#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_১৮_
শিশির নিজের বিছানার উপর আধশোয়া হয়ে আছে। ভাবনায় মগ্ন শিশির। তার মা কি মেনে নেবে নাহ,, ছোয়াকে? মায়ের অবাধ্য হয়ে কখনোই ছোয়াকে বউ বানাবে নাহ শিশির। এই শিক্ষা সে পায় নি। মা-বাবার মতামত কে গুরুত্ব দিতে শিখেছে সে,, তার বাবা -মা সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে শিখিয়েছে।
এই প্রথম নিজের জন্য কিছু আশা করেছিলো শিশির,, সেইটাও কি সে পাবে নাহ? ছোয়াকে যে বলে এসেছে,, তার বউ বানিয়ে নিয়ে আসবে,, সেই কথারও কি মূল্য থাকবে নাহ? কিছুই ভালো লাগছে নাহ শিশিরের।
এমন সময় দরজার দিকে তাকাতেই দেখে আহিয়া রহমান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মাকে এরকম ভাবে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উঠে বসে শিশির। তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মা! তুমি ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে এসো।”
আহিয়া রহমান ভেতরে এসে শিশিরের পাশে বসে। তারপর শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” শিশির,, বাপ আমার! আমার উপর কষ্ট পেয়েছিস?”
শিশির হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” মা! কষ্ট কেন পাবো? তুমি তো আমার মা,, আর মায়ের উপর কি কষ্ট পাওয়া যায়?”
আহিয়া রহমান হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” জানিস শিশির? আমি নাহ খুব ভাগ্য করে তোর মতো সন্তান পেয়েছি। পৃথিবীতে হয়তো আমার মতো ভাগ্যবতী খুবই কম। যার কাছে তোর মতো একজন সন্তান আছে,, তার আর কি চাই?”
শিশির মাকে জড়িয়ে ধরে। আহিয়া রহমান শিশিরকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বলে ওঠে,
–” আমি ছোয়াকে এই বাড়ির বড় বউ করে আনতে চাই।”
আহিয়া রহমানের কথা শুনে চমকে সরে আসে শিশির। কি বলছে তার মা এইসব? ছোয়াকে এই বাড়ির বউ করে আনতে চায়? সত্যি? নাকি ভুল শুনছে সে? শিশিরকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহিয়া রহমান মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” কি হলো? বিশ্বাস হচ্ছে নাহ?”
শিশির অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” মা! সত্যি?”
আহিয়া রহমান সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যা সত্যি! তোর আব্বুকে সব কথাই বললাম, বুঝলি?”
কথাটাহ শুনে আরও চমকে উঠে শিশির। একটু ভয়ও পায়৷ ছোয়ার অতীত জানার পর মেনে নিবে তো তার বাবা? এই চিন্তা যেন সেকেন্ডের মাঝেই চলে আসে। শিশির হালকা কম্পিত কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” আব্বুকে বলেছো? আব্বু কি মেনে নিতে পারবে?”
আহিয়া রহমান হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” তোর আব্বুই তো আমাকে বোঝালো,, আমার ভুল টাহ ধরিয়ে দিলো। ছোয়াকে এই বাড়ির বউ বানানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলো। ছোয়ার অতীত যে একটা কুসংস্কার বয়ে এনেছে,, আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো।”
শিশির শান্তির একটা হাসি দেয়। আহিয়া রহমান আবারও বলে ওঠে,
–” চল,, আজ সন্ধ্যায় গিয়ে ছোয়ার মায়ের সাথে কথা বলে আসি।”
–” নাহ! মা! আজ নাহ। আগামীকাল ছোয়ার মেডিকেল এ্যাডমিশন এক্সাম টাহ শেষ হলে পরশু যাওয়া যাবে। আগে বোনের পরীক্ষা টাহ ভালো ভাবে শেষ হোক। আর সাঝকে এইসব ব্যাপারে আজ কিছু জানিও নাহ। তাহলে,, উত্তেজনায় পড়ায় সমস্যা হতে পারে।”
আহিয়া রহমান হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা! ঠিক আছে। তুই যা ভালো মনে করিস। আচ্ছা! আমি গেলাম। কিছু কাজ আছে।”
শিশির সম্মতিসূচক মাথা নাড়তেই আহিয়া রহমান চলে যায়। শিশিরের যেন এক অদ্ভুত শান্তি লাগছে। তার মা-বাবা সবাই তার ছোয়াকে মেনে নিচ্ছে,, এর থেকে শান্তির আর কি হতে পারে? শিশির মনে মনে বলে ওঠে,
–” আসছি ছোয়া! খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে নিজের বউ বানিয়ে নিয়ে আসবো। খুব তাড়াতাড়ি।”
★
আদনান নিজের রুমে পায়চারী করছে আর স্নেহাকে ফোন দিচ্ছে। সেইদিনের পর থেকে স্নেহার ফোন বন্ধ পেয়েছে আদনান। আজ সন্ধ্যা থেকে স্নেহার ফোন খোলা পেয়েছে। তখন থেকেই ফোন দিয়ে যাচ্ছে,, কিন্তু মেয়েটাহ কল রিসিভই করছে নাহ।
স্নেহা ঠিক আছে তো? স্নেহার বাসায় আদনান কিছুতেই যেতে পারবে নাহ। ইয়াশের বাসার ঠিকানা আদনান জানে নাহ,, আবার ইয়াশের নাম্বারও নেই। মেজাজ খারাপ হচ্ছে আদনানের।
আদনানের ভালো লাগছে নাহ। সেইদিন নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারে নি আদনান। তাই স্নেহার এতো কাছে চলে গিয়েছিলো। পরে ব্যাপার টাহ মাথায় আসলেও,, কিছুই করার ছিলো নাহ। খুব বিরক্ত লাগছে আদনানের। হয়তো বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে সে।
স্নেহা কি সেইদিন কষ্ট পেয়েছে? পেতে পারে,, নাহ! আদনান কাজ টাহ একদম ঠিক করে নি। আদনান স্নেহাকে একটা ম্যাসেজ লিখে পাঠিয়ে দেয়।
ম্যাসেজ – ” Sneha call tah dhor plz…tor shathe amar kotha ache…valo lagche nah amar..plz…call tah dhor..plz…”
কিছু সময় পর আবার কল দেয় আদনান রিসিভ হয় নাহ। আবার কল দেয়। স্নেহা রিসিভ করে কানে ধরে কিন্তু কিছু বলে নাহ। আদনান কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” স্নেহা!”
স্নেহা কোনো কথা বলে নাহ। আদনান আবার বলে ওঠে,
–” স্নেহা! তুই কথা বলছিস নাহ কেন?”
স্নেহা শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” কি বলবো?”
–” স্নেহা! আই এ্যাম সরি। সেইদিন আমি আসলে ইচ্ছে করে কিছু করিনি। আমি বুঝতে…..”
আদনান আর কিছু বলার আগেই স্নেহা বলে ওঠে,
–” ইট’স ওকে! তুই এতো টাহ ঘাবড়ে আছিস কেন? আই এ্যাম ওকে। শান্ত থাক।”
আদনান একটা জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” এই দুইদিন ফোন কেন অফ ছিলো তোর? আর,, সন্ধ্যা থেকে এতোবার কল দিচ্ছি,, রিসিভ করছিলি নাহ কেন?”
স্নেহা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে ওঠে,
–” আসলে…”
স্নেহা কিছু বলার আগেই আদনান বলে ওঠে,
–” তুই আমাকে এভোয়েড করছিলি?”
স্নেহা কিছুটাহ চমকে উঠে। সে যে আদনানকে এভোয়েড করছে নাহ,, কিন্তু প্রচন্ড লজ্জা পাচ্ছে। কিন্তু,, প্রকাশ করতে পারছে নাহ। সেইদিনের আদনানের হালকা ওষ্ঠছোয়া স্নেহাকে এই দুই রাত ঘুমাতে দিচ্ছে নাহ। এক অজানা লজ্জায় রাঙিয়ে দিচ্ছে তাকে। তাই তো,, নিজের লজ্জাকে লুকিয়ে রাখতেই আদনানের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। স্নেহা কে চুপ থাকতে দেখে আদনান বলে ওঠে,
–” স্নেহা! কি হয়েছে তোর?”
স্নেহা শান্ত ভাবে বলে ওঠে,
–” আসলে,, ফোন টাহ হাত থেকে পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। ফোন কিনবো কিনবো করেও হয়ে উঠছিলো নাহ। তাই,, ফোন বন্ধ পাচ্ছিলি। আজ কিনে নিয়ে এলাম।”
–” সত্যি?”
–” হুম!”
স্নেহার খারাপ লাগছে আদনান কে মিথ্যা বলতে। কিন্তু,, এছাড়া তো কোনো উপায়ও নেই৷ তাই বলতে বাধ্য হলো। আদনান আর স্নেহা আরও কিছু সময় কথা বললো। তারপর ফোন রেখে দিলো। আদনানের এখন বড্ড ভালো লাগছে,, হালকা হালকা লাগছে। স্নেহার সাথে কথা বললেই তার মন ফ্রেশ হয়ে যায়। তারপর লাইট অফ করে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হয় আদনান।
এইদিকে……
স্নেহা ফোন বিছানার উপর রেখে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ায়। ফোনের তো কিছুই হয় নি। কিন্তু,, আদনানকে মিথ্যা বলে ফেললো। এছাড়া কিই বা করতো? আগামীকাল নতুন একটা ফোন কিনে আনবে,, যেন আদনান বুঝতে নাহ পারে।
আচ্ছা আদনান সেইদিন তার এতো কাছে কেন এসেছিলো? এই পরশ কি আর যাকে তাকে দেওয়া যায়? সেইদিন আদনান চলে যাওয়ার পর পরই বেরিয়ে এসেছিলো স্নেহা। আর পার্টিতে থাকতে পারে নি সে। খুব লজ্জা লাগছিলো তার। এক অদ্ভুত শান্তি তাকে জড়িয়ে রেখেছিলো।
আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকে স্নেহা। এমন সময় ফোন বেজে উঠতেই দেখে ইয়াশ ফোন দিয়েছে। কিন্তু,, এখন ইয়াশের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে জরছে নাহ স্নেহার। কল কেটে ইয়াশকে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে দেয় স্নেহা। তারপর আবার আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখতে থাকে। তারপর একটা প্রেমের উপন্যাস বই নিয়ে পড়তে থাকে স্নেহা।
#_চলবে…….🌹
{{ আসসালামু আলাইকুম…..❣️
দুঃখীত আজকের পর্ব টাহ ছোট হয়ে যাওয়ার জন্য…🙂
হ্যাপি রিডিং…….😇 }}