চিঠি দিও
১৯
___________
কারমাইকেল কলেজ ময়দান আজ সকাল থেকে উত্তপ্ত। একাধিক ছাত্রদলের মধ্যে দফায় দফায় সং”ঘ”র্ষ চলছে। খানিক পরপরই ডিপার্টমেন্টের রাস্তাগুলো দিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার চিত্র দেখা যাচ্ছে। ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা যে যা পাচ্ছে তাই নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া করছে ছাত্ররা। হ তা হ তে র ঘটনা এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক। এই সং’ঘ’র্ষের সূত্রপাত মূলত গতকাল সন্ধ্যে থেকে।
জয় বাংলা হোটেল সম্মুখে ইদানিং নিয়ম করে ক্যারম খেলার আসর বসে। গতকালও বসেছিল। চা-নাশতা আর দুই দলে ভাগ হয়ে খেলা। ভালই চলছিল। বেশ আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নির্মল আনন্দ পছন্দ হলো না এক পক্ষের। কি চিন্তা করে প্রস্তাব রাখল খেলা নিয়ে বাজি ধরবে। যার পকেটে যতটুকু পরিমাণ টাকা আছে একে একে বের করে চুক্তি করা হলো যে পক্ষ জিতবে সে এই সম্পূর্ণ টাকাটা পাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, টাকার প্রসঙ্গ আসামাত্র খেলার আনন্দ স্থানান্তরিত হয়ে গেল বাজি জেতার নেশায়। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি হতে শুরু করল গম্ভীর। বাজিতে হার-জিতকে কেন্দ্র করে অচীরেই টুকটাক কথা কাটা”কাটি দিয়ে শুরু। তা থেকে হাতাহাতি, র’ক্তা’র’ক্তি। ভরা মজলিশে আপন বন্ধুর হাতের আঙুল কে/টে দেয়ার মতো দুঃসাহস করে ফেলল রা গে জ্ঞানশূন্য এক ছেলে। ছোট্ট একটা বিষয় এতদূর গড়িয়ে যাবে কেউ হয়তো ভাবতেও পারেনি। কিন্তু অভাবনীয় পরিস্থিতিতে পড়ে গেলে তা থেকে উতরে যাবার চেষ্টাও তো করতে হয়। সেই চেষ্টা প্রতিঘাত ছাড়া অন্য কিছু নয়। ভিক্টিমপক্ষ এক দলীয় বড় ভাইয়ের শরণাপন্ন হয়, অপরপক্ষ অন্য আরেক বড়ভাইয়ের। এভাবে ঘটনা বিস্তৃতি লাভ করে। সারারাত সংঘর্ষের জেরে পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজমান। ভোররাতে যদিও পুলিশ আসে, কয়েকটাকে গরাদেও চালান করা হয় তবে সূর্যের আলো ফোটার পরপর পুনরায় দা”ঙ্গা বেধে যায়৷
চলতি সপ্তাহে উপমাদের অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পর ইংরেজির আগে দু’দিন বন্ধ পেয়েছিল। বন্ধের দুটো দিন পাগলের মতো পড়াশোনা করেছে উপমা। খুব যে পড়ুয়া ছাত্রী সে, ব্যাপারটা তেমন নয়। তবে এক-একদিন পড়াশোনায় খুব মন বসে। একেবারে পড়ুয়া ছাত্রী হয়ে ওঠে। আবার একেকদিন এমন আলসেমিতে পেয়ে বসে! একদমই পড়তে ইচ্ছে করে না। কিন্তু পরীক্ষার আগে তো পড়ায় মাফ নেই। এছাড়াও ছোট্ট বয়স থেকে রুটিনের ছকে বেঁধে দেয়া ওর জীবন । কলেজে ওঠার পর একটু হেলা করলেও পরীক্ষার সময় অনিয়মের সুযোগ নেই। বড় মামা খুব নজরে নজরে রাখছেন ওকে।
বন্ধের পর আজ পরীক্ষা। সকালবেলা সূর্যের আলোর সাথে তার ঘুম ভেঙেছে। টুকটাক বইয়ে চোখ বুলিয়ে ইউনিফর্ম পরতে শুরু করেছে সে। একটুপরেই শুরু হয়ে যাবে মামার তাড়া। বেশি দূরে তো নয় কলেজ৷ মোটরসাইকেলে গেলে আধঘন্টা লাগে। তা সত্ত্বেও এক দেড় ঘণ্টা আগে রওয়ানা হয় মামা। একটু বিরক্তই লাগে উপমার। কিন্তু করার তো কিছু নেই। মামা শুনলে তো!
আর এই চুলগুলো। ওড়না সেট করতে আর চুল সামলাতে হাঁপিয়ে ওঠে উপমা। তন্মধ্যে দরজায় টোকা পড়ে। অপর পাশ থেকে জান্নাতি ডাকে,
— বু কাপড়া পিন্দা হয়নাই? বড় মামুয় ডাকে।
বিরক্তিভাব চোখেমুখে ফুটিয়ে উপমা জবাব দেয়,
— আসছি আর পাঁচ মিনিট।
— তাড়াতাড়ি আইসো।
তৎক্ষণাৎ ব্যস্ত ভঙ্গিতে চলে যায় জান্নাতি। ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে চুলে হাত দেয় উপমা। চুলগুলো আরও ইঞ্চি তিনেক বেড়েছে। খুশির সংবাদ। তবে মাঝেমধ্যে মনে হয় এই চুলের ভার আর সামলাতে পারছে না। একটু ছোটো করা প্রয়োজন। ভাবীও বলছিল অবশ্য। আচ্ছা দেখা যাক না, পরীক্ষাটা শেষ হোক তারপর সিদ্ধান্ত নেবে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে দ্রুত হাতে চুলে চিরুনি চালায় উপমা। এত বেশি জট পাকিয়ে আছে চুলে! স্বল্প সময়ের মধ্যেই হাতে ব্যথা ধরে যায়৷ অসহায় লাগে উপমার নিজেকে। কেউ তাড়া দিলে একদমই গুছিয়ে কাজ করতে পারে না ও। কি এক বাজে অভ্যেস! বিরক্তিতে চ’ জাতীয় শব্দ করে চিরুনি হাতে বাইরে বের হয়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আসমাকে ডাকে,
— ভাবী, ভাবী। একবার ঘরে এসো তো, আমার চুল বেঁধে দেবে। এক্ষুনি এসো দেরি কোরো না।
নীচে থেকে আসমা জবাব দেয়,
— আসছি।
বলা বাহুল্য আসমা তখন চাচাশ্বশুরকে খাবার বেড়ে দিচ্ছিল। উপমার ডাক রঞ্জু সাহেবের কানেও গেছে। তৎক্ষনাৎ উনি আদেশ করেন,
— যাও বউমা মেয়েটার কি লাগে দেখো। বাকি খাবার আমি বেড়ে নিতে পারব।
তবুও আসমা জান্নাতিকে ডেকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে ছুটতে ছুটতে ওপরে যায়।
ভাবীকে দেখে মুখ করুণ করে ফেলে উপমা। আসমা হাসে। চিরুনি হাতে নিয়ে সযত্নে চুলের জট ছাড়াতে ছাড়াতে শুধয়,
— প্রিপারেশন কেমন?
সংক্ষিপ্ত শ্বাস ফেলে উপমা জবাব দেয়,
— উমম সো-সো।
— মানে?
— অতি ভালোও নয়, অতি জঘন্যও নয়। মাঝামাঝি পর্যায়ের।
— এই এত পড়লে তবুও মাঝামাঝি?
অবাক হয় আসমা। উপমা মাথা দোলায়। বলে,
— প্রশ্ন হাতে পেয়ে তো দেখব সব কনফিউজিং প্রশ্ন দিয়ে রেখেছে। আমি বুঝি না এত ভালো ভালো টিচার, অথচ প্রশ্ন দিয়ে রাখে ঘাস, লতা-পাতা!
উপমার বলার ধরনে হেসে ফেলে আসমা। বলে,
— এখন তো বলছো। রেজাল্ট বেরুলে দেখা যাবে ভালো করেছ।
— মাত্র দু’টো পরীক্ষা শেষ হলো এতেই ধরে নিলে ভালো করব? আমার তো ধারণা দুই এক সাবজেক্টে ডাব্বা মেরে যাব আমি।
— বালাইষাট কি বলে!
আঁতকে উঠে উপমার মুখে হাত চাপা দিলো আসমা। উপমা ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।
— আমি সিরিয়াস। এই রসায়নের বিক্রিয়ার চক্করে আমার অন্য সাবজেক্টগুলো মস্তিষ্কে ঘোট পাকিয়ে গেছে। কি পড়ছি, কি লিখে আসছি নিজেও বুঝতে পারছি না।
— এই চুপ করো তো। পরীক্ষার আগ মুহুর্তে এসব আজেবাজে কথা বলবে না।
— সত্যি কথা বলছি মাই ডিয়ার ভাবী। মাঝেমধ্যে আমার মনে হয় কি জানো, লেখাপড়া ছেড়ে বনবাসে চলে যাই না কেন? বনবাসে কোনো নির্জন দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নেব। বছর খানেক একা একা ঘুরব, ফিরব। অন্যেক রহস্যের জট খুলে ফেলব। এরপর একদিন হুট করে টগবগ টগবগ ঘোড়া ছুটিয়ে অচীন দেশের এক রাজকুমার আসবে। শেকসপিয়রের টেমপেস্টে যে আছে ফার্দিন্যান্দ, ওর মতো।
— হু তারপর?
কৌতুকের সুরে বলে আসমা।
তবে উপমার চোখজোড়া হয়ে যায় স্বপ্নালু। কল্পনার জগতে হারিয়ে যেতে যেতে সে বলে,
— অমন নির্জন দ্বীপে কমবয়সী রূপবতী মেয়ে, মানে আমাকে দেখে সে অবাক হয়ে যাবে। বলবে, “ওহে প্রাণসখী তোমার মতো সুকেশা, সুহাসীনি আমি এ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। বলো কোথায় ছিলে এতটা কাল? তুমি আসবে বলে দীর্ঘ পঁচিশটা বসন্ত যে আমার একা একাই কেটে গেল। ঠিকাছে অবশেষে যেহেতু এলে তবে আর নয় দেরি, বলে ফেলো তাড়াতাড়ি; হবে কি আমার মায়ারাজ্যের একমাত্র মায়া পরী”
এতটুকু বলে থামল উপমা। চকিতে মুখ ঘুরিয়ে বলল,
— এই ভাবী ছন্দ মিলেছে কিন্তু।
পাগলাটে ওর কথাবার্তা শুনে আসমা এতক্ষণ
হেসে কুটিকুটি হচ্ছিল। চুলটাও বাঁধা শেষ পর্যায়ে। কোনোরকমে হাসি চেপে উপমার মাথায় গাট্টা মেরে সে বলল,
— দুঃখজনকভাবে তোমাকে বনবাসে পাঠাতে আমরা কেউই আগ্রহী নই। তাই যত কষ্টই হোক পড়াশোনার সাথে অ্যাডজাস্টমেন্টটা করে নিতে হবে। ডাব্বার চিন্তা বাদ দিয়ে যা পড়েছ সেসব মনে করতে থাকো।
স্বপ্নের জগৎ থেকে ধুপ করে বাস্তবে টেনে নামানোয় কপট রা’গল উপমা। চুল ছাড়িয়ে বাকি বেনিটা নিজে গেঁথে মুখ ফুলিয়ে বলল,
— একফোঁটা তো ভালোবাস না তোমরা আমাকে। কি সুন্দর একটা স্বপ্নের পৃথিবীতে হারিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম আমি। দিলে তো সবটা মাটি করে। হুহ্ বুঝবে, বুঝবে। একদিন আমায় খুঁজবে।
“আনন্দি এখনও হয়নি তোমার? ঘড়ি তো বসে নেই”
নীচতলা থেকে বড় মামার গলা পাওয়া মাত্র জিহ্বায় কামড় পড়ল উপমার।
আসমা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
— ইতোমধ্যে খোঁজ পড়ে গেছে। নাও চলো এখন।
এবার উপমাও একটু হাসল। ফাইলপত্র গুছিয়ে ঘড়ি পরতে পরতে বলল,
— চলো স্বপ্নের জগতকে আপাতত বিদায় জানিয়ে বাস্তবতায় যাওয়া যাক।
_______
পথে বের হওয়ার পরও উপমারা জানতে পারল না আজ কলেজে কি পরিমাণ বিশৃঙ্খলা চলছে; যার দরুন ওদের পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে। কেউ টেলিফোন করেও ওকে জানায়নি। ফলে একদম তেঁতুলতলা রোড পর্যন্ত চলে আসার পর ওরা জানতে পারল কলেজের অবস্থা ভ’য়া’বহ। এ খবরটা শোনামাত্র ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ল। সবার আগে যে নামটা মাথায় এলো তা হলো রওনক। মানুষটাও কি ওসবে গেছে? কেমন আছে সে, কোনো ক্ষতি হয়নি তো? বেশিদিন হলো না একটা অসুস্থতা থেকে সেরে উঠল। এখন আবারও যদি…
একরাশ অস্থিরতা আচ্ছা করে জেঁকে ধরল উপমাকে। কিন্তু বুঝে উঠতে পারল না এই অস্থিরতা কমাবে কি করে? কি করে মানুষটার খোঁজ নেবে। কাকে বলবে।
এদিকে রঞ্জু সাহেব ঘটনার গভীরতা জানেন না। ঝামেলা কতটা সিরিয়াস পর্যায়ের। রাজনীতির আধিক্য হওয়ায় টুকটাক ঝামেলা তো লেগেই থাকে কলেজে। আজ কি ভয়াবহতা বেশি? ভাগ্নিটার তো আবার পরীক্ষা। কে জানে পরীক্ষা হবে নাকি স্থগিত করা হয়েছে!
দুশ্চিন্তায় ধীরগতিতে মোটরসাইকেল নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি। কাউকে জিজ্ঞেস করবেন এমন মানুষও তো পাচ্ছেন না। কলেজে কি ঢুকবেন নাকি এখান থেকেই ফেরত যাবেন? আচ্ছা কলেজ থেকে কেউ ফোন করল না কেন? নানামুখি প্রশ্ন একের পর এক উত্থাপিত হতে শুরু করল ওনার মস্তিষ্কে। তার মধ্যেই এগোচ্ছিলেন। রেলক্রসিংয়ের পর একটা টেলিফোন বুথ মাস দুয়েক আগে গড়ে দেয়া হয়েছে। আশেপাশে চোখ বোলাতে বোলাতে চট করে ওদিকে চোখ চলে গিয়েছিল রঞ্জু সাহেবের। কালক্ষেপণ না করে বুথটার সামনে মোটরসাইকেল থামালেন উনি। কোনো কলিগকে ফোন করে বরং খোঁজখবর নেয়া যাক। পকেটে তো ফোনবুকটা আছেই। মোটরসাইকেলের কাছে উপমাকে দাঁড়াতে বলে রঞ্জু সাহেব গেলেন ফোন করতে।
এখান থেকে কলেজ গেটটা কিছুটা দৃশ্যমান। দৃশ্যমান ক্লাবের গলি, জয়বাংলা হোটেল;সব।
ভুল করে হলেও যদি মানুষটাকে দেখা যায়! সেই আশায় চাতকিনীর মতো পথটায় চেয়ে রইল উপমা। পুরো এলাকা এত নিস্তব্ধ। থেকে থেকে শুধু কলেজের ভেতরের চাপা শোরগোল ছাড়া কিচ্ছু শোনা যাচ্ছে না। ওদিকে মামা কখন না এসে পড়েন! মনে মনে খুব করে প্রার্থনা করতে লাগল উপমা যেন একটাবার মানুষটাকে দেখতে পারে। শুধু একটাবার!
সৃষ্টিকর্তা অনুকুলে ছিলেন ওর। দ্রুতই প্রার্থনা কবুল করে নিলেন এবং মিনিটও পার হলো না কোত্থেকে চপল পায়ে রওনক এসে উপস্থিত হলো শাটার নামানো জয়বাংলা হোটেলের সামনে। ওকে দেখে তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এলো উপমা পথের ধারে। রাস্তাটা বেশি চওড়া নয়। রওনকের থেকে ওর দূরত্ব বড়জোর দশ কদম হবে, এর বেশি নয়। দিনের আলোয় স্পষ্ট উপমা দেখতে পেলো
এলোমেলো বসন, অপরিপাটি চুল। যেন ঝড় বয়ে গেছে মানুষটার ওপর দিয়ে। হাতে ধরে রাখা ধূসর রঙের পিস্তলটা আর র’ক্তলাল চোখে অস্থিরচিত্তে সে খুঁজে বেড়াচ্ছে কাউকে।
চঞ্চল চোখে চারিদিক পর্যবেক্ষণ করতে করতে রওনকেরও দৃষ্টিজোড়া স্থির হয়ে গেল অপরপাশে প্রিয়তমার ওপর। অকস্মাৎ তার আগমন প্রত্যাশিত নয়। যেমন বিস্ময়াভূত হলো তেমনই বিব্রতবোধ করল রওনক। তথাপি মৃদু হাসার চেষ্টা করল। বিনিময়ে কিন্তু উপমা হাসল না। রওনক শঙ্কিত বোধ করল সবটা তার দৃষ্টিগোচর হয়েছে কি না! এত দূরত্ব থেকে স্পষ্ট বোঝা যাওয়ার কথা নয় প্রিয়তমের সুকুমার মুখখানাতে যে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ফুটে উঠেছে। সিগারেটে পোড়খাওয়া পুরু ঠোঁটের কোণ বেয়ে সরসর করে গড়িয়ে পড়ছে ঈষদুষ্ণ গাঢ় লাল লহু। ঠোঁট প্রসারিত করার সময় ঈষৎ যন্ত্রণা অনুভব করেছে রওনক। অজ্ঞাতে কণ্ঠে মৃদু অনুরণন হয়েছে “উহ” জাতীয় একটা শব্দ।
ভেতরে ভেতরে সে শঙ্কিত বোধ করলেও উপমা স্পষ্ট কিছু দেখেনি। তবে আশংকা করেছে। বিধ্বস্ত মুখচোখ দেখে তার সন্দেহ প্রবল হয়েছে। কিন্তু সত্যতা যাচাই অসম্ভব। তাদের মধ্যেকার দূরত্বের বিষয়টা অনেকটা এরকম,
“মুখোমুখি আমরা দু’জন, মাঝখানেতে অনেক বারণ”
বারণ ডিঙোনোর সুযোগ এই মুহুর্তে নেই।
ওদিকে কলিগের সাথে কথা হয়ে গেছে রঞ্জু সাহেবের। ঘটনার সবটাই উনি শুনেছেন এবং এও জেনেছেন অপ্রত্যাশিত বিশৃঙ্খলার কারণে আজকের সকল বিভাগের পরীক্ষাই স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে বাতিলকৃত পরীক্ষাটি কবে নেয়া হবে।
কথা শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এসেছেন রঞ্জু সাহেব। নজর পড়েছে ওনার উপমার ওপর। তবে সন্দেহ করেছেন কি না বোঝা গেল না। মোটরসাইকেলে স্টার্ট দিতে দিতে কেবল উনি ডেকে উঠলেন,
— মামণি চলে এসো।
মামার ডাকে সচকিত হলো উপমা। আরেকবার রওনকের পানে তাকিয়ে প্রলম্বিত শ্বাস ফেলল। রওনক বুঝতে পারল। হাত নেড়ে তাকে বিদায় জানালো। উপমাও মাথা দুলিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে গেল মোটরসাইকেলের কাছে।
দৃষ্টিজোড়া তার ততক্ষণ পর্যন্ত রওনকে নিবদ্ধ রইল যতক্ষণ না অবয়বটাও সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে যায়।
ওরা বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই কলেজ গেট থেকে জলোচ্ছ্বাসের মতো কিছু ছেলেপেলেদের দল ছুটে আসতে দেখা গেল। পেছনে গলির ভেতর থেকেও বেরিয়ে এলো রওনকের ছেলেপেলেরা। এবং অচীরেই নিস্তব্ধতায় চিঁড় ধরিয়ে দুপক্ষের আরেক দফা হাতাহাতি শুরু হতে সময় লাগল না।
চলবে,
Sinin Tasnim Sara
★আনএডিটেড একটি পর্ব 😶