রৌদ্রর শহরে রুদ্রাণী পর্ব -১১

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ১১
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“আপনি কি তাহলে প্রেমের কথা শুনতে চাচ্ছেন মিস আরু??”

“হুম সেটাই ভালো।”

আরশি রৌদ্রের কথা খেয়াল না করে আনমনেই বিরক্তি প্রকাশ করে বলল কথাটা। রৌদ্র একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল-

“তাহলে কি থেকে শুরু করবো মিস আরু!!”

আরশি রৌদ্রের কথাটা খেয়াল করার সাথে সাথেই বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে চেচিয়ে বলল-

“এই না না আমি তা বলতে চাই নি।”

আরশির হঠাৎ করেই এভাবে চেচিয়ে উঠবে রৌদ্র একদমই আশা করেনি। আশেপাশের কয়েক জোড়া উৎসুক চোখ তাদের টেবিলের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। রৌদ্র কিছুটা উঠে আরশির ডান হাত ধরে জোর করে বসিয়ে দিয়ে চাপা কন্ঠে বললো-

“মিস আরু… মানুষ আমাদেরকে দেখছে। আপনি স্বাভাবিক হয়ে বসুন প্লিজ।”

আরশিকে বসিয়ে দিয়ে রৌদ্রও স্বাভাবিক হয়ে বসে পরে। আরশি তার আশেপাশে তাকয়ে দেখে কিছু মানুষ ভ্রু কুচকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরশি তার সব গুলো দাঁত বের করে একটা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে রৌদ্রের দিকে ফিরে তাকালো। জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে নিম্ন স্বরে বললো-

“আপনার জন্যই কেন বার বার আমাকে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয় বলুন তো!!”

রৌদ্র দু’হাতে ভাজ করে চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো-

“আপনি নিজেই তো বললেন আমার কাছ থেকে প্রেমের কথা শুনতে চান।”

আরশি রেগেমেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কাসফিয়া এসে বললো-

“কে কি শুনতে চায়??”

কাসফিয়ার প্রশ্ন শুনে রৌদ্র বললো-

“আসলে মিস আরু আমার কাছ থেকে….”

আরশি রৌদ্রের কথার মাঝেই দ্রুত বলে উঠলো-

“আমি আসলে ওনার কাজ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম কাসফি। আয় তুই বস।”

অপ্রস্তুত হয়ে কথাটা বলেই আরশি রৌদ্রের দিকে অসহায় মুখ করে তাকালো। রৌদ্র আরশির এমন অবস্থা দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে কাসফিয়ার উদ্দেশ্যে বলল-

“হ্যাঁ.. মিস আরু আমার হার্ট সম্পর্ক জানতে চাচ্ছেন।”

আরশি চমকে বড়বড় চোখ করে তাকাতেই রৌদ্র বললো-

“মানে আমি হার্ট সম্পর্কে কি কি জানি তা জানতে চান।”

রৌদ্রের কথা শুনে কাসফিয়া চোখ গুলো ছোট ছোট করে আরশিকে বললো-

“এসবের প্রতি কবে থেকে তোর আগ্রহ হলো??”

“কবে থেকে!! এই তো এখন থেকে। হিহিহিহি…..”

আরশি আমতা-আমতা করে কথা গুলো বলেই একটা মেকি হাসি দিলো।

রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রৌদ্র একপ্রকার জোর করেই বিল দিয়ে দিল। আর এটা নিয়েই আরশি গাল ফুলিয়ে রেখেছে তখন থেকে। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই আরশি শক্ত গলায় বললো-

“আপনি কিন্তু এটা ঠিক করেনি ডক্টর। ট্রিট আমার দেওয়ার কথা ছিল তাহলে আপনি কেন জোর করে বিল দিলেন।”

“প্রথম দেখায় একজন মেয়ের টাকায় খাওয়াটা নিশ্চয়ই কোনো ভালো কাজ না মিস আরু!! তবে আপনার ট্রিট নেক্সট টাইমের জন্য পাওনা রইলো।”

আরশি কিছু বললো না। কাসফিয়া রৌদ্রের কথায় সায় দিয়ে বলল-

“আরশি ভাইয়া তো ঠিকই বলেছেন। পরের বার না হয় তুই ট্রিট দিস। আচ্ছা ভাইয়া আপনি কোথায় যাবেন এখন?? আপনার বাসা কোথায়??”

কাসফিয়ার কথা রৌদ্র হকচকিয়ে উঠলো। হাতের ঘড়িতে টাইম দেখার ভান করে ব্যস্ততা দেখিয়ে বলল-

“অহহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার এখনই হসপিটালে যেতে হবে। দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি এখন যাচ্ছি ভালো থাকবেন। আর হ্যাঁ আপনি মিস আরু সাবধানে যাবেন।”

আরশি বিস্মিত হয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই রৌদ্র দ্রুত পায়ে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলো। আরশি ভাবুক কন্ঠে বললো-

“এটা কি হলো কাসফি?”

“আরে হয়তো কোনো কাজের কথা মনে পরে গেছে। তাই এভাবে তাড়াহুড়ো করে চলে গেছেন। চল এখন।”

কাসফিয়া কথায় আরশি আর তেমন কিছু ভাবলো না রৌদ্রর এমন করে চলে যাওয়া নিয়ে। তারা নিজেদের মতো করেই বাসায় চলে আসলো।

—————————

প্রিয় রৌদ্র,

আমি আপনার মতো এতো কাব্যিক কথা জানি না তাই আপনার কথাই মেনে নিলাম। রুদ্রাণী উপর রৌদ্রের অধিকারই থাকুক। তবে যতটুকু বুঝতে পারলাম রৌদ্র আর রুদ্রাণীর প্রতি আপনার বেশ ভালো আর্কষণ। আপনার প্রতি কথাই রোদ সংযুক্ত। আপনার হয়তো রোদ খুব প্রিয়। তবে রোদ হলো আমার চরম শত্রু। রোদের মধ্যে বাহিরে বের হলেই আমার মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায়। আর কাকতালীয় ভাবে আমার সাথে সকল অপ্রত্যাশিত ঘটনাই এই তীক্ষ্ণ রোদের মধ্যেই ঘটে। তাই রোদ আমার কাছে বিরক্তিকর লাগে।

[বিঃদ্রঃ আপনার কাজিনকে বারান্দায় দেখে ওনাকে আপনি ভেবে খুবই অস্বস্তিতে পরে গিয়েছিলাম। আপনাকে এই চিঠির বাহিরে ভাবা আমার জন্য হয়তো আপত্তিকর কিছু উঠেছে। তাই আমি আপনাকে কখনো চিঠির বাহিরে কল্পনা করি না।]

ইতি,
রুদ্রাণী

চিরকুটের লাস্ট কথা গুলো পড়েই রৌদ্র ভ্রু কুচকে ফেললো। একথার কথা কি মানে?? তাহলে কি আরশি তাকে এই চিরকুটের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে!! রৌদ্রর ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে সরু কন্ঠে “চিরকুট” শব্দটা তার কানে ভেসে আসলো। রৌদ্র চমকে উঠে আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো এই শব্দের উৎস। আবারও একই কন্ঠে কানে আসতেই রৌদ্র বিস্ফোরিত চোখে ময়না পাখিটার দিকে তাকালো। ময়না পাখিটা এবার বার বার “চিরকুট” শব্দটা বলে চেচাচ্ছে। “আমি তো পাখিকে কথা বলা শিখাইনি। তাহলে চিরকুট কথাটা শিখলো কিভাবে?? তবে কি আরশি প্রতিদিন বারান্দায় এসে চিরকুট নিয়ে কথা বলে পাখি গুলোর সাথে!!” রৌদ্র মনে মনে কথা গুলো ভেবেই একটা বিশ্বজয়ী হাসি দিল। রুমে এসে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে চিঠি লিখতে বসলো।

———————

আরশি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ডক্টরের কথা গুলো ভেবেই বার বার লজ্জা পাচ্ছে। নিজেকেই বকাবকি করেছে “উফফ আরশিইইইই তুই এতোটা বেখেয়ালি কেন!! তোর এমন বেখেয়ালি স্বভাবের জন্যই আজ লজ্জায় পরতে হলো। অসহ্যকর,,, আর ওনারই বা কি দরকার ছিল এসব লাগামহীন কথা বলে ইচ্ছে করেই আমাকে লজ্জায় ফেলার!! আস্তো এক ভদ্র রূপি অসভ্য ডাক্তার।” আরশি কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পরলো।

“তুই এতো রাতে আমাকে ফোন দিয়েছিস কেন আদ্রাফ!!”

কাসফিয়ার এমন তীক্ষ্ণ বাক্যে আদ্রাফ ভড়কে উঠলো। রাগান্বিত কন্ঠে বললো-

“এই তুই সবসময় আমাকে এভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলিস কেন কাসফি!! আমি কি তোকে ভালোবেসে ভুল করেছে না-কি!!! আর তুই জানিস না আমি কেন তোকে ফোন দেই!! তোকে কিছু বলি না বলে দিন দিন তোর খুব সাহস বেড়ে গেছে। সব সময় তোর সব কথা মেনে নিয়েছি কিন্তু আজ থেকে সব ভুলে যা। আর সহ্য করবো না তোর এইসব ব্যবহার।”

রাগে গজগজ করতে করতে এক দমে কথা গুলো বলেই ফোন কেটে দিল আদ্রাফ। কাসফিয়া ফোনটা কানের কাছ থেকে নামিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বুকে চিনচিনে ব্যথা করছে তার। কাসফিয়া না চাইতেও আদ্রাফকে কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু কাসফিয়া চায় না এই মুহূর্তে কোনো সম্পর্কে জড়াতে। তাই বাধ্য হয়েই আদ্রাফের সাথে এমন করে ব্যবহার করছে।

————————

ভোর সকালে ঘুমের মধ্যে বার বার মনে হচ্ছে ডক্টর আরশিকে ‘আরু’ বলে ডাকছে। প্রথমে কয়েক বার মনের ভুল ভেবে পাত্তা না দিলেও অনবরত একই ডাক শোনায় আরশি ঘুম থেকে উঠে গেল। বেশ মনযোগ দিয়ে শুনে মনে হলো ডক্টর তাকে সত্যি সত্যিই ডাকছে। কিন্তু এখন এখানে আসবে কিভাবে?? আরশি গলার স্বর অনুসরণ করে বারান্দার কাছে আসতেই মনে হলো কন্ঠ পাল্টে গেল এখন তো ডক্টরের কন্ঠ মনে হচ্ছে না!! এই কন্ঠটা বেশ তীক্ষ্ণ সরু। আরশি বারান্দায় আসতেই দেখলো ময়না পাখিটা অনবরত আরু আরু ডেকে যাচ্ছে। বেশ অবাক হলো পাখির কন্ঠে আরু ডাক শুনে। এই পাখি যে কথা বলতে পারে তা তো আরশির মাথা তেই ছিল না। “ইশশশ… এই পাখি গুলো সাথে তার মালিকের কতো অভিযোগ করেছি যদি সেগুলো এই পাখিটা শিখে ফেলে!!” আরশি এই কথা চিন্তা করতেই ঘাবড়ে গেল। নিচের দিকে তাকিয়ে মেঝেতে পরে থাকা নীল রঙের চিরকুটটা দেখেই বেশ উৎসাহ নিয়ে তুলে নিল। অনেক দিন অপেক্ষার পর আজ আবারও নীল চিরকুট পেয়েছে আরশি।

চলবে….
★নিচের লেখা গুলো পড়ার অনুরোধ রইলো।

[বিঃদ্রঃ আজকের পর্বটা আপনাদের জন্য বড় করে দিলাম। আশা করি আপনারা রেসপন্স করে উৎসাহ দিবেন। দু’দিন ধরে কি হচ্ছে জানি না গল্প লিখতে গেলেই বার বার ডিলিট হয়ে যায়। আমি কালকে গল্পের নিচে লিখে দিয়েছিলাম পর্বটা ছোট হওয়ার কারন। তবুও কমেন্টে অনেকে ছোট করে লেখার জন্য নানান কথা বলেছেন। আপনারা হয়তো আমার এই নিচের কথা গুলো খেয়ালই করেন না। সব লেখক লেখিকারা খুব কষ্ট করেই আপনাদের জন্য গল্প লিখেন। আপনাদের সকলের উচিত তাদের ভালো খারাপ সকল পরিস্থিতি বোঝা। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সকলকে।💙🖤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here