রৌদ্রর শহরে রুদ্রাণী পর্ব -৩৭

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৩৭
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“এই আপনি আমাকে ধাক্কা দিলেন কেন?”

নীলা ক্ষিপ্ত হয়ে নির্বানের উদ্দেশ্যে কথাটা বলল। নির্বান ভ্রু কুচকে বিরক্তি প্রকাশ করে বলল-

“আমি ধাক্কা দিয়েছি নাকি আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন। সব সময় গাঁয়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসেন কেন অদ্ভুত!”

নির্বানের কথায় নীলা প্রচন্ড ক্ষেপে গেল। আঙুল উঁচু করে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল-

“আপনি কিন্তু বড্ড বেশিই বাড়াবাড়ি করছেন মিস্টার।”

সবাই এক সাথে হাসতে হাসতে ছাদ থেকে চলে আসার সময় ভুলবশত নীলার সাথে নির্বানের ধাক্কা লেগে। আর সেই সাথেই শুরু হয়ে যায় তাদের তর্কাতর্কি। বাকি সবাই বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাদের দুজনের ঝগড়া দেখে যাচ্ছে। আরশি নীলার হাত ধরে চাপা কন্ঠে বললো-

“নিলু কি করছিস কি এসব! ওনারা এখন আমাদের মেহমান ঝগড়া বন্ধ কর।”

নীলা আরশির দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে বলল-

“উনিই তো আমাকে ধাক্কা দিল। ওনাকে কিছু বলিস না কেন?”

“আমি কি আপনার জামাই লাগি না-কি বার উনি উনি বলছেন কেন আমাকে?”

নির্বানের কথায় সবাই হেসে উঠলো। হাসিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু নীলার রাগে গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। রাগান্বিত চোখে নির্বানের দিকে তাকিয়ে আছে। রৌদ্র হাসি থামিয়ে নির্বানের পিঠে আস্তে করে এক চাপড় মেরে বলল-

“নির্বান ফাজলামো বন্ধ কর তো। শুধু রাগাচ্ছিস কেন নীলাকে!”

কাসফিয়া নীলার কাছে এসে বলল-

“নিলু ধাক্কাটা হয়তো ভুলে লেগেছে তুই শুধু শুধু রাগ করিস না প্লিজ। দেরি হচ্ছে নিচে যেতে হবে তো। আংকেল আন্টিরা হয়তো অপেক্ষা করছে আমাদের সবার জন্য।”

“হ্যাঁ নিলু। নীড় হয়তো ইচ্ছে করে তোকে ধাক্কা দেয়নি।”

আরশির কথায় নীলা একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে। নির্বানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই গটগট করে চলে গেল। আরশি নির্বানের দিকে তাকিয়ে নম্র ভাবে বললো-

“নীড় আপনি নিলুর ব্যবহারে কিছু মনে করবেন না।”

“আরে ক্রাশ ভাবি এসব তো বেয়াই-বেয়াইনদের মধ্যে কমন ব্যাপার। আমি কিছু মনে করিনি বরং আরও এনজয় করেছি।”

নির্বান আরশিকে চোখ টিপ মেরেই নিচে চলে যায়। তার সাথে সাথে আদ্রাফ, নীল আর কাসফিয়াও সিড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে। আরশি তাদের পেছন পেছন যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই রৌদ্রর আরশির হাত নিজের মুঠোয় বন্দী করে ফেলে। আরশি হকচকিয়ে উঠলো। রৌদ্রর দিকে হতভম্ব হয়ে তাকালো। রৌদ্র নিজের মতো করেই নিচের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে সিড়ি দিয়্ব ধীর পায়ে নেমে যাচ্ছে। রৌদ্রর এমন ব্যবহারে আরশির ভ্রু জোড়া কুচকে এলো। সরু চোখে তাকিয়ে রৌদ্রর মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে।

“আমাকে দেখার আরও অনেক সময় পাবে আরু। এখন নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটো। এমনিতেই বাচ্চাদের মতো যখন তখন হোচট খেয়ে পরে যাও। আর আজকে তো আবার শাড়ী পরেছো। যদিও বা শাড়ির খুব সুন্দর লাগছে তবুও তোমাকে নিয়ে আমি কোনো রিক্স নিতে চাই না। আমার একটা মাত্র ভালোবাসার বউ। তাকে তো সাবধানে রাখতেই হবে। বিয়ের আগেই যদি বউ হারা হয়ে যাই তাহলে তো পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে আমাকে।”

আরশি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল। রৌদ্রর বলা সব কথা গুলো অগোছালো ভাবে আরশির কানে এসে বারি খাচ্ছে। আর তার থেকেও তীব্র গতিতে তীরে মতো আরশির মনে আঘাত হানে ‘ভালোবাসার বউ’ ডাকটা। ধকধক করে আরশি বুকে ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল। আরশি রৌদ্রর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত পায়ে সিড়ি দিয়ে নেমে যেতে লাগলো। তখনই কানে ভেসে আসলো রৌদ্রর হুমকি সরূপ কথা-

“বাচ্চা মতো লাফালাফি করছো করো। নেক্সট টাইম যদি পরে গিয়ে ব্যথা পেতে দেখি তাহলে দু পা ভেঙে সারাক্ষণ আমার সামনে বসিয়ে রাখবো। মনে থাকে যেন মিস আরু।”

আরশি কথা গুলো শুনেও থামলো না। দ্রুত পায়ে নিচে চলে গেল। রৌদ্র আরশির যাওয়ার পথে তাকিয়ে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল।

————————

সবাই ড্রয়িং রুমে চুপচাপ গম্ভীরমুখে বসে আছে। পুরো রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা। রৌদ্র বাবা শাহরিয়ার হাসান গলা খেকরিয়ে নীরবতা ভেঙে গম্ভীর গলায় বললো-

“রৌদ্র আমরা সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

রৌদ্র তার বাবার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আরশির বাবা বলল-

“আমরা সবাই ঠিক করেছি আজকেই তোমাদের আকদের কাজ শেষ করে ফেলবো। আর বিয়ের বাকি অনুষ্ঠান কখন করবে তা তোমরা সবাই মিলে ঠিক করে নিও। তবে যা প্ল্যানিং করার তাড়াতাড়ি করবে।”

আরশি চমকে তার বাবার দিকে তাকালো। তার বাবা একদিনের সব ঠিক করে ফেলছে! আরশি চোখ ঘুরিয়ে রৌদ্রর দিকে তাকালো। নির্বান, নীল ওরা রৌদ্রকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানাচ্ছে। রৌদ্র আড় চোখে আরশির দিকে তাকিয়েই একটা তৃপ্তির হাসি দিল। নীলা আর কাসফিয়া এসে আরশির দু পাশে বসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরশি এখনো রৌদ্রর হাসিমাখা মুখটার দিকে অপলক দৃষ্টি তাকিয়ে আছে। পরক্ষনেই আরশির ঠোঁট প্রসারিত হয়ে হাল্কা হাসি রেখে ফুটে উঠলো।

“নীল আর আদ্রাফ তোমাদেরকে কিছু কথা বলার ছিল।”

আদিব হাসানের কথায় সবাই স্বাভাবিক হয়ে গেল। আদ্রাফ আর নীল ভদ্রতার সাথে বলল-

“জ্বি আংকেল বলুন।”

“তোমরা তো জানো আরশির কোনো ভাই নেই। তোমরা দুজন আরশিকে বোনের মতো করে আগলে রেখেছো। বিশেষ করে নীল তুমি! তুমি আমাকে রৌদ্রর সম্পর্কে সব কিছু বলাতেই আমি জেনেছি তা না হলে হয়তো কিছুই জানতে পারতাম না। যাইহোক এসব কথা না হয় থাক। যদি তোমরা চাও তাহলে তোমাদের দুজনকে আমি আরশির বিয়ের সকল দায়িত্ব দিতে চাই।”

নীল আদিব হাসানের কাছে এসে আশ্বাস দিয়ে বললো-

“আংকেল তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না আমরা সবাই মিলে এসব কিছু সামলে নিব।”

কাসফিয়া আরশির পাশ থেকে উঠে দাড়িয়ে বলল-

“হ্যাঁ আংকেল আমরা সবাই আছি তো। তোমার এতো চিন্তা করতে হবে না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে এখন রুমে গিয়ে সবাই ফ্রেস হয়ে আসো। কিছুক্ষনের মধ্যেই আকদের কাজ শুরু করা হবে। তোমরা ছোটরা এই বাসায় রেস্ট নাও আমরা বড়রা না হয় কাসফিদের বাসায় যাই।”

আদিব হাসান কথা গুলো বলেই রৌদ্রর বাবা মা আর মামা-মামীকে নিয়ে কাসফিয়াদের বাসায় চলে গেল। বড়রা সবাই চলে যেতেই নীল আরশির পাশে সোফায় বসে বলল-

“কংগ্রেস বেবি। বিয়াইত্তা জীবনের অগ্রীম শুভেচ্ছা। দেখলি তো আমি তোর কত বড় একটা উপকার করে দিলাম। আমি কিন্তু তোর কাছ থেকে অনেক বড় একটা ট্রিট পাওনা রইলাম।”

আরশি রক্তিম চোখে নীলের দিকে তাকালো। নীলের পিঠে পরপর কয়েকবার থাপ্পড় আর ঘুষি মারতে মারতে বলল-

“হারামি তুই ফ্রেন্ড নাকি আর কিছু! আমার পিঠ পিছে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললি অথচ আমাকে কিছুই বললি না! এতো বড় ড্রামা কিভাবে করলি তুই? ফাজিল তোকে কে বলেছে এতো পাকনামি করতে?”

নীল আরশির থাপ্পর খেয়ে চেচামেচি করতে করতে বলল-

“দুলাভাই বলেছে এসব কিছু করতে। আমি আর কাসফি তো শুধু মাত্র তার কথা রাখতেই এসব করেছি। কিরে কাসফি কিছু বল।”

কাসফি ভয়ে আরশির কাছ থেকে দূরে সরে আমতা-আমতা করে বলল-

“হ্যাঁ হ্যাঁ নীল সত্যিই বলছে আশু।”

আরশি কাসফিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। নীল আরশির দু হাত ধরে রেখেছে যেন মারতে না পারে। আরশি এক ঝাটকায় হাত ছাড়িয়ে নিল। কিছুটা দূরেই রৌদ্র আর নির্বান সোফায় বসে আছে। আরশি রৌদ্রর দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই নির্বান আর রৌদ্র শুকনো ঢোক গিলে। নির্বান রৌদ্রর কাধে হাত রেখে দাঁত কেলিয়ে বললো-

“ভাই পাশের বারান্দা বহুত বাজে ভাবেই ক্ষেপেছে আজ। তোমার আর রক্ষা নেই।”

রৌদ্র নির্বানের দিকে সরু চোখে তাকিয়ে নিম্ন স্বরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-

“যা পারলে তুইও আরেকটু ক্ষেপিয়ে দিয়ে আয় ফাজিল।”

রৌদ্র আরশির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখ করে বলল-

“বাচ্চাদের মতো ঝগড়াঝাটি না করে এখন সবাই রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।”

আরশি রৌদ্রর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই রাগে গজগজ করে উপরে চলে গেল। নীল আরশির দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল-

“দুলাভাই আপনি দেখি আরশির রাগ আরও বাড়িয়ে দিলেন।”

রৌদ্র একটা মুচকি হাসি দিল। শান্ত গলায় বললো-

“রুদ্রাণীকে তো রাগলেই বেশি ভালো লাগে।”

সবাই রৌদ্রর দিকে সন্দেহর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রৌদ্র তাদের চাহনি পাত্তা না দিয়ে টেবিলের উপর রাখা খাতা আর কলম নিয়ে কিছু একটা লিখেতে লাগলো৷ কিছুক্ষণ পর পৃষ্ঠাটা ছিড়ে ভাজ করে কাসফিয়ার কাছে দিয়ে বলল-

“এটা আরু দিয়ে আসো।”

কাসফিয়া চোখ ছোট ছোট করে কাগজটার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর মাথা নাড়িয়ে নীলাকে নিয়ে আরশির রুমে চলে যায়। আরশি গাল ফুলিয়ে বিছানায় বসে পা তুলে বসে আছে। কাসফিয়া আরশির দিকে কাগজটা এগিয়ে দিয়ে বলল-

“আশু একটা দুলাভাই দিয়েছে তোকে দেওয়ার জন্য।”

আরশি রাগান্বিত চোখে কাসফিয়ার দিকে তাকাতেই কাসফিয়া আমতা-আমতা করে বলল-

“মানে রৌদ্র ভাই দিয়েছে এটা।”

আরশি ছো মেরে কাসফিয়ার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিল।

চলবে…

(আচ্ছা গল্পটা কি শেষ করে দিব! আপনারা আপনাদের মতামত জানান কমেন্টে। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here