বিলম্বিত_বাসর #পর্ব_২১

#বিলম্বিত_বাসর
#পর্ব_২১
#Saji_Afroz
.
.
.
বারান্দায় পাতানো দোলনার উপর আদুরেকে বসিয়ে তার পাশে বসলো আবেশ।
মৃদু হেসে সে আদুরের উদ্দেশ্যে বললো-
আদু? তুমি কি আমায় কোনো কারণে সন্দেহ করছো?
.
সাথে সাথেই আদুরে জবাব দিলো-
নাতো! তোমায় নিয়ে কোনো সন্দেহ বা সংকোচ আমার মনে নেই আবেশ। তবে পরীকে নিয়ে এই বাড়িতে কিছু হয়েছে বলে আমার মনেহয়। যদি তোমার ইচ্ছে হয় আমাকে সবটা জানাতে পারো। না ইচ্ছে হলে আমি জানার চেষ্টাও করবোনা।
.
চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আবেশ।
পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে দুজনের মাঝে।
আদুরে দোলনা ছেড়ে উঠে যেতে চাইলে আবেশ তার হাত ধরে ফেললো।
-কিছু বলবে?
-হুম আদু। মা পরীর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছিলেন।
.
চোখ জোড়া বড়বড় করে আদুরে বললো-
বুঝলাম না?
-এতোকিছু বলতে ইচ্ছে করছেনা আদু। এতোটুক জেনে রাখো, মায়ের বাধ্য সন্তান ছিলাম আমি। আমি কোন রঙের শার্ট পরবো এটা পর্যন্ত মা ঠিক করে দিতো। মা ভেবেছিলো মায়ের পছন্দ করা মেয়েকেই আমি বিয়ে করবো, খুব বাধ্য ছিলাম কিনা! তাই আমাকে কিছু না জানিয়েই পরীর সাথে বিয়ে ঠিক করে আমার। পরীকে চেইনও পরিয়ে আসে মা। আমাকে শুধু এসে বলেছিলো পরীর সাথে আমার বিয়ে।
.
কথাটি বলেই চুপ হয়ে গেলো আবেশ। আদুরে তার এক হাত নিজের হাতের মুঠে নিয়ে বললো-
তারপর?
-আমি বলতে পারিনি শুরুতে তোমার কথা মাকে। আসলে আমি ভাবতে পারিনি মা পরীর মতো পিচ্চি একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে নিয়ে ভাববে! বিয়ের দিন যত এগিয়ে আসছিলো আমি হতাশায় ভুগছিলাম। এক সময় সাহস করে মাকে সবটা জানিয়ে দিই। কিন্তু মা নারাজ হয় তোমাকে বউ করে আনতে।
-কেনো?
-মোরশেদা খালার অবস্থা দেখে। মা চেয়েছিলো তার পছন্দের মেয়েই যেনো বাড়ির বউ হয়ে আসে।
-সেটা পরীর মতো পিচ্চি মেয়ে কেনো? অন্য কেউতো হতে পারতো?
-আদু এসব বাদ দাও। মা চান না এসব কথা তুমি জানো। মা তোমাকে মানতে নারাজ ছিলো এসব। তুমি জানলে তুমি কষ্ট পাবে বলে এই কথা তিনি তুলেন না।
-হু।
.
আদুরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আবেশ বললো-
কষ্ট পেয়েছো? মা কিন্তু জানতো না এই আদু এতোটা লক্ষি একটা মেয়ে!
.
আবেশের কাঁধে মাথা রেখে আদুরে বললো-
উঁহু! কি যে বলোনা তুমি! মা আমাকে অনেক ভালোবাসেন।
.
আদুরেকে জড়িয়ে ধরলো আবেশ।
কোনো রাগ অভিমান কারো উপর আদুরের নেই। তবে মনে রয়েছে ছোট্ট একটা প্রশ্ন।
আবেশের মা পরীর মতো কমবয়সী একটা মেয়েকেই কেনো তার ছেলের বউ করতে চেয়েছিলেন?
.
.
.
সকাল ৬টা…..
ঘুম ভাঙতেই আদুরের ঘুমন্ত মুখটা দেখতে পেলো আবেশ। ঘুমন্ত অবস্থায় আদুরেকে কোনো অপসরীর চেয়ে দেখতে কম সুন্দরী লাগছেনা। তার এলো চুলগুলো মুখের উপর এসে পড়েছে। এই অবস্থায় আদুরেকে দেখতে পেয়ে মাতাল মাতাল লাগছে আবেশের। বাসর রাতের পর থেকেই আদুরের কাছে যাওয়ার ইচ্ছা যেনো আরো প্রখর হয়ে গেলো আবেশের! আগে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলেও এখন সে পারেনা৷ আর তাই না চাইতেও আদুরের মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে ঠোঁটের ছোঁয়া বসিয়ে দিলো আবেশ। কিন্তু কোনো সাড়া পেলোনা আদুরের। সে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। কি দরকার সে ঘুমটা নষ্ট করার!
আদুরের ঘুম না ভাঙ্গে মতো তাকে জড়িয়ে ধরে নিজের নাকটা তার নাকের সাথে লাগিয়ে শুয়ে পড়লো আবেশ। মনে হচ্ছে আদুরের এক একটা নিঃশ্বাস খুব কাছ থেকে আবেশের ভেতরে এসে পৌছাচ্ছে। আদুরের নিঃশ্বাসের মাঝেও এতোটা সুখ!
পরম সুখে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো আবেশ। আদুরের সাথে পাড়ি দিতে চায় ঘুমের দেশে। কিন্তু আদুরের ডাকে ঘোর কাটলে তার।
-এইরে! আমার আদুর ঘুম ভেঙ্গে গেলো?
.
ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় আদুরে বললো-
এভাবে গায়ের উপর শুয়ে থাকলে ঘুম ভাঙ্গবেনা?
-কি করবো? লোভ সামলাতে পারছিলাম না।
-কিসের লোভ?
.
আদুরের নাকের উপর চুমু এঁকে আবেশ বললো-
রোমান্স করার।
-রাতে মন ভরেনি?
-কোনোদিন ভরবেনা। আমার বউ, যখন খুশি করবো।
.
কথাটি বলেই আবেশ ডুবে যেতে থাকলো আদুরের মাঝে।
.
.
.
সকাল সকাল লামিয়ার ফোনে ঘুম ভাঙলো আয়ানের। একবার রিং হতেই সে রিসিভ করে বললো-
আযানের পরেই কিন্তু ফোন রেখেছি আমরা। ঘুম আসছেনা?
.
কান্নাজড়িত কণ্ঠে লামিয়া বললো-
উঁহু!
-এমন করলে আমার মন টিকবে? বা পড়ায় মন বসবে?
-আমি জানি কিন্তু তবুও যে মিস করছি ভীষণ!
-বুঝতে পেরেছি। কিন্তু বেশি সময় না। কিছুদিন পরেই তুমি এই সময়টাই আমার পাশে থাকবে।
-কবে যাচ্ছো তুমি?
-২দিন পরেই।
-আজ তবে আমার সাথে দেখা করতে এসো।
-শুধু দেখা? থাকার পারমিশন পাবোনা?
.
আয়ানের কথা শুনে মুখে হাসি ফুটলো লামিয়ার। মুচকি হেসে সে বললো-
কেনো নয়!
.
.
.
ঘড়িতে সময় সকাল ১০টা।
উঠোনে বসে পান চিবুচ্ছেন ফাতেমা বেগম।
তার পাশে দাঁড়ালো আবেশ।
গলার স্বরটা নরম করে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো-
পরীকে নিয়ে কিছু ভাবলে?
-তার মা যা ভালো বুঝে করবে।
-আমি খবর নিয়েছি। ছেলেটা ভালো ছেলে নয় মা। টাকা থাকলেই সব হয়ে যায়না।
-আমার কি করার আছে!
-নিজের মেয়ের মতই দেখো তুমি পরীকে। তার জীবনটা এভাবে নষ্ট হতে দিবে?
.
ফাতেমা বেগমকে চুপচাপ দেখতে পেয়ে আবেশ বললো-
আমি চাইনা মা, আয়নার সাথে যা হয়েছে তা পরীর সাথে হোক। পরীর সাথে আমরা ভালো কোনো ছেলেরই বিয়ে দিবো। তবে এখন নয়। আরো পরে।
.
নিজেকে শক্ত করে নিলেন ফাতেমা বেগম। আবেশের মুখে আয়নার নামটা তিনি অনেক বছর পরেই শুনতে পেলেন! এই বাড়িতে আয়নার নাম নেয়া বারণ কিনা!
লম্বা একটা শ্বাস ফেলে ফাতেমা বেগম বললেন-
নাসরিনকে ডাকা পাঠা। পরীর সমস্ত দায়িত্ব আমাদের। নাসরিন না বুঝলে দরকার হলে পরী এখানেই থাকবে। তবুও ওর বিয়ে দিতে দিবোনা।
.
.
.
.
৩মাস পর……
আজ অনেক ধকল গিয়েছে আদুরের উপর। আয়ান আর লামিয়ার বউ ভাতের অনুষ্ঠান ছিলো আজ।
গতকাল বিয়েতেও কম খাটতে হয়নি আদুরের!
সারা দুনিয়ার সমস্ত ক্লান্তি যেনো এসে ঘিরে ধরেছে তাকে।
ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে একটা শুকনো কাপড় দিয়ে ভেজা প্লেট গুলো মুছে নিচ্ছে আদুরে। হঠাৎ তার মাথাটা ভনভন করে উঠলো। মনে হচ্ছে বিশাল বড় পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে সে! এরপর? আর কিছুই মনে নেই তার। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আবিষ্কার করলো সে বিছানার উপরে।
তার পাশে বাড়ির সকলেই আছে।
বিছানার উপর উঠে বসে সে জিজ্ঞাসা করলো সবার উদ্দেশ্যে –
কি হয়েছে? আমি এখানে এলাম কিভাবে?
.
লামিয়া হেসেই বলে উঠলো-
আপনি মা হতে চলেছেন ভাবী!
.
কথাটি শুনে আদুরের খুশি হবার কথা হলেও বুঝতে পারলোনা সে এটা কিভাবে হলো! সেতো কোনো প্লানিং করেনি বেবি নেবার!
.
আচমকা ফাতেমা বেগম এসে জড়িয়ে ধরলেন তাকে। খুশিতে তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।
আদুরের কপালে চুমু দিয়ে তিনি বললেন-
আজ আমি অনেক খুশিরে বউমা! আমার আয়ানের বউ ঘরে এসেছে, আর আমার আবেশের অংশ ঘরে আসতে চলেছে!
.
বাসার সবার খুশি দেখে মুখে হাসির রেখা ফুটলো আদুরের। এই একটা খবর যে সবার মাঝে এতোটা আনন্দের সৃষ্টি করবে ভাবেনি সে।
কিছুক্ষণ পর রুম থেকে সকলে বেরিয়ে যাবার পরে প্রবেশ করলো আবেশ।
তাকে দেখে আদুরে কিছু বলার আগেই সে বলে উঠলো-
আমি তোমাকে বলেছিলাম আদু, বাচ্চা আমরা এখন নিবোনা।
.
আবেশের কথা শুনে নরম স্বরে আদুরে বললো-
আমি আসলে ইচ্ছে করে করিনি। হয়তো ভুলবশত….
-এসব হাতুড়ে ডাক্তারের উপর ভরসা করাও ঠিক হবেনা। ডাক্তারের কাছে চলো।
-এখুনি?
-হু।
-আমার শরীরটা….
-আহ আদু! ডাক্তারের কাছে আমরা যাবো এবং তা এখুনি। আমি চাইনা আমাদের বেবি হোক।
-এভাবে কেনো বলছো তুমি! বাড়ির সকলে কতোটা খুশি হয়েছে তুমি দেখোনি?
-আমার খুশিটাই তুমি দেখো। আমি চাইনা রিপোর্ট পসিটিভ আসুক।
-আর যদি আসে?
.
আদুরের এই কথার জবাব না দিয়ে আবেশ বললো-
তৈরী হয়ে নাও, বেরুতে হবে।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here