাকে ছোঁয়া চমকে ওঠে। এতোটা কমল স্বরে কখনোই ডাকে নি সাদি।
” বলুন
সাদির মুখের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ছোঁয়া।
“তুমি কি রাগ করেছো?
সাদিও ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে।
” রাগ কেনো করবো?
সাদি একটু হাসার চেষ্টা করে।
“চলো
ছোঁয়ার হাত ধরে চলে আসে। গাড়িতে বসেও এক পলক তাকায় কবর টার দিকে। মনে হচ্ছে সেখানে মিথি বসে আছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। হয়ত দেখছে মেয়েটা কতো লাকী। কত সহজেই পেয়ে গেলো সাদিকে। আর মিথি……!
সাদি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টেনে চলে যায়।
🥀🥀
শফিকুল সিমির দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। এই মুহুর্তে সিমিদের বাড়িতে সিমির হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে সোহেল চৌধুরী।
তিনি নিতে এসেছেন শফিকুল আর নাজমা বেগমকে। কিন্তু ওনারা যাবেন কিনা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ তখন থেকে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে৷ না বলছে ভেতরে আসতে। আর না বলছে বসতে।
সোহেল শুকনো কাশি দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করে।
” না মানে একটু বসবো?
সোহেল একটু হাসার চেষ্টা করে বলে। শফিকুল গম্ভীর হয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। সোহেল সিমির হাত ধরে ভেতরে যায়। আর দুটো চেয়ার পাতা ছিলো সেখানে বসে পড়ে। আর সিমিকেও বসতে বলে।
“দেখুন বিয়াই যা হবার হয়ে গেছে। আপনার মেয়েও সবটা মেনে নিয়েছে। এখন আপনি অমত করবেন না।
বাচ্চা আছে ওদের একটা। এখন যদি ওরা আলাদা হয়ে যায় বাচ্চাটাতো এতিম হয়ে যাবে।
শফিকুল কিছু না বলে ওদের সামনে চেয়ার টেনে বসে।
” ভেবে দেখুন একবার। ছেলেমেয়ের সুখের বেপার এটা।
“হুম নিলাম মেনে।
একটু হেসে বলে শফিকুল। সোহেল তৃপ্তির হাসি হাসে। যাক অবশেষে।
সিমিও বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
🥀🥀
তনুর বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। তার সাথে সিফাত আর সিমিরও বিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু জোড়া বিয়ে। এদের বিয়ে দেখে ছোঁয়ার মন খারাপ হয়ে গেছে। আর যদি ছোঁয়া আর সাদিরও আবার বিয়ে হতো। কতো ভালো হতো।
রিসিপশনে দুই বউকেই বসানো হয়েছে। দুজনের মাঝখানে পরি বসে আছে। সিফাত আর সাগর মানুষ জনদের খাবার সার্ভ করছে।
ছোঁয়া এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা মেঘলা আকাশের মতো। টুকটুকে লাল লেহেঙ্গা পড়ে ভারি গহনা মেকাপ নিয়ে মুখ কালো। ঠিক মানাচ্ছে না।
” কি হয়েছে মহারানীর?
সাদি ছোঁয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে।
ছোঁয়া সাদির দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়।
“আমাদের বিয়েটা আবার হলে কি হতো?
ভারি গলায় বলে ছোঁয়া। সাদি একটু হাসে। ছোঁয়ার মাথায় চাটি মারে।
” বিয়েটা না হোক৷ বাসর কিন্তু আমাদেরও হচ্ছে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে ফেলে। ভীষণ লজ্জায় ফেলে দিয়েছে মানুষটা। এভাবে কেউ বলে? ছোঁয়ারও তো লজ্জা লাগে।
হনুমান একটা।
ছোঁয়া চুপসানো মুখ দেখে হাসতে হাসতে চলে যায় সাদি।
তিনটা রুম সাজানো হয়েছে। সব গুলো রুম একই ধাঁচের সাজানো। মুড ভালো হয়ে গেছে ছোঁয়ার৷ ইসসস লোকটা যে কি করে না🙈🙈🙈
তিনটে রুমেই চক্কর দেওয়া শেষ ছোঁয়ার। এবার নিজের রুমের বসে লজ্জায় নীল লাল হচ্ছে।
সাবিনা বেগম ভীষণ খুশি। ওনার খুশি যেনো উপচে উপচে পরছে। সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। ছেলের বউদের গল্প শোনাচ্ছে।
পরি কার রুমে থাকবে ভাবছে। মা বাবার সাথে? কিন্তু এতো সাজানো রুমে থাকতে ইচ্ছে করছে না ওর। সাদি বাবার রুমও সাজানো। তাহলে থাকবে কোথায়?
দাদিমার রুমে তো থাকাই যায়। হেসে ওঠে পরি। বিছানা থেকে নামতে যায়। তখনই সিমি হাত ধরে পরির।
“কোথায় যাচ্ছো?
পরি সিমির থেকে হাত ছাড়িয়ে কপালে চুমু দেয় মায়ের।
” আমি দাদিমার কাছে থাকবো।
বলেই নেমে যায়। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সিমি। মেয়েটা থাকলে ভালোই হতো।
পরি যাওয়ার একটু পরেই সিফাত আসে। বুকের ভেতর ধক করে ওঠে সিমির। একটু গুটিশুটি হয়ে বসে।
সিফাত দরজা আটকে শেরোয়ানি খুলে সিমির সামনে বসে।
“তোমার হাতটা দাও।
সিফাত হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে। সিমি শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা হাতটা এগিয়ে দেয়। সিফাত তাতে একটা আংটি পরিয়ে দিয়ে চুমু খায়।
” আজ থেকে আমাদের নতুন করে পথ চলা শুরু।
🥀
ছোঁয়া সবার ঘরে উঁচি মারছে। আসল বেপার হলো গুনে দেখবে কার রুমে কয়টা গোলাপ লাগানো হয়েছে। কিন্তু সবাই রাজা বন্ধ করে দিয়েছে।
সাদি ছাঁদ থেকে নাম ছিলো। ছোঁয়াকে উঁকি দিতে দেখে ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে যায়।
“এখানে কি করছো তুমি?
” কতো কিছু আপনাকে বলবো কেন?
ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে বলে। সাদিও মুখ বাঁ কায়।
“চলো রুমে
” কেনো?
“আমাদের কয়টা বেবি হবে সেটা গুনতে।
সাদি পাঁজা করে কোলে তুলে নেয় ছোঁয়াকে। ছোঁয়াও পরম যত্নে গলা জড়িয়ে ধরে সাদির।
শুরু হয় নতুন অধ্যায়ের সূচনা। যেখানে থাকবে শুধু ভালোবাসা। অন্যরকম তুমি টাকে আমার তুমি বানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা।
সমাপ্ত
লং জার্নি। আমার সব গুলো গল্পের থেকে এই গল্পটা ছিলো দীর্ঘ। ভালোবাসাও পেয়েছি প্রচুর। ধন্যবাদ সবাইকে এতোটা অপেক্ষা করে গল্প পড়ার জন্য।
খুব তাড়াতাড়ি নতুন গল্প নিয়ে হাজির হবো।