প্রেম_তুমি (দ্বিতীয় খণ্ড) পর্ব ৮

#প্রেম_তুমি (দ্বিতীয় খণ্ড)
ফাবিহা নওশীন
পর্ব-8

যত্নে রাখা পুরনো ডায়েরিটা অর্ষা খুলে বসল। সাড়ে সাত বছর ধরে কলমের একটা দাগও পড়েনি। ওদের বাড়ি পরিস্কার করার সময় সাথে করে নিয়ে এসেছিল কিন্তু খুলে দেখেনি। অর্ষা বারান্দায় বসে আছে। আকাশে জ্বলজ্বল করছে তারকা রাশি। হিরহির করে বাতাস বইছে। আশেপাশের সব বিল্ডিংয়ের লাইট অফ। দূরে শুধু একটা বিল্ডিংয়ে আলো জ্বলছে। কেউ হয়তো রাত জেগে কিছু ভাবনা কিংবা কাজে ব্যস্ত। অর্ষা বারান্দার মৃদু আলোয় ডায়েরি খুলল। প্রতি পাতায় কত কথা লেখা। সে-সব পড়ে অর্ষার মুখে কখনো মলিনতা আবার কখনো হাসি ফুটে উঠছে। ভাবছে কত ভালোবাসা ছিল, কত সুন্দর ছিল সে দিনগুলো। নিজের পাগলামি দেখে মাঝেমধ্যে হেসে উঠছে।

ডায়েরির এক পাতায় ঘটঘট করে লিখল “সাড়ে সাত বছর পরে আবারও রি-ওপেন করলাম।”
তারপর নিচে তারিখ লিখল।
কিছুক্ষণ ডায়েরিতে লেখালেখি করল। চেয়ারে হেলান দিয়ে ডায়েরিটা কোলে রেখে চোখ বন্ধ করল।

****

দর্শন অর্পার রুমে বসে আছে। মনের কথাগুলো কাউকে বলা প্রয়োজন। রুশানকে বললে রেগে যাবে। বলবে বাদ দে, ওকে নিয়ে কেন পড়ে আছিস? বিরক্তি প্রকাশ করবে। না শুনবে ওর অনুভূতিগুলো আর না এ নিয়ে ভালো মন্দ দুটো কথা বলবে। তাই অর্পাকে বলার সিদ্ধান্ত নিল যেহেতু অর্পার বাড়িতেই ঘটনার শুরু।
“আমি সুসাইড এটেম করেছিলাম তাই আমি কাপুরুষ?”
অর্পার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল।
অর্পা চুপ। ওর কাছে এর কোন জবাব নেই।

দর্শন বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর বলল,
“প্রতিটা মানুষ বাঁচতে চায়, আর সুন্দর ভাবে বাঁচতে চায়। আমি শখ করে মরতে যাইনি। কেউ শখের বশে মরে না। যে সুসাইড করে সে কাপুরুষ আর যারা বাধ্য করে, ঠেলে দেয় এই পথে তারা কী? তারা নিতান্তই সাহসী, বাস্তববাদী ভদ্রলোক? একটা মানুষ কখন মরতে চায়? যখন সে হতাশায় ডুবে যায়, উঠার চেষ্টা করেও পারে না, কারো সাহায্য পায় না, তখন সে মুক্তির পথ হিসেবে মৃত্যুকে বেছে নেয়৷ আমার কাছের মানুষগুলো আমাকে দিনের পর দিন অবহেলা করেছে, আমাকে ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমার মনোবল ভেঙে আমাকে দূর্বল করে দিয়েছে। তাদের কী উচিত ছিল না আমার মনোবল শক্ত করতে আমাকে সাহায্য করার? তা করেনি। আমার মনোবল ভেঙে আমাকে কাপুরুষ বানিয়েছে। আর এখন চিৎকার করে বলছে আমি কাপুরুষ তাই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এটাই না-কি আমার দোষ ছিল। এই দোষে আমি এত বছর শাস্তি পেয়েছি।”

অর্পাও কিছু বুঝতে পারছে না। ছেড়ে যাওয়ার জন্য এটা কোন লজিক হলো?
“ও তোকে এই লজিক দেখিয়েছে? ও যে তোকে দেখতে যায়নি একবারের জন্য সেটা কী? ওর মধ্যে তো মানবতা বলেও কিছু ছিল না। ওর এই কাজকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করবে?”

দর্শন চুপ করে আছে। অর্পা ওকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল,
“চুপ করে আছিস কেন? চুপ করে থাকলে হবে না। প্রশ্ন করতে হবে। ভালোবাসার মানুষকে মৃত্যুর পথে ফেলে চলে যাওয়াকে কাপুরুষতা বলে না?”

দর্শন স্থির হলো। তারপর চোখেমুখে কাঠিন্য এনে বলল,
“হ্যা, জবাব তো ওকে দিতেই হবে।”

পরের দিন~
দর্শন, অর্ষার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ষার আসার খবর নেই। অবশ্য দর্শন সময়ের আগেই এসে পড়েছে। অবশেষে অর্ষা এল৷ ফর্মাল লুকে অর্ষাকে অন্য রকম লাগছে। একেক দিন একেক অর্ষাকে দেখে। অর্ষা গাড়ি থেকে নেমে কয়েক কদম হাঁটার পরেই দর্শনকে দেখল। ওকে এড়িয়ে যেতে চাইলে দর্শন ওর পথ আগলে দাঁড়াল।
অর্ষা বিরক্ত নিয়ে বলল,
“কী চাই তোমার?”

“ওই যে জবাব।”

“সে তো আমি দিয়ে দিয়েছি।”

“সেটা তো একটা প্রশ্নের। আরো প্রশ্ন যে বাকি আছে।”

অর্ষা বিরক্তি নিয়ে বলল,
“আমি তোমার কোন প্রশ্নের জবাব দেব না। আর কেউ আমাকে বাধ্য করতে পারবে না।”

“তুমি বাধ্য। তুমি যখন অন্য একটা মানুষকে নিজের মতো বিচার করতে পেরেছো তখন প্রশ্ন তো উঠবেই।”

অর্ষা গম্ভীরমুখে বলল,
“আমি তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নই। এটা আমার অফিস এখানে আমি কোন সিন ক্রিয়েট চাই না।”

“আর কত এড়িয়ে যাবে?”

“দেখো, আমি তোমার সাথে এ নিয়ে কথা বলতে চাই না, যদি চাইতাম তবে এতগুলো বছর তোমাকে এড়িয়ে চলতাম না। তাই এতগুলো বছর পরে জবাব পাওয়ার আশা করাটা বোকামি। ইউ হ্যাভ টু আন্ডারস্ট্যান্ড। আমি সবকিছু সাড়ে সাত বছর আগেই মাটি চাপা দিয়ে ফেলেছি৷ এতগুলো বছরে সব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাই খুড়ে লাভ হবে না। ফ্রিতে একটা এডভাইস দেই সব কিছু ভুলে যাও এটাই তোমার জন্য বেস্ট হবে।”

“এত সহজ? তুমি আমার সাথে যা করেছো তা এত সহজে কী করে ভুলব? তুমি পারতে?”

“তো এখন কী করতে চাও? মামলা করবে? জজের কাছে আমার মৃত্যুদণ্ডের ফরিয়াদ করবে? তাহলে তাই করো সব অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে ফাঁসিতে ঝুলব তবুও প্লিজ রোজ রোজ একই প্রশ্ন করো না। ভালো লাগে না। বিরক্ত হচ্ছি।”

দর্শন ওকে দেখে অবাক হচ্ছে। একটা মানুষ এতটা বদলে যায় কী করে? কী করে মুখের উপর এভাবে কথা বলতে পারে? এই অর্ষাকে চেনেই না। দর্শনের মুখের এক্সপ্রেশন বদলে যায়। চোয়াল শক্ত করে বলল,
“আই হেইট ইউ। আর কখনো তোমার কাছে প্রশ্ন নিয়ে আসব না। এই প্রশ্নগুলো আজীবন প্রশ্ন হয়েই থাক৷ তোমাকে কখনো ক্ষমা করব না।”

দর্শন চলে যেতেই অর্ষা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিরবির করে বলল,
“আমি তোমার সাথে যা করেছি তা নাকি ভুলতে পারবে না। আর তোমার জন্য আমার সাথে যা হয়েছে তা আমি ভুলব কী করে?”

অফিস শেষে অশান্ত মন নিয়ে অর্ষা প্রিয়ার বাসায় গেল। প্রিয়াও অফিস থেকে ফিরে সবেমাত্র ফ্রেশ হয়েছে। অর্ষাকে দেখে চমকে গেল। নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে নয়তো এভাবে আসত না।

প্রিয়া ওকে নিয়ে নিজের ঘরে গেল। ফ্রিজ থেকে জুশ এনে অর্ষাকে দিল। অর্ষা এক ঢোক পান করে বলল,
“ও রোজ রোজ আমার সামনে আসছে। আমি কেন ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম, কেন ওর সাথে এমন করলাম ব্লা ব্লা। এই একই প্রশ্ন শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত। আজ বলল আমি যা করেছি তার জন্য না-কি আমাকে ক্ষমা করবে না। আর ওর জন্য আমার লাইফে যে ক্ষতি হয়েছে তার বেলায়? ওর জন্য আমি এতিম হয়ে গেছি। ওর জন্য আমার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে তার জন্য কী কখনো ওর কাছে কৈফিয়ত নিতে গিয়েছি? যাইনি তো। আমি শুধু ওর থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি। সব ভুলতে চেয়েছি। কিন্তু ও দিচ্ছে না। আমি এখানে ফিরে এসেছি শুধুমাত্র বাবা-মায়ের শেষ চিহ্নের জন্য। নয়তো কখনো ফিরতাম না। আর না কখনো ওর মুখোমুখি হতে হত। আমি কী করব প্রিয়া? এভাবে আমি বাঁচতে পারব না। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।”
অর্ষা মুখ চেপে ডুকরে কেঁদে উঠছে। প্রিয়া ওকে জড়িয়ে ধরল। এর সমাধান প্রয়োজন। অর্ষা মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ছে। ভেঙে যাচ্ছে। এভাবে চললে ওর বড় কোন সমস্যা হয়ে যাবে। ওর মাইন্ড ফ্রেশ থাকা জরুরি। কিন্তু এর সমাধান কী? দর্শনের সত্যিটা জানা? প্রিয়া শীঘ্রই এর সমাধান বের করবে। অর্ষাকে আর কষ্ট পেতে দিবে না।

চলবে…..

(লেখার মতো আর কিছু খুঁজে পাচ্ছি না তাই যতটুকু লিখেছি পোস্ট করে দিলাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here