মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ পর্ব -৩

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফারহান হাতে কফি নিয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। মন মেজাজ যথেষ্ট খারাপ তার। ফারজানা বেগম জেদ ধরে বসে আছেন যে ইভানার সাথেই ফারহানের বিয়ে দেবেন। ফারহান হাজারবার বুঝিয়েও তাকে মানাতে পারছে না। তাই এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে।

উদাস মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল ফারহান। এমন সময় আগমন ঘটল তার ছোট ভাই ফাহিমের। ফাহিম এখন বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছে। এই নিয়ে বেশ অহংকারও আছে তার। ফাহিম ফারহানকে ডাক দিয়ে বললো,
‘ভাইয়া, তুই এভাবে উদাস হয়ে দাড়িয়ে আছিস কেন? আমি তোর বিয়ের খবর পেয়ে ছুটে ছুটে চলে এলাম সেলিব্রেট করার জন্য আর তুই এভাবে আছিস।’

‘সেলিব্রেশন! হুহ, নিজের সর্বনাশের সেলিব্রেশন কে করতে চায়?’

ফারহানের থেকে এমন উত্তর আশা করে নি ফাহিম। মুহুর্তেই তার জোড়া ভ্রু কুচকে গেল। কন্ঠভরা বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইলো,
‘সর্বনাশ মানে কি ভাইয়া? তুই প্লিজ আমাকে সব স্পষ্ট করে বল।’

‘যেই মেয়েটার সাথে আম্মু আমার বিয়ে ঠিক করেছে সে একজন মেট্রিক ফেইল স্টুডেন্ট।’

ফাহিমের অবাক হওয়ার পরিমাণ বাড়ল। এবার বেশ খানিকটা রাগী স্বরে বলে উঠল,
‘এসব তুই কি বলছিস ভাইয়া? আমি তো জাস্ট বিলিভই করতে পারছি না আম্মু এমন একটা ফালতু ডিশিসন নিতে পারে। মানে তুই একজন মেজিস্ট্রেট হয়ে শেষ পর্যন্ত কিনা ম্যাট্রিক ফেল মেয়েকে বিয়ে করবি! আম্মুর গাইয়া স্বভাব এখনো গেলো না। মানুষের যে প্রেসটিজ বলে কিছু একটা থাকে সেটা আম্মুর মধ্যে নেই। রিডিকিউলাস।’

ফারহান চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,
‘আম্মুর ব্যাপারে একদম এরকম কথা বলবি না ফাহিম। আম্মুর ব্যাপারে কি জানিস তুই? তুই তখন সবেমাত্র আড়াই বছরের ছিলি যখন আব্বুর মৃত্যু হয়েছিল। তখন আম্মু একা হাতে কত কষ্ট করে আমাদের মানুষ করেছে সেটা আমি দেখেছি। গা’ধার মতো খেটেছেন আমাদের জন্য। জানিস কোন রাতে আমি আম্মুকে শান্তিতে ঘুমোতে দেখিনি। তার এই অক্লান্ত পরিশ্রম আর আত্মত্যাগের মাধ্যমেই আজ আমরা প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি। তাই প্লিজ আম্মুর ব্যাপারে কোন অসম্মানজনক কথা বলবি না। বিয়ের ব্যাপার নিয়ে আপত্তি থাকলেও আম্মুকে আমি সম্মান করি।’

‘ভালো তো। তুই সারাজীবন মাম্মাস বয় হয়েই থাক। আম্মুর কথায় একটা ম্যাট্রিক ফেল মেয়েকে বিয়ে করে নে। আমি বাবা তোর মতো এত মাভক্ত ছেলে নই। আমাকে যদি এরকম ভাবে বিয়ে দিতে চাইতো আমি ম’রে গেলেও রাজি হতাম না।’

‘এখানেই তোর আর আমার মধ্যে তফাৎ ফাহিম। তুই আম্মুর বাধ্য না হলেও আমি আম্মুর অবাধ্য হতে পারি না। আম্মুর শরীরের অবস্থা বেশি ভালো না। কিছুদিন আগে ডাক্তার দেখিয়ে ছিলাম, ডাক্তার বলেছে আম্মুকে যেন স্ট্রেস দেওয়া না হয়। তাছাড়া আম্মু সারাজীবন আমাদের জন্য যা করেছেন নিজের জীবন দিয়েও আমরা তার মূল্য দিতে পারব না। তাই আম্মুর সুখের জন্য আমি সব করতে পারি। সেখানে এই বিয়েটা অতি সামান্য। আমার যতোই কষ্ট হোক না কেন, আমি বিয়েটা করবোই।’

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ব্যালকনি থেকে রুমের দিকে অগ্রসর হলো ফারহান। ফাহিম সেখানেই দাড়িয়ে রইল। তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো,
‘এটার জন্য তুই রিগ্রেট(অনুশোচনা) করবি ভাইয়া।’

৫.
ইভানা ইতিমধ্যেই বিয়ের শপিং এর কথা ভাবছে৷ যদিও এখনো বিয়ের কথা বেশিদূর এগোয় নি তবে ইভানা অনেক বেশি উত্তেজিত। তার এই উত্তেজনায় পারদ ঢেলে দিয়ে তোহা বলে উঠল,
‘এত তাড়াতাড়ি শপিং করে কি করবি? আগে বিয়ের দিন তারিখ ফাইনাল হোক। এত তাড়াহুড়োর কোন মানে খুজে পাচ্ছি না।’

ইভানা হাতে নেইল পলিশ দিতে দিতে বললো,
‘তুই জানিস না আপাই শুভ কাজে দেরি করতে নেই? এই প্রথমবারের মতো আমি বিয়ে করতে চলেছি। একটু তো বেশি এইমেন্ট থাকবেই।’

‘এইমেন্ট না শব্দটা এক্সাইমেন্ট। ভালো করে ইংলিশও বলতে পারিস না। আর বিয়ে সবাই প্রথমবারই করে কিন্তু তোর মতো এত বেশি বাড়াবাড়ি কাউকে করতে দেখিনি।’

‘আমার সাথে শপিং করতে চাইলে চল আর নাহলে আমি একাই চলে যাচ্ছি।’

তোহা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছিল। ইভানা ছোটবেলা থেকেই এমন। নিজে যা ভালো মনে করে তাই করে। অনেক বেশি পরিমাণে স্বেচ্ছাচারী সে। তোহা যতটা বুঝদার এবং শান্ত, ইভানা ততোই অবুঝ এবং চঞ্চল। উপরন্তু, নিজের দাদার অত্যাধিক ভালোবাসায় বিগড়ে গেছে সে। মায়ের কাছ থেকেও অনেক আদর পেয়েছে সে। বাবা যদিওবা শাসন করতেন কিন্তু তিনি তো বেশিরভাগ সময় হাসপাতালেই থাকতেন। যার ফলশ্রুতিতে, ইভানাকে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নি।

ইভানা রুম থেকে বের হতে যাবে এমন সময় রুমে প্রবেশ করলেন ইভানার দাদা হাশেম আলী। তিনি এতদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। আজকে আবার ফিরে এলেন। ইভানার জন্মের এক মাস আগেই তার দাদীর মৃত্যু হয়। ইভানার দাদী বেচে থাকতে তার সাথে অনেক রূঢ় ব্যবহার করতেন হাশেম আলী। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার অভাবটা বুঝতে পেরেছেন। এমন সময় ইভানার জন্ম হলো। হাশেম আলী মনে করলেন হয়তো ইভানা তার স্ত্রীর প্রতিচ্ছবি হয়ে ফিরে এসেছে। কারণ তার চেহারার সাথে তার দাদীর চেহারার বেশ মিল। তাই তিনি ছোট থেকেই ইভানাকে অনেক ভালোবাসতেন। ইভানার দাদির নাম ছিল তানজিলা। হাশেম আলী নিজের স্ত্রীর নামেই নিজের নাতনির নাম রাখেন। এই নামেই ডাকেন তিনি ইভানাকে।

নিজের দাদাকে দেখামাত্রই তাকে জড়িয়ে ধরে ইভানা। খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বলে,
‘তুমি ফিরে এসেছ দাদাজান? আমি খুব খুব খুব খুশি হয়েছি৷ এত দেরি করলে কেন?’

‘আরো আগে আসতে চেয়েছিলাম তানজিলা কিন্তু কি করবো বল গ্রামে অনেক জরুরি কাজ ছিল। তা তুই কোথায় যাচ্ছিলি নাকি?’

‘হুম আমি শপিং করতে যাচ্ছিলাম।’

‘কিসের শপিং?’

‘বিয়ের শপিং। সামনে আমার বিয়ে হবে জানো না?’

ইভানার বিয়ের কথা শুনে হতবাক হয়ে যান হাশেম আলী। তার নাতনির বিয়ে অথচ তাকে জানানো হয়নি। বেশ রুষ্ট হলেন তিনি।

৬.
দুপুরের খাবার সমাপ্ত করল ফারহান, ফাহিম এবং ফারজানা বেগম। খাবার টেবিলে একটু তর্ক হয়েছিল ফাহিম এবং ফারজানা বেগমের মধ্যে। নিজের ভাইয়ের জন্য এমন পাত্রী নিয়েই মূলত তর্কাতর্কি। তবে ফারহান কোন টু শব্দ করে নি এর মধ্যে। ফাহিমও পেরে ওঠে নি নিজের মায়ের সাথে। ফারজানা বেগম বিয়েটা দেবেনই।

ফারহান খাওয়া শেষ করে উঠে যাওয়ার আগেই বললো,
‘বিয়ে নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই আম্মু। আমি শুধু একটাই রিকোয়েস্ট করব, এই বিয়েটা যেন খুব সাধারণ ভাবে হয়। বড় কোন অনুষ্ঠান নয়। খুব কাছের আত্মীয় ছাড়া কাউকে দাওয়াত দেওয়ারও দরকার নেই। বাকিটা তোমার ইচ্ছা।’

কথাগুলো বলে ফারহান প্রস্থান করল। ফারজানা বেগম ভাবলেন তার ছেলে যখন বিয়েটা করতে রাজি হয়েছে সেটাই অনেক। বিয়েটা নাহয় সাধারণ ভাবেই হবে। এখন শুধু ইভানার পরিবারকে মানাতে পারলেই হলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here