#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_২
#নিশাত_জাহান_নিশি
“কু’ত্তা’র বাচ্চা। আমি আজ তোকে খু’ন করে ফেলব! তুই আমার বিরুদ্ধে ডাবল প্ল্যানিং করেছিস তাইনা?”
একের পর এক লাঠির আঘাতে ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠছিল অমি। দমটা তার যাই যাই করছিল। একজন দুইজন হলেও না হয় তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে বিষয়টা কোনোভাবে সামাল দেওয়া যেত। তবে না, এখানে তো চার চারজন! আজ তার শরীরের একটাও হাড্ডি গুড্ডি আস্ত থাকবে বলে মনে হচ্ছেনা। তাই সে জান বাঁচানোর ভয়ে করুনভাবে আহাজারি করে উঠল। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল,
“প্লিজ ভাই আমাকে ছেড়ে দিন। বিলিভ মি, আমি আপনার বিরুদ্ধে কোনো ডাবল প্ল্যানিং করিনি! আমি জানিনা পিয়াসা আপনাকে কী বলেছে বা আমার বিরুদ্ধে কী বুঝিয়েছে যার কারণে আপনি এতটা হাইপার হয়ে গেছেন। তবে আমি সত্যি বলছি ভাই, আপনার উপর আমার কোনো আক্রোশ নাই।”
মেজাজ গরম হয়ে গেল সজলের। রূপলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সজল তার হাতে থাকা অন্য লাঠিটি দিয়ে অমির পিঠ বরাবর জোরে এক লা’ঠিকা’ঘাত করল! ঘাড়ের রগ টান টান করে সে উত্তেজিত গলায় বলল,
“ইউ ব্লা’ডি! ধরা পড়ে যাওয়ার পরেও তুই ননস্টপ মিথ্যে কথা বলছিস না? এই তোর কী প্রাণের মায়া নেই? রূপল ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে তুই মিথ্যা বলছিস? এত বড়ো বুকের পাঠা তোর? কাকে বাঁচাতে চাইছিস তুই বল? কাকে বাঁচাতে চাইছিস?”
রাগে ফোঁসফোঁস করে রূপল তার পাঞ্জাবির হাতাগুলো ভাঁজ করল। রাগ সংযত করতে না পেরে অমির তলপেট বরাবর জোরে এক লা’থ মারল! দাঁত কিড়িমিড়িয়ে সজলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে কু’ত্তা’র বাচ্চাটাকে আগে সাইজ কর। চো’র কী কখনও চু’রি করে সত্যিটা স্বীকার করবে? যদি এমনই হত তবে চো’রকে আর রি’মা’ন্ডে নিয়ে মা’রধ’র করা হতো না! সোজা কথায় কাজ হয়ে যেত। ঢারচে ক্যা’লা এই শা’লাকে। তারপর দেখ সত্যিটা কীভাবে গড়গড়িয়ে স্বীকার করে!”
চার ভাই মিলে অমিকে এলোপাতাড়ি লা’থি, কি’ল, ঘুঁ’ষি মারতে লাগল! প্রাণ বাঁচাতে অমি চিৎকার করে বলল,
“ভাই প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিন। প্লিজ আমাকে জানে মা’র’বেন না প্লিজ।”
এই মুহূর্তে অমির কোনো আত্নচিৎকারই তাদের কান অবধি ঠিক পৌঁছাচ্ছে না! বরং প্রতিশোধের নেশায় তারা বুদ হয়ে আছে। এলাকার লোকজন ভীড় জমিয়ে দেখছে তাদের এই দূর্ধর্ষ মা’রা’মা’রি। কেউ একটি বারের জন্যও অমিকে বাঁচাতে আসছেনা! বরং তারা এই বিষয়টিকে বেশ উপভোগ করছে! মনে হচ্ছে যেন উচ্ছ্বাসিত হয়ে তারা কোরবানির গরু জ’বা’ই করা দেখছে। মা’র’পি’টের এই সাংঘাতিক দৃশ্য দেখে গাঁয়ের লোম শিউরে উঠল নীহারিকার। এভাবে কেউ কাউকে মা’র’ধ’র করতে পারে? এতটা পা’শ’বিক অ’ত্যা’চার করতে পারে? রূপলকে সে রাগী হিসেবে জানত বটে তবে এতটা অমানবিক তা আজ জানল। অবশ্য এখানে একপাক্ষিক রূপলের দোষ দিলেও চলবেনা! বরং এখানে সমান দোষে দোষী অমি এবং পিয়াসাও! তবে এখানে ডাবল প্ল্যানিংয়ের ব্যাপারটা সে ঠিক বুঝতে পারল না! কী নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে এখানে?
নীহারিকার পাশ থেকে নিহালও এবার বেশ তেঁতে উঠল! অমিকে মা’র’তে দেখে তার হাত-পা ও কেমন নিশপিশ করে উঠল। তাই রাগে গজগজ করে সে পাঞ্জাবির হাত ভাজ করে বলল,
“এইভাবে হচ্ছেনা। জা’নো’য়া’রটাকে আরও আচ্ছে মতো ক্যা’লা’তে হবে!”
অমনি নীহারিকা এবং নিহালের মা-বাবা নিহালকে থামিয়ে দিলো! আশরাফ শিকদার তো রেগেমেগে ছেলের হাত ধরে বেশ কড়া গলায় বললেন,
“এই তুই কোথায় যাচ্ছিস? নিজের এলেম দেখাতে? তাদের পরিবারের বিষয় তারা বুঝে নিবে। তুই অযথা ঐখানে নাক গলাতে যাবি কেন? তাছাড়া আজ বাদে পরশু তো তোদের ডিভোর্স হয়েই যাবে। সো ঐসব উটকো ঝামেলায় তোর না জড়ানোটাই ভালো হবে। তাছাড়া দোষ তো শুধু ঐ ছেলেটারই নয়, বরং এখানে ফিফটি পার্সেন্ট দোষ মেয়েটারও আছে। ঘরে শাসন না করে বাইরে এসেছে শাসন করতে।”
নীহারিকার মা এবার হায় হুতাশ করে উঠলেন! মিনমিনে গলায় তিনি কপাল চাপড়ে বললেন,
“হে আল্লাহ্ আমি এ কোন জায়গায় আমার ছেলেকে বিয়ে দিলাম? বোন কী-না একটা ন’ষ্টা মেয়ে, ভাই একটা গু’ন্ডা! কেন জেনেশুনে এই আ’গু’নে ঝাপ দিলাম? মাথায় তখন কী ঢুকেছিল আমার? এভাবেই দিশা লাড়া হয়ে গেলাম?”
আশরাফ শিকদার বেশ নরম গলায় তার স্ত্রীকে শান্তনা দিয়ে বললেন,
“আহা মারজিনা যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এখন এসব নিয়ে আফসোস করে কোনো লাভ নেই। এলাকার মানুষ আমাদের দিকে কোনো প্রশ্ন তোলার আগেই চলো আমরা এখান থেকে চলে যাই।”
কথা সম্পূর্ণ শেষ হতে না হতেই এলাকার লোকজন ঘিরে ধরল নীহারিকার পরিবারকে! জিজ্ঞেস করতে লাগল রূপল কেন এভাবে অমিকে মা’র’ধ’র করছে? এর আসল মাজরাটা কী? তাছাড়া তাদের ছেলের বউই বা কোথায়? বিয়ের রাতেই বউ কেন বাড়ি ছাড়ল? তাদের বাড়িতেই বা কী হচ্ছে এসব? এমন নানাবিধ প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে নিহাল বাধ্য হলো তার মা-বাবাকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাড়ির ভেতর ঢুকে যেতে! রয়ে গেল শুধু নীহারিকা। রূপলকে এখনি, এই মুহূর্তে থামাতে হবে তার। নয়ত এলাকায় তাদের দুর্নাম ছড়িয়ে পড়তে বেশী দেরী হবেনা। এলাকায় থাকাটাই দায় হয়ে পড়বে তাদের৷ এমনিতেই তো তাদের দুর্নামের শেষ নেই। জেঁচে পড়ে লোকটা যেমন নিজের পরিবারের ক্ষতি করছে তেমনি নীহারিকার পরিবারেরও ক্ষতি করছে।
অতিরিক্ত জিদ্দি হয়ে নীহারিকা ছুটে গেল ঘটনাস্থলে। অমি এই মুহূর্তে প্রায় আ’ধ’ম’রা! শরীরের সমস্ত শক্তি হারিয়ে সে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। নাক-মুখ থেকে টলটলিয়ে র’ক্ত পড়ছে! শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের দাগ। উদ্দেশ্য সফল হতেই রূপল তার ঘামে ভেজা কপালটা মুছল। ক্লান্ত গলায় তার কাজিনদের বলল,
“কাজ শেষ আমাদের। এবার তাকে হসপিটালে ভর্তি করে দিয়ে আয়। আর শোন? তার পরিবারকেও খবরটা দিয়ে দিস। কু’ত্তা’র বাচ্চা এবার সত্যিটা কীভাবে অস্বীকার করে আমিও দেখে নিব! যদি কোনোভাবে জানতে পারি এই চক্রান্তের পেছনে সিনিয়র কোনো ভাইয়ের হাত আছে তো তাদের শে’ট’গি’রি আমি ছুটিয়ে দিব! কোথায় হাত দিয়েছে জানেনা তারা।”
রূপলের কথায় সায় জানিয়ে রূপলের কাজিনরা আ’ধম’রা অমিকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। রূপলের ভয়ে এলাকার লোকজনও এবার যে যার বাড়িতে চলে গেল। এই ঘটনার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলনা তারা। তবে নিঃসন্দেহে তারা নীহারিকা এবং রূপলের পরিবারকে খুব একটা ভালো চোখেও দেখছেনা।
এরমধ্যেই প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে এসে নীহারিকা পেছন থেকে রূপলকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিলো। রণ রূপ ধারণ করে দাঁড়িয়ে থাকা রূপল তার তেজী দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো। তটস্থ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী ব্যাপার? আপনার এখানে কী?”
“আমার এখানে কী মানে? এখানে শুধু আমি না। বরং পাড়া শুদ্দ লোকজন এখানে ছিল! সবাই ভীড় করে দাঁড়িয়ে ছিল এখানে। ডিটেকটিভদের মত তারা আমাকে এবং আমার পরিবারকে জেরা করছিল যে এখানে কী হচ্ছে? সন্ধ্যা থেকে আমাদের বাড়িতে কী ঘটছে এসব? কোনো উত্তর দিতে পারিনি আমরা তাদের। কী উত্তর দিব হ্যাঁ? যে পরিবারে আমরা আমার ভাইকে বিয়ে দিয়েছি সেই পরিবারের মানুষ খুব নিকৃষ্ট? একজন গু’ন্ডা আর অন্যজন দু’শ্চ’রিত্রা? পাড়ায় আমাদের মজার খোঁড়াক করে রেখেছেন আপনারা!”
নীহারিকার স্পষ্টভাষী কথায় রাগে বেশ গাঁয়ে জ্বালা ধরে গেল রূপলের। আঙুল উঁচিয়ে সে নীহারিকাকে শাসিয়ে বলল,
“এটা আপনার বাড়ি নয় ওকে? যে আপনি যেভাবে খুশি সেভাবে গলা উঁচিয়ে আমার সাথে কথা বলবেন! এটা শুধু আপনার এলাকা নয় ইভেন এটা আমারও এলাকা। সো গলাটা একটু নামিয়ে কথা বলুন। আর হ্যাঁ। কী যেন বলেছিলেন আপনি? আমি গুণ্ডা, আর আমার বোন দুশ্চরিত্রা? তো জেনেশুনে আমাদের মত নিকৃষ্ট পরিবারে আপনার ভাইকে বিয়ে দিয়েছিলেন কেন? কোন লাভে, কোন স্বার্থে? এলাকার দু, চারটা মানুষের কথা শুনেই গাঁয়ে খুব জ্বালা ধরে গেল না? আর আমার বোনের পুরো জীবনটা যে নষ্ট হয়ে গেল! তার চরিত্রে যে কলঙ্কের দাগ লেগে গেল? তার কী হবে? যে তার গাঁয়ে এই কাঁদা ছিঁটালো ভাই হয়ে তাকে এত সহজে আমি ছেড়ে দিব? আসল সত্যিটা খুঁজে বের করব না।”
“তালি কিন্তু এক হাতে বাজেনা মিস্টার রূপল! শুধু যে ছেলেটারই দোষ বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। বরং সমান দোষে আপনার বোনও দোষী! আপনার বোনের চরিত্রের দোষেই আজ এতকিছু ঘটে গেল! আমার ভাইয়ের জীবনেও একটা কালো দাগ পড়ে গেল। এলাকায় শুধু আমাদের নয় বরং আপনার পরিবারেরও সম্মান হানি হলো। অন্যের ছেলেকে তো অনেক শাসন করলেন এবার যান না যান নিজের ঘরেরটাকে গিয়ে শাসন করুন! তাকে বুঝিয়ে দিন এলাকার শে’ট হিসেবে আপনার চোখে সবাই সমান।”
কথার মাঝখানেই রূপলের মাথাটা কেমন যেন ঘুরে গেল! মাথায় হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। ভোঁ ভোঁ করে তার চারপাশটা ঘুরতে লাগল। বিয়ে উপলক্ষ্যে গত তিনদিন ধরেই তার উপর কাজের বেশ প্রেশার যাচ্ছিল। সকাল থেকে তো তার পেটে কোনো দানা পানিও পড়েনি! তার উপর একের পর এক ঝড় ঝাপটা বয়ে যাচ্ছে তার উপর দিয়ে। তার পরিবারের উপর দিয়ে। রূপলের এই বেহাল দশা দেখে নীহারিকা বেশ চমকে উঠল। উদগ্রীব গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী হলো? নেশাখোরদের মত এভাবে ঢুলছেন কেন?”
নীহারিকার খোঁচানো কথাবার্তায় রাগটা যেন আরও চড়ে বসল রূপলের! জেদ দেখিয়ে সে নীহারিকাকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে হাঁটা ধরল। উগ্র গলায় বলল,
“রা’স্কে’ল কোথাকার।”
সামনে আগাতে গিয়েও আবার থেমে গেল রূপল! মাথায় হাত দিয়ে সে আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ল। রা’স্কে’লে”র পরবর্তী এরচেয়েও খারাপ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল নীহারিকা। রূপলের শরীরের অবস্থা যে মুমূর্ষু তা বুঝতে পেরে নীহারিকা ছুটে গেল রূপলের কাছে। অসুস্থ রূপলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সে চিন্তিত গলায় বলল,
“কী সমস্যা? শরীর খারাপ করছে আপনার? যদি বেশীই অসুস্থ মনে হয় তো আমাদের বাড়িতে আসতে পারেন। রেস্ট নিয়ে যাবেন।”
দুর্বল শরীর নিয়েও রূপলের তেজ কমল না। বিদ্বেষী ভাব নিয়ে সে মাটিতে থুথু ছিটিয়ে বলল,
“থু থু! যে বাড়ি থেকে আমাকে এবং আমার বোনকে অপমানিত করে বের করা হয়েছে সে বাড়িতে এই জীবনে আমার পা পড়বেনা।”
“চেটাং চেটাং কথা দেখো। অহংকারে পা পড়ছে না মাটিতে। বলি কী শুনুন? আমরা কী আপনাদের এমনি এমনি বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি? অন্যায় করেছিলেন বলেই বের করে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। না হয় কারো সাধ না যে নতুন আত্নীয়কে এভাবে জেচে পড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার।”
যদিও নিজের জেদ বজায় রেখে রূপল সামনের দিকে হাঁটা ধরল তবুও তার সাহসে কুলাচ্ছিল না এই দুর্বল শরীর নিয়ে সামনের দিকে হেঁটে যেতে! তাই বাধ্য হয়ে সে নীহারিকাকে ডাকল। অপারগ গলায় বলল,
“আমাকে একটু বাড়ি পৌঁছে দিবেন?”
প্রথমে নীহারিকা বেশ ভাব নিলেও পরবর্তীতে সে বাধ্য হয়ে রাজি হলো রূপলকে তার বাড়ি অবধি পৌঁছে দিতে। তার ভাইয়ের ডিভোর্স না হওয়া অবধি যে এখনও তারা আত্নীয় এই বিষয়টা নীহারিকা মাথায় রাখল! বাধ্য হলো সে রূপলের সাথে মানবতা করতে। রূপলকে নিয়ে সে তাদের বাড়িতে গিয়ে উঠল।
পিয়াসা তার ঘরে কাউকে সহ্য করতে পারছেনা। এমনকি তার মাকেও না! পাগলের ন্যায় অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ করছে। ঘরের আসবাবপত্র সব ছুঁড়োছুঁড়ি করছে। ছু’রি নিচ্ছে, ব্লে’ড নিচ্ছে, গলায় ওড়না প্যা”চাচ্ছে আ’ত্মহ”ত্যা করতে! সবাইকে ধাক্কা মেরে সে ঘর থেকে বের করে দিচ্ছে। কাউকে তার সাথে বসে ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলার সুযোগ দিচ্ছেনা।
বাড়ি ফিরে পিয়াসার এই অদ্ভুত কার্যকলাপ দেখে রূপল অসুস্থ শরীর নিয়েই একছুটে পিয়াসার ঘরে ঢুকল। রূপলের পাশাপাশি নীহারিকাও পিয়াসার ঘরে ঢুকে গেল। রূপলকে দেখামাত্রই পিয়াসা কেমন যেন শান্ত হয়ে এলো। হাত থেকে ফুলের টবটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে সে কাঁদতে কাঁদতে দৌঁড়ে গেল রূপলের কাছে। রূপলকে জড়িয়ে ধরে চোখের জল ছেড়ে বলল,
“ভাইয়া বিশ্বাস কর। আমি অসতী না! আমি কখনও নিজ থেকে অমির সাথে খারাপ কোনো কাজে জড়াইনি! তবে এটাও অস্বীকার করতে পারছিনা যে আমি প্রেগনেন্ট না! নিশ্চয়ই অমির সাথে আমার অজান্তেই কিছু একটা ঘটে গেছে যা আমি তখন টের পাইনি বা বুঝতে পারিনি! আজ কালকার যুগে তো প্রেম সবাই-ই করে ভাইয়া। আমিও করেছি। তাহলে আমার সাথেই কেন এই অন্যায়টা হলো ভাইয়া কেন?”
একমাত্র বোনের আহাজারি দেখে নরম হয়ে এলো রূপল। বোনের সব কথাই তার বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো। পৃথিবীর সমস্ত রাগ, ক্ষোভ যেন তার বোনের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া নোনা জলে ধূঁয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল! বিষণ্ন মনে সে পিয়াসার মাথায় হাত বুলালো। আবেগঘন গলায় বলল,
“তুই অসতী কে বলেছে? যে তোর চরিত্রে কলঙ্কের দাগ ছিঁটালো বরং সে-ই অসৎ! তুই জাস্ট দেখ ভাই তার কী অবস্থা করি। সত্যিটা কীভাবে তার মুখ থেকে বের করি। আজকের রাতটা সময় দে আমায় জাস্ট। কাল সকালের মধ্যেই পাপী নিজের মুখে সত্যিটা স্বীকার করবে। তোকে পাপমুক্ত করবে।”
দুই ভাই বোনের কথার মাঝখানে নীহারিকা বেশ জড়তা নিয়ে পিয়াসার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,
“আচ্ছা ভাবি? আমি কী আপনার সাথে একটু পার্সোনালী কথা বলতে পারি? আসলে অনেকগুলো বিষয় আমার কাছে ক্লিয়ার না! সেই বিষয়গুলো আমি ক্লিয়ার করতে চাই। যেহেতু আপনি এখনও আমার ভাইয়ার বউ সেই সুবাদেই বিষয়গুলো জানতে চাওয়া!”
রূপলের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে পিয়াসা শান্ত হয়ে দাঁড়ালো। চোখের জল মুছে মাথা দুলিয়ে নীহারিকার কথায় সম্মতি জানালো। স্বস্তির শ্বাস ফেলল নীহারিকা। রূপলকে উদ্দেশ্য করে নীহারিকা বেশ সংকোচ বোধ নিয়ে বলল,
“আপনি কী একটু বের হবেন ঘর থেকে?”
রূপলও সোজাসাপ্টা গলায় বলে দিলো,
“না! যা বলার আমার সামনেই বলুন!”
মনে মনে রূপলকে একদফা ধূঁয়ে দিলো নীহারিকা। মুখটাকে তেরো বাঁকা করে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“আইছে বোনের বডিগার্ড! লাভলী সিং! একা পেয়ে তার বোনকে যেন আমি মে’রে দিব! এই বদ লোকটার সামনে আমি এখন কীভাবে মেয়েদের পার্সোনাল ব্যাপারগুলো জানতে চাইব? আমার কী লজ্জা শরম নেই না-কী?”
নীহারিকার মৌনতা দেখে রূপল তেজী শ্বাস ফেলল। বিরক্তিকর গলায় বলল,
“বিড়বিড় না করে যা বলার বলুন। সময় নষ্ট হচ্ছে!”
গলা ঝাঁকালো নীহারিকা। এবার লাজ লজ্জা বিসর্জন দিয়ে সে পিয়াসার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,
“আচ্ছা ভাবি আপনি কীভাবে বুঝলেন আপনি প্রেগনেন্ট? প্রেগনেন্সি টেস্ট করিয়েছিলেন?”
পিয়াসা মাথা নিচু করে নীহারিকাকে বেশ অবাক করে দিয়ে বলল,
“না।”
“হোয়াট? না মানে? তাহলে বুঝলেন কীভাবে আপনি প্রেগনেন্ট?”
“লক্ষ্মণ দেখে!”
“লক্ষ্মণ দেখে মানে? আপনি যদি ঐ ছেলেটার সাথে ইন্টিমেট না-ই হয়ে থাকেন তাহলে এভাবে হঠাৎ লক্ষ্মণ দেখে আপনি কীভাবে শিওর হলেন আপনি প্রেগনেন্ট?”
“কয়েকদিন যাবত গাঁ গোলাচ্ছিল আমার। বমি বমি ভাব হচ্ছিল, মাথা ঘুরছিল, অবসন্ন লাগছিল, পিরিয়ডও প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ। সেই থেকে ধারণা করছিলাম আমি প্রেগনেন্ট! তাই প্রেগনেন্সি টেস্ট করানোর সাহসটা ঠিক হয়ে ওঠে নি। তবে আজ কেন জানিনা আমি চুপ করে থাকতে পারলাম না। ভেতরের ভয়টা সবাইকে বলেই দিলাম!”
#চলবে..?