রৌদ্রর শহরে রুদ্রাণী পর্ব -২২

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ২২
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“মিস আরু।”

“জ্বি বলুন ডক্টর।”

“এতোক্ষণে নিশ্চয়ই আপনার ক্লাস শেষ হয়েছে??”

রৌদ্রর এমন গম্ভীর গলা শুনে আরশি নিম্ন স্বরে ছোট্ট করে উত্তর দিল-

“হুম”

“আপনাকে বলেছিলাম ক্লাস শেষ করার পর আমাকে কল করতে। আপনি করেছেন??”

আরশি এতোক্ষণ যাবত ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেওয়ায় রৌদ্রকে কল করতে একদমই ভুলে গিয়েছিল। আর তাদের আড্ডার মাঝেই রৌদ্র কল দিয়ে বসলো। এই মুহূর্তে রৌদ্রর রাগী কন্ঠ শুনে মনে হচ্ছে আরশি খুব বড় ভুল করে ফেলেছে। আরশি ভয়ে মিনমিন করে বলল-

“আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম। ফ্রেন্ডদের সাথে অনেক দিন পর ভার্সিটিতে এসেছি তো তাই আরকি।”

আরশির কথা বলার মাঝেই নীল আরশির কাছে এগিয়ে এসে বলল-

“আশু তুই এখানে কি করছিস?? চল ওরা বসে আছে।”

আরশি ইশারায় নীলকে চুপ থাকতে বলায় নীল আর কোনো কথা বলেনি। রৌদ্র ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে নীলের কন্ঠ শুনেই খানিকটা রেগে গেল। রৌদ্র বিনাকারণেই নীলকে সহ্য করতে পারে না। আরশি মুখে নীল নামটা বেশি শুনে কেন যেন তার মনে নীলের প্রতি বিরক্তি ভাব এসে পরেছে। রৌদ্র রাগান্বিত হয়ে শক্ত গলায় বললো-

“মিস আরু আমি আর পনেরো মিনিটের মধ্যেই আসছি আপনাকে নিতে। অপেক্ষা করুন।”

আরশি কিছু বলার আগেই রৌদ্র ফোন কেটে দিল। আরশি কান থেকে ফোন নামিয়ে ভ্রু কুচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। “আজকেও আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিলো না। বুঝি না সব সময় আমার সাথে এমন করে কেন এই লোকটা??”

“কিরে আশু কি ভাবছিস??”

নীলের ডাকে আরশি নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো। নীলের দিকে তাকিয়ে বলল-

“কিছু না রে নীল। অনেক দেরি হয়ে গেছে আমার যেতে হবে এখন। কাসফিও হয়তো বাসায় একা একা বিরক্ত হচ্ছে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু তুই কি একা একা যেতে পারবি??”

আরশি আদ্রাফদের কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বলল-

“হুম পারবো। তোরা সবাই থাক আমি গেলাম।”

আদ্রাফ আর নীলা মাথা তুলে আরশির দিকে তাকালো। নীলা বেঞ্চি থেকে উঠে আরশির পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো-

“তুই একা যাবি আশু??”

“উফফফ নিলু আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না তো। আমি ছোট বাচ্চা না যে আমকে নিয়ে এতো চিন্তা করতে হবে।”

নীল আড় চোখে আরশির দিকে তাকিয় মিনমিন করে বলল-

“তুই বাচ্চা না। তবে বাচ্চাদের থেকেও বেশি বেপরোয়া।”

আরশি নীলের দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই নীল চুপ হয়ে গেল। আরশি সবাইকে কোনো রকম বুঝিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসলো। সামনে তাকিয়ে রাস্তার ডান পাশেই রৌদ্রকে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। হেলমেট হাতে নিয়ে গম্ভীরমুখে দাঁড়িয়ে আছে রৌদ্র। আরশি রৌদ্রর কাছে এসে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো। রৌদ্র কোনো কথা না বলে আরশির দিকে হেলমেট এগিয়ে দিল। চোখের ইশারায় আরশিকে বাইকে উঠে বসতে বললেই রৌদ্র হেলমেট পড়ে বাইক স্টার্ট দে। আরশি রৌদ্রর এমন ব্যবহারে কিছুটা অবাক হলেও তা প্রকাশ করলো না। চুপচাপ বাইকে বসে পারে। সারা রাস্তা কেউ কারও সাথে কথা বলেনি আজ।

————————

প্রিয় রুদ্রাণী,

আপনি তো দেখি আসলেই খুব মাথা মোটা একটা মেয়ে। নাম রাখার ক্ষেত্রে আপনার বিন্দু পরিমাণ জ্ঞান আছে বলে মনে হচ্ছে না। এ্যাংরি বার্ড এটা কি ধরনের নাম!! আমাকে আপনার এ্যাংরি বার্ডের মতো মনে হয়?? আপনার মাথায় যে আসলেই কিছু নেই তার প্রমাণ পেয়ে গেলাম। যাইহোক আপনার দেওয়া নামটাই মেনে নিলাম।

ময়না পাখির নাম আরু রেখেছিলাম আপনার নামে। যেদিন আপনাকে প্রথম চিঠির মানুষ হিসেবে পেয়েছিলাম ঠিক সেইদিনই পাখিটা কিনেছিলাম তাই আপনার নাম রেখে দিয়েছি। তবে আপনার মানতে হবে নামটা কিন্তু খুব সুন্দর রেখেছি।

[ বিঃদ্রঃ আপনি কখন কি ভাবছেন, আপনার মনে কখন কি চলছে সেটা জানার জন্য আমাকে অদৃশ্য মানব বা ভূত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি কিভাবে আপনার সব কিছু আগে থেকে বুঝে যাই সেটা না হয় এখন অজানা থাকুক। সঠিক সময় হলেই বলে দিবো। ]

ইতি,
রৌদ্র

আরশি চিরকুটটা পড়ে ছোট ছোট কয়েকটা শ্বাস ফেলল। আরশি কিছুতেই এই মানুষটাকে বুঝে উঠতে পারছে না। যত দেখছে ততই রহস্যময় লাগছে। হুটহাট করেই মানুষটার চুপ হয়ে যাওয়া, তার উপর অধিকার খাটানো, সব কথায় খানিকটা কিছু রহস্য লুকিয়ে রাখা সব কিছুই আরশির কাছে অদ্ভুত লাগছে। আরশি মনে মনে নানানরকম চিন্তা ভাবনা করে পাশের অন্ধকার বারান্দার দিকে নজর দিল। বারান্দার পুরো অন্ধকার আর রুমের লাইটও অফ হয়তো রৌদ্র ঘুমিয়ে পরেছে। এতো রাতে জেগেই বা থাকবে কেন!! আরশির ঘুম আসছিলো না তাই রাত প্রায় বারোটায় বারান্দায় এসেছিল। বিনাকারণেই মনটা বড্ড ছটফট করছিল আজ কিন্তু এখন বারান্দায় এসে রৌদ্রর চিরকুট পেয়ে মনটা যেন আরও বেসামাল হয়ে পরলো। আরশি নিজের রুমে এসে বিছানায় বসে আনমনেই নিজেকে জিজ্ঞেস করে ফেললো- “আমি কেন ওনাকে নিয়ে এতো কিছু ভাবছি?? কাসফির কথা অনুযায়ী কি আমি সত্যিই ওনাকে পছন্দ করে ফেলেছি???” আরশি নিজের মনে প্রশ্ন গুলো করেই বিরক্ত হয়ে নিজের মাথা দু’হাতে চেপে ধরে বলল- “নাহহহ এটা কখনো সম্ভব না আমার জন্য। আমি কখনো কাউকে পছন্দ করতে পারি না। কাউকে ভালোবাসা আমার জন্য নিষিদ্ধ।”

———————

রৌদ্রজ্জ্বল আকাশের নিচে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরশি। আজ প্রায় দশ দিন ধরে আরশি চেষ্টা করছে রৌদ্র প্রতি যেন অন্যরকম অনুভূতি তার মনে না আসে। এইকয়দিনে আরশি যতটা পেরেছে নিজের মনকে বুঝয়েছে, বাধা দিয়েছে রৌদ্রর প্রতি কোনো অনুভূতির সৃষ্টি হতে। তবে এই কিছুদিন রৌদ্র আরশির সাথে আরও বেশিই সময় কাটিয়েছে। প্রতিদিন ভার্সিটি নিয়ে যাওয়া, দিনে দু একবার চিঠি দেওয়া সব কিছুই রৌদ্র নিজের মন মতো চালিয়ে গেছে। আর আরশির উপর অধিকার খাটানো যেন তার জন্য অতি পছন্দনীয় একটি কাজ। আরশি চেষ্টা করছে রৌদ্রর এসব স্বাভাবিক ভাবেই নিতে। এখন আর আগের মতো অস্বস্তিবোধ করে না রৌদ্রর সাথে থাকলে। একজন প্রতিবেশী, একজন ফ্রেন্ড আর একজন ডক্টর হিসেবেই আরশি রৌদ্রকে দেখছে। তবে আরশি নিজের মনে বার বার প্রশ্ন করেছে রৌদ্র কি তাকে একজন প্রতিবেশী আর ফ্রেন্ড মনে করেই এতো কেয়ার করে, অধিকার খাটায়?? অবশ্য আরশি এই প্রশ্নের কোনো উত্তর পায়নি এখন পর্যন্ত।

“আশু তাড়াতাড়ি আয় দেরি হয়ে যাচ্ছে। নিচে সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”

আরশি অন্যমনস্ক হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। কাসফিয়ার ডাকেই আরশির ধ্যান ভাঙলো। আজ কাসফিয়াকে হসপিটালে নিয়ে যাবে হাতের প্লাস্টার খুলতে। আর সেই সাথে সব ফ্রেন্ডরা মিলে আজ ঘুরবে মজা করবে কাসফিয়ার হাত ঠিক হয়ে যাওয়ার খুশিতে। আর সেই জন্যই আজ এতো প্ল্যান করেছে সবাজ। আরশি নিজেকে স্বাভাবিক করে পাশের বারান্দায় এক ঝলক দেখে কাসফিয়ার কাছে চলে গেল। নিচে নামতেই বেরিয়ে পরলো সবাই এক সাথে।

“কাসফি আর কত অপেক্ষা করাবি আমাকে?? তুই কেন বুঝতে পারছিস না তোকে পাশে পেয়েও নিজের অনুভূতি গুলো কে নিজের মনেই চাপা দিয়ে রাখা আমার জন্য খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।”

হসপিটাল থেকে বেরিয়েই আদ্রাফ কাসফিয়াকে অনুনয়ের স্বরে কথা গুলো বলল। কাসফিয়া আশে পাশে তাকিয়ে বেশ দূরে আরশি আর নীলদের এক সাথে কথা বলতে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শক্ত গলায় বললো-

“তোকে আমি বার বার বারণ করেছি যখন তখন এইসব কথা বলতে। আমি এখন কোনো প্রকার সম্পর্কে জড়াতে চাই না। এই একটা কথা তোকে বলতে বলতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি আদ্রাফ। তবুও কেন তুই বার বার এই একই অনুরোধ করিস আমাকে??”

কাসফিয়ার কথা শুনে আদ্রাফ রেগেমেগে কোনো কথা না বলেই চলে গেল। কাসফিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদ্রাফের দিকে তাকিয়ে আছে। আরশি কাসফিয়াকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসলো।

“তোকে আমি আমার খুব কাছের মানুষ ভাবতাম কাসফিয়া। কিন্তু তুই এমন করবি সেটা আমি ভাবিনি।”

আচমকা আরশির মুখে এমন কথা শুনে কাসফিয়া হতবাক হয়ে গেল। আরশির মুখে কাসফিয়া নামটা শুনে কেন যেন মনের মধ্যে প্রচন্ড ভয় এসে জড়ো হলো। কাসফিয়া আরশির চোখের দিকে তাকাতেই তার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কাসফিয়া আরশি চোখে মুখে এখন একরাশ ঘৃণা দেখতে পারছে নিজের জন্য। ছোট থেকে আজ পর্যন্ত আরশি কখনো এভাবে তার সাথে কথা বলেনি।

চলবে…..

(দয়া করে আজ কেউ ছোট পর্ব বলবেন না। মাথা ব্যথা নিয়ে লেখেছি গল্পটা। তবুও যদি কেউ ছোট পর্ব বলেন তাহলে আমি রাগ করে আজ রাতে গল্পই দিবো না হুহহহ মনে থাকে যেন।😒 রিচেক করা হয়নি ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে❤️❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here