#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_১৭
#Saji_Afroz
.
.
.
আবেশের এমন কান্ডে হকচকিয়ে গেলো আদুরে। পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে সে আবেশের দিকে।
তার দিকে এভাবে ডেবডেবে চোখে আদুরেকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা হ্যাচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো আবেশ। আবেশের গরম নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারছে আদুরে। সে কি করতে বা বলতে চাইছে আদুরের অজানা। কিন্তু এই মুহুর্তে তার আবেশের মাঝে তার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে!
আদুরের কানে নিজের ঠোঁটের ছোঁয়া বসিয়ে আবেশ বললো-
এসব করলেই কি ম্যান্দামার্কা বলবেনা বলো?
.
আবেশের স্পর্শ পেতেই যেনো আদুরে হারিয়ে গেলো অন্য জগতে। কোনো কথা তার কান পর্যন্ত যায়নি। তাই আবেশের প্রশ্নের জবাব দিতে সে অক্ষম হয়। এদিকে আবেশ উত্তরের অপেক্ষা না করে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো আদুরেকে।
নিজের ভরটা তার উপর ছেড়ে দিয়ে ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিলো আদুরের গলার মাঝে।
পরম আবেশে আদুরে তাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে চেয়েও ধরলো না। চোখ গেলো তার রুমের দরজার দিকে। দরজাটি খোলা দেখে আদুরে তাড়াহুড়ো করে বললো-
আবেশ দরজা লাগিয়ে আসো।
-উহু!
-আরে কেউ দেখে ফেলবে!
-দেখার জন্যই খোলা রেখেছি। নাহলে সবাই কিভাবে বুঝবে আমি ম্যান্দামার্কা না!
.
আবেশের কথা শুনে আদুরে যেনো বিষ্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেলো। কি বলছে আবেশ!
আদুরে শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো-
কি বোঝালে তুমি?
.
উঠে বসলো আবেশ। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললো-
সারা বাড়িতে সবাইকে বলে বেড়াচ্ছ আমি একটা ম্যান্দামার্কা। আমি কি কিছু বুঝিনা? হুম বুঝতে কষ্ট হলেও বুঝতে পেরেছি তোমার কথার মানে। এসব করিনা বলেইতো…
.
আবেশকে থামিয়ে শাড়িটা ঠিক করে উঠে বসলো আদুরে। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে তাকিয়ে থাকলো আবেশের দিকে।
বেশকিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর হো হো শব্দে হেসে উঠলো আদুরে।
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবেশ জিজ্ঞাসা করলো-
কি হয়েছে?
.
হাসতে হাসতেই আদুরে বললো-
বিয়ের পরে এসব করে নাতো কি করে শুনি? আর যতদিন না করছো ততদিন তোমাকে ম্যান্দামার্কাই ডাকবো।
-আমি কিন্তু…
-দরজা খুলে রোমান্স করবে? আসো?
.
এক লাফে দাঁড়িয়ে পড়লো আবেশ। শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো-
কি যেনো কাজ করছিলে? করে নাও তো!
.
.
.
২দিন পর…
লামিয়ার সাথে আকদটা ছোট খাটো অনুষ্টানের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হলো আয়ানের। দুজনে দুজনের পাশাপাশি বসে আছে সোফায়। আয়োজন ছোট হলেও বাড়িভর্তি মেহমান আছে লামিয়াদের।
আকদটা ভালোই ভালোই সম্পূর্ণ হলেও আয়ানের একটা আবদার আছে লামিয়ার পরিবারের প্রতি। ২দিনের জন্য সে লামিয়াকে নিজের বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। আদুরের সাথে এই বিষয়ে কথাও বলেছে সে।
লামিয়ার মায়ের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়েছে আদুরে প্রায় ৩০মিনিট হচ্ছে। এতক্ষণ যাবৎ কি কথা বলছে তারা!
ভাবতে ভাবতেই আদুরের দেখা পেলো আয়ান। তাদের দিকে এগিয়ে এসে মৃদু স্বরে আদুরে বললো-
কাজ হয়েছে। আমি আর আবেশ বাসায় যাচ্ছি, তোমাদের বাসর সাজাতে।
.
কথাটি শুনেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো লামিয়ার মুখটা। তা দেখে আদুরে মুচকি হেসে বললো-
স্বাভাবিক ব্যাপার এসব। লজ্জা পাবার কিছু নেই। গেলাম তবে আমরা…
.
হেটে সদর দরজার দিকে এগুচ্ছে আদুরে। মনে মনে ভাবছে, আসলেই স্বাভাবিক ব্যাপার? যদি তাই হতো বিয়ে হবার এতদিন পরেও কেনো বাসর হলোনা তাদের মাঝে!
.
.
.
কৌতুহলী চোখে রুমের চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে লামিয়া।
সে বসে আছে আয়ানের রুমে অর্থ্যাৎ বাসর ঘরে। কত রকমের কল্পনাতেই না সে সাজিয়েছিল এই ঘরটিকে! আর আজ কল্পনার রাজ্যের সেই ঘরটিতে স্বয়ং উপস্থিত সে।
ঘরের প্রতিটি জিনিসপত্রের ঘ্রাণ নিতে পারছে সে, ছুঁয়ে দেখতে পারছে সে। ঘরের প্রতিটি কোণার ডাক যেনো আজ সে উপলব্ধি করতে পারছে সে। কখনো কি ভেবেছিলো? এমন একটি দিন আসবে তার জীবনে? পুরো শরীরজুড়ে এক ঠান্ডা বাতাসের ঢেউ বয়ে যেতেই পরম আবেশে চোখ জোড়া বুজলো লামিয়া। এতো সুখ কপালে সইবে তো?
.
-হু সইবে!
.
আদুরের কথা শুনে চমকে উঠলো লামিয়া।
লামিয়া কিছু বলার আগেই আদুরে বললো-
তোমার মনে কি চলছে আমি বুঝতে পেরেছি।
-কি করে?
-উহু লামিয়া! কেনো ভুলে যাও? আমিও প্রেমিকা ছিলাম। এমন একটা রাত আমিও পার করেছি। আমার মনে যা চলেছে তোমার মনেও তাই চলছে।
.
মৃদু হাসলো লামিয়া। সাথে আদুরেও। লামিয়া প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে লাজুক স্বরে জিজ্ঞাসা করলো-
তা ভাবী? প্রেমিক প্রেমিকার বাসর রাত কেমন হয়?
.
প্রশ্নটি শুনতেই এক রাশ অন্ধকার এসে ভিড় জমালো আদুরের মুখে। কি জবাব দিবে সে!
.
-এহেম এহেম!
.
আয়ানকে দেখতে পেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে লামিয়ার উদ্দেশ্যে আদুরে বললো-
এই যে তোমার উনি। উনিই তোমাকে বাকিটুকু বুঝিয়ে দিবেন। আমি বরং আসি। হাতের কিছু কাজ সেরে শুয়ে পড়বো। বড্ড ক্লান্তি লাগছে।
.
.
লামিয়ার পাশেই বসে ফিক করে হেসে দিলো আয়ান।
আয়ানকে হাসতে দেখে লামিয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
এভাবে হাসছো কেনো?
-একজন আমাকে বলেছিলো বাসর করতে দিবেনা আজকে। আমাদের হবে বিলম্বিত বাসর। এটা মনে হতেই হাসি আসলো আরকি।
.
ভ্রু জোড়া কুচকে লামিয়া বললো-
আরেকজন আমাকে বলেছিলো এমন লুক দিবে, তাকে দেখেই আমি বাসর করো করো বলবো। কই! দেখেতো বাসর করার মতো কোনো ফিলই জাগছেনা আমার!
.
লামিয়ার কাছে এসে তার কানের কাছে মুখটা নিয়ে ঠোঁটের ছোঁয়া বসিয়ে ফিসফিসিয়ে আয়ান বললো-
জাগছেনা এখন?
-নাহ।
.
লামিয়ার ঘাড়ে আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে আয়ান আবারো জিজ্ঞাসা করলো –
জাগছেনা?
-উহু!
.
লামিয়ার লাল লিপস্টিক দেয়া ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিলো আয়ান। কিছুক্ষণ তার ঠোঁটের স্বাদ নেয়ার পর আয়ান বললো-
এইবার?
.
নিশ্চুপভাবে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো লামিয়া। মৃদু হেসে আয়ান বললো-
কি হলো?
-বাসর করো।
.
লামিয়ার কথা শুনে হেসে ফেললো আয়ান উচ্চশব্দে। আয়ানের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে লামিয়া বললো-
হেসেছো কেনো! যাও আজ ফোন বন্ধ রাখবো। কোনো কথা নেই তোমার সাথে।
.
হাসির বেগ আরো বাড়িয়ে দিলো আয়ান।
নিজের বোকামি বুঝতে পেরে জ্বীভে কামড় দিলো লামিয়া।
আয়ান তাকে জড়িয়ে ধরে বললো-
ফোন বন্ধ করে দে রে লাম্মু! আজ শুধু বাসর হবে। কোনো কথা না!
.
.
.
হাতের সব কাজ শেষে নিজের রুমে আসলো আদুরে।
আবেশ শুয়ে শুয়ে বই পড়ছে।
দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আবেশের পাশে শরীরটা এলিয়ে দিলো আদুরে।
কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করার পর আবেশের হাতে থাকা বইটা নিজের অধীনে নিয়ে নিলো আদুরে।
বাঁকা চোখে তাকিয়ে আবেশ বললো-
তুমি পড়বে?
.
বইটা বালিশের একপাশে রেখে আবেশের বুকের উপর মাথা রেখে আদুরে বললো-
তোমার বুকে মাথা রেখে শুলেও কি তোমার সমস্যা হবে কোনো? সারারাত এভাবে থাকতে চাই। আমার ওজন কিন্তু বেশিনা।
.
(চলবে)
.
বি:দ্র: কাল, পরশু টানা ২দিন আমার পরীক্ষা আছে। ৯তারিখ প্রোগ্রাম। ১০তারিখের আগে কোনোভাবেই গল্প দেয়া সম্ভব নয় আর। 😞
তবে গল্পটা প্রায় শেষের দিকে। বেশি বড় করার ইচ্ছে নেই আর