ফেরারি প্রেম পর্ব -৬

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

“একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ম্যাম! সব কষ্ট সয়ে যাবে। এই কঙ্কালের মত পো’ড়া দেহ নিয়ে আমি রূপলকে কীভাবে গ্রহণ করি বলুন?”

সুহাসিনীর অশ্রুভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে মনের ক্ষতটা বুঝতে বেশী বেগ পেতে হলোনা মিস চারুলতা সেনের! তব্ধ শ্বাস ফেলে তিনি আ’হ’ত গলায় বললেন,

“কী ছিল সেদিন গুলো! প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত রূপকথার কোনো গল্প বলেই মনে হতো। বড্ড মিস করি জানো? তোমার সেই হাসোজ্জল, মায়াবী, প্রাণবন্ত দেখতে মুখটিকে! তোমার জন্য রূপলের সেই প্রেম পাগলামি! তোমাদের মাখো মাখো ভালোবাসা। আমার চোখের সামনেই তো তোমাদের প্রণয় থেকে বিচ্ছেদ হলো! যদিও বিচ্ছেদটা একতরফা তোমার দিক থেকেই হয়েছিল!”

“প্লিজ ম্যাম, এখন এসব বাদ দিন। যেকোনো মুহূর্তে রূপল চলে আসতে পারে। প্লিজ তাকে গেইটের ভেতর ঢুকতে দিবেন না! ইট’স মাই হাম্বল রিকুয়েস্ট।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিস চারুলতা সেন বললেন,

“তুমি চিন্তা করো না সুহাসিনী। তুমি যে বিচ্ছেদের দেয়াল তৈরী করে দিয়েছ সেই দেয়াল ভেঙে রূপল এই জন্মে তোমার কাছে আসতে পারবে না!”

ভেতরটা ধক করে কেঁপে উঠল সুহাসিনীর। শরীরের ক্ষত তাকে যতটা না কষ্ট দিচ্ছে তার চেয়ে বরং বেশী কষ্ট দিচ্ছে তাদের বিচ্ছেদ! ভেতরে ভেতরে কেঁদে ম’রে সুহাসিনী মিনিমিনিয়ে বলল,

“আমি বাঁচবই বা কতদিন ম্যাম? এই কয়েকদিনে আমি রূপলকে আর দুর্বল করতে চাইনা! আমি চাই আমার রূপল ভালো থাকুক। আমার সাথে অযথাই আর জড়িয়ে না পড়ুক। বেঁচে থাকতেই আমি রূপলকে আমাদের দূরত্বটা বুঝিয়ে দিতে চাই। যেন মৃ’ত্যু’র পর রূপল নিজেকে সামলে নিতে পারে।”

_________________________

রাত দশটার মধ্যেই পিয়াসার অপারেশন সাকসেস ফুল হলো। তাকে কেবিনে শিফট করা হলো। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা তাকে অবজারভেশনে রাখা হলো। হসপিটালে শুধু রয়ে গেল রূপল, নীহারিকা এবং নিহাল৷ বাড়ির সব মুরুব্বিদের এক প্রকার জোর করেই বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। যদিও নীহারিকা হসপিটালে থাকতে চায়নি তবে নিহাল তাকে রেখে দিলো পিয়াসার সুবিধা অসুবিধা বুঝার জন্য। তাদের সাথে একজন মেয়ে থাকাটা ভীষণ জরুরী।

রাত এগারোটা বাজতেই তারা হসপিটালের পাশের রেস্টুরেন্ট থেকে রাতের খাবার খেয়ে এলো। হসপিটালে ফিরতেই রীহারিকার প্রচণ্ড ঘুম পেয়ে গেল! চোখ টেনে যেন মেলতে পারছিল না সে। রাত একটার আগে কেউ কেবিনে ঢুকতে পারবেনা বলে কড়া নির্দেশ দিয়ে গেলেন ডক্টর। সেই নির্দেশ মোতাবেক তারা কেউ কেবিনের ভেতর ঢুকতে পারছিল না। কেবিনের সামনেই সবাই হাঁটাহাঁটি করছিল। তবে নীহারিকা জায়গা খুঁজছিল কোথায় সে একটু আরামে বসে চোখ দুটো লাগাতে পারবে! শেষ অবধি সে জায়গা খুঁজে না পেয়ে কেবিনের সামনে পেতে রাখা চেয়ারগুলোকে একসাথে টেনে এনে চেয়ারে পা মেলে বসে তার পেছনে থাকা দেয়ালে হেলান দিয়ে নিশ্চিন্তে চোখ দুটো বুজে নিলো!

এভাবে প্রায় পনেরো মিনিট কেটে যাওয়ার পর রূপল এবং নিহাল হাঁটা থামালো। তাদেরও পা দুটো ধরে আসছিল৷ এক্ষণি বসতে হবে তাদের। এদিকে নীহারিকা সবগুলো চেয়ারে পা মেলে আরামে ঘুমিয়ে আছে। নীহারিকার কাণ্ড দেখে হালকা হেসে নিহাল দুই তিনবার নীহারিকার নাম ধরে ডাক দিলো। নড়েচড়ে নীহারিকা আবারও ঘুমিয়ে পড়ল। ব্যাপারটায় বেশ বিরক্তবোধ করল রূপল! তেড়ে এসে সে উচ্চশব্দে নীহারিকাকে বলল,

“এই উঠুন। এটা কী ঘুমানোর জায়গা?”

সঙ্গে সঙ্গেই থতমতিয়ে ঘুম থেকে ওঠে পড়ল নীহারিকা! আঁতকে উঠা চোখে সে রাগী রূপলের দিকে তাকালো। নির্জীব গলায় বলল,

“কী হয়েছে?”

“আপনার কী মুরগির সাথে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস?”

“মানে?”

“এগারোটা না বাজতেই কীসের ঘুম?”

“হ্যাঁ৷ আমি মুরগির সাথেই ঘুমাই। এতে আপনার সমস্যা কী?”

কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বেশ তেঁতে গেল নীহারিকা! মুখটা কালো করে সে জায়গা থেকে ওঠে বারান্দায় চলে গেল। দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ জোড়া আবারও বুজে নিলো। তবে আগের মত আর ঘুম চোখে ধরা দিলোনা তার। রূপলের উপর রেগে ওঠে নীহারিকা রূপলকে লক্ষ্য করে বিড়বিড়িয়ে বলল,

“গম্ভাট কোথাকার! কাঁচা ঘুমটা ভেঙে দিলো। ঠাঁই লাড়া এমনিতেও ঘুম হয়না আমার। গতকাল রাতেও ঘুমুতে পারিনি। বিয়ে উপলক্ষে তো গত দুই তিনদিন ঘুমই নেই আমার! আজও মনে হচ্ছে ঘুমুতে পারব না। ধ্যাত! ভাল্লাগেনা।”

কথাগুলো বলেও শেষ করতে পারলনা নীহারিকা! অমনি রূপল ঝড়ের বেগে ছুটে এলো বারান্দায়। পাগলের মত সে কিছু একটা খুঁজতে লাগল। দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো মহমূল্যবান জিনিস হারিয়ে ফেলেছে সে। যা খুঁজে না পেলে দমটাই তার বন্ধ হয়ে যাবে। রূপলের এই পাগলামি দেখে নীহারিকা রূপলের পাশে এসে দাঁড়ালো। চিন্তিত গলায় বলল,

“কী খুঁজছেন?”

কর্কশ গলায় রূপল বলল,

“কিছুনা। আপনি ঘুমান যান।”

“ঘুম তো ভেঙে দিলেন। আর ঘুমাব কীভাবে?”

পেরেশান হয়ে রূপল মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। অস্থির চোখে নীহারিকার দিকে তাকালো। রুদ্ধশ্বাস ফেলে বলল,

“একটা ছবি খুঁজে পাচ্ছিনা। মনে হচ্ছে এখানেই পড়েছে।”

“ছবিটা কী কোনো মেয়ের?”

“হ্যাঁ৷ আপনি পেয়েছেন?”

“হ্যাঁ। তবে…..

উত্তেজিত হয়ে রূপল বলল,

“তবে কী?”

“ছবিটা কোথায় রেখেছি মনে নেই!”

অমনি তেজী রূপ ধারণ করল রূপল! চোখ লাল করে নীহারিকার দিকে তাকালো। ঝাঁজালো গলায় বলল,

“ইউ ই’ডি’য়ট! মনে করুন কোথায় রেখেছেন!”

রূপলের এই ভ’য়’ঙ্কর রূপ দেখে নীহারিকা শুকনো ঢোঁক গিলে প্রশ্ন ছুড়ল,

“মেয়েটি কে মিস্টার রূপল? যার জন্য আপনি আমার ই’ডি’য়’ট বললেন?”

ক্ষোভে আ’গুন হয়ে রূপল নীহারিকার দিকে আরও একটু এগিয়ে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“এত কুয়েশ্চন না করে ছবিটা ইমিডিয়েটলি খুঁজে দিন আমাকে! না হয় কিন্তু ভালো হবেনা।”

ভয়ে সিঁটিয়ে ওঠে নীহারিকা তার ফোনের কভারে লুকিয়ে রাখা মেয়েটির ছবিটি বের করে কাঁপা কাঁপা হাতে রূপলের দিকে এগিয়ে দিলো। কম্পিত গলায় বলল,

“হারিয়ে যাবে ভেবে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম।”

ছবিটির দিকে তাকিয়ে রূপল স্বস্তির শ্বাস ফেলল। চোখ বুজে ছবিটিকে রূপল তার বুকের মাঝে চেপে ধরল। স্বস্তিকর গলায় বলল,

“থ্যাংকস গড।”

ভীতিকর গলায় নীহারিকা প্রশ্ন ছুড়ল,

“মেয়েটি কে মিস্টার রূপল? আমি কী জানতে পারি?”

“না পারেন না।”

বলেই রূপল নীহারিকার সামনে থেকে প্রস্থান নিলো। রূপলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে নীহারিকা কিছুটা উচ্চ আওয়াজেই বলল,

“বাই দ্যা ওয়ে মিস্টার রূপল। মেয়েটি দেখতে কিন্তু অনেক সুন্দর! উপর ওয়ালা যেন তাঁর সৃষ্টির সমস্ত সৌন্দর্য মেয়েটির অঙ্গে ঢেলে দিয়েছে!”

কিছু মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ালো রূপল! পিছু ঘুরে নীহারিকার দিকে তাকালো৷ কেমন যেন হেয় হেসে বলল,

“আল্লাহ্ এমন সৌন্দর্য কাউকে না দিক যে সৌন্দর্য আল্লাহ্ দিয়ে আবারও কেড়ে নেয়!”

_____________________________

গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে হৃদি। মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে সবিতা আস্তে ধীরে বিছানা থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিলো। গভীর মনোযোগ দিয়ে কারো নাম্বারে ডায়াল করল সে। ঐ পাশ থেকেও কলটি তুলতে বেশী দেরি হলোনা। উত্তেজিত গলায় সবিতা বলল,

“সুহাসিনী কেমন আছে ম্যাম?”

সুহাসিনীকে ঔষধ খাইয়ে চারুলতা সেন মাত্র তার ঘরে এলেন। ব্যস্ত গলায় তিনি সবিতাকে বললেন,

“মোটামুটি ভালো। মাত্র ঔষধ খাইয়ে এলাম।”

“আমি কাল আসছি ম্যাম। হৃদি অনেক বাহানা ধরেছে সুহাসিনীকে দেখবে। তার মাকে দেখবে!”

“সেতো খুব ভালো খবর। সুহাসিনীও অনেকদিন ধরে হৃদিকে দেখবে দেখবে বলছে।”

অমনি সবিতার ফ্ল্যাটের কলিংবেল বেজে উঠল। সঙ্গে সঙ্গেই সে উত্তেজিত গলায় বলল,

“আমি এখন রাখছি ম্যাম। হয়ত সাফোয়ান এসেছে।”

“কেন? তোমাকে মা’র’তে এসেছে?”

“এ আবার নতুন কী ম্যাম? রোজই তো হচ্ছে।”

“মেয়ের সামনেও তোমার গাঁয়ে হাত তুলে?”

“মাতালের আবার বাচবিচার আছে?”

“তবুও তো মেয়েটা কেবল বাবা বাবা করে!”

“রক্তের টান ম্যাম! তাই হয়ত বাবার প্রতি এত ভালোবাসা তার।”

“আচ্ছা রাখো। রা’ক্ষ’সটাকে সামলাও।”

#চলবে..?

[গত দুইদিন ধরে আমার আম্মু খুব অসুস্থ। আমিও হুট করে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তাই অসুস্থতা নিয়ে গল্প লিখাটা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। আজও খুব কম সময় হাতে নিয়ে গল্পটা লিখা। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here