#স্নিগ্ধ_আবেশে_তুমি
#তানজিনা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_১৪ (অন্তিম পর্ব)
চোখ খোলার মুহূর্তে ভোরের আলো দেখতে পেলাম। নিজের আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে বাহিরে চলে আসলাম। চারিপাশে হাজারো মানুষের ভীর। তূর্যের আত্মীয় স্বজন সবাই উপস্থিত সবাই কাঁদছে। আস্তে আস্তে সামনে গিয়ে দেখতে পেলাম আমার মা বাবাও এসেছেন। তারা হঠাৎ এখানে? আর সবাই কাঁদছে কেন কিছু বুঝতে পারলাম না। তূর্য কোথায়? ওনার তো মাথা ব্যাথা কোথায় গেলেন উনি? মানুষের ভীর ঠেলে সামনে গিয়ে আমি শিউরে উঠি। সাদা কাফনে কি যেন ঢেকে রাখা হয়েছে। মিফতা আর বাবা সেখানে বসে কাঁদছে। আমি তাদের পাশে বসে পড়লাম।
মিফতা তূর্য কোথায়? সবাই এখানে কেন? ওরা কাঁদছে কেন? কি হয়েছে? তূর্য কোথায়?
মিফতা হু হু করে কেঁদে দিলো। হাতের ইশারায় সাদা কাফন দেখিয়ে দিলো। আমি থমকে গেলাম। আমার পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে এলো। আস্তে আস্তে কাফনের কাপড় সরিয়ে মুখটা দেখলাম। আমি তো আর এই দুনিয়ায় নেই। তাকে জরিয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ফেললাম।
তূর্য আপনি এভাবে এখানে শুয়ে আছেন কেন? কি হয়েছে আপনার? আমি এসেছি উঠুন না প্লিজ।
আমি চিৎকার করে কাঁদতে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর বাবা সহ বাকিরা এগিয়ে আসলো।
মা, লাশ দাফনের সময় হয়ে গেছে। এখন ছাড়ো।
কি বলছেন? কোথায় নিবেন ওনাকে? উনি এখানেই থাকবে? আমি আমি আমি ওনাকে যেতে দিবো না একদম না। আমার সাথে থাকবেন উনি।
বলেই অজস্র চুমু এঁকে দিলাম তার মুখে।
আমার কথা তারা কেউ শুনলো না। আমার কাছ থেকে তূর্যকে নিয়ে গেল। আমার তূর্যকে নিয়ে গেলো ওরা। আমি চিৎকার করে কাঁদতে থাকলাম। আজ কেউ আমাকে আটকে রাখতে পারছে না। আমার চিৎকারে সবাই স্তব্ধ। আমার কান্নায় অনেকে কেঁদে ফেললো। আমি আমার তূর্যকে হারিয়ে ফেললাম আজ। আমায় ছেড়ে চলে গেছেন উনি। কাঁদতে কাঁদতে এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম আমি।
।
চার দিন পর আমার জ্ঞান ফিরলো। আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার স্মৃতিগুলো।
কেন ছেড়ে গেলেন আমাকে? আপনাকে ছাড়া ভালো নেই আমি। আমি তো আপনার সাথেই খুশি। আমাকে একা করে গেলেন কেন? আমি আমি আমি
বলেই ঘরের সব জিনিসপত্র ছুঁড়তে লাগলো মেহু। একের পর এক জিনিস ভাঙছে সে। তূর্যের স্মৃতি তাকে ঘিরে ধরেছে। আলমারি থেকে তূর্যের একটা শার্ট বুকে নিয়ে অঝোরে কাঁদছে সে। হঠাৎ করেই চোখ গেলো সেই চকলেটের প্যাকেটটার উপর। মেহরোজ গিয়ে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে নিলো। সেটা নিয়ে আবার কাঁদতে লাগলো। হঠাৎ সেটা মেঝেতে ছুঁড়ে মারলো সে। দেয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে থাকে সে। হঠাৎ করেই নিজের সামনে এক ডায়েরি আবিষ্কার করে সে। চকলেটের প্যাকেট থেকেই পড়েছে সেটি। মেহু ডায়েরিটা খুললো।
প্রথম পাতায় খুব সুন্দর করে বড় করে লেখা “মেহরীমা মেহরোজ”
দ্বিতীয় পাতা উল্টে দেখতে পেলো “আমার মেহুপরি”
তৃতীয় পাতায় লেখা “যেদিন এটা তোমার হাতে যাবে সেদিন হয় তো আমি থাকবো না”
চতুর্থ পাতা খুলে দেখলো “মেহু কবে বড়ো হবে?”
এরপরের পাতায় শুরু এক নতুন অধ্যায়।
পরের পাতায়:
আজ গ্ৰামে গিয়েছিলাম। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে এখানে আসা হয় না। কিন্তু হঠাৎ করেই আজ এখানে আসতে ইচ্ছে হলো। সকালে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম বেশ কয়েকদিন ধরে মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলেছেন ব্রেইন টিউমার। যাক আর কয়েকটা দিন থাকবো এই পৃথিবীতে। কিন্তু কে জানতো হঠাৎ এক পরির আগমন আমার জীবনে ঘটবে তা বুঝতে পারি নি। গ্ৰামের পথে পাড়ি দিলাম। হঠাৎই রাস্তায় গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেলো। এক পাশে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম। এই সৌন্দর্যের মাঝে আরেক সৌন্দর্য আবিষ্কার করলাম। একটা ছোট মেয়েকে দেখতে পেলাম। আরো কয়েকটা মেয়ের সাথে কানামাছি খেলছে। দৌড়াদৌড়ি করছে সে, দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে উঠেছে সে। তার লম্বা কালো কেশের ভীরে হারিয়ে গেলাম। অবাধ্য বাতাসে তার খোলা চুল বারবার তার মুখে আঁচড়ে পড়ছে। আমি ছোট্ট পরিটার মধ্যে হারিয়ে গেলাম। খানিকক্ষণ পরে একটা মেয়ে এসে তাকে বললো, মেহরোজ সন্ধ্যা হয়ে যাবে বাড়ি চল। সে তার কোমল কন্ঠে বললো, আসছি।
তার পিছু নিলাম। এই মায়াবী পরিটার ঠিকানা নেওয়াই আমার উদ্দেশ্য। তার পিছু পিছু যেতে যেতে তাদের বাড়িটা চিনে নিলাম।
আজ শহরে ফিরে আসলাম। কিন্তু আমার মনটা তো সেখানেই রেখে এসেছি। তার কাছে! সেই মায়াবী পরির কাছে! তার মায়ার অতল গভীরে ডুব দিলাম আমি।
তাকে ভুলতে পারছি না কেন? বারবার সামনে তার মুখটা ভেসে উঠছে। কি আছে তার মাঝে?
তোমার কথা এতো কেন মনে পড়ে? তবে কি তোমাকে আমি? না না তা কেন হবে? আমি তোমার সুন্দর জীবনটা নষ্ট করতে পারবো না।
আমি কেন ভালো নেই? আমার ভালো থাকার জন্য তোমাকে লাগবে?
আজ মিফতাকে তোমার কথা বললাম। জানো ও খুব খুব খুব খুশি হয়েছে শুনে।
উফফ, মিফতা এখন কথায় কথায় তোমার কথা বলে। আমাকে বাজেয়াপ্ত করার একটা পথ পেয়েছে।
মেহু! হ্যাঁ মেহু, তোমাকে আমি মেহু বলে ডাকবো। তুমি আমার মেহু পরিটা।
মেহু, জানো আজ ফুফুকে তোমার কথা বললাম তিনিও খুশি হয়েছেন।
আজ ফুফি নাকি তোমায় দেখতে গিয়েছিলো? কখন বলতো? আমাকে একটু জানালোও না। আমিও তো তোমায় দেখতে চাই তোমার মাঝে নিজেকে হারাতে চাই।
আজ নাকি বিয়ের কথা পাকা করে এসেছে। অবশেষে তোমায় নিজের করে পাবো। তুমি আমার হবে মেহুপরি? একান্তই আমার!
না না তোমার জীবনটা আমি নষ্ট করতে পারবো না। আমি তো আর মাত্র কিছুদিন থাকবো এরপর তোমার কি হবে?
নিজেকে কেন মানাতে পারছি না আমি? কি হয়েছে আমার? তোমাকে আমার চাই।
মেহু, তোমার কোন কষ্ট হোক তা আমি চাই না তুমি যা চাইবে তাই হবে।
আজ তোমায় নিজের করে পেলাম। আমার! শুধুমাত্র আমারই। আজ তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী, আমার স্ত্রী। ভালোবাসি মেহু পরি! অনেক ভালোবাসি তোমায়।
তোমার জীবনটা আমি নষ্ট করে দিলাম তাই না।
আজ তোমার গায়ে হাত তুলেছি আমি। তোমাকে আমি মেরেছি। বলো তো কেন এতো রাগ আমার? আমি তো তোমার সাথে রাগ দেখাতে চাই না মেহু।
মেহু আমি না থাকলে তখন কি করবে তুমি? আমাকে মনে পড়বে তোমার? আমার স্মৃতি তোমার মনের পাতায় থাকবে?
বউ, ও বউ তোমাকে না খুব সুন্দর লাগে শাড়িতে। কিন্তু ওইদিন জানো খুব রাগ হচ্ছিল তাই শাড়িগুলো পুড়িয়ে দিয়েছি। রাগ করো না।
মেহু! আমি না থাকলে তোমার কি হবে? অন্য কাউকে বিয়ে করে নিও তুমি। কিন্তু আমি? আমি কিভাবে থাকবো? তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো? আমার আমার মেহু অন্য কারো হবে তা কি করে সহ্য করবো আমি? আমি অন্য কাউকে সহ্য করতে পারবো না তোমার সাথে। আমি যে মরেও শান্তি পাবো না।
শেষ পাতা:
ভালোবাসি মেহুপরি। খুব বেশি ভালোবাসি! নিজের থেকেও বেশি। আমার অন্তরমহলে তুমি! শুধুই তুমি!
একবার আমাকে বলবে তুমিও আমাকে ভালোবাসো? খুব শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে।
আজ কোন বাঁধা মানছে না মেহু। চিৎকার করে কাঁদছে আবার! দৌড়ে চলে গেলো তূর্যের কবরটার দিকে।
আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেলেন? আপনি অনেক স্বার্থপর। আমি তো ভালো নেই আপনাকে ছাড়া। আমি ভালো নেই। ভালোবাসি আপনাকে তূর্য। আমি অনেক বেশি ভালোবাসি আপনাকে।
~সমাপ্ত~
সব ভালোবাসার সমাপ্তি আছে এটা না হয় অসমাপ্ত থাক!
অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আজ সবার মন্তব্য চাই, গঠনমূলক মন্তব্য!
নিয়মিত গল্প পেতে আমাদের সাথে থাকুন🥰
page :https://www.facebook.com/story.link380
Group 1. গল্পের লিংক ( গল্পের রিভিউ)+আলোচনা :https://www.facebook.com/groups/999645603764557/
Group 2. 💛হলদে খামের ভালোবাসা💛 :https://www.facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa
Happy reading to all😍