ছায়াখেলা (১ম পর্ব)

###ছায়াখেলা (১ম পর্ব)
###লাকি রশীদ

ভারী ভারী দুটো ব্যগ নিয়ে সামান্য রাস্তা আসতেই আমার গলদঘর্ম হয়ে যেতে হচ্ছে। কিছুদিন আগেও তো এমন মনে হয়নি। ওজন বেড়ে যাচ্ছে বলে না কি? না বয়স? না কাঠখোট্টা জীবন?’ ঠিক কোনটার জন্য এই টুকু কাজে কুহু তোমার এতো কষ্ট হচ্ছে? কোন রাজ্যের নবাবনন্দিনী তুমি যে এটুকু বোঝা বইতে ঘেমে নেয়ে অবস্থা খারাপ একেবারে? তোমার এই ছোট খাটো কাজের জন্য কি মানুষ লাগবে? হা হা, তাহলেই হয়েছে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাবে। এসব মনে আসলে আমি দ্বিগুন উদ্যমে কাজ করতে থাকি। আপনমনে বলতে থাকি আরামে আহ্লাদে থাকার জীবন তোমার নষ্ট হয়ে গেছে,আর কবে সেটা বুঝবে? সুতরাং, কঠিন রোদ্রদাহ
সহ্য করতে শেখো।

চিরকালের আলসে কুহু কে এবার এই জীবন থেকে বিতাড়িত করে ফেলো। মেজাজ হয়তো এতোটাই খারাপ হতো না গলির মুখে যদি এখন শুভকে দাঁড়াতে না দেখতাম। আমি তো রাস্তায় কারো চোখের দিকে তাকিয়ে হাঁটি না এবং পারতপক্ষে কারো সাথে কথা বলি না। কে কি কখন আমার নামে বদনাম উড়াবে কিছু বলা যায়? তাই হঠাৎ করে কেমন আছো কুহু বলে উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে ব্যগ দুটো নেবার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো মানে হয়? আমি তখন রুক্ষস্বরে বলি, ভালো আছি। ব্যগ নিতে হবে না। দয়া করে দূরে থাকো। তারপর হনহন করে হেঁটে বাসায় চলে এসেছি।

বাসার ভেতরে ঢুকতেই দেখি বড় ভাইয়া গাড়ি থেকে নামছেন। নিজেকে আপনমনে বকা দেই, পাঁচ টা মিনিট এদিক সেদিক কি হতে পারে না? ঠিক একই সময়ে দুজন বাসায় ঢুকতে হবে?আমাকে দেখেই বললেন,আর একপাও তুমি এগুবে না। বস্তাগুলো ওখানেই ছেড়ে আসো। এবার ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে আদেশ দিলেন, নুরুল শোনো পরে গাড়ি গ্যারেজে তুলবে, আগে এগুলো ওর ফ্ল্যাটে দিয়ে এসো। এই জিনিসটাই আমার ভীষণ বিরক্ত লাগে, আমি কি কারো সাহায্য চাইছি? আগবাড়িয়ে এসবের মানে কি, আমি বুঝি না। নুরুলকে কি আমি মাইনে দিয়ে রেখেছি যে শাড়ির বস্তাগুলো ও নিয়ে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দিবে? ও এগোনোর আগেই আমি গলা তুলে বলি, তুমি এগুলো নিতে হবে না। তোমার কাজ তুমি করো। ধূসর হয়ে যাওয়া চুলগুলো ঝাঁকিয়ে এবার ভাইয়ার আদেশ, অবাধ্যতা করে না কুহু। ছেড়ে দাও বলছি ওগুলো। মালি, বাড়ি থেকে আগত সাহায্য প্রার্থী দুজন সবাই হা করে দেখছে। অনেকের মতো এদের কাছেও বড় ভাইয়া একচ্ছত্র রাজা বলা যায়।নাটক করে লাভ নেই,তাই ধপ করে ছেড়ে দিলাম।

পা চালিয়ে সিঁড়িতে উঠবো দেখি নিঃশব্দে একই সঙ্গে দুজন চলছি। মৃদু স্বরে বললেন,বুঝো না তো কিছু। এতো ভারী জিনিস মেয়েদের তুলতে নেই। হেসে বলি,
এরচেয়েও অনেক ভারী বোঝা তোলার জন্য আমি প্রস্তুত। দয়া করে অভ্যাসটা নষ্ট করে দিও না। আদরের নামে এগুলো আসলে ক্ষতি করা। যতো তাড়াতাড়ি বুঝবে ততো আমাদের দুজনের জন্য ই খুব ভালো হবে। দোতলার বিপরীতমুখী দুই ফ্ল্যাটে দুজনের বাস‌। পার্থক্য হলো উনার টা ৩০০০ স্কয়ার ফুট আর আমি যেটায় থাকি ৮০০ স্কয়ার ফুট এর। কলিং বেল টিপতেই আনু দরজা খুলে দিলো। কোত্থেকে দমকা হাওয়ার মতো মৌ এক ছুটে এসে মা বলে এসে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। পরক্ষণেই ভাইয়াকে দেখে মামু বলে উনার কোলে যাবার জন্য অস্থির। আমি নামিয়ে দিতেই ভাইয়া ওকে কোলে তুলে বলছে, এবার আবার দয়া করে বলিস্ না ওকে আদর করে ক্ষতি করছি। যা ফ্যানের নীচে গিয়ে কিছুক্ষন বস্। ও এখন কিছুক্ষন আমার কাছে থাকবে।

শীত ছিল এতোদিন খুব ভালো ছিল। আমার প্রিয় ঋতু হচ্ছে শীত। ফারহান আমাকে রাগাতো, হুঁ তোমার প্রিয় ঋতু তো শীত হবেই। কারণ কি জানো? আমি গড়গড় করে বলতাম, অনেক কারণ আছে। ধরো এইসময় দরদর করে তোমার ঘাম পড়ে না। বিয়ে বাড়ীতে ভারী শাড়িগুলো পরে যাওয়া যায়। সুন্দর সুন্দর কার্ডিগান ও শালগুলো ব্যবহার করা যায়। ও তখন মাথা নাড়তে নাড়তে বলতো,আসল কারণটাই তো বললে না ডিয়ার।
শীতের রাতগুলো দীর্ঘ হয় ………. … সেটা অন্তত বলো।

আমার এখনো মনে আছে, হাতের পাশে তখন একমাত্র ছোড়ার মতো জিনিস বালিশ ই ছিল। মেঝেতে বসা ফারহানের দিকে ওটা ছুড়তেই বলছে, কুহু প্লিজ বালিশ
মাটিতে ফেলে না। তুমি তো একটুখানি বালিশ ধরো দশ ভাগের এক ভাগ,ওয়াড়ে ঢুকিয়ে বলবে আমার হাত ব্যথা করছে ফারহান। ঠিক যেভাবে মশারী টাঙ্গাতেও তোমার হাত পড়ে যায়। এতো আলসে মেয়ে রে বাবা আমার জীবনেও দেখিনি। ইনফ্যাক্ট আমার চৌদ্দগোষ্ঠী মনে হয় দেখেনি।

কথা শেষ করতে পারেনি আমার নির্মেদ, নিটোল শরীর তখন ওর উপর ঝাপিয়ে পড়ে বলতো, সবসময় বাজে কথা বলতেই হবে? এখন আবার বদনাম করছো আমি আলসে বলে। মা বলেছেন তুমি আমার ঘরে ছুটোছুটি করলেই আমরা খুশি। আর কিচ্ছু তোমায় করতে হবে না। তুমি কি মায়ের চেয়েও বড় হয়ে গেলে না কি? ও তখন মাথা নেড়ে বলতো, না না মায়ের চেয়ে বড় হওয়া সম্ভব না। কিন্তু আমার পিউ কাঁহা সারাদিন কি করবে তাহলে? শুয়ে বসে খেয়ে দেয়ে নিবানিদ্রা দিলে তুমি মোটা হয়ে যাবে সোনা। আমি তো এটা চাচ্ছি না। তাই,অখন্ড সময় অবসর হিসেবে পেলে তোমার কিন্ত আখেরে ক্ষতি হবে। বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাইছি?………………………………….
কে কার এতো দরকারি কথা শোনে? কুহু তখন আদুরে বিড়াল হয়ে গেছে। হাল ছেড়ে ফারহান তখন বলতো, কি একটু আগে বলা আমার কথাটা তাহলে ভীষণ সত্যি ছিল তাই না?

সেই মুহূর্তে আনু ডাকছে, শরবত লন আফা। আমি ঠিক বুঝতে পারি না,বিবেচক ফারহান এখন কোথায় গেল? হাওয়ায় মিলিয়ে গেল? এতোক্ষণ ধরে গত জীবনের যা মনের তুলিতে স্পষ্টভাবে আঁকা……. সবকিছু কি সুন্দর চলছিল, এই সব নষ্টের গোড়া বজ্জাত আনু এসেই ওকে বিদায় করেছে। মিথ্যে মিথ্যিই হোক আর অনেক আগেই হোক, ফারহান তো ভীষণ ভাবে ছিল এখানে। মনে হয় এই মুহূর্তে ঠাস্ ঠাস্ করে আনুকে দুইটা চড় দিতে। পারি না শুধু চোখ রাঙিয়ে বলি, লেবু কোথায় পেলি? টাং দিয়ে দিলি না কেন? ও আমাদের অনেক আগের লোক তাই এসব মেজাজের ধার ধারে না, মৌ এর ড্রইংখাতা ও রং পেন্সিল মেঝে থেকে তুলে বললো, বড়সাব আইন্যা দিছে। বলছে টাং খাইলে আফনার খুব গ্যাষ্টিক বাড়বো আবার তাই সবসময় লেবু দিয়া যেন শরবত দেই। আমার তখন মাথায় যেন আগুন ধরে যায়। চিৎকার দিয়ে উঠি, ঘরে লেবু নাই সে খবর তোর বড়সাব জানে কেমন করে? বেশি বাড়াবাড়ি করলে লাথি দিয়ে বের করবো বলে দিলাম। যা এটা সিঙ্কে ফেলে চূপচাপ আমার জন্য টাংয়ের শরবত নিয়ে আয়। একেক জনের আহ্লাদ দেখে আর বাঁচি না। লেবু এনে দিয়েছে যত্তোসব।

ও তখন গ্লাস হাতে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে বললো,
শাড়ি পাল্টাইয়া হাতটা ধুইয়্যা লন আফা। আমি টাং দিয়াই শরবত আনতাছি। খপ্ করে চুলগুলো টেনে টেনে ভাবি, সেকেন্ড এর মধ্যেই কি হয়ে যায় আমার? কুরিয়ার সার্ভিসের অফিস থেকে শাড়ির বড় বড় ব্যগ নিয়ে আসা পর্যন্ত ঠিক ছিল।…………….বুঝি না। আসলে বলা ভালো আদৌও বুঝতে পারি না কেন এমন হয়? শাড়ি বদলে ঠান্ডা পানি দিয়ে হাতমুখ ধুলাম। এখন একটু ভালো লাগছে,বের হয়ে হাসিমুখে বলি যা তো মৌকে নিয়ে আয়। বেলা হয়ে গেছে, গোসল করুক। এবার বাচাল আনু হেসে বললো,ও মোর কফাল !!! মামণির গোসল পাতি কোন সমুয় শেষ অইছে। আম্মা নিজে দাঁড়াইয়া করাইছে। আমি বলি,আম্মার হাঁটু ব্যথা তুই জানিস না? আমি এসে করাতাম। ও হেসে বলছে, আমি কি তারে ডাইক্যা আনছি। নিজেই আইয়্যা কইতাছে,বেইল বাড়লে ঠান্ডা লাগব ওর। জলদি কইরা
গোসল করা। খালি খাওন বাকি। বড়সাব কি আর এহন তারে আইতে দিবো?

শরবতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলি, দিবেন না মানে? ভাগ্নি
কে নিয়ে খেলা করা ছাড়া উনার কি আর কোনো কাজ নেই নাকি? যা তো তুই ওকে নিয়ে আয়। তোর তো কথা না শোনালে ভালো লাগে না দেখছি। মিনিট পনেরো পর
মৌ এসে বলছে, আমি খেয়ে এসেছি। মামু আমাকে খাইয়ে দিয়েছে। এখন তুমি আমাকে গল্প বলো মা। ঘুমে
ঢুলুঢুলু করছে দুচোখ, আমি জানি এখন শুধু জায়গায় শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলালে ওর ঘুম আসতে মাত্র মিনিট পাঁচেকের ব্যপার। অর্ধেক সময়ও যায়নি ঘুমের অতলে হারিয়ে গিয়েছে। এবার ওর কপালে চুমু দিতেই দেখি আমার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরছে। বাবা না থাকলে পৃথিবীটাই তো অসার, অসম্পূর্ণ। আমি আমার বাবাকে ঢাল বানিয়ে কতো কিছু করেছি। মার কাছে থেকে হাত খরচের টাকা একপ্রস্থ নিয়ে আবার বাবার কাছে চেয়েছি। লুকিয়ে খাতার ভেতর টাকা রেখে যেত বাবা। সিনেমা দেখতে যাবো, বাসায় বললে যেতে দিবে না। বাবা নিয়ে গেছে। গল্পের বই কিনে কিনে
লাইব্রেরীর এত্তোগুলো পাওনা টাকা দিতে পারছিনা। বাবা চুপিচুপি গিয়ে সব টাকা পরিশোধ করে এসেছে।

মাঝে মাঝে ভাবি আল্লাহ তাআলা বুঝেশুনেই বাচ্চাকে মা বাবা দুজন দিয়েছেন। যাতে সুন্দরভাবে ব্যালেন্স করে চলা যায়। যেমন একজন বকা দিলে অন্যজন আদর করে দিলেই হলো। ওর বাবা যখন মারা যায় তখন ও দেড় বছরের ছিল। বাবার স্মৃতি মৌ এর মনে থাকবে না মোটেই। প্রথম প্রথম বাবা বাবা বলে হয়তো
খুঁজতো। বড়ভাবি তখন বলেছে, তোমার বাবা চকলেট আনতে গেছে, আইসক্রিম আনতে গেছে তোমার জন্য। আমি একবার চেঁচিয়ে ছিলাম, শুধু শুধু মিথ্যে শান্তনা দিয়ে কি লাভ? সত্যি কথাটা বলে দেয়াই ভালো। বড় ভাবিকে অপছন্দ করার একশোটা কারণ আছে। কিন্তু মাঝেমধ্যে ভালবাসতে হয়………. এমন কাজও করেন।
বুকের ভেতর ওকে নিয়ে বলেছিলেন, পাগলের মতন কি বলো?। ও কি এখন কিছু বুঝবে না কি? বড় হলে এমনিতেই বুঝতে পারবে। কারো কিছু বলে দেবার দরকার পড়বে না। মেয়েটা অনেক ছোট সেটা অন্তত মাথায় রাখার চেষ্টা করো। এখন গুণে দেখি মেয়েটার বয়স দেখতে দেখতে আড়াই বছরের উপর হয়ে গেছে। ওর বাবা মারা যাওয়ার এক বছর এক মাস হয়ে গেল।

মহামান্যা আনু এবার চিৎকার দিলেন,আফা খাইবেন না? রাজ্যির বেলা অই গেছে। আমি বলি, তুই খেয়ে নিগে যা। আমি খাবো না, দয়া করে হঠাৎ করে এসে চেঁচাস্ না। কতোবার বলেছি ঢুকার আগে নক্ করে
ঢুকবি। তোর কানে কোনো কথা কি ঢুকে না? এবার পায়ে পায়ে এগিয়ে কাছে এসে বলছে আইজকা আফনের বহুত প্রিয় একটা জিনিষ রানছি। লইট্যা হুটকি আর আলু দিয়া ঝাল ঝাল সালুন। আইন চাইট্টা ভাত খাইবাইন। আমি বলি, বললাম না খাবো না। এতো কথা বলিস কেন? এবার মুখ গোমড়া করে বলছে, আফনে না খাইলে আমি ক্যামবে খাই? হাল ছেড়ে দিয়ে ভাবি,মা সব খবর সবসময় পাবার আশায় এ কাকে যে
গছিয়েছেন তা আল্লাহ মালুম। চোখ বুজেই বলি, ঠিক
আছে আমি নামাজ পড়ে আসছি। তুই খাওয়া অন্তত শুরু কর্ আমি আসছি। ও হাসিমুখে চলে যেতেই উঠে পড়ি। এর হাত থেকে নিস্তার নেই সুতরাং তাড়াতাড়ি
যাওয়াই ভালো।

খেতে বসে দেখি আমার এতো বেশি খিদে ছিল বলার মতো নয়। এসবে ভয়ও লাগে, মনে হয় নিজের খিদে নিজে বুঝতে না পারাটা কি মানসিক রোগী হবার আগাম কোনো সঙ্কেত? আল্লাহ মাফ করুন, মেয়েটার কি হবে তাহলে? ভাবতে ভাবতেই দাঁতের নীচে মরিচের অস্তিত্ব অনুভব করি। পানি খেয়ে বাটির দিকে চোখ পড়তেই মনে হয়েছে, ফারহান কোনো শুঁটকির গন্ধ নিতে পারতো না। বিশেষ করে চ্যাপা শুঁটকির। রান্না হওয়ার সময় আমার শাশুরির এক যুদ্ধ, জানালা দরজা সব খুলে দিয়ে ঘরে গন্ধ না থাকার ব্যর্থ প্রয়াস। আর পরে ফারহানের অবিরত ঘ্যানঘ্যান, আমাকে তুমি দেখাও তো কুহু শুঁটকি খাওয়ার একটা মাত্র উপকার। কেন, ভালো জিনিসের পৃথিবীতে কি এতোই অভাব পড়েছে যে শুঁটকি খেতে হবে? আমি তো বুঝি না,যে জিনিস থেকে দুর্গন্ধ বের হয় সেটা মানুষ মুখে তুলে কি করে?

তোমার প্রশ্ন অনেক শুনেছি,উত্তরও দিয়েছি এবার তুমি বলো তো ফারহান সবকিছুতেই তোমায় মনে পড়লে বা তুমি সবকিছুতে ভীষণ ভাবে জড়িয়ে থাকলে……….. আমার বাঁচাটা নিদারুণ কষ্টকর হয়ে যায় না?এই যে ঘরে বাইরে সারা ক্ষণ “খুব ঠিক আছি” লেবেল লাগানো কুহু অভিনয় করতে করতে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ফারহান। আমি তো জ্ঞানত কারো কোনো ক্ষতি করিনি। আমার ই এমন হলো? বিড়বিড় করে বলেই চলেছি, মেয়েটার কথা ভেবে আমি তোমার সাথে জেদ ধরে বলতেও পারি না, আমাকে ওপারে তোমার কাছে নিয়ে যাওয়া যায় না বা তোমার আসা কি সম্ভব নয় ফারহান?

কথা দিচ্ছি কক্ষনো আর আলসেমি করবো না,জেদ ধরবো না। তুমি যা বলবে বাধ্য মেয়ের মতো তা ই শুনবো। বালিশের ওয়াড় লাগাবো, মশারী টাঙিয়ে দেবো, তোমার অবাধ্যতা করে বৃষ্টিতে ভিজে ঠাণ্ডা লাগাবো না। ভেজা চুলে শুয়ে ঠান্ডা লাগিয়ে টনসিলে ব্যথা ব্যথা বলে চিৎকার করবো না। পানি গ্লাসে ঢালার সময় একবিন্দুও টেবিলে ফেলবো না। সময়ে অসময়ে বেড়াতে যাবার বায়না ধরবো না। কি করে বুঝবো বলো আমার আকুতি গুলো তোমার কাছে পৌঁছাচ্ছে? বুদ্ধিমান সবজান্তা ফারহান,সব কাজের কাজি ফারহান এবার তুমি এতো চুপ কেন বলতে পারো?

কাঁদতে কাঁদতে এবারে মনে হয় রবীন্দ্রনাথ সাধে কি আর বলেছেন:

এ শুধু অলস মায়া, এ শুধু মেঘের খেলা,
এ শুধু মনের সাধ বাতাসে তে বিসর্জন।
এ শুধু আপনমনে মালা গেঁথে ছিঁড়ে ফেলা,
নিমেষের হাসি কান্না গান গেয়ে সমাপন।
শ্যামল পল্লবপাতে রবিকরে সারা বেলা
আপনারই ছায়া লয়ে খেলা করে ফুলগুলি__
এও সেই ছায়াখেলা বসন্তের সমীরণে।
কুহকের দেশে যেন সাধ ক’রে পথভুলি
হেথা হোথা ঘুরি ফিরি সারা দিন আনমনে।
কারে যেন দে’ব ব’লে কোথা যেন ফুল তুলি__
সন্ধ্যায় মলিন ফুল উড়ে যায় বনে বনে।
এ খেলা খেলিবে হায়, খেলার সাথী কে আছে।
ভুলে ভুলে গান গাই__ কে শোনে, কে নাই শোনে__
যদি কিছু মনে পড়ে, যদি কেহ আসে কাছে।।

(চলবে)
###২য় পর্ব আগামীকাল পাবেন ইনশাআল্লাহ্।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here