#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_১০
#নিশাত_জাহান_নিশি
“সেদিন আমার চাকরীর ইন্টারভিউ ছিল। রাস্তায় বাইক নিয়ে বের হতেই হঠাৎ একটি বাচ্চা মেয়ে এসে আমার রিকশার নিচে পড়ল! যদিও এই এ’ক্সি’ডে’ন্টে বাচ্চাটির তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তবে হাত-পায়ের অনেক অংশ কেটে ছিড়ে গিয়েছিল। সেদিন প্রথম বারের মত আমি সুহাসিনীকে দেখি! আমার সুহাসিনীকে দেখি!”
সুহাসিনীর নামটি রূপলের মুখ থেকে উচ্চারিত হতেই রূপলের চোখমুখ থেকে মুহূর্তেই বিষন্নতা ভাবটি মিইয়ে এলো। অনিন্দ্য এক প্রফুল্ল ভাব ছেঁয়ে গেল তার বিস্তীর্ণ মুখমণ্ডল জুড়ে। আকর্ষিত হয়ে নীহারিকা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রূপলের দিকে! আচমকাই সম্মোহিত হয়ে গেল সে রূপলের প্রতি। দু-এক সেকেন্ড দম নিয়ে রূপল পুনরায় বলল,
“প্রথম দেখাতেই প্রচণ্ড ভালো লেগে যায় আমার সুহাসিনীকে৷ আর সেদিন থেকে-ই আমি সুহাসিনীকে ফলো করতে শুরু করি। তার সমস্ত ডিটেইলস জোগাড় করি। জানতে পারি সে ঐ এনজিওতে জব করে। বাচ্চা মেয়েটি তার বোনের মেয়ে। পরিবারে সে, তার বড়ো বোন, দুলাভাই এবং বোনের মেয়ে ছাড়া অতিরিক্ত আর কেউ নেই। এরপর থেকে ফোনে, কলে, মেসেজে আমি তাকে নানাভাবেবিরক্ত করতে শুরু করি! এমনকি এনজিওতে গিয়েও তাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করি! এনজিওর প্রতিটি সদস্য জেনে যায় আমি সুহাসিনীকে ভালোবাসি। দীর্ঘ তিনমাস তার পেছনে ঘুরার পর অবশেষে আমি তার মন পাই! তাও আবার সবিতা এবং চারুলতা ম্যামের চাপে পড়ে সুহাসিনী আমার সাথে রিলেশনে যেতে বাধ্য হয়। জীবনের সবচেয়ে ভালো মুহূর্তগুলো আমি তার সাথে পাড় করতে শুরু করি। প্রতিদিন নিয়ম করে তার প্রেমে পরতে শুরু করি। কী যে এক মোহ মায়ায় সে আমাকে জড়িয়ে রেখেছিল তা আমি বুঝতেও পারিনি। সেই মায়ার নেশায় বুদ হয়ে দীর্ঘ এক বছর কেটে যায় আমাদের সম্পর্কের। এরমধ্যেই বাবার অফিসের কাজে একদিন আমি ঢাকার বাইরে যাই। ওখান থেকে কাজ শেষ করে আসতে আসতে প্রায় সপ্তাহ খানিকের মত লেগে যায়। ঢাকায় ফিরেই যখন আমি সুহাসিনীর সাথে দেখা করতে যাই তখনই জানতে পারি আমার সুহাসিনী…..
বলেই থেমে গেল রূপল! চোখ থেকে তার আগুনের ফুলকি বের হচ্ছিল। শরীর থেকে অকাতরে ঘাম ঝরছিল। কেমন যেন অস্থির অস্থির করছিল। রূপলের এই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে নীহারিকা কেমন ঘাবড়ে উঠল। শুকনো ঢোঁক গিলে বলল,
“এরপর? এরপর কী হয়েছিল মিস্টার রূপল?”
শ্বাস রুদ্ধকর গলায় রূপল বলল,
“এসে শুনি সুহাসিনী হসপিটালে ভর্তি। সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়ে তার সমস্ত শরীর পুড়ে গেছে! আর সেজন্যই বিগত দুদিন ধরে আমি তাকে ফোনে পাচ্ছিলাম না। পাগলের মত আমি দৌড়ে গেলাম হসপিটালে। গিয়েও লাভ হয়নি এতে! সুহাসিনী তার পরিবারের সবাইকে বলে দিয়েছিল আমাকে যেন তার কেবিনে ঢুকতে দেওয়া না হয়! আমি কিছুতেই পারছিলাম না সুহাসিনীর সাথে দেখা করতে৷ বিশ্বাস করুন আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম তার সাথে একটিবার দেখা করার জন্য। কিন্তু কেউ আমাকে সেই সুযোগটি করে দেয়নি। সেদিন থেকে আজ অবধি মোটামুটি ছয়মাস হয়ে গেল সুহাসিনীর সাথে আমার দেখা হয়না, কথা হয়না। ঠিক বুঝাতে পারবনা আমার ভেতরের অবস্থাটা। যার সাথে একটা দিন কথা না বললে সেই দিনটাই আমার খারাপ যেত, যাকে দিনে একটা বার চোখের দেখা না দেখলে আমার ঘুম হতোনা সেই মানুষটাকে ছাড়া আমি ছয়টা মাস কাটিয়ে দিয়েছি! এবার বুঝুন আমি ভেতর থেকে কতটা নিষ্প্রাণ হয়ে গেছি।”
সবকিছু শুনে থ হয়ে গেল নীহারিকা। বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে রূপলের দিকে তাকালো। চমকিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“আগুন লেগেছিল কীভাবে?”
“সুহাসিনী এখনও স্পষ্টভাবে আমাকে কিছু জানায়নি। তার সাথে তো আমার কথাই হয়নি। তবে যতটুকু আঁচ করতে পারছি এই ষড়যন্ত্রের পেছনে সাফোয়ান ভাইয়ার হাত আছে। সুহাসিনীর দুলাভাইয়ার।”
“সাফোয়ান ভাই তাহলে সুহাসিনীর দুলাভাই?”
“হুম। সেই জের ধরেই সাফোয়ান আমার বোনের নামে কলঙ্ক ছড়াতে চেয়েছিল। আমাকে এবং আমার পরিবারের ক্ষতি করতে চেয়েছিল।”
“তাহলে তো যতদ্রুত সম্ভব সাফোয়ান ভাইয়ার বিরুদ্ধে আপনার স্টেপ নেওয়া উচিৎ।”
“সমস্যাটা তো সেখানেই। সুহাসিনী কিছুতেই মুখ খুলতে চাইছেনা! আগুনটা সেদিন কীভাবে ধরেছিল তার কিছুই ক্লিয়ারলি বলছেনা। যে ভিক্টিম তার স্টেটমেন্ট ছাড়া তো কিছুই করা যাচ্ছেনা।”
“কিন্তু কেন? দোষীকে আড়াল করে সুহাসিনীর কী লাভ হচ্ছে? তার কী কোনো দুর্বল জায়গা আছে?”
“আই থিংক হৃদিকে নিয়ে কোনো ইস্যু আছে! সত্যিটা জানার জন্য হলেও সুহাসিনীর মুখোমুখি আমাকে হতে হবে।”
“ওকে। এখানে আপনাকে আমি কীভাবে হেল্প করতে পারি?”
“আমি চাই আপনি সুহাসিনীর সাথে দেখা করুন। তার সাথে কথা বলুন। তার সাথে মিশুন। তবে সেটা আমার পরিচিত হিসেবে নয়! বরং তার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে!”
কিছু সময় ভেবে সুহাসিনী রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কিন্তু সে কী আমার সাথে মিশতে চাইবে? দেখা করতে চাইবে আমার সাথে?”
কাতর গলায় রূপল বলল,
“চেষ্টা করে তো দেখুন।”
রূপলের আবদার ফেলতে পারল না নীহারিকা! দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সে রূপলের ভরাট চোখে তাকিয়ে বলল,
“কাল দেখা করি?”
“আজ সম্ভব না তাইনা?”
“রাত হয়ে গেল তো! তাছাড়া আমারও তো প্রিপারেশন লাগবে তার সাথে দেখা করার, কথা বলার। কীভাবে কথা বললে সে আমার সাথে ফ্রি হবে সে বিষয়েও একটু ভাবতে হবে।”
“আজ তাহলে উঠি?”
“নাশতা করে যান। না হয় আম্মু কষ্ট পাবে।”
“পানি খেলাম তো! খালি মুখে গেলে আন্টি কষ্ট পেতেন।”
বলেই রূপল বসা থেকে ওঠে দাড়ালো। হনহনিয়ে নীহারিকাদের বাড়ি থেকে প্রস্থান নিলো। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নীহারিকা পেছন থেকে রূপলকে দেখছিল। কেমন যেন ভবঘুরে টাইপ লোকটা! ছেড়া পাঞ্জাবি পড়ে এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে! নিজের দিকে কোনো খেয়ালই নেই। এমন উদাসীন লোকদের দেখলে নীহারিকার মায়াই হয়। তাদের ভেতরে জমতে থাকা কষ্টগুলো সে উপলব্ধি করতে পারে। কারণ একটা সময় সে ও এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে!
রূপল রাস্তায় ওঠে যেতেই নীহারিকা তাদের ড্রয়িং রুমে চলে গেল। সকাল থেকে অভুক্ত সে। এখনি কিছু না খেলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে। রাস্তায় ওঠে বাইক স্টার্ট করে রূপল অনেকখানি পথ যেতেই খেয়াল করল পেছন থেকে একটা বাইক তাকে ফলো করছে! বিষয়টা বুঝতে পেরে রূপল হুট করে বাইকটা থামিয়ে দিলো। অমনি মুহূর্তের মধ্যেই পেছন থেকে বাইকটি এসে রূপলের বাঁ হাতের ঠিক কব্জিতে একটা পোঁচ মেরে চলে গেল! যদিও পোঁচটা তার হাতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি করেনি। তবে পাঞ্জাবিটা প্রায় ছিড়ে গেল। পাঞ্জাবির উপর দিয়ে পোঁচটা গেল! বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল রূপল। শো শো বেগে ছুটতে থাকা বাইকটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“এই দাড়া। কে তোরা?”
বলেই রূপল তার বাইকে ওঠে গেল। তাকে আক্রমন করা বাইকটিকে ফলো করতে লাগল। কিছুদূর যেতেই বাইকটি হঠাৎ থেমে গেল! সুযোগ বুঝে রূপল তার বাইকটিকে ঘুরিয়ে ঐ বাইকটির সামনে গিয়ে থামালো। বাইক থেকে নেমে সে ছেলে দুটিকে দেখে অবাক হয়ে গেল! সচকিত গলায় বলল,
“এই তোরা এখানে? তোরা আমাকে অ্যাটাক করেছিলি?”
#চলবে…?
[ইনকোর্স পরীক্ষা চলছে আমার। প্রতিদিন তিনটা করে এক্সাম। তাই পড়ালেখা সামলে প্রতিদিন গল্প দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। রি-চেইক করা হয়নি। ভুৰ ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]