রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙পর্ব:০৪

#রাঙিয়ে দিয়ে যাও💙
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৪

🍀

সকাল ঠিক সাতটায় ঘুম ভাঙলো আমার।
আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম।চোখজোড়া ফুলে আছে।তহয়তো কাল রাতের কান্নায়।জানালার দিকে তাকিয়ে উজ্জ্বল রোদ দেখে মুখে আলতো হাসি ফুটলো আমার। পাখির কিচিরমিচির শব্দ আসছে বাহির থেকে। আমি কম্বল সরিয়ে উঠে পড়লাম।ওয়াশরুমে যাবো এমন সময় ড্রেসিং টেবিলের সামনে একটা সাদা রঙের ভাজ করা কাগজ দেখতে পেলাম। আমি আস্তে করে কাগজটা তুলে নিয়ে পড়তে লাগলাম,

___” কালকে রাতের জন্য দুঃখিত। আমার উচিত হয়নি এভাবে তোর উপর রিয়াক্ট করা। সামনাসামনি কখনো সরি বলতে পারবো না এটা তুই জানিস। তাই এভাবেই সরি চেয়ে নিলাম। পারলে ক্ষমা করে দিস। আর একটা কথা,যে তোর দুঃখের কারণ,তার কাছে নিজেকে সপে দেওয়ার চিন্তাও করিস না। ঠকবি!”

~সাদি

জানি না কেন!সাদি ভাইয়ের এই চিরকুটটা পড়ে আমার ভীষণরকম হাসি পেতে লাগলো। সাদি ভাই আর সরি? তাও আমাকে? অন্যকাউকে বললে তা স্বাভাবিক! বাট আমাকে তো কখনোই বলে না। কেমন ভালোলাগা কাজ করছে ওনার জন্য। এই প্রথম!কিন্তু ওনার লাস্ট কথাটা আমার মুখের হাসিটা আবারো কেড়ে নিলো।কথাটা কি সত্যি? কি জানি!
আমি চিরকুটটা যত্ন করে আমার ব্যাগে রাখলাম। ইচ্ছে হচ্ছে না ফেলতে।ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। আমাকে কলেজেও যেতে হবে।আজকে অয়নকে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।ও চায়টা কি!

.

ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলাম আমি। আমাকে দেখেই ফুপি বললো,

___” কলেজ যাবি?”

আমি মাথা নাড়ালাম। ফুপি মিষ্টি করে হেসে বললো,

___” আয় বোস। খেয়ে নে।”

আমি টেবিলে বসে পড়লাম। ফুপা আমাকে দেখে বললেন,

___” কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো অনু?”

___” না ফুপা। একদম ঠিকঠাক।”

___” বাহ। তাহলে তো সব ঠিকই আছে।কিছু লাগলে অবশ্যই বলবা। আর আজকে রাতে ডিনার করাতে সবাইকে বাইরে নিয়ে যাব। ঠিক আছে আম্মু?”

আমি হেসে মাথা দুলালাম। ফুপিও সায় জানিয়ে বললেন,

___” হ্যা। মেয়েটা ঘুরতে এসেছে। ওকে একটু বাইরে নিয়ে যাওয়া উচিত।”

এভাবেই ফুপি আর ফুপা টুকটাক কথা বলতে লাগলো। আমি খেতে খেতে একবার পাশে বসা সাদি ভাই এর দিকে তাকালাম। উনি চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছেন। একবার তাকাচ্ছেনও না আমার দিকে। ভালোই হলো! রাক্ষসটার রাক্ষসগিরিটা কমলো। হুহ।আমি খাওয়া শেষ করে উঠতে উঠতে বললাম,

___” ফুপি আমি উঠছি..”

ফুপি উঠে বললো,

___” সেকি! একা যাবি নাকি!”

___” হ্যা ফুপি। আমি তো একাই যাই।”

___” সে যাস ঠিক আছে।কিন্তু এখান থেকে তো কলেজ দূরে।তাই না সাদির আব্বু?”

ফুপা সম্মতি জানিয়ে বললেন,

___” হ্যা। আর আমারো তো অফিস উল্টো রাস্তায়। তারচেয়ে বরং সাদি নিয়ে যাক।”

ফুপার কথা শুনে ফুপার দিকে তাকালেন সাদি ভাই। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

___” বাবা, আমি?”

ফুপা আরো ভরাট কন্ঠে বললেন,

___” হ্যা তুমি।মেয়েটা কি একা একা যাবে? গিয়ে দিয়ে এসো যাও।”

ফুপিও সম্মতি জানিয়ে বললেন,

___” হ্যা আব্বু যাও। অনুকে একটু নামিয়ে দিয়ে এসো।”

সাদি ভাই আমার দিকে এক পলক তাকালেন। আমিও তার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিলাম আমি। সাদি ভাই উঠতে উঠতে বললেন,

___” ওখেহ! আমি গাড়ির চাবি নিয়ে আসছি।”

বলেই উনি উপরে চলে গেলেন নিজের রুমে। ফুপি আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,

___” যা, বাইরে গিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়া।ও আসবে।”

আমি মাথা নাড়িয়ে ফুপাকে সালাম দিয়ে বেড়িয়ে আসলাম। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সাদি ভাইয়ের জন্য ওয়েট করছি। অবশেষে অপেক্ষার অবসান করে উনি এলেন। হালকা কেশে ভরাট গলায় বললেন,

___” বসে পড়।”

আমি দরজা খুলে গাড়িয়ে বসলাম। সাদি ভাই হালকা রাগ দেখিয়ে বললেন,

___” আমি তোর ড্রাইভার নই। সামনে এসে বোস।”

আমি অবাক চোখে বললাম,

___” হু?”

উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

___” সামনে এসে বসতে বলেছি।”

বলেই উনি চটপট ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লেন। আমিও নেমে পড়লাম। আর মনে মনে ভাবছি,

___” ভেবেছিলাম রাক্ষস টা ভালো হয়েছে। কচু! এই শয়তানটা কখনো ভালো হবে না।”

সাদি ভাই একটু চেঁচিয়ে বললেন,

___” আমার দূর্নাম করা শেষ হলে সিটবেল্ট টা বাঁধুন।”

আমি চমকে উঠে তাড়াহুড়ো করে সিটবেল্ট টা বাঁধলাম। উনি গাড়ি ছেড়ে দিলেন। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। আমি পাশে বসে জানালা দিয়ে বাহিরের সৌন্দর্য উপভোগ করছি। মনটা কেমন অজানা ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে।মনে পড়ছে অয়নের সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো।সেদিন ছিল ভীষণ বৃষ্টি। কলেজে আটকে পড়েছিলাম দুজনই। কলেজের বারান্দায় গালে হাত দিয়ে বসে ছিলাম।কিভাবে আসব বুঝতে না পারায় অয়ন বলেছিল,

___” দুজনই অপেক্ষা করি। পরে তোকে বাসায় দিয়ে আসব।”

আমি সায় জানিয়ে বলেছিলাম,

___” আচ্ছা।”

ঝড়ো হাওয়ায় একটু পর পর কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম আমি।এক হাত দিয়ে আরেক হাতের বাহু ঘষে গরম করার চেষ্টায় ছিলাম। ঠিক তখনই অয়ন নিজের জ্যাকেট খুলে আমার শরীরে পড়িয়ে দিতে দিতে বলছিল,

___” নিজের অসুবিধাগুলোও কি আমার সাথে শেয়ার করতে পারিস না তুই?”

আমি মুখ টিপে হেসে বলেছিলাম,

___” তুই এমন ফিল্মি স্টাইল অবলম্বন করলি কেন? পটাতে চাাচ্ছিস নাকি!”

অয়ন মুচকি হেসে বলেছিল,

___” আহহা!কি জিনিসটা তিনি! তাকে আমার পটাতে হবে।”

___” তোর থেকেও সুন্দর আছি।”(মুখ ভেংচি কেটে)

___” হ্যা হ্যা জানি। আমার অনুপাখিটা এই শহরে একপিসই আছে।”

আমি দাঁত কেলিয়ে বলতাম,

___” হাহ। আমার বর কত লাকি হবে বল তো!”

অয়ন তখন আমার কাঁধে মাথা রেখে বৃষ্টি দেখতে দেখতে বলেছিল,

___” আই উইশ সেই লাকি ব্যক্তিটা যেন আমিই হই!”

আমি অবাক আর লজ্জাজনক চেহারা নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম ওর মুখপানে। সেই মুখপানে আমি স্পষ্ট আমাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা দেখেছিলাম। সেদিন আমার হাত ধরে ও বলেছিল,

___” ভালোবাসি অনুপাখি!”

কেমন যেন আলাদা এক ধরণের অনুভূতি হচ্ছিল আমার মনে।ওর প্রতিটা কথা আমার মনটাকে ছুঁয়ে দিচ্ছিল। হয়তো সেদিন থেকেই ওর জন্য নিজের মনের মধ্যে একটা সফট কর্ণার তৈরী হয়েছিল আমার।সেদিন হেসেছিলাম আমি।খুব করে বলেছিলাম,

___” আমিও তো তোকে ভালোবাসি অয়ন।”

কিন্তু সেটা মনে মনে। মুখে কখনো বলা হয়নি কথাটা। বলার সুযোগটা পাব ভেবেছিলাম। ও নিজেও তো বলেছিল,

___” অনু? জবাবটা কি পাব না?”

___” ইনডিরেক্টলি প্রপোজ করলি?”(দুষ্টু হেসে)”

ও নিচের দিকে হেসে বলেছিল,

___” ধরে নে তাই।”

___” তোলা রইলো।”

___” অপেক্ষা করবো অনুপাখি।”

তাহলে কেন অপেক্ষা করলো না ও?আমাকে এভাবে অসহায় করে দিল!
গাড়ির ব্রেক কষায় বাস্তব জগতে ফিরে এলাম আমি।সাদি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি সামনের দিকে তাকিয়ে আঋেন। আমি শান্ত গলায় বললাম,

___” কি হয়েছে সাদি ভাই? ”

আবারো গম্ভীর গলায় জবাব,

___” চলে এসেছি। নাম।”

আমি সিটবেল্ট খুলে নামতে নিলাম,তখনই উনি আমার হাতে ১০০ টাকার নোট গুঁজে দিয়ে বললেন,

___” কিছু খেতে মন চাইলে খেয়ে নিস।”

বেশ অবাক হলাম আমি। এই প্রথম উনি আমাকে টাকা দিলেন। ইতস্ততভাবে বললাম,

___” আপনার কাছ থেকে টাকা….”

বলতে দিলেন না আমাকে। ামিয়ে দিয়ে বললেন,

___” যাওয়ার পথে ফুচকা কিনে দিবো। তোর তো পছন্দের। ”

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম। উনি আমার কপালের চুলগুলো আবারো হাত দিয়ে নেড়ে বললেন,

___” এবার যা। সাবধানে যাবি। আর কেউ কিছু বললে ডাইরেক্ট আমাকে বলবি।”

আমি হ্যা’বোধক মাথা নাড়িয়ে নেমে এলাম। সাদি ভাইয়ের এই ব্যবহারগুলো বোঝা বড্ড দায়। মাঝে মাঝে ওনাকে এত আপন লাগে! আবার মাঝে মাঝে মনে হয়,উনি না থাকলেই বেশ হত।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কলেজের ভিতর পা দিলাম আমি। অয়নের বাইকটা কলেজের বাইরে দেখলাম। তারমানে ও এসে গেছে অনেক আগেই। এটাই প্রথম যে ও এলো আর আমি একটা কল অবধি পেলাম না। বুকটা কেমন ধক করে উঠলো।অজানা কষ্টে বুকটা ভরে গেলো।
এগিয়ে গেলাম ক্লাসরুমে। সামনেই দেখলাম প্রান্তি একটা ক্লাসরুমের সামনে উঁকি দিচ্ছে। আমি অবাক হলাম। প্রান্তিকে পেয়ে ডাক দিলাম,,

___” দোস্ত! অয়ন এসেছে? ”

প্রান্তি হন্তদন্ত হয়ে বললো,

___” এসেছে তো।কিন্তু..”

___”কিন্তু কি?”(ভ্রু কুঁচকে)

প্রান্তির চোখেমুখে এক অজানা ভয় দেখতে পাচ্ছি আমি। কিসের ভয়? কারোর মন ভাঙার?ও মাথা নিচু করে পাশের রুমের দিকে ইশারা করলো। আমি খানিকটা দৌড়েই পাশের রুমের দরজাটা খুলে ফেললাম। এরপর যা দেখলাম! তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না! সামনে থাকা দুজন মুহুর্তেই ছিটকে গেলো।

.
.
.
.

চলবে……❤️

(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। গঠণমূলক মন্তব্য আশা করছি☺️❤️)

(আগের পর্বটা আসলেই হয়ত বেশি ছোট হয়ে গেছিলো।তাই আরেক পর্ব দিলাম।সুন্দর সুন্দর কমেন্ট না পেলে গল্পও ছোট পাবা😒।)

(কিন্তু কথা হচ্ছে অনেকেই অনুকে দোষারোপ করছে।কিন্তু প্রিয় মানুষ ছেড়ে গেলে কি কষ্ট হয় না? দুদিন না যেতেই যদি অনু সাদির প্রতি ঝুঁকে যায় তাহলে সেই আপনারাই বলবেন যে কেমন ভালোবাসলো দুদিনেই ভুলে গেল। তাই গল্পটা সাজানোর স্বার্থে হলেও আমাকে সব জায়গায় গুরত্ব দিতে হবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here