#পদ্মদিঘি_ [১ম পরিচ্ছেদ]
০৯.
[কপি সম্পূর্ণ নিষেধ]
[সেরা কমেন্টকারীদের নিয়ে গ্রুপে পোস্ট করা হবে। গ্রুপের লিংক গল্পের শেষে দেয়া হলো।]
–“আম্মিজান, সত্যি-ই কী আমায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাইছেন? আমি এতোই বোঝা আপনার জন্য?”
কিশোরীর সরল অভিযোগে হৃদপিণ্ড ধ্বক করে উঠলো শবনামের। সঙ্গে আঁখিযুগলের কোণ ভিঁজে গেলো অশ্রুর দ্বারা। হৃদয়ে বৃহৎ পাথর চেপে গলায় কাঠিন্য এনে বললো,
–“সময় হলে সকলেরই বিয়ে হয়। কন্যাদের পরের বাড়ি যেতে হয়, এটাই হয়ে আসছে আদিম যুগ হতে। এই কঠিন সত্যকে আমি তুমি চাইলেও অস্বীকার করতে পারবো না। আমি প্রায় সমাপ্ত করে ফেলেছি, মসলিন বুনন। আগামীকাল দ্বিপ্রহরে ক্রেতাদের তা সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিবো। অতঃপর পাত্র আসবে। এবার যেন পূর্বের ন্যায় কোনরকম গন্ডগোল না দেখি, সেহনাত!”
কিশোরী নির্বাক হয়ে তাকালো মায়ের দিকে। শবনাম কখনোই তার নাম উচ্চারণ করেনি। সবসময় মা, আম্মা অথবা রাজকন্যা বলে সম্বোধন করতো। মায়ের এমন বদলে যাওয়া দেখে সেহনাত অভ্যন্তরে আরও ভেঙ্গে পরলো। নিশ্চুপ, বিমূঢ় হয়ে দৃষ্টি নত করে রইলো। অধরে অধর চেপে ক্রন্দন আটকে রাখলো। নাহ, আর কাঁদবে না সে। সকলেই তার নিকট হতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এমনকি জম্মদাত্রী মাতাও। কিশোরী শক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রইলো পদতলের নিকট। এই ক্ষুদ্র জীবনে তার আর কতো পরীক্ষা দিতে হবে সেটা উপরওয়ালা ব্যতীত উত্তম কেউ জানে না।
———————-
[বিশেষ নোটবার্তাঃ এখন হতে “ইফফাত” বদলে “রাত্রী” রাখা হলো।]
শাহাজাদী রাত্রীর আরও কিছুদিন কাশিমপুরে অবস্থান করার কথা থাকলেও আজ তার ফিরতে হবে। শাহাজাদীর মাতা পত্র পাঠিয়েছেন দূত দ্বারা। তাদের বিশেষ কোথাও দাওয়াত আছে, সেখানে শাহাজাদীর উপস্থিত থাকাটা অত্যাবশ্যক। এরকমটা শুনে বেগম আকলিমার খারাপ লাগলেও পরমুহূর্তে নীল নকশা এঁকে ফেলে।
বেগম আকলিমার পয়গাম পেতেই শাদবিন এসে হাজির হয় বেগম আকলিমার কক্ষে। শাদবিন প্রথমেই সালাম জানায় তার দাদীমাকে।
–“ওয়া আলাইকুম আসসালাম আমার শের। অতি দ্রুত ব্যাগপত্র গুছিয়ে নেও। শহর তোমায় তলব করেছে। শাহাজাদীর সঙ্গে আজই তুমি রওনা হচ্ছো শহরের উদ্দেশ্যে।”
–“ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন দাদীমা। শহর আমায় তলব করেছে?”
–“হ্যাঁ আমার প্রিয় পৈত্র। তোমার চাচাজান কোনো কাজে আটকে আছে, তুমি-ই পারবে সেই সমস্যার সমাধান করতে। আজই পত্র এসেছে তোমার চাচাজানের পক্ষ হতে!”
–“ঠিক আছে দাদীমা। আমি অতি দ্রুত-ই রওনা হবো।”
শাহাজাদী রাত্রী যখন এই সংবাদ শুনতে পায় তখন তার মুখশ্রীতে খুশির ঝলক দেখা দেয়। সে এবং শাদবিন শাহীর একসঙ্গে ভ্রমণ করবে, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? শাহাজাদী রাত্রী দ্রুত নিজেকে সজ্জিত করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
–“দাসীরা, আমায় সব থেকে উত্তম সাজ উপহার দিবে। সজ্জিত আমি এতোটাই অপরূপ হতে চাই, যেন জমিদার শাদবিন আমার নিকট হতে দৃষ্টি ফেরাতে না পারে। দ্রুত করো!”
দাসীরা মিটিমিটি হাসলো। অতঃপর শাহাজাদীর আদেশ অনুযায়ী সাঁজাতে ধ্যান দেয়। শাহাজাদীর বয়স বেশি না হলেও সতেরোর কোঠায়।
অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত সময় ধরা দেয় শাহাজাদীর হস্তে। আজ সে পালকিতে উঠবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার আদেশ অনুয়াযী অতিব সুন্দর ঘোড়ার গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। সেথায় জমিদার শাদবিন শাহীর এবং শাহাজাদী রাত্রী একসঙ্গে অবস্থান করবে। শাহাজাদীর এমন সিদ্ধান্তকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না শাদবিন। অবশেষে দু’জন একসঙ্গে রওনা হয় শহরের উদ্দেশ্যে। শাহাজাদীদের দাওয়াত মূলত শহরেই। জমিদার পরিবার বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছে।
সকলকে বিদায় দিয়ে শাহাজাদী রাত্রী সর্বপ্রথম উঠে বসলো। হৃদয়ে তার খুশির জোয়ার। নিশ্চয়ই শাদবিন তাকে দর্শন করেছে। শাদবিন নির্বিকার হয়ে বেগম আকলিমার থেকে বিদায় নিলো। অতঃপর আম্মিজান বেগম মালিহার হতে বিদায় নিলো। দোয়া পাঠ করে মালিহা পুত্রের ললাটে ফুঁ দিলো। এ সমস্ত বেগম আকলিমার অভিনয় বৈ কিছু লাগলো না। তাই সে একরকম গম্ভীর হয়ে রইলো। পুত্রের ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে মালিহা উৎকন্ঠা হয়ে বললো,
–“সাবধানে যাবে আমার পুত্র। ভৃত্যকে সবসময় সঙ্গে রাখবে!”
–“নির্ভয়ে থাকুন আম্মিজান। আপনার পুত্র এখন নিজেকে গোছাতে শিখেছে।” অধর বাঁকিয়ে যুবক তার মাতাকে আশ্বাস দিলো। অতঃপর বেগম শর্মিলার থেকে বিদায় নিলো। ইসরাত অদূরে মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে।
সকলের থেকে বিদায় নিয়ে শাদবিন উঠে বসলো। এতক্ষণ উম্মুক্ত দ্বার দিয়ে শাহাজাদী রাত্রী জমিদারের যত্নশীলতা দর্শন করছিলো। যুবক উঠতেই নড়েচড়ে বসলো রাত্রী। শাদবিন বসলো শাহাজাদীর বিপরীতে। যুবক উঠতেই প্রহরী দ্বার বন্ধ করে দেয়। শাদবিন জানালার পর্দা সরিয়ে সেখানে কনুই এর ভার দিয়ে বাইরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। অন্তঃপুরে বললো,
–“তোমায় দেখার জন্যে আমি শাদবিন তৃষ্ণার্ত, ভ্রমরাণী! না জানি এই আঁখিযুগলের তৃষ্ণা কবে মিটবে।”
ঘোড়ার গাড়ি সহ সমস্ত প্রহরী চলে যেতেই বেগম আকলিমা জগন্নাথকে কাছে ডাকলো। জগন্নাথ বেগম আকলিমার পেছনে দৃষ্টিনত করে এসে দাঁড়ালো। বেগম আকলিমা মিইয়ে যাওয়া গলায় বললো,
–“গুজব ছড়াও, শাহাজাদী রাত্রী এবং শাদবিনকে নিয়ে। জবানে যা আসবে তা-ই ছড়াও। এই গুজব কেন ওই কন্যার কর্ণগোচর হয়! অতঃপর তার বেহায়াপনার পরীক্ষা সে নিজে দিবে। বাধ্য সে!”
বেগম আকলিমার উক্তি প্রথমে কিছুটা ধাঁধার ন্যায় লাগলেও পরবর্তীতে বুঝতে পারলো তার পরিকল্পনা। জগন্নাথ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো! বেগম আকলিমা মুখশ্রীতে কিছুটা গাম্ভীর্য এনে অহং এর সঙ্গে অভ্যন্তরে চলে গেলো, দাসীসহিত। ইসরাত দ্বারে দাঁড়িয়ে মিনমিন করে বললো,
–“আপদ বিদায় হয়েছে ভালোই। আমি এখুনি মসজিদে স্বর্ণমুদ্রা পাঠানোর ব্যবস্থা করছি!”
বলেই হনহন করে অভ্যন্তরে চলে যায়।
———————
–“শুনেছিস, জমিদার নবাবের সঙ্গে আমাদের প্রতিবেশি জমিদারের ঘনিষ্ট সম্পৃক্ততা হতে শুরু করেছে। শুনেছি সেই জমিদারের অতিব সুন্দরী এক কন্যা আছেন। শাহাজাদী রূপে, গুণে কম নয়। লোকমুখে শোনা যায় দুজনের মধ্যে কিছু চলছে। একসাথে ভ্রমণেও বেরিয়েছে।”
–“হ্যাঁ আমিও শুনেছি একই ঘোড়ার গাড়িতে দু’জন অবস্থান করেছে। অনেকে নাকি দেখেছেও এই জোড়াকে। কী সুন্দর মানিয়েছে, মাহশাল্লাহ। আমাদের জমিদার যুবকও কম কিসে?”
এসব এক কান দু’কান হতে হতে সেহনাতের কান অবধি পৌঁছেছে। এসব শুনে কিশোরী মুহূর্তেই অনুভূতিশূণ্য হয়ে পরে। কিশোরী কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তার ভাবনাটা এতো দ্রুত বাস্তবে রূপান্তর হবে সে কল্পনাও করেনি। বুকের মধ্যে শঙ্কিত কুঁ ডাকছে, হাহাকারে প্রতিটি রন্ধ্র প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। কেউ যেন ছুরি চালাচ্ছে বিতৃষ্ণা হৃদপিন্ডে, রক্তাক্ত হচ্ছে তার অনুভূতি, সত্ত্বা। কিশোরী একটুর জন্যে পরে যেতে নিচ্ছিলো, পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নেয়। চরণ জোড়া ভিষণ রকম কাঁপছে। দাঁড়াতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। নেতিয়ে পরে কিশোরী। কোনরকমে কাঠালতলায় গিয়ে বসলো। কেউ নেই এদিকটায়। সময়টা দ্বিপ্রহর। অনেকদিন পর মুক্ত বাতাসে অবস্থান করছে সে। এই মুক্ত হওয়ার আনন্দে এমন বিষাদ সংবাদ পেয়ে তার আনন্দ পাখীরা নিলিপ্ত, নির্বিকার হয়ে পরেছে।
দীর্ঘক্ষণ বসে রইলো কিশোরী। ওভাবেই, একই ভঙ্গিতে। এখন গোধূলিলগ্ন। সময়টা অতিবাহিত করলো ক্রন্দনরত অবস্থায়। যখন দেখলো ধূসর বিষণ্ণ অম্বর, তৎক্ষনাৎ ক্রন্দন থামালো। নাক টেকে হাতের উল্টো পিঠে মুছে নেয় অশ্রুসিক্ত আঁখিযুগল। অদূরে দাঁড়ানো এক যুবক তাকেই খেয়াল করলো নিবিড়ভাবে। কিশোরী উঠে দাঁড়ায়। মাথায় কাপড় দিয়ে ডান ফিরতেই অদূরে এক যুবককে দেখতে পেলো৷ যুবকের দৃষ্টি যে তার পানেই, কিশোরীর বুঝতে বাকি রইলো না। ইতস্তততায় নিজেকে আবৃত করলো কিশোরী। দ্রুত মুখে কাপড় দিয়ে নিজ বাড়ির পথে রওনা দেয়। যুবক ওভাবেই নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হুট করেই তার মস্তিষ্কে হানা দিলো নতুন পরিকল্পনা। লাজুক হাসি দিয়ে ভাবে,
–“আমারও তাহলে বিয়ের ঘন্টি বাজবে, আম্মা। আজই তোমায় কন্যাটির কথা বলবো!”
বলেই যুবক অন্যদিকে হাঁটা ধরে। হয়তো বাড়ির উদ্দেশ্যে। পুরো তিন দিন কেটে গেলো। চঞ্চল কিশোরী এখন নির্জীব প্রাণীর মতো হয়ে গেছে। খাওয়া-দাওয়ার প্রতি অনীহা এসেছে গত দু’দিন পূর্বেই। শবনাম সমানতালে চিন্তিত কন্যাকে নিয়ে। এভাবে চুপসে যাওয়া দেখে তার মনে একটি উত্তরই আসছে। হয়তো মাকে ছেড়ে, আপনজনদের ছেড়ে চলে যেতে হবে। তাই মেয়ে তার এমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে। এ কথা ভাবলে যে শবনামেরও দিল কাঁদে। কিন্তু কোনো যে উপায়ন্তর নেই।
তবে আজ সে খুব খুশি। ভালো সম্বন্ধ আসলে উপাখ্যান করা যায় নাকি? ভালো সম্বন্ধ আসলে প্রতিটি মা-বাবার আনন্দ এবং খুশি থাকে আকাশচুম্বী৷ মনে আসবে প্রগাঢ় প্রশান্তি, এই ভেবে তাদের মেয়েটা সুখে থাকবে। এমনই এক সুখবর নিয়ে এসেছেন বর্তমান পাত্রপক্ষ। পাত্র নাকি বাবার চাষাবাদ দেখাশুনা করে, এছাড়াও তারা গন্ধপুরের বিত্তশালী পরিবার। পাত্র দেখতে শুনতে ভালো। স্বভাব তার ভোলা-ভালা হলেও পাত্রের মায়ের উক্তিতে পাত্র কিশোরীকে বেশ পছন্দ করেছে।
শবনাম যখন বললো মেয়ে শিক্ষিত তখনই নাক সিটকালো পাত্রের মাতা। বিষয়টা সবার আড়াল হলেও শবনামের দৃষ্টি এড়ায় না। এই সমাজে শিক্ষিত মেয়েদের নিম্নস্তরে দেখা হয়। তাদের ভাষ্যমতে মেয়েরা কেন পড়বে? ওরা ঘর সামলাবে, স্বামীর সোহাগ নিবে আর বাচ্চা হলে বাচ্চা সামলাবে। এ সমাজ খুব খুঁতখুঁতে। এখানে মেয়েদের বয়স ১৭ পেরোলে বিয়ে হবে না, মেয়েকে শিক্ষিত হতে দেয়া যাবে না, বড্ড উঁচু-নিচু দেখানো হয় তাদের। বিশেষ করে গায়ের রং নিয়ে তাদের বেশি মাথা ব্যথা।
–“কাজ কাম, পারে তো নাকি সারাদিন পাঠ্যপুস্তকে ঢুকে থাকতো? মেয়ে গো আবার পড়াশোনা কিসের?”
–“জ্বী পারে তো অনেক কিছুই। আমার মেয়ে আলহামদুলিল্লাহ সব দিক দিয়ে ভালো।”
পর্দার আড়াল হতে সেদিনের যুবককে চিনতে অসুবিধা হলো না কিশোরীর। মুহূর্তেই ভেতরটা ধ্ক করে উঠলো কিশোরীর। সত্যি সত্যি-ই কী এবার তার নিকাহ নিশ্চিত! আর নিশ্চিত হলেই বা কী? সে যেই ধোকার সম্মুখীন হয়েছে তাতে শাদবিন যে তার কাছে মৃত। দুনিয়ার প্রতিটি মানুষ-ই সুন্দরের পূজারী।
আজ কিশোরীর জড়তা আসলেও সে বেশ সাহসিকতার সঙ্গে বৈঠকঘরে গিয়ে পরপুরুষের সামনে দাঁড়ায়। যুবক হা করে তাকিয়ে রয় কিশোরীর দিকে। যুবকের মাতা মুখটা বাঁকিয়ে শকুনের মতো দৃষ্টি দিয়ে কিশোরীর চরণ হতে মাথা পর্যন্ত দেখতে লাগলো। কিশোরীর সালামের উত্তর দিয়ে মহিলা বললেন,
–“নাম কী তোমার?”
জড়তার সঙ্গে কিশোরী মায়ের দিকে তাকালো। শবনাম ইশারায় মেয়েকে আশ্বস্ত করলো। কিশোরী মাথা নিচু না করে মহিলার দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে বললো,
–“জ্বী, সেহনাত আহিম।”
দূর থেকে আয়েশা এবং মোহিনী নিরব দর্শকের মতোন তামাশা দেখতে ব্যস্ত। মোহিনীর যুবককে বেশ মনে ধরেছে। এই যুবককে তার বুবুর সঙ্গে কিছুতেই মানতে পারছে না। কিন্তু তাও মায়ের জন্যে দাঁতে দাঁত চেপে সবটা দেখে যাচ্ছে। কিশোরীর এমন দৃষ্টি দেখে মহিলার নিকট বেশ অপমান জনক লাগলো। মহিলা উঠে দাঁড়ায় এবং শবনামের উদ্দেশ্যে বললো,
–“আদব-কায়দা শিখাননি মেয়েকে? বড়ো বে’য়া’দ’প মেয়ে তো দেখছি। কীভাবে আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলতাসে এই কন্যা। লাজ-লজ্জাহীন মাইয়া!”
শবনাম কোমল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মেয়ের দিকে। কিশোরীর দৃষ্টি তখন পদতলের নিকট। মোহিনী বেশ খুশি হয় সেহনাতকে অপমানিত হতে দেখে। সে ধরেই নেয় এ বিয়ে হবে না, তাই সে চট করে আয়েশার বারণ উপেক্ষা করে ঘটনাস্থলে পৌঁছালো।
ঠিক তৎক্ষনাৎ যুবক উঠে দাঁড়ায় এবং মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“মা, ছোট মানুষ। ভুল করতেই পারে, এভাবে বলিও না। সর্বপ্রথম মগজে রেখো এই মেয়েটি তোমার পুত্রের পছন্দ করা নারী।”
শবনাম মুগ্ধ হয়ে যুবকের দিকে তাকায় এবং স্মিত হাসে। মহিলা কিছুটা শান্ত হয়। অতঃপর তেঁজী দৃষ্টি দেয় পুত্রের দিকে। যুবক চোখের ভাষায় মাতাকে কোনো এক ব্যাপারে আশ্বস্ত করে। মহিলা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে নিজের ক্রোধকে সংগত করে। সেহনাতের উদ্দেশ্যে বলে ওঠলো,
–“তুমি আমার পছন্দ না হলেও আমার পুত্রের পছন্দের পাত্রী। তবে আমার বাড়ি আসার পূর্বে আদব-কায়দা শিখে নিবা।”
সেহনাত মাথা মাড়ালো। দৃষ্টি তখনো তার পদতলের নিকট। এবার যেন ক্রোধ কমে গেলো তার। যাক এতটাও অপদার্থ নয় এই কন্যা। এদিকে মোহিনী নির্লিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে সকলের দিকে। করুণ দৃষ্টিতে একবার যুবকের দিকে তো আবার তার বাবা অর্থাৎ ফিরোজ সাহেবের দিকে। মহিলা কিশোরীকে কাছে ডাকলো এবং হাতে চিকন রূপার দুটো চুড়ি পরিয়ে দিলো।
–“বিয়ের পরে পাবা স্বর্ণের। এখন ছোটখাটো করে দিলাম।”
সেহনাতের বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে মোহিনী একবারও নিজ কক্ষ হতে বের হয়নি। সারাদিন সেহনাতের প্রতি ঈর্ষাম্বিত হয়ে কেঁদেই গিয়েছে। মোট কথা যুবককে তার চরমভাবে মনে ধরেছে। যেকোনো মূল্যে যুবককে মোহিনীত চাই!
–“তুই খুব খা’রা’প সেহনাত। তুই আমার ভালোবাসাকে কেড়ে নিয়েছিস! কেন সব ভালো তোর কপালেই লিখা থাকে? তুই একটা নি’ম্ন’খা’রা’ম। তুই সব ছিনিয়ে নিছিস আমার থেকে। তোরে আমি কোনদিন সুখী হতে দিবো না, কোনদিন না!”
~চলবে।
___লাবিবা ওয়াহিদ___
গ্রুপঃ LaBiba’s Typescripts
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।