#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_২৪
#নিশাত_জাহান_নিশি
“আরে হইছে হইছে ভয় পাইছি। এবার তো চোখ দুইটা নিচে নামান!”
নীহারিকার ভীতসন্ত্রস্ত ভাবভঙ্গি এবং টলমল কথাবার্তা শুনে রূপলের মধ্যে আলাদা একটা ভাবসাব চলে এলো! সে যে চাইলেই যে কারো মনে তাকে নিয়ে ভয় ঢুকাতে পারে সেই আত্মবিশ্বাস তার মধ্যে তৈরী হতে লাগল! রূপলের সেই আত্নবিশ্বাসকে ক্ষণিকের মধ্যে ভুল প্রমাণ করে দিলো নীহারিকা! রূপলের ভাবপূর্ণ চোখ দুটিতে সে ভাবলেস দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আচমকা ফিক করে হেসে দিলো! ব্যাপারটায় রূপল রীতিমত চমকে গেল। হটকারি দৃষ্টি ফেলল সে নীহারিকার দিকে। আগ্রাসী গলায় শুধালো,
“এই আপনি আবারও হাসছেন?”
“হাসির কারণটা জানতে পারলে আপনি নিজেও হাসবেন।”
“হোয়াট? কী কারণ?”
“এটা সিক্রেট। হৃদির সামনে বলা যাবেনা!”
“কী এমন সিক্রেট এটা যে হৃদির সামনে বলা যাবেনা?”
দুষ্টু হৃদি চোখ পাকিয়ে নীহারিকার দিকে তাকিয়ে রইল! চুপিসারে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সে সব কথা গিলছিল। হৃদির ভাবমূর্তি বুঝতে পেরে অমনি নীহারিকা গলার আওয়াজটা কিঞ্চিৎ কমিয়ে আনল। মিনমিনে সুরে রূপলকে বলল,
“আসুন কানে কানে বলি! হৃদি শুনতে পারলে আমাদের পঁচাবে!”
জানার আগ্রহ থেকে রূপলও তার কঠোরতা ভুলে নীহারিকার কথামত তার কানটা নীহারিকার দিকে এগিয়ে দিলো! তারও কেমন যেন কৌতূহল হচ্ছিল! নীহারিকার মত সেও বাচ্চামো করল! রূপলের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে নীহারিকা বলল,
“ঐসময় আপনার যখন মাথাটা ঘুরে আসছিল না? তখন তো আপনার তেমন হুশ জ্ঞান ছিলনা। তখনি আমরা দুজনে ধপাস করে মেঝেতে পরে গিয়েছিলাম!”
অমনি রূপল চ্যাচিয়ে ওঠে বলল,
“হোয়াট? আপনার গাঁয়ে পরেছিলাম?’
হৃদি কান খাঁড়া করে সব শুনে রূপলের দিকে প্রবল দৃষ্টিতে তাকালো। পুরোপুরি বিষয়টা সে বুঝতে পারেনি বিধায় রূপলের রিয়েকশন সে বুঝতে পারছিলনা। হৃদির আগ্রহ দেখে নীহারিকা বিরক্তিকর গলায় রূপলকে বলল,
“ইশ! দেখো, কীভাবে ষাঁড়ের মত চ্যাচাচ্ছে! মেয়েটা সব বুঝে ফেলবে তো। তখন তো আরও পঁচানি খেতে হবে। দেখি কাছে আসুন আবারও বলছি।”
বিমর্ষ হয়ে রূপল আবারও নীহারিকার কথামত নীহারিকার দিকে এগিয়ে গেল। পূর্বের তুলনায় নীহারিকা আরও মিনমিনিয়ে বলল,
“হিউজ কেজি ওজনের একটা হাতি মানব যদি আমার গাঁয়ের ওপর পরত তাহলে কী আমি আর আস্ত থাকতাম? পিষে যেতাম না? আল্লাহ্ হাতে ধরে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন! হ্যাঁ সত্যি বলছি। আপনি আমার গাঁয়ের উপর পরেননি। বরং আমার পাশেই ছিটকে পরেছিলেন।”
অমনি রূপল তেতে উঠল! চোখ লাল করে সে নীহারিকার দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“কী বললেন আপনি? আমি হাতি মানব?”
“না মানে ঐ সময়ে আমার ঐটাই মনে হয়েছিল আর কী! টেনে তুলতে পারছিলাম না তো, তাই!”
বলেই নীহারিকা অট্ট হেসে হৃদির হাত ধরে এক ছুটে রূপলের রুম থেকে পালালো। রাগে রি রি করে উঠল রূপল। নীহারিকার যাওয়ার পথে তাকিয়ে সে ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। ঝাঁজালো গলায় বলল,
“ইউ ইডিয়ট গার্ল। আমাকে ইনসাল্ট করা তাইনা? সুযোগে পাই একবার আমিও আমার আসল রূপ দেখাব!”
হৃদিকে নিয়ে নীহারিকা বাড়ির ড্রয়িংরুমে চলে এলো। কৌতূহল যেন কিছুতেই কমছেনা হৃদির। সে ঘ্যান ঘ্যান করে নীহারিকাকে জিজ্ঞেস করল,
“এই আন্টি বলো না? তোমরা কী বলছিলে গো?”
“না বলব না। কারণ তুমি অনেক দুষ্টু। জায়গায় জায়গায় প্রচার করে বেড়াবে এই খবর। তাই তোমাকে কিছু বলা যাবেনা।”
জোর করে হৃদিকে সবিতার রুমে রেখে এসে নীহারিকা ড্রয়িংরুমে পিয়াসার পাশে এসে বসল। প্লেট থেকে একটি আপেল হাতে নিয়ে নীহারিকা আপেলটিতে কামড় বসালো। পিয়াসার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভাবি আমরা কখন রওনা হব? রাত তো বাড়তে চলল।”
শ্বশুড় বাড়িতে যাওয়ার জন্য কোনো হেলদুল নেই নীহারিকার। আপেল চিবুতে চিবুতে সে ভাবশূণ্য গলায় বলল,
“আমি আজ যাবনা বাপু! আগে থেকেই বলে দিলাম তোমাকে।”
“মানে কী ভাবি? তুমিতো আম্মু আব্বুকে এই বলে বিদায় দিয়েছিলে যে, সন্ধ্যার পর তুমি আর আমি বাড়ি ফিরে যাব। ভাইয়াকেও তাই বলেছিলে। এখন হঠাৎ মত পাল্টাচ্ছ কেন?”
“বলেছিলাম কিন্তু এখন আর ভালো লাগছেনা! তুমিও আমার সাথে থেকে যাও। কিচ্ছু হবেনা।”
“আরে না ভাবি। কী বলো এসব? আম্মু আব্বু বাড়িতে একা থাকবে না-কী?”
“তোমার ভাইয়া আছে তো! কিছু হবেনা।”
“না না ভাবি। ভাইয়া খুব রাগ করবে। তুমি প্লিজ বাড়ি চলো। আমারও এইখানে আর মন টিকছেনা।”
পিয়াসা বেশ খরতর গলায় বলে উঠল,
“করলে করুক। আমার কী? এই লোকের সাথে আমার কোনো কথা নেই। জোচ্চোর লোক একটা! এই লোকটাকে বিয়ে করাটাই আমার জীবনের মস্ত বড়ো ভুল হয়েছে!”
অমনি নীহারিকা ছ্যাত করে উঠল! অবশ্য করাটাই স্বাভাবিক। হাজার হোক বোনের সামনে ভাইকে কেউ অপমান করতে পারে? হোক সে ভাইয়ের বউ কিংবা কাছের কেউ এক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেওয়া যায়না। তবুও নীহারিকা ভদ্রতার খাতিরে নিজের রাগকে শান্ত করল! গলায় গম্ভীরতা এনে বলল,
“স্বামীকে এভাবে বলা ঠিকনা ভাবি! ভুল সঠিক যদি তুমি বুঝতে তাহলে আমার সামনে আমার ভাইকে এভাবে অপমান করতে পারতেনা! আমি জানি, হয়ত আমার ভাইয়াকে মেনে নিতে তোমার অনেকটা-ই সমস্যা হচ্ছে। তবে আস্তে ধীরে ভাইয়াকে তোমার মানিয়ে নেওয়া উচিৎ! বিয়ে মানুষের জীবনে একটাই হয় ভাবি। নিজের ইচ্ছেতে হোক বা অনিচ্ছেতে। সবারই উচিৎ তাদের জীবনসঙ্গীকে প্রাধান্য দেওয়া, গুরুত্ব দেওয়া, সম্মান দেওয়া। ঝগড়াঝাঁটি হলেও একসাথে নিজেদের মানিয়ে নেওয়া। আগে যা হয়েছে সব ভুলে যাও ভাবি। যে এখন তোমার জীবনে আছে তাকে আঁকড়ে ধরো বাঁচতে শিখো। সময় থাকতে মূল্য দিতে শিখো। তুমি যদি আমার ভাইকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো, তবে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আর কিছু না হলেও জীবনভর তোমার ভালোবাসার কোনো কমতি হবেনা। অথচ এই ভালোবাসার জন্যই মানুষ কত কাতর।”
কথাগুলো বলেই নীহারিকা পিয়াসার পাশ থেকে ওঠে গেল। মুখ ফুলিয়ে পিয়াসা মাথাটা নুইয়ে রইল। নীহারিকার কথাগুলো তার ঘুনাক্ষরেও পছন্দ হলোনা। গাঁয়ের জামাটা ঠিক করে নীহারিকা ভারী গলায় পিয়াসাকে বলল,
“ভাবি তুমি হয়ত বয়সে আমার সমবয়সী হবে নয়ত জোরে গেলে আমার থেকে এক বছরের বড়ো হবে। তবে তোমার মধ্যে এখনও ঐ পরিমাণ ম্যাচিউরিটি আসেনি, যে পরিমাণ ম্যাচিউরিটি আসা দরকার ছিল। বোকাসোকা স্বভাবটা এখনও তোমার রয়ে গেছে। পরিস্থিতি পরিবেশ বুঝে কথা বলার অভিজ্ঞতাও এখনও হয়নি তোমার! হয়ত ছোটো মুখে অনেক বড়ো কথা বলে ফেলেছি। তবে এটাই সত্যি! আমি আশা করব তুমি খুব শীঘ্রই নিজের স্বভাব পাল্টে নিবে!”
নীহারিকার প্রতিটি কথা পিয়াসার বেশ গাঁয়ে লাগল! চোখ রাঙিয়ে সে নীহারিকাকে বলল,
“মুখ ফসকে না হয় দুই একটা কথা বলেই ফেলেছি তোমার ভাইয়াকে। এই নিয়ে এত কথা শুনানো লাগে?”
হেয়ো হাসল নীহারিকা! পুনরায় পিয়াসাকে বুঝিয়ে বলল,
“এইযে বললাম তোমার মধ্যে এখনও ম্যাচিউরিটি আসেনি! আবারও তুমি এটা প্রমাণ করে দিলে। তোমার যেতে ইচ্ছে করছেনা সেটা তুমি আমাকে বুঝিয়ে বলতে পারতে। আমার ভাইয়াকে এর মধ্যে টেনে না আনলেই পারতে! যাই হোক, তোমার যেহেতু আজ যেতে ইচ্ছে করছেনা তুমি বরং থেকে যাও ভাবি। কাল বা পরশু চলে যেও। আমি একা বাড়ি চলে যেতে পারব। নিজের যত্ন নিও।”
সঙ্গে সঙ্গেই পিয়াসা জায়গা থেকে ওঠে দাড়ালো। আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সে ফর্মালিটি রক্ষা করার জন্য মনে ক্ষোভ রেখেই নীহারিকাকে বলল,
“এত রাতে তুমি একা বাড়ি যেতে পারবে? পরে তো তোমার ভাই আমাকে দোষাবে!”
“এত রাত কোথায় ভাবি? মাত্র তো আটটা বাজল। আমি ঠিক চলে যেতে পারব তুমি এই নিয়ে কোনে টেনশন করো না। আর ভাইয়া অযথা কাউকে দোষায় না! আগে শুনবে, বুঝবে তারপর প্রয়োজন হলে দোষাবে!”
রাশভারি গলায় পিয়াসা বলল,
“মাকে বলে যাও।”
রান্নাঘরে গেল নীহারিকা নাজনীন বেগমের কাছ থেকে বিদায় নিতে। তবে তিনি উল্টো ঝেড়ে দিলেন নীহারিকাকে! জোর করে তাকে রেখে দিলেন। বললেন, একসাথে কাল সকালে বাড়ি যাওয়ার জন্য। গুরুজনের নির্দেশ অমান্য করতে চায়নি নীহারিকা। তাই সে বাধ্য হয়ে রাজি হলো আজ রাতটা এই বাড়িতে থেকে যেতে। ভাবি এবং ননদের মধ্যে হওয়া কথা কাটাকাটির কিছুই জানতে পারলেন না তিনি! নিজেদের মধ্যেই রাগ চেপে রাখল তারা। নিহালকে ফোন করে নীহারিকা জানিয়ে দিলো আজ রাতে তারা বাড়ি ফিরতে পারবেনা। সকালের দিকে একসাথে বাড়ি ফিরবে তারা! কথা কাটাকাটির কথা নিহালকেও জানাল না নীহারিকা। শুধু বলল আজ রাতটা পিয়াসাকে ফোন করে বিরক্ত না করতে! নিহাল কারণ জানতে চাইলে নীহারিকা বলল, রাতুলের জন্য তার মন খারাপ! কান্নাকাটি করছে। পিয়াসার মনের অবস্থা খারাপ বলে নিহালও ফোন করে বিরক্ত করতে চাইল না পিয়াসাকে!
ডিনারের সময় হয়ে এলো। রাতে খাবার টেবিলে রূপল ও এলো। যদিও সবিতা এবং হৃদিকে নাজনীন বেগম পছন্দ করছেন না তবে তাদের খাওয়া দাওয়ায় তিনি কোনো কৃপণতা করছেন না! সমান ভাবে সবাইকে খেতে দিচ্ছেন। সবিতা ইলিশ মাছের কাটা বেছে হৃদিকে খাইয়ে দিচ্ছে। ইলিশ মাছটা হৃদির খুব পছন্দের। সে বেশ মজা করে খাবারটা খাচ্ছে। মাছটা শেষ হতেই হৃদি আবারও বসা থেকে ওঠে নাজনীন বেগমের কাছে দৌড়ে গেল। নাজনীন বেগমের কাপড়ের আঁচল টেনে ধরে সে আবদার সূচক গলায় বলল,
“দাদু দাদু। আমাকে আরও এক পিস মাছ দিবে?”
লজ্জায় সবিতার মাথা কাটা গেল! মেয়েটার এই অভ্যাস আর গেলনা। জিভ কেটে সে হৃদির দিতে তাকিয়ে রইল। হৃদির মুখে দাদু ডাকটি শুনে নাজনীন বেগম আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠলেন! ক্ষণিকের জন্য তিনি থমকে গেলেন। চোখ তুলে তিনি রূপলের দিকে তাকালেন। মৃদু হেসে রূপল তার মাকে বলল,
“নাতনী আবদার করেছে মা। দিয়ে দাও।”
অনুভূতিশূণ্য হয়ে নাজনীন বেগম আরও একটি ইলিশ মাছ হৃদির পাতে তুলে দিলেন! অমনি হৃদি খুশি হয়ে নাজনীন বেগমকে জড়িয়ে ধরল। উচ্ছাস ভরা গলায় বলল,
“থ্যাংক ইউ দাদু।”
হৃদির হাসোজ্জল মুখের দিকে তাকালেন নাজনীন বেগম। কম্পিত গলায় তার দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন,
“তোমাকে এই দাদু ডাকটা কে শিখিয়ে দিলো?”
“রূপল বাবা শিখিয়েছে।”
বলেই হৃদি আবারও খাবার খেতে লাগল। নাজনীন বেগম হৃদিকে বকেননি এই ভেবে সবিতা বেশ খুশি হলো। মিটিমিটি হেসে রূপল খাবার খাচ্ছে। উল্টোদিকে ফিরে নাজনীন বেগমও বিস্তর হাসলেন। তবে নিঃশব্দে। কাউকে না দেখিয়ে না শুনিয়ে! নীহারিকা নিজের মত করে অল্প একটু খেয়ে খাবার টেবিল ছেড়ে ওঠে গেল। ঘুমানোর জন্য তার রুমে চলে গেল। ব্যাপারটায় রূপলসহ নাজনীন বেগমও বেশ অবাক হলেন! পিয়াসা কোনো দিকে না তাকিয়ে শুধু খেয়েই যাচ্ছিল। নীহারিকার যাওয়ার পথে তাকিয়ে নাজনীন বেগম বললেন,
“মেয়েটা বাড়িতে যেতে পারলনা বলে কী এতটাই মন খারাপ করল যে খাবারটা ভালোভাবে না খেয়েই চলে গেল?”
পিয়াসা চুপ হয়ে রইল। জানে সত্যিটা বললে আজ তার বারোটা বাজবে! মা এবং ভাই মিলে তাকে একশ ঝারি দিবে। বকে ঝকে তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলবে! নীহারিকার বিষয়টা নিয়ে রূপল কথা বাড়াতে চাইলনা! এমনিতেই সে রেগে আছে নীহারিকার উপর। প্রসঙ্গ পাল্টে রূপল ব্যস্ত গলায় তার মাকে বলল,
“কাল একটু থানায় যেতে হবে আমার। দুইদিন পর তো তাদের কোটে তোলা হবে। সেই বিষয়ে উকিল ও পুলিশের সাথে কথা বলতে হবে।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নাজনীন বেগম। হাসফাস গলায় বললেন,
“ঠিক আছে। পারলে তোর বাবাকেও সাথে নিয়ে যাস। একা আর কতদিক সামলাবি?”
“বাবাকে কিছুতেই সাথে নেওয়া যাবেনা মা। রাতুল ভাইয়াকে দেখলে বাবা ইমোশনাল হয়ে যাবে! এসবের আর কোনো দরকার নেই। যা সামলানোর আমি একাই সামলাতে পারব।
___________________________________
রাতটা কোনোভাবে কাটিয়ে পরদিন সকালের নাশতা সেরেই নীহারিকা রওনা হয়ে গেলো তার বাড়ির উদ্দেশ্যে। পিয়াসা জেদ ধরে রইল আরও দুইদিন বেড়ানোর পর সে ঐ বাড়িতে যাবে! কেউ তাকে কিছু বুঝাতেই পারছিলনা। এমনকি তার মা নাজনিন বেগমও না। নীহারিকাও এই বিষয়ে তেমন মাথা ঘামালো না! পিয়াসাকে নিজের মত করে ছেড়ে দিলো। নাজনীন বেগম নত হয়ে নীহারিকাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি চলে যেতে বললেন! রূপলও এই সময় রেডি হয়ে থানার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছিলো। নীহারিকাকে রাস্তায় গাড়ির জন্য দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে স্লো মোশনে বাইকটা থামালো। ভাবলেস হয়ে সে সামনের দিকে তাকিয়ে নীহারিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“উঠুন। বাসার সামনে নামিয়ে দিচ্ছি।”
নীহারিকা শুনেও না শোনার ভান ধরল! সে এদিক ঐদিক তাকিয়ে গাড়ি খুঁজতে লাগল। কেউ একজন যে তার সামনে দাড়িয়ে তাকে ডাকছে সেদিকে যেন তার কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই! বিষয়টায় রূপল বেশ বিরক্তবোধ করল। ভ্রু যুগল কুঁচকে সে রাগান্বিত দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো। উগ্র মেজাজে বলল,
“ও হ্যালো? আমি এদিকে। আপনি এদিক ওদিক তাকিয়ে কী খুঁজছেন? আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছেন?”
অমনি নীহারিকা আকস্মিক দৃষ্টি ফেলল রূপলের দিকে। এমন একটা ভাব ধরল মনে হলো এইমাত্র সে রূপলকে দেখেছে! রীতিমত অপরিচিত ভাব নিয়ে নীহারিকা কিঞ্চিৎ নাটুকে সুরে বলল,
“হ্যা বলুন? আমাকেই বলছেন?”
নির্বোধ দৃষ্টি ফেলে রূপল নীহারিকার দিকে তাকালো! উজবুক গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“এমন একটা ভাব ধরছেন মনে হচ্ছে আমাকে চিনেন না? লাইফে ফার্স্ট টাইম দেখেছেন আমাকে?”
“ওহ্ হ্যা হ্যা মনে পরেছে! আমিতো আপনাকে চিনি! তা কেন ডাকছিলেন আমায়? অ্যানি প্রবলেম ভাইয়া?”
চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল রূপলের! তাজ্জব দৃষ্টিতে সে নীহারিকার দিকে তাকালো! মিনিট কয়েক সে একই দৃষ্টিতে নীহারিকাকে পর্যবেক্ষণ করল। অতঃপর ভ্রম কাটিয়ে ওঠে হটকারি গলায় শুধালো,
“এই আপনার হয়েছেটা কী? ভাইয়া ভাইয়া করছেন কাকে? এর আগে তো কখনও আমাকে ভাইয়া ডাকেননি!”
“ডাকিনি তো কী হয়েছে? এখন থেকে ডাকব! বয়সে যেহেতু আপনি আমার বড়ো, সো রেসপেক্ট ফুললি আমি আপনাকে ভাইয়া ডাকতেই পারি!”
মাথা ঠাণ্ডা করল রূপল। শান্ত গলায় নীহারিকাকে বলল,
“ওকে ফাইন। ভাইয়া ডাকুন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কথা হলো আপনার মাথায় হঠাৎ এসব রেসপেক্টের টেস্পেক্টের ভূতটা চাপল কীভাবে?”
বেশ ভেবেচিন্তে নীহারিকা বলল,
“কাল রাতে ইউটিউবে একটা বাংলা নাটক দেখলাম।”
“হ্যা তো?”
“নাটকটা ছিল বেয়াই বেয়াইনের প্রেম সম্পর্কিত নাটক! তাই ভাবলাম আপনিও যদি চান্স নিতে আসেন! তাই আগে থেকেই সতর্ক হয়ে গেলাম!”
অমনি রূপল তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল! বাইক স্টার্ট করে সে ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। নীহারিকার দিকে তেজী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“তারছেঁড়া মেয়ে কোথাকার!”
#চলবে…?