###ছায়াখেলা(২য় পর্ব)
###লাকি রশীদ
দেশের বাইরের দুজন আপু অর্ডার দেয়া শাড়ির ব্লাউজ গুলো বানিয়ে দেবার জন্য অনুরোধ করেছেন। শাড়ির পিসগুলো কেটে বেণুর বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। উনাদের দেয়া মাপমতো ও বানিয়ে দিবে। কিন্তু সমস্যা হলো ওর ই চাচাতো ভাই তো শুভ। দেশে এসেছে ওর বাসায় গিয়ে যদি বসে থাকে। ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতেই উচ্চস্বরে বললো,শুভ ভাই আসেনি আর আসবেও না। কারণ, আত্মীয় স্বজন সবাই ভালো করে জানে যে মিফতাহ তার অনুপস্থিতিতে কোনো পুরুষ মানুষ বাসায় গেলে মাইন্ড করে। নির্দ্বিধায় ভেতরে ঢুকে দেখি বেণুর ছেলে একদিকে মায়ের কোলে উঠবে বলে চিৎকার দিয়ে বাড়ি মাথায় তুলছে অন্যদিকে বেণু খুব ই ভাবলেশহীন ভাবে কারিগর কে বুঝিয়ে দিচ্ছে কিভাবে সে ব্লাউজ সেলাই করবে।
আমি অবাক হয়ে ভাবছি, এভাবে কি করে ও বুঝিয়ে দেয় আর কি করেই বা কারিগর মেয়েটি বুঝে নেয়। আইসক্রিম নিয়েছিলাম সেজন্য হয়তো আজকে আর অন্যদিনের মতো কোলে নিতে তাকে জোরাজুরি করতে হয়নি। এক তৃতীয়াংশ জামা,চামচ ও মেঝেতে গেল। বাকি আইসক্রিম টুকু সে চেটেপুটে খেয়েছে। বললাম আন্টি হাতমুখ ধুয়ে কাপড় পাল্টিয়ে দেই? হ্যা উত্তর পেতেই সব শেষ করে কোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। ঘুমন্ত বাবুকে বিছানায় শুইয়ে দিতেই বেণুর আগমন,কি
ভালো রে তুই। এতোক্ষণ বকবক করে এখন আবার ছেলের প্যানপ্যানানি ভালো লাগতো না মোটেই। বোস্ চা নিয়ে আসি।
চার কাপ মসলাদার চা ও ভালো দুই হাফপ্লেট বিস্কুট নিয়ে এসেছে। আমাদের জন্য রেখে ওই রুমের মেয়ে দুটিকে দিয়ে এলো। এবার বলছে এই সময়টা আমার এতো ঘুম পায় বুঝলি। আমি হেসে বলি,খুব স্বাভাবিক।
ভোর থেকে উঠে কাজ শুরু করিস্। ৯/১০ একটানা কাজ করে যাস্ কিভাবে, আমার কাছে তো এটাই এক বিস্ময়।বললো কারণ সাতটায় মিফতাহ চলে আসে। এরপর ছেলে দেখা সহ টুকিটাকি যা থাকে ও করে। আমি তখন নাস্তা ঘুম দেই। আমি জিজ্ঞেস করি, নাস্তা ঘুমটা আবার কি ভাই? সহাস্যে বললো,এই ৩০/৪০ মিনিটের একটা ঘুম। এখন বল কি মনে করে হঠাৎ? দূতিয়ালি করতে হবে? অবাক হয়ে মানে বলতেই এবার হাত ধরে বলছে,স্যরি স্যরি হঠাৎ ফাজলামি করতে ইচ্ছে হলো। আসার আগে জিজ্ঞেস করলি না,শুভ ভাই এখানে আছে কিনা ………….. সেটা মাথায় রয়ে গেছে।
আমি কঠিন স্বরে বলি, তোর কি মনে হয় তোর বাসায় এসে ব্লাউজ সেলাই করাতে দেই বলে যা খুশি তাই বলবি? তোকে দূত হিসেবে পাঠাতে হবে কেন? আমি অন্তত তোর ভাইয়ের পেছনে দৌড়ুচ্ছি না বেণু……… সেটা মাথায় রাখিস। দৌড়ানোর ইচ্ছেও আমার নেই।
ক্ষীপ্র গতিতে দাঁড়াতেই এবার হাত ধরে বলছে,স্যরি কুহু
আমি এতো কিছু ভেবে বলিনি রে। সত্যিই ভুল হয়ে গেছে। আমি হাঁটতে হাঁটতেই উত্তর দেই, মোটেই ভুল হয়নি। সবার মতো তুইও ভাবছিস বিধবা কুহু কে এই সন্দেহ করাই যায়। বিধবা তাও সাথে মেয়ে আছে আর আমার ভাই বিয়ে করলেও ডিভোর্স হয়ে দিয়েছে। কতো পয়সাওয়ালা হয়ে গেছে সে এখন। সুতরাং কুহু আগ বাড়িয়ে বড়শী পাততে চাইবে সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তোর ধারনা ভুল বেণু। এবার সে আমাকে এখানে আটকাতে দরজায় দাঁড়িয়ে বলছে,প্লিজ কুহু আমার কথাটা শোন্। এই দেখ আমি কানে ধরছি। পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চির দীর্ঘদেহী আমি ধাক্কা দিয়ে ও কোথায় গিয়ে পড়ল না দেখেই বেরিয়ে যাই। মাথায় আগুন জ্বলছে, পানি দিতে হবে গিয়ে। বিড়বিড় করছি তোর ওখানে আর কখনো আসবো ভেবেছিস? কোনো দিনও না।
তুই তোর ভেতরের আসল রঙ দেখিয়ে দিলি বেণু।
বাসায় যাইনি, সোজা ছাদে চলে এলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্য অস্ত যাবে। সারা আকাশ যেন আবির মেখে বসে আছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে আল্লাহ কে বলছি, আপনি সর্বশক্তিমান,সর্ব শক্তির আধার। এতো বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী, দুই জাহানের মালিক। আসমান জমিনের সৃষ্টিকর্তা। আর সামান্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অকৃতজ্ঞ
কুহু এতো প্রার্থনা করলো, আমার যা কিছু আছে সব নিয়ে আপনি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিন। আমার বুদ্ধি, ধৈর্য,পরিশ্রম করার ইচ্ছা কোনোটাই নেই। আমি সবকিছু আমার স্বামীর কাছে থেকে ধার করে চলতাম। আমাকে রহম করুন মাবুদ। আমি জানি আপনি যা করেন ভালোর জন্য করেন। কিন্তু বুদ্ধিহীনা কুহু গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত। আপনি এটা থেকে মুক্তির ভালো কোনো পথ বের করে দিন আল্লাহ। নয়তো ধ্বংস হয়ে যাওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই।
আজকাল প্রায়ই মনে হয় সময় আসলেই প্রতিশোধ নিতে জানে। বিয়ের পর প্রায় মাসদেড়েক শুভর স্মৃতি মনে করে ফারহানকে কাছে ঘেঁষতে দেইনি। কতো ধৈর্য ধরে,বুদ্ধি করে চলে সে বিয়েটা বাঁচিয়ে দিয়েছে। এখন সেই দেড় মাসের বদলে মাত্র দেড়দিন এমনকি দেড়ঘন্টা পেলেও কুহু খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেত। কিন্তু তা তো আর হবার নয়।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। বড়ভাইয়ার মেয়ে ফারিয়া করেছে। এই মেয়ে আস্তে ও ধীরে সুস্থে কথা বলা জানে না। ফোন ধরতেই তড়বড় করে বলছে,ছোটফুপ্পি ভালো দাদু এসেছে। তোমার সাথে কথা বলতে চায়। তুমি কি বেণু ফুপুর বাসায় আছো? এখন কি আসবে? বললাম অনেক আগেই এসেছি। ছাদে আছি। মামুজির গলা শুনছি,চলো দিদিভাই আমরাও ছাদে যাই। মামুজি মানে আমার একমাত্র মামা। খিলগাঁও এ থাকেন, কারো সাতে পাঁচে থাকেন না। কেউ খারাপ জেনেও এর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা হাসিমুখে কথা বলতে পারেন। সবচেয়ে বড় গুণ হলো, তিনি উপদেশ বিলোতে ভালবাসেন না। অনেক কিছু শেখার আছে। মা যখন তাকে বকেন, এতো তো বুঝিস শুধু নিজের ভালো টা বুঝিস না। বললাম এতো এতো ফ্ল্যাট এখানে, একটাতে থাক্ না বাপু। ভাড়ার কতো টা টাকা বাঁচবে। না উনার সম্মানে লাগে,আরে বাবা সম্মান ধুয়ে কি পানি খাবি না কি?
মামুজি নীচু স্বরে বলেন, তোমাকে না একদিন বললাম ভাগ্নে বৌরা আছে,এসব বলো না। চলে তো যাচ্ছে, আল্লাহ ই ভালো চালাচ্ছেন কোনো কমপ্লেইন নেই বুবু। আমার মা তবুও বলছেন, চলে যাচ্ছে বুঝলাম। কিন্তু মেয়েটাকে বিয়ে দিতে হবে না? আমি তখন আর চুপ থাকতে পারিনা। বলি, তোমার বুদ্ধির সাথে সবার বুদ্ধি নাও মিলতে পারে মা। দয়া করে সবাইকে তুমি হাতের আঙ্গুল দিয়ে নাঁচানোর চেষ্টা করো না। কথা কোনদিক থেকে কোনদিকে গড়ায় ভেবে মা তখন চুপ আর অস্বস্তিভরা মুখে মামুজি তখন ভিন্ন কোনো প্রসঙ্গের অবতারণা করে পরিবেশ পরিস্থিতি বদলানোর বৃথা চেষ্টায় মগ্ন। সবাই উনাকে ভীষণ ভালবাসে। এতো বিনয়ী একজন মানুষ, ভাল না বেসে কোনো উপায় নেই। শ্বেতশুভ্র দাড়িগুলো নাড়িয়ে যখন পানখাওয়া দাঁতগুলো নিয়ে মৃদু হেসে খুবই আস্তে কথা বলেন তখন
বুঝার উপায় নেই কতোটা অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে আছেন। মাঝে মাঝে মায়ের কাছে যখন ধরা পড়ে যেতেন তখন বলতেন বুবু সমস্যা আল্লাহকে বলতে হয়।
মানুষকে বলে কোনো লাভ নেই,বলা উচিতও নয়। এই জন্য আমার বাবা তাকে ভীষন ভালবাসতেন।
বড়ভাইয়া ছাদে সিমেন্ট দিয়ে স্কুলের বেঞ্চের মতো ৪/৫ টা বসার স্থান করে নিয়েছে। এরকম একটাতে আমার পাশে বসেই মামুজি হেসে বললেন, কিরে মামণি মন খারাপ? ফারিয়া এবার হো হো করে হেসে উঠলো, হুমায়ূন আহমেদের একটি নাটকে দেখেছিলাম একটা ডায়লগ মন খারাপ থাকলে ২বার চা খেলেই মন ভালো হয়ে যায়। ছোট ফুপ্পি তুমি ২ কাপ চা খেলেই চনমনে হয়ে যাবে দেখো। আমি বেশ বুঝতে পারছি কিছু বলার না থাকলে মামুজি এখানে আসতেন না। ফারিয়া এখান
থেকে না গেলে উনি হয়তো কিছু বলবেন না। অনেক ক্ষণ ধরে হয়তো এক জায়গায় বসে থাকতে হবে। তাই হেসে বলি দেখেছো মামুজি আমাদের ফারিয়া আসলেই অনেক বড় ডাক্তার হবে। কি সুন্দর মন খারাপ এর ঔষধ বাতলে দিলো বলোতো !!! যা তো মা আমরা মামু ভাগ্নীর জন্য ২কাপ চা নিয়ে আয়। নিজের কথায় ফেঁসে গিয়ে এবার দুড়দাড় করে নেমে গেলো সে।
আমি এবার তার দিকে তাকিয়ে বলি, তুমি কি কিছু বলবে মামুজি? আমার ধারণা সম্পুর্ন মিথ্যে প্রমাণ করে
বললেন আমি কিছুই বলবো না রে মা। আগামীকাল দুপুরে মামার সঙ্গে চারটি ভাত খাবি। দাওয়াত দিতে এসেছি। তোর ভাইয়েরা না কি ভীষণ ব্যস্ত আর তোর মায়ের পা ব্যথা। বড়বৌমা শুধু না করেনি। তাই বৌমা, ফারিয়া আর মৌকে নিয়ে তুই চলে আসিস। তোর মামীর বোনও আসবেন। খাওয়া তো আসলে কিছু না,
তোর গরীব মামা আর কি খাওয়াবে বল? একসাথে বসে কিছুক্ষণ ভালো সময় কাটালাম এই আর কি। যাবি তো মা?
হেসে বলি,বারে তুমি বলেছো আর আমি যাবো না? অবশ্যই যাবো,আর গরীব মামা গরীব মামা বলো না তো। তুমি হলে আমাদের ভালো মামা। উনি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছেন, ঠিক আছে আর বলবো না। এবার নীচু স্বরে বললেন, নামাজ টা কি রেগুলার পড়িস মা? আমি বলি, মনে শান্তি আসার এই একটাই পথ জানা আছে মামুজি। ছাড়ি কি করে বলো? আদর করে
এবার দাঁড়িয়ে বলছেন চল্ তাহলে এক্ষুনি মাগরিবের আজান দিবে। ৪/৫ টা সিঁড়ি পেরোতেই দেখি ফারিয়া চায়ের ট্রে নিয়ে উপরে উঠছে। চেঁচিয়ে উঠলো, এজন্যই আমি বড়দের পছন্দ করি না। এরা বলে একটা করে আরেকটা। চা খাবে বলে এখন নীচে নামছো যে !!! আমি হেসে বলি, নামাজ পড়ে খাবো। তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো বলতো?
পরদিন বড়ভাবিকে নিতে গিয়ে দেখি ফারিয়া যাবে না।কি একটা লো কাট কুর্তি না কি পরলে চেয়েছিল ভাবি বলেছে এটা পরা যাবে না। অড দেখাবে। মেয়ে এতে ক্ষেপে গিয়ে চিৎকার করে বলেছে ভাইয়ার বেলায় তো এতো বিধিনিষেধ এর কড়াকড়ি নেই। হাতের কাছে শুধু শাসন করার জন্য আমাকেই পেয়েছো। এটা শুনে ভাবি
মনে হয় আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারেননি। তাকে চেঁচিয়ে বলেছেন তুমি যা কিছু ভাবতে পারো। কোনো সমস্যা নেই কিন্তু এই কুর্তি পরে বাইরে বেরোনো যাবে না। মেয়ে তাৎক্ষণিক জবাব তাহলে আমি দাওয়াতে যাবো না। মা বলেছেন,কোনো সমস্যা নেই। তোমার যেতে হবে না। এরপর থেকে বড় ভাইয়া নাকি ভয় পাচ্ছে মেয়ে যদি রাগের মাথায় কিছু করে বসে !!! তাই রুমে গিয়ে মেয়ের রাগ ভাঙ্গাচ্ছে।
আমি হেসে ভাবি, খুব একটা আগে তো নয়। মাত্র ৫ বছর আগে বড়ভাইয়া চড় দিয়ে বলেছিল, কুহু বেশি বাড়াবাড়ি করবে না বললাম। শুভর সঙ্গে তোমার বিয়ে আমরা দিবো না এবং তা কোনোদিন ই সম্ভব নয় এটা ভালো করে মাথায় গেঁথে নাও। কই এরপর আমার রাগ ভাঙ্গাতে তো কখনো বড়ভাই আসেনি। না কি বোনের আদর মেয়ের সমতুল্য কখনো হয় না। এসব আদর স্নেহ
ভালবাসা শুধু নিজের বাচ্চাদের জন্য প্রযোজ্য। কতো ধরনের কতো অদ্ভুত কান্ড পৃথিবীতে আছে, তার মধ্যে অবশ্যই একটা হলো ভালবাসার এই প্রকারভেদ।
এসব হাঙ্গামার জন্যই হয়তো বড়ভাবি আজ অনেক গম্ভীর হয়ে গাড়িতে বসে আছে। আমার মেয়ের ঘুমের সময় এটা তাই সে আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। নয়তো ভাবিকে আদর দিয়ে ব্যতিব্যস্ত করে তুলতো। হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন, আমি আসলেই বুঝি না কুহু এই জেনারেশন এর বাচ্চারা এরকম কেন?
একটু বকাঝকা করেই আবার ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে কেন যদি সুইসাইড করে ফেলে? আমরাও তো অনেক মার খেয়েছি ছোট বেলায়। আমাদের বাসার পেছনে বাঁশঝাড় ছিল। আমার মা সেই ঝাড় থেকে চিকন কঞ্চি এনে রাখতেন। উল্টো পাল্টা কিছু করলেই আমি এবং আমার ভাইবোন মার খেতাম। আবার কিছুক্ষণ পর সবাই স্বাভাবিক হয়ে যেতাম। কই তখন আমাদের তো কখনো মরে যাওয়ার ইচ্ছা জাগে নি। মার দিয়ে মাও আমাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় কাটায় নি।
সেদিন আমার আপার কাছে সেদিন শুনি তার মেয়েকে নিয়ে মনোচিকিৎসক এর চেম্বারে দৌড়াতে হচ্ছে। কি সমস্যা জিজ্ঞাসা করতে বললো মেয়ের নাকি ডিপ্রেশন। নাইনে পড়ে একটা মেয়ের আবার ডিপ্রেশন হবে কেন? খাওয়া,থাকা, ঘুম সবকিছু ফ্রি। তার বাবা মা উদয়াস্ত পরিশ্রম করছে যাতে সে ভীষণ ভালো একটা লাইফ কাটাতে পারে। ওদের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করছে।আমাদের বাচ্চাগুলো এতো জটিল হবার কারণ কি? জানো আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি,যতো দিন যাচ্ছে পৃথিবী কেন এতো কঠিন হচ্ছে? শেষ পর্যন্ত আদৌও কি এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবো আমরা? নাকি প্রিয়জনের সঙ্গে শুধু যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাই সার হবে……………… আল্লাহ মালুম। মনটা ভীষন খারাপ হয়েছে বলে এসব বকবক করছি। তুমি মনে মনে বিরক্ত হচ্ছো মনে হয়। আমি কি বলি বুঝতে না পেরে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকি।
আমার অজান্তে ই হঠাৎ ৩/৪ মাস আগের স্মৃতি মনে তীক্ষ্মভাবে দাগ কেটে গেল। ফারিয়ার স্কুলের কোনো এক উৎসবে সবাই শাড়ি পরে যাবে। ও উৎসাহে টগবগ
করে ফুটছে যেন, এক বিকেলে এসে বলছে ছোটফুপ্পি
শোনো কালকের অনুষ্ঠানে তোমার একটা শাড়ি পরে যেতে চাই। একটা লাল টুকটুকে সুন্দর শাড়ি নিবো…….
মাই গড তোমার লাল শাড়ির যা কালেকশন…………..
কি হলো কথা বলছো না যে? দিবে না আমাকে? আমি হেসে বলি, তুই থামলে তো বলবো। তোর যেটা ভালো লাগে নিয়ে যা না। ওর কথা একেবারেই মিথ্যে নয়। কত লাল শাড়ি দিয়ে যে আমার আলমারি ঠাসা তার হিসাব নেই। ফারহানের প্রিয় রং ছিল লাল। যেখানে লাল শাড়ি দেখতো সেটাই নিয়ে আসতো। মাত্র কয়দিনের সংসার জীবনে এও পৃথিবীর এক অদ্ভুত লীলাখেলা !!!
এমনকি শেষ সময়ে হাসপাতালে ওর বোন হালকা লাল রঙের টাঙ্গাইল সুতি শাড়ি পরে এসেছিলেন। ও ওখানেই ওর বোনকে বলে যে, এই শাড়িটা কি মার্কেট থেকে কিনেছিস? উনি মাথা্ নাড়তেই বললো ঠিক এরকম একটা শাড়ি কুহু কে এনে দে প্লিজ। ওকে লাল শাড়িতে ভীষণ সুন্দর দেখায়। টাকা কুহু তোকে দিবে। উনি তখন বললেন, তোর বৌ কে সুতির একটা শাড়ি কিনে দেবো তার পয়সাও নিতে হবে না কি? কালকে আনবো। পরদিন এনে দিতেই হুকুম হলো, শাড়িটা পরো তো কুহু। দেখি কেমন লাগে। আমি কান্না চেপে বলি, কালকে পরে আসবো। পরদিন পরতেই বাচ্চাদের মতো চোখে মুখে উচ্ছাস ঝরছে যেন,দেখো মা বলেছিলাম না লাল শাড়িতে কুহু কে ভীষণ মানায়।
তার বদৌলতে যে কতো ধরনের লাল শাড়ি আমার সংগ্ৰহে আছে……….. কালচে লাল, সিঁদুর লাল, আগুন লাল,মেটে লাল তার ইয়ত্তা নেই। সেরকম একটা শাড়ি নিয়ে ফারিয়া চলে গেল। পরদিন আনু এসে বললো ফারিয়ারে বড়ভাবি জব্বর মারছে। আমি কেন বলতেই বললো,বড়ভাবিরে না কইয়্যা ও আফনের একটা শাড়ি পিনছিল বইল্যা। ভাবি জানে আবিয়াইত্যা মাইয়াগো না কি বিধবাগো শাড়ি পরন নাই। আর ওই মাইয়্যাও খুব ডাকাইত মাইয়্যা,মাইর খায় আর কয় তোমার মতো মায়ের কবলে থাকার চেয়ে আমার বিধবা হওয়াও ভালো। কি খুনে মাইয়্যা রে বাবা !!! মুখে য্যানো কোনো কিচ্ছুই তার আটকায় না। এই মুহূর্তে আমি বড়ভাবির দিকে তাকিয়ে ভাবি, এতো নীচ মনমানসিকতার মাকে সম্মান দেয়া কিছুটা কষ্টকর ই বটে !!! শখ করে কেউ কোনো দিন কি বিধবা হয় না কি? এই মুহূর্তে ফারিয়ার গায়ে পড়া প্রতিটি মার যেন আমার দেহে পড়ছে।
(চলবে)
###৩য় পর্ব আগামীকাল পাবেন ইনশাআল্লাহ্।