#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_২০
#Saji_Afroz
.
.
.
আবেশের কথা শুনে হাসলো আদুরে। সে জানে আবেশ এমন কিছু কখনো চাইবেনা বা বলবেনা যেটাতে তার কষ্ট হবে।
তাই কোনো কিছু ভাবা ছাড়াই আবেশের চাহিদা মানতে প্রস্তুত সে।
-বলো আবেশ?
.
সোফা থেকে উঠে আদুরের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে আবেশ বললো-
আমি আমাদের বিবাহিত জীবনের কিছু মুহুর্ত স্পেশালভাবে কাটাতে চাই। তাই আমি এখনি বেবি নিতে চাইছিনা।
.
আবেশের কথা শুনে খানিকটা অবাক হয়েই আদুরে জিজ্ঞাসা করলো-
কেনো? না মানে বেবি হলে কি আমাদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হবে নাকি?
-বিষয়টা তা নয়। একটা বেবি হওয়া মানেই কিন্তু অনেক বড় দায়িত্ব! বেবি সামলাতে সামলাতেই আমাদের বিবাহিত জীবনটা আমরা উপভোগ করতে পারবোনা। আমি নেগেটিভভাবে কিছু বলছিনা আদু। ৬বছর প্রেম করেও আমরা কিন্তু দূরত্ব বজায় রেখেছি। নিজেদের সময়টাকে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারিনি। তাই বলছিলাম ফ্যামিলি প্লানিং বছর খানেক পরেই করলে ভালো হয়।
-কিন্তু আমার যে বাচ্চা অনেক প্রিয়!
-আমার থেকেও?
.
আবেশের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আদুরে বললো-
তুমি যা বালো তাই হবে। আমি এখন বাচ্চা নিয়ে ভাববো না।
-হু আমাকে নিয়েই ভাববে।
.
বলেই আদুরের কপালে চুমু খেলো আবেশ।
.
আদুরে জবাব দিলো-
হু।
-তাহলে আমি যা যা বলবো শুনবে।
-হু। দেখি সরো এখন। নাস্তা বানাতে হবে।
.
কথাটি বলেই আদুরে বেরিয়ে গেলো রুম ছেড়ে। আবেশ স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললো। সত্যিটা বলা হয়তো এখন সম্ভব না। এমন চাহিদা কোনো মেয়ের পক্ষেই মানা সম্ভব না। সত্যিটা জেনেও আবেশকে বুঝবেনা আদুরে, যেটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই এভাবেই বছর খানেক বাচ্চা নেওয়া থেকে বিরত থাকাই যায়।
.
.
.
নাস্তা সেরে নিজেদের রুমে এসেছে লামিয়া ও আয়ান। লামিয়া ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ব্যাগ গোছাতে। বাড়ি থেকে তাকে নিতে তার বাবা আসবেন একটু পরেই। বরাবর শুনেছে বিয়ের পর বাবা মায়ের কাছে আসার জন্য মেয়েদের মন আকুপাকু করে। কিন্তু লামিয়ার ক্ষেত্রে হচ্ছে উল্টো! এই বাড়ি ছেড়ে, আয়ানকে ছেড়ে তার মোটেও যেতে ইচ্ছে করছেনা। সে কখন থেকে এতোটা বেহায়া হয়ে গিয়েছে! নাহ, আয়ানকে এসব বুঝতে দেয়া চলবেনা মোটেও। আয়ান জানতে পারলে হয়তো তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে।
.
.
.
আবেশের সাথে আদুরের পরিচয়টা খুব সাধারণ ভাবেই হয়। তখন আদুরে স্কুলের ছাত্রী। আদুরের বান্ধবীর জন্মদিনেই তার বাসায় প্রথম দেখে সে আবেশকে। তার বান্ধবীর ভাইয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড আবেশ। প্রথমে চোখাচোখি তারপর কথা বলা।
সেদিন আদুরের ফোন নাম্বার না নেয়া হলেও পরে ঠিকই তার বান্ধবীর কাছ থেকে নাম্বার জোগাড় করে নিয়েছে আবেশ।
নিজের কোনো ফোন ছিলোনা বলে মায়ের নাম্বার থেকেই কথা
বলতে হতো বান্ধবীদের সাথে। অনেকবার ফোন দেয়ার পরে আদুরের সাথে কথা বলার সুযোগ পায় আবেশ। এক মিনিট কথা বলেই আবেশ জানিয়ে দিয়েছে, সে ভালোবাসে আদুরেকে।
ছিলোনা কোনো গান, ছিলোনা কোনো ডেকোরেশন, ছিলোনা কোনো আয়োজন। এতোটা সিম্পলভাবে তাকে কেউ প্রপোজ করবে হুট করেই ভাবেনি আদুরে। আদুরের কি হয়েছিলো জানেনা। সেও বলে দিয়েছিলো, “আমি জানিনা আপনাকে ভালোবাসি কিনা, তবে কেনো যেনো ইচ্ছে করছে বাসতে৷ একটু সময় দিবেন কি ভালোবাসার জ্বালে আটকাতে?”
সেদিন থেকেই আবেশের সাথে ভালোবাসার মায়ায় আটকে গেলো আদুরে। তারা প্রেমিক প্রেমিকা কম বন্ধু ছিলো বেশি।
দুষ্টু মিষ্টি একটা সম্পর্ক ছিলো। প্রথমে আদুরের বাসায় তার বাবা এই সম্পর্কটা মানতে নারাজ হলেও আদুরের জেদ এর কাছে হার মানতে বাধ্য হন তিনি। অবশ্য এতে আদুরের মায়ের অবদানও কোনো অংশে কম ছিলোনা।
এভাবেই তারা বৈবাহিক বন্ধনেও আবদ্ধ হয়। আর কাল শারীরিক সম্পর্কে। জীবনের কিছু যেনো অপূরণ থাকছেনা আদুরের। এতো সুখ তার কপালে সইবেতো!
.
-ভাবী?
.
লামিয়ার ডাকে ঘোর কাটলো আদুরের। মৃদু হেসে জবাব দিলো-
তোমার বাবা চলে এসেছেন?
-জ্বী। চলে যাবো।
-মুখটা এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেনো! কয়েকমাসের ব্যাপার। তারপর এখানে তুমি আজীবনের জন্য চলে আসবে।
-হু।
-চলো। ড্রয়িংরুমের দিকে যাই। নিশ্চয় আঙ্কেল অপেক্ষা করছেন।
.
.
.
দুপুর ৩.৩০…
লামিয়া চলে যাওয়াতে মন মেজাজ ভালো নেই আয়ানের। তাই সে পরীকে পড়াতে নারাজ। আজ আদুরে বসেছে পরীকে নিয়ে। ফাতেমা বেগমের মোটেও পরীর সাথে আদুরের ভাব দেখতে পছন্দ নয়। পিচ্চি মেয়ে কথার মাঝখানে যদি আগের কিছু বলে ফেলে? তাহলে আদুরে নিশ্চয় ব্যাপারটা সহজভাবে নিবেনা।
ভাবতে ভাবতেই নাসরিন আক্তারের গলার শব্দ শুনতে পেলেন ফাতেমা বেগম।
-আরে নাসরিন তুমি!
-জ্বী। একটা খবর দিতে আসছি।
-কি?
-আমার পরীর বিয়ে ঠিক করতেছি।
.
-এই ছোট বয়সে ওর বিয়ে কেনো?
.
রান্নাঘরে পানির জন্য জগ হাতে নিয়ে এসেছে আদুরে। কানে নাসরিন আক্তারের কথা বাজতেই প্রশ্ন না করে সে পারলোনা।
তার কথায় ভ্রুজোড়া কুচকে নাসরিন আক্তার বললেন-
আমার মেয়ে। আমার যখন খুশি দিতে পারি। ছেলে বিদেশ থাকে। ভালো ছেলে। শুধু একটু তোতলায়।
-কিন্তু আন্টি পরী অনেক ছোট। ওকে পড়ালেখা করতে দিন। এতো সুন্দর একটা মেয়ে। নিশ্চয় ভালো একটা ছেলে পাবে।
-আবেশরে তো আর পাবেনা!
.
নাসরিন আক্তারের কথা শুনে চমকে গেলো আদুরে।
শান্ত স্বরে সে বললো-
মানে?
-মানে যেটা ওর পাওয়ার কথা ছিলো সেইটা ও পায় নায়। এখন আমি ওরে যেটা দিবো সেটাই ওর ভাগ্যে আছে ধরে নিতে হবে। কিছু মানুষ আমাকে ভাগ্যের উদাহরণ দিছিলো কিনা! যাই হোক, আপনারা পারলে সাহায্য করলে করবেন নাহলে আমার মেয়ের বিয়ে আমি একাই দিবো।
কাল থেকে ও আর পড়তেও আসবেনা।
.
.
.
সন্ধ্যে ঘনিয়ে রাত এসে গেলো। পরীর মায়ের কথাগুলো ভাবাচ্ছে আদুরেকে। উনি কেনো বললেন, আবেশ কে পাবেনা? কেনোই বা বললেন, যেটা ওর প্রাপ্য ছিলো সেটা পায়নি?
আর উনি কেনোই বা আদুরেকে সহ্য করতে পারেনা বলে মনেহয়?
.
-আদু?
.
বারান্দায় দাঁড়ানো অবস্থায় আকাশের দিকে তাকিয়েই আবেশের উদ্দেশ্যে আদুরে প্রশ্ন ছুড়লো-
আচ্ছা আবেশ? পরী কে নিয়ে তোমাদের সাথে এমন কি হয়েছে? যার কারণে ওর মা তোমাদের উপর ক্ষেপে আছেন বলে আমার মনে হয়?
.
(চলবে)
.
বি:দ্র: এতোদূর থেকে পরীক্ষা দিয়ে এসে লেখার মুড একদমই থাকেনা। আজ তবুও দিলাম। কাল, পরশু পরীক্ষা আছে। হয়তো দেয়া হবেনা ২দিন গল্প। ২৭তারিখ পর্যন্ত পরীক্ষা আমার। এই পর্যন্ত কোনোদিন গল্প মিস হলে কেউ প্লিজ জিজ্ঞেস করবেন না। বারবার পরীক্ষা পরীক্ষা বলতে ভালো লাগছেনা। 😀 আমি পারলে একদিনেই লিখে দিতাম সব। অনিমিত পোস্ট করতে আমার নিজেরি ভালো লাগেনা।