ভালোবাসার_ফোড়ন_২ পর্ব ৬

#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৬ ( #প্রথম_দেখা )

আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি টা কে দেখে আমি বেশ অবাক। অবাকের কারন আছে, সেটা হলো প্রয়োজন ছাড়া কেউ কারো কাছে আসে না। যদি সেটা বন্ধুত্ব হয় তাহলে অন্য ব্যাপার। কিন্তু না তার সাথে আমার বন্ধুত্ব আছে আর না তাকে আমার দরকার বা আমার তাকে। আমি এতোক্ষণ যার কথা বলছি সে হলো নিতি!

হ্যাঁ নিতি, শুধু সে না তার সাথে টিনা আর আনিকা। আমি নিতি’র দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এটা আমার অবাক হবার দ্বিতীয় কারন আর তা হলো সে বেশ সুন্দরী! দূর থেকে দেখেছি বলে এতোটা খেয়াল করি নি তবে এখন সামনে থেকে দেখে আমি হতবাক হয়ে গেছি। যথেষ্ট সুন্দরী সে। গায়ে ফর্সা রং, এতোটাই ফর্সা সে গাল দুটো লাল হয়ে আছে। হালকা গোলাপি ঠোঁট আর ছোট ছোট চোখ। চোখ দুটি তে কাজল দেওয়া। যার কারনে সবার আকৃষ্ট তার চোখের দিকেই যাবে আমিও তার ব্যাতিক্রম হয় নি।

মেয়েটা আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মুখের ভাব ভঙ্গি কিছুটা অন্যরকম করল যাতে মনে হচ্ছে সে হয়তো আমার সাথে দেখা বা কথা বলতে চায় না তবুও এসেছে। কেউ কি জোড় করেছে। খুব বিরক্ত লাগছে তাকে!

নিতি আমার দিকে আঙুল তুলে বলে..

“নিহা!

“হুম।

“সেদিন গাড়ির সামনে মেয়েটা তুমি ছিলে।

“হ্যাঁ আপু!

“ওহ আচ্ছা..
বলেই সে আমার হাত ঘুড়িয়ে আঘাত পাওয়া জায়গা টা দেখল। খানিকটা কপাল কুঁচকে বলল..

“দেখে মনে হচ্ছে না বেশি ব্যাথা পেয়েছ, আর আমার মতে ভুল টা তোমার ছিল। রাস্তায় হাঁটার সময় আশপাশ দেখে হাঁটতে হয়। যাই হোক আমার জন্য আঘাত পেয়েছ তাই সরি। চাইলে ক্ষতিপূরণ দিতে পারি।

“আরে আপু কি বলছো এসব। এটা এমন কোন ব্যাপার না আমি ঠিক আছি।

“আচ্ছা আমি আসছি তাহলে..

বলেই তারা ৩ জন চলে গেল। তারা যেতেই ইতি ব্যঙ্গ করে বলে..
“দেখলি কাহিনী! কিভাবে বলল কথাটা যাতে মনে হচ্ছে দোষ তার না। ঢং দেখে আর বাঁচি না!

“কিন্তু তোকে তো তোর বরের জন্য বাঁচতে হবে তাই না!
বলেই দাঁত বের করে হাসলাম। ইতি রেগে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল। আমি ওর পিছন পিছন গেলাম তাকে মানাতে!
.
দিনগুলো বেশ ভালো কাটছে এই কয়েকদিন। তবে মাথায় চিন্তা ও বাড়ছে। কারন মাস শেষ। টাকা পয়সা হাতে নেই বললে চলে। যা আছে তা দিয়ে ১ সপ্তাহ চলে হবে। তবে এদিকে নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয় কারন আমার টিউশনি’র টাকা টা আমি মাসের প্রথম কয়েকদিনের মধ্যেই পেয়ে যাই। তারা কখনো দেরি না ঠিকমতো টাকা টা দিয়ে দেয়। যার কারনে মাসের শেষের দিকে বেশ কষ্টকর করে চলতে হয় আমায়।

ভার্সিটি থেকে বাসায় আসার পর খেতে বসবো তখন দাদী এলো ঘরে। আমি প্লেট টা রেখে তার কাছে যেতেই দাদী বলল..

“না খেয়ে উঠিস না খেয়ে নে!

“তুমি খাবে দাদী, তোমাকে ভাত দেই একটু!

“পাগলি মেয়ে যা আনিস তাতে তো নিজের’ই চলে না আবার মেহমান ডাকিস!

“তা কি! আল্লাহ আমার খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে দেবে। যেভাবে থাকার জায়গা পেয়ে গেছি সেভাবেই একদিনের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। দেই তোমাকে ভাত! জানো আজ একটা বেগুন কিনে এনেছি। একটাই এনেছি তাই লোকটা আমার থেকে ১০ টাকা নিয়েছে, একা মানুষ তাই এতো আনলে তো পঁচে যাবে। আমি দু’পিস ভেজেছি। একটা আমি খাবো আরেকটা দিয়ে তোমাকে একটু পানি ভাত দেই খেলে ভালো লাগবে! পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচ ও দেবো।

দাদী হেসে আমার কাছে এসে বসে বলল..
“আমি খেয়েই এসেছি, তুই খা। হ্যাঁ রে খেয়েই তো চলে যাবে পড়াতে।

“হুম তা তো যাবো। কেন তুমি কিছু বলবে।

“হ্যাঁ বলতাম। বলতেই এসেছি! শোন তুই তো সেদিন বললি তোর একটা টিউশনি লাগবে।

“তা পেলে বুঝি!

“হ্যাঁ পেয়েছি তবে..

“বেতন কতো বলল!

“২৫০০!

আমি অবাক হয়ে বলি…
“এতো দেবে!

“হ্যাঁ তবে কথা তো শোন।

“কিসের কথা!

“বাচ্চা টা নাকি খুব দুষ্টু পড়তে চাই না। কোন মাস্টার নাকি বেশিদিন টিকে না বুঝলি। তাই এতো বেশি টাকা দেবে যাতে কেউ একজন তাকে পড়ায়।

“ওহ আচ্ছা। ঠিক আছে পারবো

“পারবি আমি তা জানি কিন্তু সমস্যা আরেকটা…

“কিহহ?

“তার বাসা অনেক দূরে, তুই একটা মেয়ে তোর এখান থেকে যেতে অনেক সময় লাগবে। একা একা পারবি যেতে। আর তাকে নাকি সন্ধায় পড়াতে হবে, বাচ্চা মানুষ তো বিকালে ঘুমায় সে।

আমি খাওয়া শেষ করে এক গ্লাস পানি খেয়ে বলি..
“১ তারিখ থেকে পড়াবো তো!

“হ্যাঁ কিন্তু..

“তুমি হ্যাঁ বলে দাও। একদিন সময় করে তোমার সাথে গিয়ে বাসা দেখে আসবো ঠিক আছে। আমাকে এখন বেরুতে হবে।

“এভাবে এতো কাজ করিস না। নিজের যত্ন নে, নাহলে তোর ভবিষ্যৎ’র কি হবে।

“ভবিষ্যতে নিয়ে ভাবছি বলেই টিউশনি টা করবো। এটার খুব দরকার বুঝলে!

দাদী আমার কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।‌ তার খুব দৃঢ় ইচ্ছা আমাকে সাহায্য করবে আর সেটা সে করছেও কিন্তু তবুও তার মনে খামতি আছে। আমি সেটা বুঝতে পারি। আমি তার মনটা ঠিক করানোর জন্য বলি..

“তা তোমার বুড়ো কোথায়?

“মরন! বুড়ো খেয়ে দেয়ে নাক টেনে ঘুমাচ্ছে। তার নাক ডাকার আওয়াজে আমি ঘুমাতে পারছি না।

“ইশ! বুড়ি টা বলে কি? এতো বছর সংসার করে এখন এই কথা!

“যেদিন বিয়ে করবি সেদিন বুঝবি!

আমি উড়না টা গায়ে দিয়ে, ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে বলি..
“বুঝলি বুড়ি আমি তোমার মতো এতো সুন্দর না আর না তোমার মতো একটা বুড়ো আছে যে আমাকে এত্তো গুলো ভালোবাসবে। তাই বিয়ের কথা ভুলে যাও তুমি!

“পুচকি মেয়ের কথা শোন।

“আচ্ছা আমি বের হবো। তুমি বেরুবে নাকি এখানেই আটকে রাখবো। তোমার বুড়ো কিন্তু তোমার বিরহে এই বয়সে পাগল হবে।

“তবে রে দাঁড়া তুই,

দাদী’র কথায় হি হি করে হেসে দিলাম আমি। অতঃপর দরজা আটকে বের হলাম টিউশনি করাতে! আজ রিনু আর তোহা কে পড়ানোর পর তুহিনের বাসায় গেলাম। আজ সে পড়বে না বলে দিয়েছে,তাই তাকে আর ধরে বেঁধে পড়ানো যাবে না। তাই আমি কিছুক্ষণ পার্কের বেঞ্চে বসে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করলাম। অতঃপর মাগরিবের আজান দিলে উঠে পড়লাম।

পার্ক থেকে বাসা টা বেশ দূরে না। তাই কিছুক্ষণ’র মধ্যেই বসে পড়লাম। অতঃপর ওযু করে নামাজ পড়ে পড়তে বসলাম। আজকের কার দিনের মতো আর কোন কাজ নেই।
.
ভার্সিটিতে আসলে মাঝে মাঝে আকাশ ভাইয়া আর তাদের বন্ধুদের একসাথে দেখি। প্রায় তাদের গাড়িতে বসে আড্ডা দিতে দেখি। খুব গভীর বন্ধুত্ব বলে মনে হয়। নিতি কে সবসময় দেখি আহিয়ান’র সাথে থাকতে। আর আহিয়ান কে সারাদিন ফোন নিয়ে গুতোগুতি করে। আচ্ছা মেয়েটা কে সত্যি তাকে ভালোবাসে! আচ্ছা ধরলাম যদি ভালো নাও বাসে তবুও নিতি যে ভারী সুন্দরী, তার এই রূপে কি আহিয়ান’র চোখে পড়ে নি। নাকি পড়েও চুপ হয়ে আছে। আহিয়ান যথেষ্ট সুদর্শন একজন পুরুষ। আর যে সব পুরুষ সুদর্শন হয় তাঁদের নাকি খুব অহংকার থাকে। সহজে কোন মেয়েদের পাত্তা দেয় না। তাহলে কি আহিয়ান কে আমি সেই দলের লোক বলে ধরে নেবো। নেওয়া যেতেই পারে!

আমাদের ভার্সিটির পিছনে বেশ বড় একটা বাগান আছে। ইতি কে বলতে শুনেছি সেখানে নাকি বাদাম গাছ আছে। কাঠ বাদাম! আমার খুব প্রিয় একটা বাদাম। বেশ লোভ লাগছে এই বাদামের উপর। কিন্তু যতবার’ই ইতি কে বলে সাথে যেতে মেয়েটা যেতে চায় না। কেন? ভূত আছে নাকি আছে সেখানে?

ইতি হেসে বলে..
“হ্যাঁ আছে তো তবে মেয়ে ভূত না ছেলে ভূত!

“ছেলে ভূত আর মেয়ে ভূত বুঝি আলাদা হয়।

“হয়তো যেমন পেত্নি, শাকচুন্নী!

“আর ছেলে গুলোর নাম কি শুনি

“শুনবি।

“হ্যাঁ বল।

“এখানে আয় বলছি।

অতঃপর আমি কপাল কুঁচকে ওর কাছে যাই। ও আস্তে আস্তে ফিসফিসিয়ে বলে..
“নিহা’র জামাই!

“ইতি কি বাচ্চি দাঁড়া তুই!

ইতিও ছুট আর আমিও। দুজনেই দৌড়াচ্ছি। অতঃপর হঠাৎ করেই আমি থেমে যায় তার কারন বেশ অস্থির লাগছে আমার। ইতি দৌড় থামিয়ে আমার কাছে এসে বলে..

“ঠিক আছিস!

“হ্যাঁ আছি। আচ্ছা চল না আমরা যাই ওই বাগানে।

“আমাকে পাগল করে ছাড়বি।

“চিন্তা করিস না তোকে একটা পাগল জামাই খুঁজে দেবো।

“আর আমি একটা ছেলে ভূত!

দুজনেই জোরে হেসে উঠলাম। অতঃপর আমি আর ইতি একসাথে গেলাম বাগানে। বাগান টা দূর থেকে যত বড় লাগছিল কাছ থেকে তার চেয়েও বেশি বড় আর ঘন। যত দূর চোখ যায় তত দূর’ই শুধু গাছ আর গাছ। আমি আর ইতি তাকিয়ে আছি বাগানের দিকে। ইতি আমাকে খোঁচা দিয়ে বলে..

“এই রে সত্যি সত্যি ভূত আছে বলে মনে হচ্ছে!

“পাগলের মতো কথা বলিস না। এসব বলতে কিছু নেই।

“নিহা সময় আছে চল এখন’ই চলে যাই।

“এতো ভীতু কেন তুই!

“সেটা তোর না জানলেও হবে।

“তার মানে তুই যাবি না।

“আচ্ছা তুই যা আর আমি এখানে তোর জন্য অপেক্ষা করি ঠিক আছে

“পাক্কা থাকবি!

“পাক্কা!

“আচ্ছা আমি তাহলে যাবো আর আসবো।

“ওকে!

অতঃপর আমি একাই গেলাম ভিতরে। ইতি যে এতো ভীতু আগে জানতাম না। যাই হোক, হাঁটতে হাঁটতে বেশ ভিতরে চলে এলাম। কিন্তু এখন অবদি কাঠ বাদাম গাছ পাচ্ছি না। আমার হাঁটার সময় সুন্দর একটা আওয়াজ আসছে। আর তা হলো পাতার আওয়াজ। শুকনো পাতার উপর হাঁটলে যে আওয়াজ আসে ঠিক সেই আওয়াজ। তার সাথে কিছু পাখির কিচিরমিচির শব্দ। এখানে মনে হচ্ছে অনেক ধরনের পাখির বাসা আর আমি তাদের এলাকায় আছি। আচ্ছা তারা কি কিচিরমিচির করে আমাকে কিছু বলছে। স্বাগতম জানাচ্ছি বুঝি আমাকে, আমি তো নতুন তাদের এলাকায়। আর পাখিরা তো খুব মিষ্টি আর সুন্দর দেখতে। ভয়ংকর পাখিও আছে বটে তবে তারা লোকালয় থেকে দূরেই থাকে তাই বোধহয় তারা ভয়ংকর। নাকি ভয়ংকর বলেই দূরে থাকে।

হঠাৎ চোখে পড়ল একটা কাঠ বাদাম গাছ। বেশ বড় লম্বা একটা গাছ। আমার ধারনা গাছের আশেপাশেই কিছু বাদাম পড়ে থাকবে। আর তাই হলো! আমি সেখান থেকে বাদাম কুড়িয়ে উড়নার আঁচলে রাখতে শুরু করলাম। একটা বাদাম চোখে পড়ল। একদম পাকা বাদাম। এর রঙ টা উপরে দিক দিয়ে পাকা হলুদ রঙের। আমি জানি ভিতরে এটা গোলাপি রঙের হবে। গ্রামে থাকতে অনেক খেয়েছি এসব!

আমি সেই বাদাম টা নিতে গেলাম। কিন্তু তার আগেই কেউ সেটা নিয়ে গেল। আমি থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইলাম আহাম্মক’র মতো! খুব বিস্মিত হলে তাকে দেখে। এখনও আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে..

#চলবে….

[ বি:দ্র: এটা কিন্তু আহি না, নতুন একজন আসছে কালকে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here