#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ২৫
কাল রাতে রাফসীন তাঁর পরিবারসহ সাদদের বাড়িতে উঠেছে। সকালে তমা তাঁর বড় ভাই শফিককে ফোন করেছিল। জুলেখার শরীরটা একটু খারাপ। তাই শফিক জুলেখাকে নিয়ে অনুষ্ঠানের দিন সকালে আসবে।
মহসীন খান তাঁর ছোট ভাই রাফসীনকে বললেন রিসিপশনের অনুষ্ঠানের জন্য বানানো কার্ডগুলো ঠিক আছে কি না তা দেখতে। রাফসীন সম্মতি জানিয়ে কার্ডগুলো একটা একটা করে চেক করলো। কার্ডগুলো সব আজ বিকালেই এসেছে। এখন শুধু নাম লিখে দিয়ে দেওয়া বাকি।
রাফসীনের সাথে তমাও কার্ড খুলে খুলে দেখছে। রাফসীন নিজেই তমাকে ডেকেছে। তাঁর সঙ্গে সাহায্য করার জন্য। তমা কার্ড হাতে নিয়ে খুলতেই তমার চোখ ছানাবড়া। তমার নামের জায়গায় থমা লিখা! তমা কার্ড নিয়ে এদিক ওদিক তাকালো। কার্ডগুলো দেখলেই মানুষ এখন তাঁর নাম নিয়ে হাসাহাসি করবে। ছি ছি! কী বিচ্ছিরি একটা পরিস্থিতি!
তমা কার্ড হাতে নিয়ে গুরুগম্ভীর হয়ে বসেই রয়েছে। এটা নিশ্চিত সাদের কাজ। সাদই তো কার্ডের অর্ডার দিতে গিয়েছিল। সাদই এমনটা করেছে। তমা কার্ডটা হাতে নিয়ে মহসীন খানকে দেখালো। মহসীন খান বললেন,” টাইপিং মিস্টেক হয়েছে মা। এই রাফসীন কার্ডের মধ্যে তমার নামটা শুদ্ধ করে লিখে দে তো।”
রাফসীন প্রত্যেকটা কার্ডে তমার নাম শুদ্ধ করে লিখে দিলো। থমা কেটে তমা! তমা আজ সাদের ওপরে বেশ চড়ে আছে। সাদকে সামনে পেলেই কাঁচা চাবিয়ে খেয়ে ফেলবে এটা তো নিশ্চিত!
সাদ বাড়িতে এসেই কিছুক্ষন ফ্লোরে বসে বসে কার্ডগুলো ঘাটলো। তমা সাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,” আপনি কার্ডে আমার নাম ভুল লিখিয়েছেন কেন?”
সাদ ব্যস্ত কন্ঠে বললো,” কোথায়? ঠিকই তো আছে। থমাস আলভা এডিসন।”
তমা বিরক্ত হয়ে সাদের সামনে থেকে সরে গেল। এত বেশি বোঝে এই ছেলেটা!
বাইরে প্রচন্ড দমকা হাওয়া বইছে। টুপটাপ করে গড়িয়ে পরছে বৃষ্টির ফোঁটা।
রিসিপশনের অনুষ্ঠান কালে রাতে হবে। তাই, তমা আজ হাত ভরে মেহেদী দিয়েছে। অনিতা দিয়ে দিচ্ছে তমার হাতে মেহেদী। সাদ বেশ কয়েকবার উঁকি ঝুঁকি মেরে গিয়েছে। অনিতাকে সামনে দেখে আর তমাকে কিছু বলার সাহস পায়নি।
দুহাত ভর্তি করে মেহেদী দেওয়া শেষ তমার। অনিতা অন্য কাজে রান্নাঘরে যেতেই সাদ এসে তমাকে বিরক্ত করা শুরু করলো। এই একটু আগেই অফিস থেকে এসেছে সাদ। মেহেদীর টিউব হাতে নিয়ে সাদ বললো,” হিলু থমমা! কী অবস্থা! মেহেদী দেওয়া হচ্ছে? মেহেদী! কই দেখি তো!”
তমা বিরক্ত হয়ে জোরে সাদের শার্টে মেহেদী ছুঁইয়ে দিলো। তমাই বা কী করবে? সাদ সবসময় জ্বালিয়ে মারছে। এই কতক্ষন আগে টেবিলে এক গাদা পানি ফেলে দিয়েছিল। কিছু বলাও যায় না এখন। কিছু বললেই সবার সামনে থমাস থমাস বলে ব্যঙ্গ করে।
সাদ একবার নিজের শার্টের দিকে তাকালো। অফিসের ইউনিফর্মটা তমা মেহেদী লাগিয়ে শেষ করে দিয়েছে। সাদা শার্টটা পুরো গেছে। একটু আগে অফিস থেকে এসে আর ইউনিফর্ম খোলা হয়নি। তমা এই ফাঁকে মেহেদী লাগিয়ে দিয়েছে শার্টে। সাদ একবার বারান্দার দরজা খুলে বাইরে তাকালো। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির আওয়াজে মুখোরিত চারপাশ। সাদ দ্রুত বারান্দার দরজা বন্ধ করে ড্রয়িংরুমের দিকে ছুটলো। যা করার এখনই করতে হবে নাহলে বৃষ্টি পরা বন্ধ হয়ে যাবে। সাদ এক ছুটে ড্রয়িংরুমে গিয়ে তমার হাত টেনে ধরে বাসার বড় দরজাটা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিলো। তমা হতবিহ্বলের ন্যায় সাদের দিকে তাকাচ্ছে বারবার। সাদ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাঁকে?
সাদ তমার হাত ধরে তড়িঘড়ি করে ছাঁদে উঠলো। ছাঁদ পুরো ভিজে গেছে বৃষ্টির পানিতে। সাদ ছাঁদে পৌঁছে তমার হাত আলগা করে দিলো। তমা এদিক ওদিক তাকালো। সাদ এই বৃষ্টির মধ্যে তমাকে ছাঁদে নিয়ে এলো কেন? তমা নিচের দিকে তাকালো। লাল লাল রক্তের ন্যায় কী ছড়িয়ে পরছে মেঝেতে? তমা নিজের হাতের দিকেও তাকালো একবার। হাতের মেহেদী পানিতে ভিজে রঙ ছড়াচ্ছে। তমার ওরনার নিচের অংশ আর গায়ে পরনে কামিজটার খানিকটা লাল টকটকে হয়ে গেছে। সাদ হাসতে হাসতে তমার দিকে তাকালো। এটা তমার প্রতি তাঁর নেওয়া নিরব প্রতিশোধ। তমা তাঁর শার্ট নষ্ট করে দিয়েছে মেহেদী দিয়ে। বিমিময়ে সে তমার জামা নষ্ট করে দিয়েছে। শোধ বোধ!
তমা বৃষ্টির পানিতে গা ভিজিয়ে ফেলেছে। বাজ পরার আওয়াজ হচ্ছে বারবার। তমার এতে অবশ্য কোনো নড়চড় নেই। রাতের বেলা বৃষ্টিতে ভিজেনি কখনো তমা। তাও আবার এমন অন্ধকারে! তমা স্থির দৃষ্টিতে সাদের দিকে তাকালো। সাদের সাদা শার্টে মেহেদীর দাগ আরো ছড়িয়ে গেছে। সাদ তমার দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে তৃপ্ত কন্ঠে তমাকে বললো,” তুমি আমার শার্ট নষ্ট করেছো আমি তোমার জামা নষ্ট করেছি।” তমা নিজের জামার দিকে তাকালো। আসলেই নষ্ট হয়ে গেছে। এই জামা আর পরা যাবে না কখনো। সাদ তমার দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে হাসলো। বেশ হয়েছে! আরো করো দুষ্টুমি!
অনেকক্ষন হয়েছে তমা ছাঁদে এসেছে। এবার নিচে নামা দরকার। তমা খুব সাবধানে নিচের সিঁড়িতে পা দিলো। মেঝে বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। সাবধানতা অবলম্বন না করলে পা পিছলে পড়ে হাড় ভাঙতে হবে। তমাকে চলে যেতে দেখে সাদ পেছন থেকে বললো,” এই মেয়ে যাচ্ছো কোথায়?”
তমা সাদের কথা শুনেও কোনো জবাব দিলো না। সাদ দৌড়ে যে-ই না তমাকে ধরতে যাবে সেই মুহূর্তেই ধপাস! পা পিছলে ছাঁদের ওপরে উলটে পরেছে সাদ। তমা জোরে কিছু নিচে পরার মতো শব্দ পেয়েই পেছন ফিরে তাকালো। ওমা! এ দেখি সাদ পরে আছে নিচে। সাদ কোমড়ে হাত দিয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় বলতে লাগলো,” মাগো! আমার কোমড়টা গেল গো!”
তমা সাদের কথা শুনে জোরে হেসে ফেললো। বেশ হয়েছে! বড় মানুষ থাকবে বড় মানুষের মতো। ছোট বাচ্চাদের মতো দৌড়াদৌড়ি ঝাঁপাঝাপি, লাফালাফি করলে কী চলে? তমা সাদের দিকে আরেকবার তাকালো। সাদ তখনও কোমড় ধরে বসে আছে। তমা মনে মনে সাদের একটা নাম দিলো। কোমড় ভাঙা সাদ!
চলবে…