#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_২৮_
আমি তোমার কাছেই রাখবো
আজ মনের কথা হাজার
দিয়ে তোমার কাজল আঁকবো
আজ সারা দিনটা আমার
তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে
তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে
আর কমলো চিন্তা আমার
আমি তোমার কাছেই রাখবো
আজ মনের কথা হাজার
দিয়ে তোমার কাজল আঁকবো
আজ সারা দিনটা আমার
হালকা হাওয়ার মতন
চাইছি এসো এখন
করছে তোমায় দেখে
অল্প বেইমানি মন
বাঁধবো তোমার সাথে
আমি আমার জীবন
আমি তোমার কাছেই রাখবো
আজ মনের কথা হাজার
দিয়ে তোমার কাজল আঁকবো
আজ সারা দিনটা আমার
চাইলে আস্কারা পাক
বেঁচে থাকার কারণ
আজকে হাত ছাড়া যাক
হুম.. ব্যাস্ততার আর বারণ
লিখবো তোমার হাতে
আমি আমার মরন
আমি তোমার কাছেই রাখবো
আজ মনের কথা হাজার
দিয়ে তোমার কাজল আঁকবো
আজ সারা দিনটা আমার
তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে
তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে
আর কমলো চিন্তা আমার
গান শেষ করতেই আবিরের ফোন বেজে উঠে। আবির মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে মায়ের কল এসেছে। আবির একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোন কানে নিয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যালো,, আম্মু!”
ফোনের ওপাশ থেকে মালতি ( আবিরের বাসা কাজের বুয়া ) বলে ওঠে,
–” ভাইজান,, আমি আফনার মা নাহ। আমি মালতি!’
–” ওহ! হ্যা বল।”
–” ভাইজান! আফনের মা অসুস্থ হইয়া ফড়ছে।”
আবির চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” মানে? আম্মু এখন কোথায়?”
–” আফনার মারে আমি আর ডেরাইভার মিলে ***** হাসফাতালে লইয়া আইছি। আফনি অহনি আহেন।”
–” আমি এক্ষুনি আসছি।”
আবির ফোন কেটে দিয়ে বন্ধুদের বলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। হসপিটালে এসে দৌড়ে রিসিপশন থেকে মায়ের কেবিন নাম্বার জেনে দৌড় দেয় আবির। কেবিনে আসতেই আবির দেখে মায়া চৌধুরী ( আবিরের মা ) বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। হাতে স্যালাইন লাগানো।
আবির এগিয়ে এসে মায়া চৌধুরীর পাশে বসতেই মায়া চৌধুরী চোখ খুলে ছেলের দিকে তাকায়। আবিরকে চিন্তিত দেখে হালকা হেসে অসুস্থ গলায় বলে ওঠে,
–” ডক্টর বলেছে সেরকম কিছু হয় নি। চিন্তার কোনো কারন নেই,, একটু পরই ছেড়ে দিবে।”
আবির সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে মালতির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ডক্টর কোথায়?”
মালতি বলে ওঠে,
–” ডাক্তার আফা আইতাছে,, একখান ঐযে ইনজেকশান লইয়া আইতাছে। ঐ তো চইলা আইছে।”
মালতির কথা শুনে আবির সেইদিকে তাকাতেই যেন মুগ্ধ হয়ে যায়। একটা মায়াবী বাঙালী নারী ডাক্তার নার্সের সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে। আর এই নারী হলো সাঝ। সাঝ একটা লাল রং এর কুর্তির সাথে জিন্স,, উপরে ডাক্তারি এপ্রোন,, ছাড়া চুল,, গলায় স্টেথোস্কোপ,, চোখে হালকা কাজল আর হালকা লিপস্টিক,, বাহ! মাশাআল্লাহ! চমৎকার!
আবির একদৃষ্টিতে সাঝের দিকে তাকিয়ে আছে। সাঝ এগিয়ে এসে মায়া চৌধুরীকে একটা ইনজেকশন দিয়ে পাশে আবিরকে দেখে বলে ওঠে,
–” আপনি পেশেন্টের কে হন?”
সাঝের কথায় আবিরের ধ্যান ভাঙে। তারপর নিজেকে সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার আম্মু!”
–” ওহ! চিন্তার কোনো কারন নেই। দুশ্চিন্তা থেকে এরকম হয়েছে। চিন্তামুক্ত রাখবেন ওনাকে। স্যালাইন টাহ শেষ হলে বাসায় নিয়ে যাবেন। আর এই মেডিসিসন গুলো টাইমলি দিবেন।”
–” ওকে!”
সাঝ চলে যায়। আবির সাঝের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। স্যালাইন শেষ হলে মাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে আবির।
……………রাতের বেলা মায়া চৌধুরী আবিরের রুমে এসে দেখে আবির গিটার বাজাচ্ছে। মায়া চৌধুরী এগিয়ে এসে বসতেই আবির মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আম্মু! তুমি এখানে কেন এসেছো? বাবান রুমে নাহ?”
–” হ্যা! এলাম তোর কাছে।”
–” আচ্ছা! আম্মু তোমার এতো কিসের দুশ্চিন্তা বলোতো? কি চিন্তা করো তুমি এতো?”
–” আমার সব চিন্তা তো তোকে নিয়ে। বিয়ে করবি নাহ?”
মায়ের কথাটাহ শুনতেই আবিরের সামনে সাঝের মুখ টাহ আবার ভেসে উঠে। কতটাহ স্নিগ্ধ মেয়েটার মুখ। কত সুন্দর! কত মায়াবী! অমায়িক! ছেলেকে এরকম ভাবনায় দেখে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কি ভাবছিস এতো?”
মায়ের কথায় ঘোর কাটে আবিরের। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি বিয়ে করলে তোমার চিন্তা চলে যাবে?”
–” হুম! যাবে।”
–” ঠিক আছে! আমি বিয়ে করবো তাহলে,, কিন্তু আমার পছন্দের মেয়েকে।”
–” তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। তুই শুধু বল,, মেয়েটাহ কে?”
–” বলবো,, পরে।”
–” কবে?”
–” কয়েকদিন পর। প্লিজ!”
–” আচ্ছা!”
–” যাও,, এখন গিয়ে ঘুমাও।”
–” আচ্ছা! যাচ্ছি!”
মায়া চৌধুরী চলে যায়। আবির গিটার পাশে রেখে বারান্দায় গিয়ে আকাশ দেখতে থাকে। আকাশে বড় চাঁদ উঠেছে। আবিরের মনে হচ্ছে তার বুকেও যেন আকাশে থাকা চাঁদের মতো সুন্দর রুপালি চাঁদ উঠেছে।
★
সাঝ আয়নার সামনে দাড়িয়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। আর ভাবছে আবিরের কথা। সেইদিন আবিরের সাথে প্রথম হাসপাতালে তার মায়ের সাথে দেখা হয়েছিল। তারপর দুইদিন শুধু শুধু ছেলেটাহ হাসপাতালে এসেছিলো।
পরপর কয়েকদিন হাসপাতালের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছে। ছেলেটাহ আসলে চাচ্ছে টাহ কি? সাঝ জানে সে স্কুল,, কলেজে থেকেই অনেক ছেলের লক্ষ্যবস্তু,, তাকে অসুন্দরী কেউ বলবে নাহ। কিন্তু,, কখনো এইসব নিয়ে ভাবার সময় তার হয় নি।
সব সময় নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে সাঝ। কিন্তু,, আজকাল আবির তাকে যথেষ্ট ভাবাচ্ছে। ছেলেটাহ যথেষ্ট সুর্দশন। একদিন হাতে একটা গিটার দেখেছিলো,, গান করে হয়তো। ভাবছে সাঝ,, আজকাল ভাবছে সে,, আবিরকে নিয়ে ভাবছে,, ভাবতে ভালো লাগছে তাই হয়তো ভাবছে।
…………….হসপিটালের সামনে আসতেই চোখ পড়ে আবিরের দিকে। একটা চকলেট কালারের টিশার্ট আর ব্লাক জিন্স পরে আছে। বেশ লাগছে আবিরকে। ছেলেটাহ আসলেই অনেক সুর্দশন,, অনেক স্মার্ট। আশের পাশের মেয়েরা তাকাচ্ছে।
কিন্তু,, আবির তাকিয়ে আছে সাঝের দিকে। সাঝের একটু লজ্জা লেগে উঠে আবিরের তাকানোতে। তাড়াতাড়ি হসপিটালের ভেতর চলে যায়।
#_রাত_৯_টা_১০_মিনিট_
সাঝ হসপিটাল থেকে বেরিয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে। এমন সময় একটা গাড়ি এসে সামনে থামতেই কিছুটাহ চমকে উঠে সাঝ। ভালোভাবে তাকায় গাড়িটার দিকে। চেনা চেনা লাগছে,, কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছে নাহ।
গাড়ির দরজা খুলে যায়। সাঝ আরও একটু দৃষ্টি মেলে তাকায়। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে একজন সুদর্শন যুবক। এখন সাঝ বুঝতে পারলো,, গাড়ি টাহ চেনা চেনা লাগছে কেন। কারন,, গাড়িটা আবির চৌধুরীর।
আবির সাঝের দিকে এগিয়ে আসছে। সাঝের বুকের ভেতর কেমন যেন ধুক ধুক করছে। আবির তার দিকে এগিয়ে আসছে কেন? আবির এসে সাঝের সামনে দাড়ায়। সাঝ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে৷
আবির সাঝের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাঝ কিছুটাহ কাঁপছে। আবিরকে দেখলেই সাঝের কেমন যেন কম্পন সৃষ্টি হয়। এক অদ্ভুত অনুভুতি হয়। কেন হয়,, জানে নাহ সাঝ। হয়তো বা জানার চেষ্টাও করে নাহ। সাঝ আবিরকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই আবির বলে ওঠে,
–” সাঝ!”
থেমে যায় সাঝ। আবির আবার সাঝের সামনে দাড়ায়। সাঝ এখনও মাথা নিচু করে রয়েছে। আবির বলে ওঠে,
–” সাঝ! তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
সাঝ মাথা তুলে তাকায় আবিরের দিকে। আবির আবার বলে ওঠে,
–” প্লিজ! সাঝ! তোমার সাথে আমি একটু কথা বলব। আমার খুব দরকার।”
সাঝ বলে ওঠে,
–” ঠিক আছে! বলুন!”
–” ঐ যে দেখো একটা কফিশপ। ওখানে গিয়ে বসে কথা বলি?”
সাঝ পেছন ঘুরে দেখে নেয় কফিশপটিকে। তারপর আবিরের দিকে ঘুরে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়।
………………চারদিকে শান্ত,, নিরব পরিবেশ। একটু রাত হওয়ায় কফিশপে তেমন কোনো লোক নেই। সাঝ একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয়। একটা ওয়েটার দুইটা হট কফি রেখে যায়। সাঝ আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এইবার বলুন কি বলতে চান।”
আবির একটু নড়েচড়ে বসে বলে ওঠে,
–” সাঝ! আমি আবির চৌধুরী! নাম টাহ আশা করি জানো,, আমার বাবা জিহাদ চৌধুরী! আমার আম্মু মায়া চৌধুরী! আমার বাবা একজন বিজনেসম্যান! আমিও স্টাডি শেষ করে বাবার সাথে জয়েন্ট হয়ে গিয়েছি। গানও করি,, সাথে ফটোগ্রাফি করতে পছন্দ করি। কিন্তু,, এই দুইটা আমার প্রোফেশন নাহ,, শখ বলতে পারো।”
–” কিন্তু,, আপনি এইসব আমাকে কেন বলছেন?”
–” বলছি কারন,, আমি তোমাকে ভালোবাসি!”
আবিরের এরকম সরাসরি প্রস্তাবে কিছুটাহ চমকে উঠে সাঝ। কখনো ভাবে নি,, আবির এরকম সরাসরি প্রস্তাব দিবে। শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শিহরণ বয়ে যায় সাঝের। আবির আবার বলে ওঠে,
–” সাঝ! আমি তোমাকে প্রথম দিন দেখেই তোমার প্রেমে পড়ে যায়। আর তারপর আস্তে আস্তে ভালোবাসাও হয়ে যায়। আমি তোমাকে চাই সাঝ!”
সাঝ হালকা কাঁপছে। তাও নিজেকে সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” দেখুন আমি এইসব পছন্দ করি নাহ।”
আবির আকুল হয়ে বলে ওঠে,
–” সাঝ! এমন করে বলো নাহ প্লিজ! আমি তোমাকে সত্যিই চাই। আমার সর্বোচ্চ দিয়ে তোমাকে সুখি করার চেষ্টা করবো। প্লিজ! সাঝ!”
সাঝ একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” দেখুন! আবির! আমি আপনার এই প্রস্তাব গ্রহন করতে পারছি নাহ। আমাকে মাফ করবেন। কিন্তু,, আপনি আমার বাড়িতে বলে দেখতে পারেন,, তারা যদি রাজি হয় আমি আনন্দের সাথে আপনাকে বিয়ে করবো। কিন্তু,, অন্য কোনো সম্পর্কে আমি নিজেকে জড়াতে পারবো নাহ। আমার পরিবার যদি আপনাকে মেনে নেয়। তাহলে ঠিক আছে। নাহলে,, আমার দ্বারা কিছুই করা সম্ভব নাহ।”
আবির চুপ করে আছে। সাঝ আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে। আমি আসছি। আল্লাহ হাফিজ!”
সাঝ চলে যায়। আবির সাঝের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর ভাবতে থাকে,, সাঝ তাকে গ্রহন করলো নাকি রিজেক্ট করলো???
#_চলবে……….🌹
{{ হ্যাপি রিডিং…..🍂 }}